আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদ মোবারক!! দুনিয়াতে বিয়ের রকম সকম

মানবিক দায় ও বোধহীন শিক্ষা মানুষকে প্রশিক্ষিত কুকুরে পরিণত করে....আইস্ট্যাইন।
উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু। পটোম্যাক থেকে পদ্মা। সর্বত্রই রয়েছে রোমাঞ্চ। প্রেম।

ভালবাসা। মানুষের এই সহজাত প্রবৃত্তির জন্যই একজন পুরুষ তার যৌবনে উপনীত হওয়ার পর বেছে নেয় মনের মানুষ, কোন এক সিন্ডেরেলাকে। আবার একটি যুবতীও বেছে নেয় তার কল্পলোকের মহানায়ককে। বিয়ে নামের এক স্বীকৃত প্রথার মাধ্যমে তারা ঘর-সংসার করে। কিন্তু এই বিয়েতেও আছে রকমফের রীতি।

বিশ্বের সব স্থানে বিয়ের রীতি এক নয়। সভ্য সমাজে মোটামুটি অনেকটা কাছাকাছি এ রীতি। কিন্তু এখনও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বিয়ের সব উদ্ভট নিয়ম। যেমন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ সামোয়াতে বিয়ের অনুষ্ঠানে নতুন অতিথিদের সামনে নতুন বউকে নাচতে হয়। তাকে দিতে হয় সতীত্ব পরীক্ষা।

কেনিয়ার কিকুয়া উপজাতির পাত্রপক্ষ কনেকে পণ দিয়ে থাকে। যতক্ষণ পাত্র তার স্ত্রীকে এই পণ না দেয় ততক্ষণ কনে নিজেকে অবিবাহিত বলে মনে করে। প্রতিটি কিকুয়ু কনের জন্য পণ হিসেবে দিতে হয় ৯৯টি ছাগল। নামিবিয়ায় বিয়ের ধরন উপজাতি ভেদে বিভিন্ন। সেখানে বিয়ের আগে কনেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় নিজ গোত্রের লোকেরা।

তারপর তাকে চামড়ায় তৈরি বিয়ের মস্তকাবরণ সহ একটি পোশাক পরায়। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তাকে গরুর দুধের তৈরি মাখন থেকে তৈরি ফ্যাট দিয়ে শরীর মাখিয়ে দেয়া হয়। সুরমা জাতির একজন কনের পাণিপ্রার্থী যদি অনেক জন হয় তাহলে লাঠির লড়াই আয়োজন করা হয়। এতে কখনও কখনও মৃত্যু পর্যন্ত হয়।

লড়াইয়ের সময় তারা কখনও বিবস্ত্র হয়ে পড়ে। তরুণীরা যখন বয়োঃসন্ধিক্ষণে পৌঁছে তখন তাদের নিচের পাটির দাঁতগুলো ফেলে দেয়া হয়। তারপর নিচের ঠোঁট ছিদ্র করে ফেলা হয়। সেই ছিদ্রকে আস্তে আস্তে বড়ো করা হয়, যাতে তার ভিতর দিয়ে একটি কাদার প্লেট প্রবেশ করিয়ে দেয়া যায়। ট্রোব্রিয়ান্ড হলো আরেক ধরনের আদিবাসী।

তারা খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড খুতখুতে। তারা কারো সামনে খাবার খায় না। এমনকি এক সঙ্গে যখন তারা কয়েকজন খাবার খায় তখন একজন আরেকজনের দিকে পিছন ফিরে বসে। যখন এখানকার ছেলে বা মেয়ে ৭ অথবা ৮ বছর বয়সে পৌঁছে তখন তারা যৌন উত্তেজক খেলা খেলতে ভালবাসে। একে অন্যের সঙ্গে তখন এই খেলা খেলে।

