বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
আজ অনেকদিন পর অটোমামা এলেন। বললেন, চল শান্তা, আজ তোকে চাইনিজ খাওয়াব।
খাওয়াবেই তো, চাইনিজ আমার পাওনা আছে মামা।
শান্তা বলল।
হ্যাঁ, হ্যাঁ। জানি, জানি। চল, এখন গাড়িতে ওঠ।
গত ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালের দিন কার বুদ্ধিতে অটোমামা হল্যান্ড পক্ষ নিলেন- ফলে যা হবার তাই হল ।
শান্তা বরাবরই স্পেনের পক্ষে ছিল, সুতরাং শান্তাকে চাইনিজ খাওয়াতেই হবে। মা বলেছিল, অটো যা হাড় কিপটে, চাইনিজ খাওয়ানোর কথা বেমালুম ভুলে না গেলে হয়। অটোমামা শান্তার মায়ের কাজিন। মাঝেমাঝে বাড়িতে আসেন। মতিঝিলে ট্রাভেল এজেন্সি আছে অটোমামার, থাকেন লালমাটিয়ায় ।
তাইই হয়েছিল। অটোমামা চাইনিজ খাওয়ানোর কথা ভুলে গিয়েছিলেন। সেই হাড় কিপটে অটোমামা আজ চাইনিজ খাওয়াবেন শুনে শান্তা বেশ অবাক।
আগস্ট মাসের রোদ ঝলমলে দিন। বেশ গরম পড়েছে।
এই গরমে সুট পরে মনের সুখে গাড়ি চালাচ্ছেন অটোমামা। পুরনো আমলের কালো রঙের ভক্সওয়াগেন। পুরনো গাড়ির প্রতি অটোমামার খুব ঝোঁক। আসলে ছেলেবেলা থেকেই গাড়ির খুব শখ অটোমামার, গাড়ির কলকব্জা খুলে আবার জোড়া দিতে দিতে গায়ে কালিঝুলি মেখে যেত। তারপর থেকেই মামার কপালে ‘অটো’ নামটি জুটে যায় ।
ভক্সওয়াগেনটা কায়দা করে মহাখালীতে একটি বহুতলের বেজমেন্টে ধীরে ধীরে ঢুকালেন অটোমামা । শান্তাকে ‘নাম’ বলে নিজেও নামলেন। তারপর লিফটে করে চৌদ্দতলায় চলে এলেন। করিডোরের শেষ মাথায় আদিগন্ত রিয়েল এস্টেট-এর হেড অফিস। তার সামনে এসে দাঁড়ালেন অটোমামা।
শান্তা অবাক। এখানে তো চাইনিজ রেস্তঁরা নেই। মামা এখানে এলেন কেন? তা ছাড়া অটোমামা ডেভেলপারদের ওপর তো অটোমামার রাগ আছে, রিয়েল এস্টেট-এর হেড অফিসে এসেছেন কেন? গত বছর শ্যামলীতে একটা ফ্ল্যাট কিনেছিলেন অটোমামা । আমকাঠ দিয়ে কিচেন ক্যাবিনেট করেছে । ধরা পড়ার পর অটোমামা রেগে কাঁই।
ডেভেলপারদের ওপর সেই রাগ এখনও যায়নি।
শান্তা বলল, আমরা এখানে এসেছি কেন মামা?
