আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১ টাকার ইতিহাস।

ব্যালেনস্

সারাদেশে এক টাকার ধাতব মুদ্রা (সোনালি রঙের কয়েন) নিয়ে হুলুস্থূল শুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ প্রতিটি জেলা, উপজেলা পর্যায়ে সর্বত্র চলছে এই কয়েন বেচাকেনা। দেশের কোনো কোনো জায়গায় এ কয়েন ১০০ টাকা আবার কোথাও ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খবর পেয়ে কয়েনের খোঁজে হন্যে হয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে উঠতি বয়সের তরুণরা। পত্র-পত্রিকা অফিসে ফোন আসছে কয়েন বেচাকেনার খবর জানতে।

তবে গত কয়েক দিন ধরে ১ টাকার সোনালি মুদ্রা নিয়ে হইচই চললেও গতকাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই বলা হয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কয়েন বিক্রির বিষয়টি তারা শুনেছেন। সব মিলিয়ে এটি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে। এদিকে কয়েন সংগ্রহের জন্য অনেকেই ব্যবসা খুলে বসেছেন। খুচরা ও পাইকারি ভিত্তিতে তারা কিনছেন এই কয়েন।

এখন কয়েন সংগ্রহ করে অনেকেই লাখপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। এ কারণে সোনালি রঙের এ কয়েন এখন সোনার হরিণ। মাটির ব্যাংকে থাকা জমানো কয়েন বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া ভিখারি, মুদি দোকানিসহ ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে এ কয়েন থাকায় তাদের কাছে চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। গত ঈদুল আজহার আগে সিলেটে সর্বপ্রথম এ মুদ্রা কেনাবেচা শুরু হয়।

প্রাথমিক অবস্থায় স্বল্প আকারে মুদ্রা সংগ্রহ চললেও পরে ব্যাপক আকারে সিলেট বিভাগের সর্বত্র ওই মুদ্রা সংগ্রহের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। গত কয়েক দিনে সারাদেশে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী বেশি দামে কয়েনের বেচাকেনা শুরু হয়। কয়েনের পেছনে ছুটতে থাকে হাজার হাজার মানুষ। সারাদেশে প্রতিটি কয়েন বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় এমনকি এ কয়েন সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে বলে শোনা গেছে। দোকানে দোকানে, বাড়ি বাড়ি ঘুরে এ কয়েন কেনাবেচার কাজ চলছে।

কয়েনের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় দেশের কোথাও কোথাও মসজিদের দানবাক্স থেকে কয়েন চুরির ঘটনাও ঘটেছে। এ কয়েনের দাম বাড়ছে। এক পার্টি ৯০ টাকা করে দিতে চাইলে অন্য পার্টি দিতে চাচ্ছে ১০০ টাকা করে। এ অবস্থায় মানুষ দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে। এ দামে বিক্রি করে না আবার শেষ পর্যন্ত নিজেই ঠকে যায়।

এজন্য যাদের কাছে এই কয়েন আছে তারা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিচ্ছেন। এছাড়া আসল ঘটনা কি তা জানার চেষ্টা করছেন। মাঠপর্যায়ে কয়েন কেনাবেচার সঙ্গে জড়িতদের খোঁজ মিললেও কে বা কারা এর নেপথ্যে তা বলতে পারেনি কেউ। সবার একই প্রশ্ন এই কয়েন দিয়ে হচ্ছে কি? এত টাকা দিয়ে কয়েন কিনছে কারা? কেনইবা কিনছে? নেপথ্যে রয়েছে কারা? এরকম নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষের মনে। কেউ কেউ বলছে, এ কয়েনের ওপর সোনার প্রলেপ দেয়া থাকে, এক টাকার কয়েন ১০০ টাকার সোনা দিয়ে তৈরি।