এভাবে তাদের মধ্যে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন আরেকজনের যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধিতে সক্রিয় থাকে। এর ৪ থেকে ৫ বছর পরে তাদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক্ষেত্রে তারা ঘন ঘন সঙ্গী পরিবর্তন করে। এক্ষেত্রে মেয়েটি হয় উদার।

তবে অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষ সঙ্গী তার সঙ্গীর ভালবাসাকে অস্বীকার করে। এটা শুধু অনুমোদিতই নয়, এর মাধ্যমে তারা উৎসাহিত হয়। এই দ্বীপপুঞ্জে প্রথাগত বিয়ের কোন আনুষ্ঠানিকতা নেই। একজন যুবতী তার প্রেমিকের সঙ্গে বিনা বাধায় রাত্রিযাপন করতে পারে। অন্যদিকে সোয়াজিল্যান্ডে গোয়ালঘরে নিয়ে কনেকে পুরোপুরি নগ্ন করে ফেলা হয়।

এরপরই কনেকে কান্না করতে বাধ্য করা হয়। বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক সেখানে অবৈধ নয়। বিয়ের আগে কোন মেয়ে বা ছেলে সেখানে কুমারী বা কুমার থাকে না। অর্থাৎ তারা তাদের সতীত্ব বা কৌমার্য্য নষ্ট করে ফেলে বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক গড়ে। সম্ভবত সে জন্যই সেখানে এইডস সৃষ্টিকারী ভাইরাস এইচআইভি সংক্রমণ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি।

সেখানে এটাই রীতি যে, কোন মেয়েকে বিয়ের আগে পাত্রের সঙ্গে তার বাড়িতে অবশ্যই রাত্রিযাপন করতে হবে। আলবেনিয়ায় পশ্চিমা ছোঁয়া আলবেনিয়া একটি ছোট অথচ পাহাড়ি দেশ। এখানে রয়েছে কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রধান ভাষা আলবেনিয়া। এছাড়া এদেশের মানুষ ভ­াচ, সার্বিয়ান, মেসেডোনিয়ান, বসনিয়ান, বুলগেরিয়ান, গোরানি ও রোমা ভাষায়ও কথা বলেন।

এদেশটির অর্ধেকের বেশি মানুষ মুসলিম। তাই আলবেনিয়ার সংস্কৃতির বেশির ভাগই আফগানিস্তানের মতো। তবে তাতে ইদানীং পশ্চিমা ছোঁয়া লেগেছে। দেশটির জাতীয় পতাকা ও জাতীয় ফুলের রঙ একই। তাহলো কালো ও লাল।

এই রঙটিই সেখানে কোন বিয়ের সময় অনুসরণ করা হয়। লাল রঙের পপি ফুলের তোড়া আলবেনিয়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানে খুবই জনপ্রিয়। বলা হয়, বিয়ের অনুষ্ঠানে বর ও কনের জন্য এই ফুলের তোড়া খুবই আনন্দের। আফগানিস্তানে যে পোশাক ব্যবহার করা হয় আলবেনিয়ার বিয়েতেও সেই একই রকম পোশাক ব্যবহার করা হয়। এ পোশাক হয় দীর্ঘ, দীর্ঘ স্লিভ।

এমন পোশাক সাধারণত মুসলিমরা পরেন। কিন্তু অন্য সম্প্রদায়ের বিয়ের পোশাকে ভিন্নতা থাকতে পারে। তাদের পোশাকে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। আলবেনিয়ার বিয়েতে পাত্রপাত্রীর পায়ের জুতো হতে হয় ফ্লাট বা সমতল। অর্থাৎ হাইহিল জুতা তারা খুব একটা পরেন না।

বেশির ভাগই তারা স্যান্ডেল পরেন। অথবা হিলছাড়া জুতা পরেন। বিয়ের জন্য বৃহস্পতিবার রাতে কনে তার মেকআপ নেয়ার প্রস্তুতি নেন। চুলের ধরন, নখ এবং মেকআপ কেমন হবে তা বিয়ের কয়েকদিন আগে থেকেই নির্ধারণ করা হয়। কনে যদি নেকাব ব্যবহার করেন তাহলে চুলের স্টাইল কেমন হবে সেটা বড় ফ্যাক্টর নয়।

