আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রবীন্দ্রনাথের কোন বিকল্প নাই -৬



রবীন্দ্রনাথের কোন বিকল্প নাই -৬,লেখা শুরু করার আগে হালকা একটু রসিকতা করে নিই। সন্ধ্যা বেলায় লেডিস হোস্টেলের সামনে ফাস্ট ইয়ারের ছাত্র রুবেল আর তার দুই বন্ধু ঘুর ঘুর করছিল। রক্ষনশীল এক অধ্যাপক ওখান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সেটা লক্ষ্য করে রুবেলের হাত চেপে ধরতেই বন্ধুরা অদৃশ্য হলো। পড়াশোনা না করে ফাস্ট ইয়ারেই মেয়েদের পেছনে ঘোরা। খুব একচোট বকলেন তিনি রুবেলকে।

তারপর শাস্তিটা সম্পন্ন করার জন্য রুবেলের অনুনয় বিনিয়ে কান না দিয়ে সোজা তাকে হোস্টেলের মেট্রনের কাছে নিয়ে গেলেন। অধ্যাপকের কাছে ব্যাপারটা শুনে মেট্রনও রুবেলকে খুব কষে বকলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন,তুমি কার খোঁজে এখানে এসেছিলে? রুবেল চুপ। কে,কুমু? রুবেল মাথা নীচু করে রইল। উওর দাও,মনিরা? রুবেলের মুখে তখনও কোন কথা নেই।

চুপ করে থেকো না,আমায় সত্যি কথাটা বলো। মেয়েটা কে,ফারজানা? তাও রুবেল কোন কথা বলছে না দেখে মেট্রন বললেন,আর কোনদিন যেন তোমাকে এখানে ঘোরাঘুরি করতে না দেখি। এটা হোস্টেল,ভাব করার জায়গা নয়- বুঝেছ? রুবেল মাথা নীচু করা অবস্থাতেই একটু নড়লো,অর্থাৎ বুঝেছে। যাও। রুবেল হোস্টেল থেকে বেরিয়ে আসতেই বন্ধুরা আবার উদয় হলো।

কি বললো রে তোকে মেট্রন? খুব বকলেন। তবে তিনটি মেয়ের নাম দিলেন,মনে হয় সেখানে চান্স আছে। (প্রাকৃতিক নিয়মেই যা কিছু পুরাতন হয়,তাকে জড়তা ও জীর্ণতা গ্রাস করে। বিনাশের বীজ তার মর্মে প্রবিস্ট কাজেই নতুনের অমোঘ প্রতিষ্ঠা ও প্রসার এক সময় অনিবার্য হয়ে ওঠে। -আহমদ শরীফ) "গাঙ্গের তলে বাঘের পাঁড়া/ধান মাড়াইছে চব্বিশ আড়া/ফলে ধান পাকে না/রাইত অইলে থাকে না।

" অল্প বয়সে মা মারা যান। মায়ের আদর পাননি। তরুন বয়সে প্রিয় বৌদি কাদম্বরী দেবীর অকালমৃত্যু রবীন্দ্রনাথের মনে গভীর রেখাপাত করে। দাদা মারা যান,বাবা মারা যান-অকালে মৃত্যুবরন করেন স্ত্রী মৃনালিনী দেবী। বছর না যেতেই চিরবিদায় নেয় মেজ মেয়ে রেনুকা।

চার বছর পর কনিষ্ঠ পুত্র শমী। শমীর দশ বছর পরে মৃত্যুবরণ করে বড় মেয়ে মাধুরীলতা। প্রান্ত জীবনে এসে প্রিয় নাতি নীতুর মৃত্যু তাকে একেবারে নিশ্চল করে দেয়। একটার পর একটা মৃত্যুলেশ যেন অর্থহীন,সামঞ্জস্যহীন। মাত্র ষোল বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ভানুসিংহের গান গুলো লেখেন।

পরে বিলেত ঘুরে আসার পর রবীন্দ্রনাথ যখন বাল্মিকী,মায়ার খেলা-র মতো গান গুলো লিখলেন পরবর্তী সময়ের বিচারে তা প্রাথমিক পর্যায়ের। রবীন্দ্রনাথ পূর্ব বঙ্গ আসার সাথে সাথে তার সাহিত্যে,কবিতায়,চিন্তায়,কাজে একটি বড় পরিবর্তন ঘটে। সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও যার প্রভাব পড়েছে। আর রবীন্দ্রনাথ নৌকায় বসে শুধু মৌলিক গান লিখেছেন। একেবারে নিজের ভাবনা থেকে তা লিখেছেন।

রবীন্দ্রনাথের যখন আট-নয় বছর তখন তার দাদা বিয়ে করে আনেন কাদম্বরী দেবীকে। বয়সে দু'জনে প্রায় সমান। কথায় আছে,মেয়েদের 'মাতৃত্ববোধ' নাকি অল্প বয়সেই হয়ে থাকে। প্রায় সমবয়সী বৌদি তাকে মায়ের আদর,বোনের স্নেহ,বন্ধুর ভালোবাসা দিয়ে বড় করেন। 'নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে,রয়েছে নয়নে নয়নে' ব্রাহ্ম সঙ্গীতটি রবীন্দ্রনাথের চৌদ্দ বছর বয়সে লেখা।

বাবা কিশোর পুত্রের কন্ঠে গানটি শুনে সে আমলে ৫শ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, 'আজ এ দেশের রাজা যদি তোমার গান শুনে তার অর্থ বুঝতে পারত তবে এই পুরস্কার দিয়ে তারাই তোমায় সম্মানিত করত। বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত অনেক বাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে-কুস্টিয়ার শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠুবাড়ি,সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ঠাকুর কাছারিবাড়ি এবং নওঁগার পতিসরের রবীন্দ্র জমিদারবাড়ি। খুলনার দক্ষিন ডিহিতে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি। ২০০৯ সালে পতিসর নওঁগা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে লেখা একটা চিঠি আবিস্কার করা হয়েছে,যা কবিগুরু ১১৩ বছর আগে বোলপুর থেকে জৈনেক অজ্ঞাতকে লিখেছিলেন।

সেটি একটি তিন পৃষ্ঠার দীর্ঘ চিঠি। ও আর একটা কথা বলতে ভুলে গেছি- শ্রীশচন্দ্র মজুমদারকে লেখা জানুয়ারী ১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথের একটি চিঠি পাওয়া যায়। যে চিঠির নিচে লেখা আছে 'জোড়াসাঁকো',২৩ জানুয়ারী,১৮৯০,১১ মাঘ,বৃস্পতিবার। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর হাই স্কুলের পরিদর্শন বইতে রবীন্দ্রনাথের স্বহস্তে লেখা একটি ইংরেজি মন্তব্য রক্ষিত রয়েছে! "Visited the school for the first time.Went round all the classes.I did not try to frighten the boy's out of their wits by cursory examination,which,I fear they have often enough.I have every reason to believe that the Head master is doing his duty conscientiously,and I dareasy the school is as good as any other of it's kind." 20-1-1890 Rabindranath Tagore (চলবে.....)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।