অটোমামা ঠোঁটের ওপর তর্জনী ঠেকিয়ে বললেন, চুপচাপ থাক। এখন আমরা কেক-কোক খাব। তারপর চাইনিজ খাব ।
বলে কি! শান্তা ঘড়ি দেখল।
মোটে সাড়ে এগারোটা বাজে।
আদিগন্ত রিয়েল এস্টেট এর অফিসটা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এবং সুন্দর করে সাজানো। সেক্রেটারি মেয়েটি অটোমামাকে দেখে তটস্থ হয়ে উঠল। নির্ঘাৎ বড় পার্টি মনে করেছে। অটোমামার চেহারাটি বেশ অভিজাত, চালচলনে কেমন ‘শিল্পপতি’, ‘শিল্পপতি’ ভাব।
ফরসা , থলথলে মাঝবয়েসি শরীর। মাথায় টাক। চোখে বাদামী সানগ্লাস। থুতনির কাছে কাঁচা-পাকা ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি। দেখলেই শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে।
পথ দেখিয়ে খোদ এমডির রুমে নিয়ে গেল মেয়েটি।
মাঝবয়েসি এমডি টাকওয়ালা বেঁটে মতন দেখতে। মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি। সাদা পাঞ্জাবি পরে ছিলেন। উচ্ছ্বসিত হয়ে সালাম দিয়ে বললেন, আসুন, আসুন।
বসুন বসুন।
এমন ভাবে বললেন, যেন কতদিনের পরিচিত। শান্তা ফিক করে হেসে ফেলল।
অটোমামা সালাম ফিরিয়ে বসতে বসতে বললেন, বস রে শান্তা।
শান্তা বসল।
অটোমামা বললেন, এমডি সাহেব। আমার নাম চৌধুরী আলী শরীফ। আমি বহু বছর ইউরোপে ছিলাম। ইন্ডিয়ার লক্ষ্মী মিত্তালদের সঙ্গে ব্যবসা করেছি।
বলেন কি! স্টিল জায়েন্ট লক্ষ্মী মিত্তাল! এমডি সাহেব যেন থতমত খেলেন।
হ্যাঁ। হ্যাঁ। সেই। এমনভাবে বললেন যেন লক্ষ্মী মিত্তাল অটোমামার ছোট বোনের দেওর। শান্তার হাসি চেপে রাখতে কষ্ট হচ্ছে।
আশ্চর্যের ব্যাপার-অটোমামা ইউরোপ আবার কবে গেল! বড় জোর ইন্ডিয়া গেছেন, তিন বছর আগে, শান্তা তখন ক্লাস সিক্সে পড়ত।
এমডি সাহেব বললেন, আপনি ভাগ্যবান স্যার। আপনি ভাগ্যবান। ওদের ছায়া মাড়ানো বড় ভাগ্যের ব্যাপর।
হুমম।
বলে রুমাল বার করে মুখ মুছলেন অটোমামা। তারপর বললেন, এখন থেকে দেশেই থাকব ঠিক করেছি । সিদ্ধ আলু, পাউরুটি আর ব্ল্যাক কফি খেতে আমার আর ভালো লাগে না। আমার ভালো লাগে, এই ধরেন- সর্ষে ইলিশ, ইলিশমাছের দোপেঁয়াজা, উচ্ছে চিংড়ি ভাজি, পোস্ত দিয়ে পাঁচ মিশালি সব্জি, কেচকি মাছের বড়া, দই দিয়ে মুরগি ভুনা, আম ডাল, মটরশুঁটি দিয়ে রুই মাছের তরকারি, টমাটো আর আলু দিয়ে গরুর গোস্ত, বগুড়ার দই, কুমিল্লার রসমালাই, টাঙ্গাইলের চমচম, আর এই ধরুন ...
এমডি সাহেব বললেন, আহা। আহা।
দিলেন স্যার আমার মন খারাপ করে ।
আমি আপনার মন খারাপ করে দিলাম মানে! অটোমামা পালটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মারলেন।
আমার আবার ডায়াবেটিস আছে স্যার। আর আপনি এত খাবারে নাম বলে যাচ্ছেন-
ওহো। সরি, সরি।
অটোমামা মিইয়ে গেলেন।
ঠিক আছে স্যার, ঠিক আছে। এমডি সাহেব গদগদ ভঙ্গিতে বললেন।
অটোমামা এবার গম্ভীর কন্ঠে বললেন, আলী হায়দার সাহেব।
স্যার! আপনি আমার নাম জানেন! এমডি আলী হায়দার সাহেব রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে উঠলেন।
জানি। তবে এতে কোনও বুজরুকি নেই।
বুজরুকি নেই মানে?