তবে কোন কোন কনে তার জীবনসঙ্গীকে রোমাঞ্চিত করতে আজকাল নেকাব পরলেও চুলে স্টাইল করে থাকেন। আনুষ্ঠানিকভাবে অতিথিদের বিয়ের আমন্ত্রণ জানানো হয় না। সাধারণত তাদেরকে বিয়ের দিনক্ষণ জানিয়ে দেয়া হয়। যদিও কোন কোন নবদম্পতি বা তাদের পিতামাতা আত্মীয়দের দাওয়াত করতে আজকাল কার্ড ব্যবহার করেন, তবে এক্ষেত্রে দাওয়াতের জবাব কি হবে তা জানানো বাধ্যতামূলক নয়। অর্থাৎ কেউ দাওয়াত রাখতে পারবেন কি পারবেন না তা জানিয়ে দেয়ার দরকার পড়ে না।

আলবেনিয়ার বিয়েতে ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ প্রথাগত কোন নিয়ম নয়। বিয়ের দিন বর বা কনে পক্ষের লোকজন তাদের ক্যামেরা অতিথিদের কাছে দিয়ে রাখেন তাদের অবসরে থাকার সময়ের ছবি তুলতে। সাধারণত আলবেনিয়ায় পাত্র নিজে গিয়ে পাত্রীর অভিভাবকদের কাছে প্রস্তাব করেন যে, তিনি তাদের মেয়েকে বিয়ে করতে চান। তাকে দেখেশুনে যদি তাদের পছন্দ হয় তাহলে তারা বিয়েতে মত দেন। এরপরের পর্ব হলো ওই যুগলের বিয়ের দিন ধার্য করা এবং এনগেজমেন্টের জন্য আংটি কেনা।

এ জন্য হবু বরকনেকে একই সঙ্গে অবশ্যই স্বর্ণকারের দোকানে যেতে হয় আংটির জন্য। এ বিষয়ে প্রত্যেককে অবশ্যই আগে থেকে জানিয়ে দেয়া হয়। বর-কনে যখন তার আত্মীয়-স্বজনকে এ বিষয়ে জানায়, তাদের বন্ধু-বান্ধবীদের জানায় তাদের এনগেজমেন্টের কথা তারপর থেকেই মূলত শুরু হয় মূল বিয়ের পরিকল্পনা। ততক্ষণে বর-কনের মধ্যে এনগেজমেন্ট হয়ে যায়। তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা করতে থাকে।

বর্তমান সময়ে তারা আলোচনা করে বিয়ের পর তারা কোথায় থাকবে, কতগুলো সন্তান নেবে তারা, দু’জনের মধ্যে কে তাদের সন্তানের দেখাশোনা করবে, স্ত্রী কি কাজ করবে নাকি না এরকম ইত্যাকার পরিকল্পনা করতে থাকে তারা। আলবেনিয়ায় একটি রীতি প্রচলিত আছে। আর তা হলো যদি ওই পাত্র বা বর তার পিতামাতার ছোট ছেলে হয় অথবা তার পিতামাতার একমাত্র ছেলে হয় তাহলে নবদম্পতি এই মা-বাবাকে তাদের সঙ্গেই রাখবে। অর্থাৎ তারা একসঙ্গে বসবাস করবে। সাধারণত আলবেনিয়ায় বিয়ের আয়োজন করে পিতা-মাতা অথবা ঘটক অথবা ম্যাচমেকাররা।

বিয়ের অনুষ্ঠান মূল অনুষ্ঠানের কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। একে স্থানীয় ভাষায় বলে জাভ’ই নুসেস। অর্থাৎÑ বিয়ের সপ্তাহ। এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠানে কনেকে এনগেজমেন্টের উপহার হিসেবে সাধারণত দেয়া হয় একটি স্বর্ণের কয়েন বা মুদ্রা। এ উপলক্ষে কনের বাড়িতে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

