আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইন নিয়ে ‘সবাই’ ক্ষুব্ধ পাহাড়ে

মহাজোট সরকার তার মেয়াদের শেষ সময়ে এসে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিরসন কমিশন (সংশোধন) আইন-২০১৩ মন্ত্রী সভায় অনুমোদনের পর ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।
এই আইন নিয়ে ক্ষুব্ধ ‘শান্তিচুক্তির পক্ষের’ পাহাড়িরা মনে করেন, এটি পাস হলে পাহাড়ে নতুন সমস্যার জন্ম হবে।
আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় বাঙালিরা কয়েক দফা হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করেছে।
পার্বত্য শান্তিচুক্তির বিরোধীরাও মনে করেন, ভূমি আইন সংশোধন করে কোনো কাজ হবে না। তাদের দাবি, পাহাড়ের প্রথাগত ভূমি অধিকার ব্যবস্থাকে মেনে নিতে হবে।


পাহাড়ে শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্য ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সই হয়। ২০০১ সালের ২০ জুন গঠন করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন। এ পর্যন্ত পাঁচটি কমিশনও গঠন করা হয়।
কমিশন আইনের সঙ্গে পার্বত্য চুক্তির কিছু ধারার সাংঘর্ষিক অবস্থা থাকায় তা সংশোধনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের পক্ষ ২৩ দফা সম্বলিত সুপারিশ পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
২০১১ সালের ৩০ জুন পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৩ দফা সংশোধনীর প্রস্তাব পার্বত্য মন্ত্রণালয় চুড়ান্ত বিল আকারে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।


২০১২ সালের ৩০ জুলাই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ১৩ দফা সম্বলিত সংশোধনী প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
অবশেষে গত ২৭ মে বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রী সভার নিয়মিত বৈঠকে নীতিগতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিরসন (সংশোধন) আইন ২০১৩-এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়।
৩ জুন মন্ত্রী সভায় কমিশনের আইনটি চুড়ান্ত অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে ১৬ জুন জাতীয় সংসদে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন ২০১৩ নামে বিল উপস্থাপন করার পর ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিরসন (সংশোধন) আইন ২০১৩-এর মন্ত্রীয় সভায় অনুমোদনের পর জাতীয় সংসদে বিল আকারে উপস্থাপনের পর থেকেই এ নিয়ে পাহাড়ে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে  ক্ষোভ দেখা দেয়।


পাহাড়ি ও বাঙালিদের বিভিন্ন সংগঠন হরতাল, অবরোধ ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ভূমি কমিশন আইন নিয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরেন।
সম্প্রতি রাঙামাটিতে এক সংবাদ সন্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) সংশোধিত ভূমি কমিশন আইনের আপত্তি জানান।
তিনি বলেন, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সংশোধনী আইন ২০১৩-এর পার্বত্য শান্তিচুক্তির বিরোধাত্মক। পাহাড়ের স্থায়ী মানুষের আশা-আকাঙ্খার বিরোধী মনোভাব এতে প্রতিফলিত হয়েছে। আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হলে পাহাড়ে নতুন করে আরেকটি সমস্যার জন্ম হবে।


“প্রস্তাবিত সংশোধনীর বিভিন্ন ধারা থেকে অনেক ধারা বাদ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সংশোধিত কমিশন আইনে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন ও রীতির কথা থাকলেও পদ্ধতির কথা প্রতিস্থাপন করা হয়নি। ফলে ভূমি সমস্যা সমাধানে সরকারের অসদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। ”
সংশোধিত ভূমি আইন ২০১৩ নিয়ে অসন্তোষের পর গত ৮ জুলাই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ও বাঙালি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এরমধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আর্ন্তজাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভি, স্বরাষ্টমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, আইন ও সংসদ বিষয়ক সচিব শহীদুল হক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সি কিউ কে মোস্তাক।


বৈঠক শেষে গওহর রিজভি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, না বোঝার কারণে সংশোধনী বিল নিয়ে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল। বৈঠকের পর তার অবসান হয়েছে।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান এ আইন নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে বলেন, সংশোধিত আইনটি দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ সমস্যা ৫০ ভাগ সমাধান হলেও বাকি অংশ সমাধান হবে না।
কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা গৌতম কুমার চাকমা মনে করেন, অর্ধেক সমস্যার সমাধানও এ আইন দিয়ে হবে না। অবৈধ বন্দোবস্তে থাকা ৩০ শতাংশ ভূমির সমস্যা সমাধান হবে।

কিন্তু অবৈধভাবে দখলে থাকা ৭০ শতাংশ ভূমি নিষ্পত্তিহীনভাবেই থেকে যাবে।
গৌতম কুমার চাকমা মনে করেন, কয়েকটি ধারাতে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রচলিত রীতিনীতি অনুযায়ী বিচারের কথা বলা হলেও কোন পদ্ধতিতে বিচার করা হবে তার কথা উল্লেখ নেই।
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) মুখপাত্র মাইকেল চাকমা বলেন, পূর্বে আইনটি যেভাবে ছিল এখনো সেভাবেই রয়েছে। আইনের কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি।
“সরকার যত বারই কমিশন আইনের সংশোধনী করুক না কেন পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি নিয়ে সমস্যা থেকেই যাবে।

যতক্ষণ না পর্ষন্ত সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত ভূমি অধিকার ব্যবস্থা মেনে নিচ্ছে। ”
ভূমি কমিশনের আইনের ১৩ দফা সংশোধনীর মধ্যে কমিশনের ৫ সদস্যর মধ্যে চেয়ারম্যান ও বিভাগীয় কমিশনার বাঙালি এবং বাকি তিন সদস্যই পাহাড়ি। কমিশন কার্যালয়ে সদস্য সচিবসহ অন্যান্য পদে পাহাড়িদের অগ্রধিকার ভিত্তিতে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে যা অসাম্য বলে মনে করেন পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান আক্কাজ আল মামুন ভূইঁয়া।
পার্বত্য সম-অধিকার আন্দোলনের নেতা জাহাঙ্গীর কামাল বলেন, এ আইনের ফলে পার্বত্য বাঙালিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।