এই রুমে ঢোকার সময় নেইমপ্লেটে আপনার নাম দেখেছি।
ওহ্ ।
অটোমামা বললেন, অনেক হয়েছে।
এবার কাজে কথায় আসুন। আমার ৩০০০ থেকে ৪০০০ স্কয়ার ফিটের খোলামেলা ফ্ল্যাট চাই। বিদেশে থেকেছি, ১২০০/১৩০০ ফুট ধরিয়ে দেবেন তা হবে না।
হবে স্যার, হবে। আপনি কোনও চিন্তা করবেন না।
আপনাকে ঠিকই ৩০০০ থেকে ৪০০০ স্কয়ার ফিটের খোলামেলা ফ্ল্যাট ধরিয়ে দেব। উত্তেজিত ভঙ্গিতে বললেন এমডি আলী হায়দার সাহেব । আরও যোগ করলেন- আদিগন্ত রিয়েল এস্টেট ইজ ডুইং বিজনেস সিন্স নাইনটিন সিক্সটি ইন দিস কানট্রি।
নাইনটিন সিক্সটি ! অটোমামা চুপ করে রইলেন। এরকম সময়ে চুপ করেই থাকতে হয়।
শান্তাও অবাক। আশ্চর্য! পাকিস্তান আমলে এ দেশে রিয়েল এস্টেট ছিল?
অটোমামা বললেন, ফ্ল্যাটটা কাওরান বাজারের কাছাকাছি হলে ভালো হয়। আমি ওদিকেই একটা অফিস নেব ভাবছি।
আপনি ভাববেন না স্যার। আপনি ভাববেন না।
আমি এখুনি সুনীল দিগন্ত টাওয়ারের প্রেজেক্ট অফিসারকে ডাকছি।
অটোমামা কি জিজ্ঞেস করতে যাবেন, সেই সেক্রেটারি মেয়েটি ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকল। একটা প্লেটে কেক আর দু-গ্লাস কোক।
অটোমামা চোখ টিপে বললেন, নে রে শান্তা। কেক/কোক খা।
শান্তা আর দেরি করল না। যা গরম পড়েছে। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে এসেছে। কোকটা কাজে দেবে। আর অল্প খিদেও পেয়েছে।
সেই সকালে আধখান টোস্ট খেয়েছে। আর কেকটাও যা তা না- একেবারে ব্ল্যাক ফরেস্ট। শান্তা শুনেছে, এরা নাকি দু-তিন ধরনের কেক রাখে। ক্রেতাদের স্ট্যাটাস দেখে দামি কিংবা কম দামি কেক খাওয়ায়। সেক্রেটারি মেয়েটি ওদের খানদান ঠিকই চিনেছে।
এমডি আলী হায়দার সাহেব ইন্টারকমে কার সঙ্গে যেন কথা বলে রিসিভার রাখলেন। মধ্যবয়েসি একটি লোক ঢুকল। কোঁকড়া চুল, চোখে চশমা। গায়ের রং কালো। লোকটার পরনে কালো প্যান্ট আর হলুদ শার্ট ।
লাল রঙের একটা টাই ঝুলছে। এমডি আলী হায়দার সাহেব বললেন, ইনি আমাদের সুনীল দিগন্ত টাওয়ারের প্রজেক্ট অফিসার জনাব মোখলেসুর রহমান।
ভদ্রলোক অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে অটোমামার সঙ্গে হাত মেলালেন। শান্তার দিকে চেয়ে মিষ্টি করে হাসলেন। তারপর বললেন, আসুন স্যার।
নীচে গাড়ি আছে।
অটোমামা বললেন, আমার গাড়ি আছে। আমাদের সঙ্গেই চলুন।
ওকে স্যার।
শান্তা ততক্ষণে দু-পিস কেক শেষ করে কোকও প্রায় শেষ করেছে।
শান্তা পিছনে বসল। মোখলেসুর রহমান সামনের সিটে অটোমামার পাশে বসলেন। বললেন, ভোক্সওয়াগেন। এ জিনিস আজকাল দেখাই যায় না। আপনারা খানদান স্যার।
শান্তা ফিক করে হেসে ফেলল। অটোমামা গত বছর তিরিশ হাজার টাকায় কিনেছেন। তাও টাকাটা তিন কিস্তিতে দিয়েছে।
অটোমামা গাড়ি ঘুরিয়ে নিলেন। বড় রাস্তায় গাড়ি তুলে এনে বললেন, আমি কিস্তি-ফিস্তিতে বিশ্বাস করি না মোখলেস সাহেব।
ফ্ল্যাট পছন্দ হলে যা দেবার এক পে অর্ডারেই দেব।
মোখলেসুর রহমান গদগদ হয়ে বললেন, ফ্ল্যাট আপনার পছন্দ হবেই স্যার। ১০০% গ্যারান্টি দিচ্ছি।
ওকে। কোন ফ্লোরে আপনাদের ফ্ল্যাট খালি আছে?