কনেকে এ সময় উপহার দেয়া হয়। মিষ্টি খাওয়ানো হয়। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব উদযাপন করে বরপক্ষ। তার বাড়িতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেয় কনেপক্ষ। বৃহস্পতিবারকে কনের পণের দিন হিসেবে ধরা হয়।

আলবেনিয়ার রীতি অনুসারে এদিন কনেকে গোসল করানো হয়। কনেকে পণ বা উপহার হিসেবে কে কি দিয়েছে তা দেখতে কনের পরিবারের সবাই যোগ দেয় সেই অনুষ্ঠানে। পরিবারের সামর্থ্য অনুসারে আজকাল কনের পণের উপহার লোকজন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে কিনে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে নাইটগাউন, কনের অন্তর্বাস, লিনেনের কাপড় ও বিছানার চাদর, ¯¦র্ণালংকার এবং এমন সব জিনিস যা কনের সংসার করতে গেলে প্রয়োজন। বৃহস্পতিবারের এ অনুষ্ঠান শেষে শুক্রবার অতিথিরা কনেকে দেয়া পণ দেখতে আসতে থাকে।

এ সময় তারা কনের জন্য শুভ কামনা করে এবং তাকে অভিনন্দন জানায়। সাধারণত কনে এদিন একটি সাদা পোশাক পরে থাকে। নারীদের জন্য নির্ধারিত একটি কক্ষে সে অবস্থান করে সব অতিথিকে অভ্যর্থনা জানায়। কখনও কখনও পুরুষ অতিথিরা অন্য একটি কক্ষে বসেন। অনেক সময় তা হয় না।

তারা একই রুমে অবস্থান করে। কখনও কনে সারাটা সময় দাঁড়িয়ে থাকে, তখন নারীরা তাকে ঘিরে গান গাইতে থাকে। শুক্রবারেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে অথবা সামাজিকতা রক্ষা হয় এমন সবাইকে নিয়ে বসে একটি ককটেল পার্টি বা নৈশভোজ। এটা কোন আনুষ্ঠানিক আয়োজন নয়। এ সময় বরকনে তার ইচ্ছে মতো যেকোন পোশাক পরতে পারে।

এ রাতে বরের বাড়িতেও চলতে থাকে পার্টি। সারারাত চলে তা। শনিবার হলো কনের বাড়িতে বিয়ে উপলক্ষে নৈশভোজের পার্টি। এদিন কনের সব বান্ধবী ও আত্মীয়রা গিয়ে জমায়েত হয় তার কনের বাড়িতে। মধ্যরাতের দিকে আসে বরযাত্রী।

তবে এক্ষেত্রে একটি বাধ্যতামূলক নিয়ম আছে। বরযাত্রীতে বেজোড় সংখ্যক সদস্য থাকতে হবে। এদিন বরের পিতা ও কনের পিতা পার্টি উদ্বোধন করেন। বিয়ের দিনে কনেকে সুন্দর করে সাজানো হয়। তাতে তার পিতামাতা সুদিনের আশায় কয়েক চুমুক ওয়াইন পান করায়।

পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে অর্থ দেয়। ভেলাম বা বেস্টম্যান কনের জুতো ভরে চাল ও অ্যালমন্ট ক্যান্টি নিয়ে আসে। তা সিল্কের রুমাল দিয়ে ঢাকা থাকে। এ সময় তার সঙ্গে গান গাইতে গাইতে একদল নারী আসে। ভেলাম বা বেস্টম্যান ওই জুতা রাখেন কনের ওপরে এবং যে কনেকে সাজাতে সাহায্য করেছে তাকে টাকা দেন।

