আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইভ টিজিংয়ের দায়ে ১১ জনকে জেল-জরিমানা



প্রথম আলো ডেস্ক | তারিখ: ২২-১১-২০১০ মেয়েদের উত্ত্যক্ত (ইভ টিজিং) করার দায়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে গত শনিবার ও গতকাল রোববার ১১ জনকে জেল-জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে নোয়াখালীতে চারজন, পাবনার ঈশ্বরদীতে তিনজন, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে দুজন, দিনাজপুরের হাকিমপুরে একজন ও কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে একজনকে এক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় এক সেবিকাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগে স্থানীয় সালিসে একজনকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও জুটাপেটা করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর: নোয়াখালী: সদর উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণ পুর গ্রামের এক স্কুলছাত্রীকে (১৬) বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথে উত্ত্যক্ত করতেন একই এলাকার সরাফত উল্লা (২৫)। অভিভাবকেরা মেয়েটির পড়াশোনা বন্ধ করে দেন এবং দুই মাস আগে মেয়েকে একই উপজেলার এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেন।

এরপর শ্বশুরবাড়িতে যাতায়াতের পথেও ওই মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতেন সরাফত। শনিবার বিকেলে সরাফত তাঁর ভাই রহমত উল্লা (৩৮) ও ইমরান উল্লাকে (২৭) নিয়ে ওই মেয়ের শ্বশুর বাড়ি এলাকায় আপত্তিকর প্রচারপত্র বিতরণ করেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাঁদের তিনজনকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। গতকাল বেলা ১১টার দিকে সরাফতকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তফা কামাল এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড এবং ভাই রহমত ও ইমরানকে এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। অন্যদিকে জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার এখলাসপুর উচ্চবিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে আমজাদ হোসেন (২৮) নামের এক ব্যক্তিকে গতকাল দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বেগমগঞ্জের ইউএনও নূর-ই-খাজা আলামিন এ সাজা দেন। এখলাসপুর গ্রামের বাসিন্দা দণ্ড পাওয়া আমজাদ নোয়াখালীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের সেরেস্তাদার। ঈশ্বরদী (পাবনা): ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের সড়াইকান্দি গ্রামের সাদ্দাম প্রামাণিক (১৮), তাঁর সহযোগী ওই গ্রামের সোহেল রানা (১৮) ও সাদ্দাম হোসেন (১৮) মুলাডুলি উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতেন। গতকাল সকালে শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরছিল ওই ছাত্রীসহ অন্য ছাত্রীরা। এ সময় সাদ্দাম প্রামাণিক ও তাঁর দুই সহযোগী মুলাডুলি বাজারে ছাত্রীদের পথ আটকায় এবং উত্ত্যক্ত করে।

ছাত্রীরা জানায়, এ সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষক সিরাজুল ইসলামকে দেখে তারা সাহস পায়। পরে শিক্ষক ও ছাত্রীরা মিলে তিন বখাটেকে ঘেরাও করে। এ সময় স্থানীয় লোকজন জড়ো হলে বখাটেরা পালাতে ব্যর্থ হয়। পরে ঈশ্বরদী থানার পুলিশ এসে তিন বখাটেকে আটক করে ইউএনওর কার্যালয়ে নিয়ে যায়। ইউএনও জাকির হোসেন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দুই সাদ্দামকে ছয় মাস করে এবং সোহেলকে দুই মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

হাকিমপুর (দিনাজপুর): উপজেলার হাকিমপুর প্রি ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক রাফেউল ইসলামের (৪০) কাছে ১২ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পড়তে যায় বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রী। রাফেউল ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের পাশের কক্ষে ডেকে কুপ্রস্তাব দেন এবং উত্ত্যক্ত করেন। বিদ্যালয় থেকে বাসায় ফিরে মেয়েটি কান্নাকাটি করে এবং বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে অভিভাবকেরা তাঁর কাছ থেকে ঘটনা শুনে গতকাল ইউএনও ও পুলিশের কাছে রাফেউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। গতকাল রাফেউলকে আটকের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনও মো. তোফাজ্জল হোসেন তাঁকে (রাফেউলকে) এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

পরে রাফেউলকে দিনাজপুর জেলহাজতে পাঠানো হয়। ভৈরব: কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর ইউএনও কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার খড়গমারা গ্রামের শাহ আলম (২৫) স্থানীয় কলেজ ও স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের নিয়মিত উত্ত্যক্ত করেন। তাঁর উত্ত্যক্তের কারণে সম্প্রতি স্নাতকপড়ুয়া এক ছাত্রী কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেন। বিষয়টি জেনে এলাকাবাসী গতকাল শাহ আলমকে ধরে ইউএনওর কাছে নিয়ে যায়। ইউএনও শাহ আলম মুকুল বখাটে শাহ আলমকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

শাহ আলম দাবি করেন, তিনি কোনো মেয়েকে উত্ত্যক্ত করেননি। কুড়িগ্রাম: রাজারহাট উপজেলার সিঙ্গারডাবরি হাট স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার দায়ে পানের দোকানদার আমিনুল ইসলামকে (২২) গতকাল দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই দিন একই উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিসে প্রশিক্ষণ নিতে আসা এক নারীকে মুঠোফোনে উত্ত্যক্ত করার দায়ে আবদুল হানিফ (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে চার মাসের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। সাজা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউএনও রাহেনুল ইসলাম। সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় বেসরকারি হাসপাতালের এক সেবিকাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগে মিলন মিয়া (২৫) নামের এক ব্যক্তিকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এ ছাড়া তাঁকে জুতাপেটা করা হয় এবং তিনি ওই সেবিকার মা-বাবার পা ধরে ক্ষমা চান। গতকাল বিকেলে নাসিরনগর থানা চত্বরে আয়োজিত সালিস-বৈঠকে মিলনের চাচা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ আবদুল আহাদ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক এ সাজা দেন। উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় মারধর: আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নওগাঁর রানীনগর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের সৌদি আরব-প্রবাসী ইসলাম শ্বশুরবাড়ি যেতে স্ত্রী ও দুই শ্যালিকাকে নিয়ে লখিনের মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় উপজেলার পশ্চিম বালুভরা গ্রামের রতন (২২) অশ্লীল ভাষায় ইসলামের স্ত্রী ও শ্যালিকাদের উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। ইসলাম প্রতিবাদ করলে বখাটেদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়।

একপর্যায়ে রতন মুঠোফোনে কল করে বন্ধুদের ডেকে এনে ইসলামকে বেদম মারপিট করে। তাঁর স্ত্রী স্বামীকে রক্ষা করতে গেলে বখাটেরা তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। পরে লোকজন এগিয়ে এলে বখাটেরা ইসলামের লাগেজ নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে রানীনগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ইসলাম। রানীনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান জানান, ঘটনার পর থেকে বখাটেরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।