নাইনথ, ফোরটিন আর ফিফটিন ফ্লোরে স্যার।
আমার ওপরের দিকেই পছন্দ।
ওকে স্যার।
এখন স্কয়ার ফুট কত করে যাচ্ছে?
সাড়ে চার হাজার স্যার।
গুড। আমি ভেবেছিলাম আরও বেশি।
মোখলেসুর রহমান বললেন, দাম শিগগির আরও বাড়বে স্যার। আপনি এখুনি কিনে নিন।
আরে, আপনি কি বলেন? আমি ফ্ল্যাট কিনতেই তো এসেছি। অটোমামা চোখ রাঙিয়ে বললেন।
সুনীল দিগন্ত টাওয়ারটি বাংলামোটরে ।
আঠারো তলা চোখ ধাঁধানো বহুতল। বেজমেন্টে গাড়ি রেখে লিফটে ষোল তলায় উঠে এল ওরা। ফ্ল্যাট নং, ফিফটিন-এ-ওয়ান। দরজা খোলার পর দেখা হেগল বেশ প্রশস্ত ড্রইংরুম। দুটো টেবিল টেনিস টেবিল রাখা যাবে পাশাপাশি।
জানালা দিয়ে রোদ ঢুকেছে। শান্তা অবাক। এত বড় ফ্ল্যাট এর আগে ও আর দেখেনি।
অটোমামা কোনওদিকে না তাকিয়ে সোজা কিচেনে এলেন। কিচেন ক্যাবিনেট আমকাঠের না তো ?
না, না স্যার।
কি যে বলেন। আজকাল এসব পারটেক্স কিংবা ম্যালামাইন বোর্ডে তৈরি হয়। আমরা বায়ারদের সঙ্গে জোচ্চুরি করি না স্যার।
সত্যি তো?
জ্বী, স্যার।
কিচেন থেকে সরাসরি গেস্ট বাথরুমে ঢুকে ধমকের সুরে বললেন, বায়ারদের সঙ্গে জোচ্চুরি করেন না, না? হ্যান্ডশাওয়ার নেই কেন?
আজই লাগিয়ে দেব স্যার।
কাঁচুমাঁচু মুখ করে বললেন মোখলেসুর রহমান।
ড্রইংরুমের বারান্দায় একটা দোলনা ফিট করে দেবেন।
দেব স্যার। দেব।
বেডরুমের বাথরুমে গিজার চাই।
আমার স্ত্রীর আবার সকাল-বিকাল গরম পানি না হলে চলে না।
ওমাঃ অটোমামা আবার বিয়ে করল কবে! অটোমামা তো ব্যাচেলর। কে এই হাড়কিপটেকে বিয়ে করবে। শান্তা মুখ টিপে হাসল।
মোখলেসুর রহমান বললেন, আজই লাগিয়ে দেব স্যার।
অটোমামা এবার এক অদ্ভূত প্রসঙ্গের অবতারনা করলেন। বললেন, এই ফ্ল্যাটে ভূতটুত নেই তো
মোখলেসুর রহমান?