রোববার সকালের পর পরই অথবা দুপুরে বর যায় তার কনেকে আনতে একটি ক্যাব, লিমো, বিএমডব্লিউ চালিয়ে। এ সময় কনের সঙ্গে থাকে একটি ছোট্ট মেয়ে। তার হাতে থাকে একথোপা ফুল। তাকে বলা হয় ফ্লাওয়ার গার্ল। বরযাত্রীবাহী গাড়িকে অবশ্যই শহরের অর্ধেকের বেশি এলাকা ঘুরতে হয় এবং তারা যে পথ দিয়ে প্রবেশ করে সেই পথ দিয়ে পিছন ফিরে যেতে পারে না।

এ সময়ই বর-কনে কোন একটি লেকের ধারে বা পার্কের ধারে বসে একসঙ্গে ছবি তোলে। ওদিকে বর-কনের বিয়ে সম্পন্ন না হলেও চলতে থাকে পার্টি। অতিথিরা আসামাত্র টেবিলে খাবার পরিবেশন করা হয়। প্রথম যে অতিথি উপস্থিত হয় তাকে সম্মান জানাতে তিনি পার্টিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় গান। রোববার রাতটি হলো বরপক্ষের অনুষ্ঠান।

কনের বাড়ির মতো একই রীতি অনুসরণ করা হয় এ বাড়িতেও। এখানেও বেজোড় সংখ্যক অতিথিকে আপ্যায়িত করা হয়। আধুনিককালে অতিথির সংখ্যা ২৫০ থেকে ৩০০ হয়ে থাকে। এর মধ্যে থাকে কনের ১৪ জন সহচরী। বিয়ের পার্টিতে অতিথিরা কফি রাখা টেবিলে নগদ অর্থ দিয়ে থাকে।

অর্থ রাখার জন্য যে ট্রে দেয়া থাকে তা বর-কনের জন্য বিশেষভাবে সাজানো থাকে। পরিবারের সদস্যরা যেসব উপহার দিয়ে থাকে তার মধ্যে থাকে কনের জন্য পণের টাকা। বাকি অতিথিরা অর্থ টেবিলে ছাড়া অন্যখানেও দিতে পারে। যদি বিয়ে হয় পশ্চিমা ধরনের তাহলে সেখানে বর-কনের জন্য নাচের আয়োজনও থাকে। এই নাচ চলাকালে বর-কনের ধনী অতিথিরা ও অন্যান্য অতিথিরা তাদের ওপর অর্থবৃষ্টি করেন।

অর্থাৎ টাকা ছুড়ে মারেন। আবার কোন অতিথি উঠে গিয়ে বরের পকেটে গুঁজে দেন, তার কপালে টাকা লাগিয়ে দেন। কিন্তু এসব অর্থ বর-কনে পায় না। এই নাচের সময় যারা গান করেন বা বাদ্য বাজান তারা পান ওই অর্থ। বিয়ের অনুষ্ঠানে এভাবে যে গান পরিবেশন করা হয় তাকে বলা হয় ‘নেপোলিয়ন’।

বাদ্যকাররা এই মিউজিক তখনই তীব্র করে বাজায় যখন তারা মনে করে তাদের আরও অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু বর-কনে যদি মঞ্চে উঠে না নাচে তাহলে এই বাদ্যকাররা ‘নেপোলিয়ন’ নাচ করে অ্যালকোহলে ভিজানো একটি সাদা রুমাল হাতে নিয়ে পরে তারা ওই রুমালটি পুড়িয়ে দেয়। আলবেনিয়াতে বিয়ের অনুষ্ঠানে সাধারণত অঞ্চলভেদে খাদ্যের মেন্যু পরিবর্তিত হয়। এর চারদিকে রয়েছে তুরস্ক, গ্রিস, আলমেনিয়া ও সিরিয়া। ফলে এসব দেশের মেন্যু অনেক সময়ই এক এক অঞ্চলে অনুসরণ করা হয়।