কারও ধারণা এই সোনালি রঙের কয়েকটি কয়েন আগুনে গলিয়ে তা মেশানো হচ্ছে স্বর্ণের মধ্যে, আবার কেউবা ধারণা করছেন তা দিয়ে তৈরি করা হয় ইমিটেশন জুয়েলারি (কেমিক্যাল গহনা), কারও ধারণা আগুনে গলিয়ে তৈরি করা হয় পিতলের বাটি-চামচ, আবার অনেকের ধারণা সাধারণ মানুষকে ঠগবাজির এটি একটি নতুন পন্থা। কেউ কেউ বলছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এ ধরনের তামার রঙের মতো ৫ ও রূপালী ২ পয়সা উচ্চমূল্যে কিনে ব্যাপকভাবে ভারতে পাচার করা হয়েছিল। বর্তমানেও ১ টাকার কয়েন কিছু সিন্ডিকেট বাজার থেকে কিনে নিয়ে ভারতে পাচার করছে কিনা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার বিষয়টি তলিয়ে দেখা প্রয়োজন। আর এ নিয়ে এখন ভাবতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে পুলিশ ও গোয়েন্দারা মাঠে নেমেছে বলে জানা গেছে।

গত সোমবার হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে কয়েন সংগ্রহকারী সাইফুল ইসলাম রুজেন (২৫) ও শাহনূর (২৪) নামের দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে। এদিকে এ অবস্থার কারণে এক টাকার কয়েনের মারাত্মকভাবে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়ছেন ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। কখনও চকলেট, কখনও ম্যাচ দিয়ে আবার কখনও এক টাকা ছেড়ে দিয়ে মালামাল বিক্রি করতে হচ্ছে।

এতে করে কখনও ক্রেতা, কখনও বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এক ক্রেতা জানান, দোকানিরা ৫৫ পয়সা দামের ১টি চকলেট দিয়ে ১ টাকার কয়েনের কাজ সারছে। এতে শুধু ক্রেতাসাধারণই ক্ষতিগ্রস্ত নন, প্রতারিতও হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, একটি সংঘবদ্ধ চক্র বাজার থেকে কয়েন উঠিয়ে নিয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ব্যাংক কর্মকর্তারা কেউই বলতে পারছেন না আসল রহস্য কি।

তারা বলছেন, এটা স্রেফ রিউমার। এই গুজবে কান না দেয়ার জন্য তারা সাধারণ মানুষকে পরামর্শ দিচ্ছেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ১ টাকার সোনালি রঙের প্রতিটি কয়েনে রয়েছে ৬৯ শতাংশ তামা, ৩০ শতাংশ জিংক ও এক শতাংশ টিন। আর প্রতিটি কয়েনের ওজন ৫ গ্রামের কম। কয়েনগুলোতে যে পরিমাণ ধাতু আছে তার বাজার মূল্য দুই টাকার বেশি নয়।

কিন্তু তারপরও কাটছে না রহস্য। গত কয়েক দিনে সারাদেশে এ খবর ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে সারাদেশে হুলস্থূল, হইচই শুরু হয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে থাকা মাটির, প্লাস্টিকের ব্যাংকগুলো ভেঙে সোনালি কয়েন সযতনে সংরক্ষণ করতে ব্যস্ত বাড়ির বউ, ঝি এমনকি শিশু-কিশোররা। কেউ কেউ টাকা বেচাকেনার ব্যবসায় নেমে পড়েছেন।

গতকাল সারাদেশ থেকে আমার দেশ অফিসে ফোন করেছেন আসল ঘটনা জানার জন্য। চট্টগ্রাম থেকে মাহমুদ জানিয়েছেন, তার কাছে ১১৭টি কয়েন আছে। সেগুলো ৯০ থেকে ১০০ টাকায় কেনার জন্য অনেকেই আসছেন। এ প্রসঙ্গে র্যাবের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেছেন, কয়েন পাচারের গুজবটি সিলেট রেলস্টেশন থেকে হেরোইনখোররা ছড়িয়েছে। নেশাখোররা হেরোইন খেতে ১ টাকার ওই মুদ্রাটি ব্যবহার করে থাকে।

তিনি জানান, যারা অতিরিক্ত দামে ওই মুদ্রা কিনছে তারা মূলত প্রতারিত হচ্ছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।