না, না স্যার। কি যে বলেন। ভূত থাকবে কেন? একেবারে নতুন ফ্ল্যাট।
নতুন ফ্ল্যাটে বুঝি ভূত থাকে না?
না স্যার।
থাকে না।
কেন?
শুনেছি নতুন রঙের গন্ধ,নতুন ডিসটেম্পারের গন্ধ ভূতদের সহ্য হয় না।
আপনি সিওর?
হ্যাঁ স্যার, আমি সিওর।
ওকে ফাইন।
মোখলেসুর রহমান সাহেব কে নিশ্চিন্ত মনে হল।
শান্তা ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে। এখন শব্দ করে হাসলে অটোমামা কড়া চোখে তাকাবে।
অটোমামা বললেন, ফ্ল্যাট আমার পছন্দ হয়েছে মোখলেসুর রহমান সাহেব। তবে আরেকটু দেখব। টাইলসগুলো ভালো করে টুকে টুকে দেখব।
ফ্ল্যাট ডেলিভারি নেওয়ার পর দেখা গেল অনেকগুলি টাইলস ফাটা । তখন তো আবার আপনাদের ডেকে পাওয়া যাবে না।
না স্যার। জ্বী স্যার।
অটোমামা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন, ওহ্ ।
১টা বাজে। মোখলেসুর রহমান সাহেব আপনি তাহলে এখানেই থাকুন। আমি আর আমার ভাগ্নি নীচ থেকে লাঞ্চ সেরে আসছি। আমার আবার ১টার মধ্যে খিদে পেয়ে যায়।
মোখলেসুর রহমান জিভ কেটে বললেন, ছিঃ, ছিঃ স্যার! আপনি লাঞ্চ করবেন? বলবেন তো।
আমি আছি না। আজ আপনারা আমার গেস্ট।
হে হে হে করে হেসে অটোমামা বললেন, গেস্ট বললেন যখন, চলুন তাহলে।
এতক্ষণে সবটা পরিস্কার হল শান্তার কাছে। অটোমামা যা কিপটে, তিনি খাওয়াবেন চাইনিজ।
তবে ‘বিনে পয়সার ভোজ’-এর প্রতিটি পর্বই ভালো লাগছে। এবার আসল পর্ব।
গাড়িতে উঠে মোখলেসুর রহমান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, স্যার বিরিয়ানি খাবেন না চাইনিজ?
শান্তার দিকে চেয়ে অটোমামা বললেন, আজ বেশ গরম পড়েছে। আজ চাইনিজ দিয়ে শুরু করে আইসক্রিম দিয়ে শেষ করলে ভালো হয়।
পান্থপথে ‘হ্যালো চিন’ চাইনিজ রেস্টুরেন্টটি নতুন হয়েছে।
ওদিক দিয়ে যেতে-আসতে দেখে শান্তা। খাওয়ার ইচ্ছে ছিল। আজ সুযোগ হল। ভিতরের ডেকোরেশনটা ভালো। রান্না ভালোই হওয়ার কথা।
বিনে পয়সার ভোজ যখন- সুপ থেকে শুরু করে আইসক্রিম অবধি ধৈর্য্য ধরে চেখে দেখতে হবে।
এই বয়েসে অটোমামা খেতেও পারেন বটে। শান্তা পাল্লা দিয়ে পারল না। মোখলেসুর রহমানও ভোজনরসিক মনে হল। দু-প্লেট ফ্রায়েড রাইস শেষ করে আরও এক প্লেট নিলেন।
ভালো কমিশনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন মোখলেসুর রহমান । অটোমামাকে ভীষণ তোয়াজ করছেন।
খাওয়ার পর বিল এল সাতাশ শো টাকা । হাসিমুখে বিল পে করে দিলেন মোখলেসুর রহমান। শুধু তাই না।