কখনও কখনও খাদ্যে আমেরিকান ফ্লেভার আনা হয়। এসব বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয় বিভিন্ন রকম স্যুপ, ক্যাসেরোলেস, পিলাফ, পাইস, স্টিউস ও ডিজার্ট। সালাদ তৈরি করা হয় বাঁধাকপি, লেটুস, পিঁয়াজ, মরিচ, ওলিভ ও চিজ দিয়ে। আলু দিয়ে একরকম সালাদ তৈরি করা হয়। এর নাম সাল্লাদ মি পাটেটো।

সিম, মুরগির মাংস, মাছ দিয়ে তৈরি করা হয় স্যুপ। সতীত্ব পরীক্ষা দিতে হয় সামোয়াদের দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র সামোয়া। পৃথিবীর জনগোষ্ঠী থেকে অনেকটা দূরে নীল সাগরের মাঝে ছোট্ট এই দ্বীপ। এখানে বসবাসরত মানুষের জীবনধারা বিচিত্র। তার মধ্যে অন্যতম তাদের বিয়ের আয়োজন।

তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান বিশাল এক সামাজিক ইভেন্ট। এ দ্বীপে বিয়ের প্রথায় বর-কনে দু’পক্ষকে ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন করতে হয়। তাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম মানতেই হয়। বাধ্যবাধকতামূলকভাবে তাদেরকে এসব নিয়ম ও দায়িত্ব অনুসরণ করতে হয়। সেখানে ফালাভেলাভ নামে একটি টার্ম ব্যবহার করা হয়।

এর অর্থ হলো ট্রাবল বা সঙ্কট। মৌলিকভাবে এর মাধ্যমে বিয়ের আয়োজনকারীদের কিছু বাধ্যবাধকতা মানতে হয়। তাতে অনেক খরচ। অনেক খরচ করা হয় বলে এ অনুষ্ঠানকে ফালাভেলাভ বলা হয়। বিয়ের প্রথমেই দু’টি পরিবারকে যা করতে হয় তা হলোÑ দু’পরিবারকেই কনের জন্য অনেকগুলো পোশাক কিনতে হয়।

এর মধ্যে কনে বিয়ের দিন পরার জন্য মাত্র দুটি পোশাক পছন্দ করে নেয়। আদর্শগতভাবে এ দু’টি পোশাকের এক একটি এক এক পক্ষ থেকে বেছে নিতে হয়। অর্থাৎ পাত্রের পক্ষ থেকে একটি পোশাক বেছে নিতে হয়। আবার কনের পক্ষ থেকে একটি পোশাক বেছে নিতে হয়। তবে তা সব সময়ের জন্য নয়।

এখন কোন কোন ক্ষেত্রে কনে দু’টি পোশাকই বেছে নিতে পারে একই পক্ষ থেকে। বাছাই করা পোশাকের মধ্যে একটি পোশাক পাত্রী বিয়ের দিনে পরেন। দ্বিতীয় পোশাকটি পরেন বৌভাতের দিনে। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম হতে পারে। কারণ, সেখানে রয়েছে খ্রিস্টান, মরমোন এমনকি বাহাই সম্প্রদায়।

তাদের নিজস্ব প্রথা অনুসরণ করেও সেখানে বিয়ে হয়ে থাকে। বিয়ের পরের অভ্যর্থনা বা রিসিপশন পার্টি সাধারণত আয়োজন করা হয় আউটডোরে বা বাসার বাইরে। কারণ, আমন্ত্রণ করা অতিথির সংখ্যা অনেক বেশি হয়। তাই তাদের বাসার ভিতরে স্থান সংকুলান হয় না। তাদের আরাম আয়েশের কথা চিন্তা করে এ আয়োজন হয় বাসার বাইরে।

আমাদের দেশের মতো বাসার বাইরে প্যান্ডেল বানানো হয়। কনের বাড়ির সম্পদ ব্যবহার করে বানানো হয় এই প্যান্ডেল। উপরে দেয়া হয় সামিয়ানা। নিচে বসার ব্যবস্থা। চেয়ার-টেবিল।

যখন আমন্ত্রিত অতিথিরা সেখানে সমবেত হন তখন কনে দ্বিতীয় পোশাকটি পরেন। তারপর তিনি সামোয়ানদের প্রথা অনুযায়ী নববধূ নাচ পরিবেশন করেন। চারদিক থেকে তখন মুহুর্মুহু চলে হাততালি। ভাবুনতো একবার! নববধূ অতিথিদের সামনে নাচছে। কেমন উদ্ভট না! আমাদের দেশে তো নতুন বধূ ঘরের কোণে ঘোমটা টেনে বসে থাকে।

আর নতুন বধূর নাচ! সাধারণভাবে বোঝা যায়, এই নাচের জন্য তাকে অবশ্যই প্রস্তুতি নিতে হয়। সে যা-ই হোক। নতুন বধূর নাচের পর পরিবেশন করা হয় রাতের খাবার। তাতে যে মেন্যু থাকে তা এরকম: রোস্ট করা চিকেনের চার ভাগের একভাগ ক্যানে ভরা কর্নড বিফ নারকেলের সস সমেত ফুটন্ত টারো সিমের নুডলস দিয়ে তৈরি সামোয়ান চপ, কর্নড বিফ, সয়া সস ও অন্যান্য উপকরণ মারক্যারোনি সালাদ এসব খাবার পরিবেশন করেন দু’পরিবারের তরুণরা। যেসব অতিথি গুরুত্বপূর্ণ বা ভিআইপি তাদের খাবার পরিবেশন করেন পরিবারের বয়োবৃদ্ধরা।

কারণ, এর মধ্য দিয়ে পরিবারের মর্যাদা রক্ষা হয়। এক বৈঠকে বসে কোন ব্যক্তি যত পরিমাণ খেতে পারেন তাকে ঠিক ততটাই খাবার পরিবেশন করা হয়। যেসব পরিবারে ছোট শিশু আছে এবং তাকে যদি দাওয়াতে নিয়ে না আসা হয় তাহলে তার জন্য বাস্কেটে করে খাবার দিয়ে দেয়া হয় যাতে সে বাসায় বসে খাবার খেয়ে নিতে পারে। কখনও এই আমন্ত্রিত অতিথি খেতে বসার আগেই তার বাচ্চার জন্য খাবার পাঠিয়ে দেয়া হয়। রাতের খাবার শেষ হয়ে আসার আগেই বেস্ট ম্যান তার বক্তব্য শুরু করেন।

তিনি নব দম্পতির জন্য প্রার্থনা করেন। এরপরই পরিবেশন করা হয় কেক। কেকের কথা শুনে মনে হতে পারে সাধারণ একটি কেক। কিন্তু সামোয়ানদের বিয়েতে অতো সাধারণ কেক পরিবেশন করা হয় না। তাদের বিয়ের কেক হতে হয় উপরের দিকে অনেকগুলো স্তরবিশিষ্ট।

অনেক উঁচু। তার টিয়ার বা পাদদেশ হতে হয় পুরো টেবিলজোড়া। অনুষ্ঠানে কেকের পুরোটাই খেয়ে ফেলা হয় না। এর পাদদেশে যে কেক থাকে তা দিয়ে দেয়া হয় সিনিয়র মর্যাদাসম্পন্ন অতিথিদের। বিয়ের অনুষ্ঠানে যে উপহার দেয়া হয় তার মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে জাতকৌলিন্য, কে কত মর্যাদাসম্পন্ন, কে কত দামি মানুষ, কে কত টাকাওয়ালা, কার মানসিকতা কেমন।