চার প্যাকেট চাইনিজ অর্ডার দিয়ে নিজেই প্যাকেটগুলি গাড়িতে তুলে দিলেন। বললেন, আপনার ফ্যামেলির জন্য স্যার।
অটোমামা প্রসন্ন হাসি হেসে বললেন, মি: মোখলেসুর রহমান।
বলেন স্যার।
আমার এখন আর সুনীল দিগন্ত টাওয়ারে যেতে ইচ্ছে করছে না।
আমার এখন ঘুম পাচ্ছে। আমি এখন বাড়ি গিয়ে ঘুমাবো। কাল কাগজপত্র ফাইনাল করে একবার আসব। সব দেখেটেখে টাইলস ঠিকই আছে বলে মনে হল।
ওকে স্যার।
আপনার যা ইচ্ছে।
গাড়িতে ওঠার আগে অটোমামা বললেন, এই নিন মোখলেস সাহেব। আমার ভিজিটিং কার্ড। কাল সকালেই আপনার অফিসে গিয়ে কাগজপত্র ফাইনাল করে আসব। আমি আবার কিস্তি-ফিস্তিতে বিশ্বাসী না মোখলেস সাহেব।
যা দেবার একবারেই পে-অর্ডারে দিয়ে দেব। ঝামেলা চুকে যাবে।
অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার। অসংখ্য ধন্যবাদ। মি: মোখলেসুর রহমান চকবার আইসক্রিমের মতন গলে গলে পড়তে লাগলেন।
গাড়ি টার্ন নিয়ে অটোমামা জিজ্ঞেস করলেন, বিনে পয়সার ভোজ কেমন খেলি রে শান্তা।
শান্তা বলল, তোফা, মামা, তোফা। অনেক দিন ধরেই ‘হ্যালো চিন’-এ খাওয়ার ইচ্ছে ছিল। আজ ইচ্ছেটা পূরণ হল।
হে হে করে হাসলেন অটোমামা।
অকারণে হর্ণ বাজিয়ে বললেন, ওয়াল্ডকাপে বাজি ধরে হেরে গেছি বলে
আজ তোকে খাওয়ালাম। ‘চাইনিজ খাব’, ‘চাইনিজ খাব’ বলে অকারণে আমাকে আর জ্বালাস না কিন্তু।
না মামা, জ্বালাব না। আজ যা তোফা খেলাম, তোমাকে অনেক দিন আর জ্বালাব না।
গুড।
আচ্ছা মামা, ডেভেলপাররা কি সব বায়ারকেই লাঞ্চ খাওয়ায়?
আরে না না। তাহলে ওরা ফতুর হয়ে যাবে না।
তাহলে আমাদের খাওয়ালো যে ?
ডাইনে টার্ন নিতে নিতে অটোমামা বললেন, দেখলি না বাংলামোটরের সুনীল দিগন্ত টাওয়ারের ফ্ল্যাটগুলি কেমন বড় বড়-সব ফ্ল্যাটের সাইজ ৩০০০ থেকে ৪০০০ ফিট। হঠাৎই রডসিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফ্ল্যাটের দামও বেড়ে গেল। সে কারণে ফ্ল্যাট নাকি বিক্রি হচ্ছিল না।
আমার এক বন্ধুর মুখে শুনেছি, ওরা বিক্রির জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। তাই ঝোপ বুঝে কোপ মারলাম।
মোখলেসুর রহমানের মুখটি ভেবে শান্তা হাসল। ভালো। তো, মামা তুমি মোখলেসুর রহমান সাহেবকে ভিজিটিং কার্ড দিলে- কাল ফোন করলে কি বলবে?
বলব যে- জরুরি কাজে দুপুরের ফ্লাইটে ইউরোপ যাচ্ছি।
হপ্তাখানেক পর ফিরে এসেই সব সেটল করব।
ওহ্ । তুমি পার বটে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।