আমন্ত্রিতদের মধ্যে যারা প্রথম শ্রেণীর তার মধ্যে রয়েছেঃ গ্রামপ্রধান বা গ্রামপ্রধান দম্পতি মন্ত্রী, ধর্মযাজক বিয়ে পক্ষের আত্মীয়দের মধ্যে সব পরিবারের প্রধান ও তাদের স্ত্রী বরের পিতা-মাতা স্থানীয় স্কুলের প্রিন্সিপাল ও শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ অতিথি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অতিথি। এই বিয়েতে এত যে খরচ তার সংকুলান দিতে বর-কনের পরিবার তাদের নিকট-আত্মীয়দের কাছে সহায়তা চায়। একই সঙ্গে তাদেরকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানায়। কখনও কখনও উপহার তুলে দেয়া হয় নববধূর নাচের অনুষ্ঠানে। এই নাচ চলতে থাকে মধ্য রাত অবধি।

সামোয়ানদের বিয়ের আরেকটি রীতি এখন আর খুব বেশি দেখা যায় না। তা হলো কনের সতীত্ব পরীক্ষা। আগের দিনে কনেদের বিয়ের আগে তার সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হতো অর্থাৎ প্রমাণ দিতে হতো যে, বিয়ের আগে সে কোন পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে নি। তখন বর-কনে বাসার বাইরে টানানো একটি তাঁবুর ভিতর সময় কাটাতো। সেখানে বিছিয়ে দেয়া হতো একটি সাদা কাপড়।

এর ওপরই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতো বর-কনে। যদি ওই সাদা কাপড়ের ওপর তখন রক্ত পড়তো তখনই তা থেকে প্রমাণিত হতো যে কনে সতী। যদি কোন কনে এ পরীক্ষায় পাস না করতো তখন কোন কোন পরিবার সেখানে একটি মুরগি ও একটি চাকুর ব্যবস্থা করতো। লোকজন দেখার আগে ওই চাকু দিয়ে মুরগিটি জবাই করে সাদা কাপড়ে রক্ত ফেলা হতো। এতে অন্যরা মনে করতো কনে সতী।

এর মাধ্যমে কনে ও তার পরিবার লজ্জার হাত থেকে রক্ষা পেত। উপস্থিতরা তখন সাদা কাপড়ে রক্ত দেখে বাহবা দিতো। ওই রক্ত কিসের তা নির্ধারণে তাদের কোন ডিএনএ পরীক্ষা করার দরকার হতো না। তাদের প্রয়োজন ছিল শুধু রক্ত। তবে এখনকার দিনে এই পরীক্ষা কমে গেছে।

অনেক ক্ষেত্রেই এখন আর দেখা যায় না। সামোয়াদের বিয়ের চমক এখানেই শেষ নয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এ জন্য তারা স্থানীয় হাসপাতালের লোকজনকে আমন্ত্রণ করেন। পারিবারিক আয়োজনে বিয়ে হয় নাইজেরিয়ায় নাইজেরিয়ার বিয়ের রীতি অনেকটা বাংলাদেশের মতোই।

সেখানে বরের পরিবার প্রথমে কনের পরিবারের কাছে তাদের ছেলের জন্য প্রস্তাব নিয়ে যান। তাদের ছেলের জন্য ওই পরিবারের কনে দাবি করেন। এনগেজমেন্ট বা বিয়ে আয়োজনের আগে এসব ঘটনা ঘটে থাকে। কনের বাড়িতে যে আমন্ত্রণ নিয়ে যাওয়া হয় তাতে থাকে বর ও তার পরিবার। এর আগে একজন লোককে ভাড়া করা হয়।

তাকে স্থানীয় ভাষায় ওলোপা ইদুরো বলা হয়। এর অর্থ বাংলাদেশের মতো অনেকটা ঘটকের মতো। তিনিই দু’পরিবারের মধ্যে আলোচনার সূত্রপাত করেন। আলোচনায় থাকে কনে ও তার পরিবার। এ পরিবারও কথা চালিয়ে নেয়ার জন্য একজন মধ্যস্থতাকারীকে ভাড়া করে।

তাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয়, ওলোপা ইজোকো। এছাড়া, থাকতে পারে পড়শীদের কেউ কেউ। এ অনুষ্ঠান হয় কনের বাড়িতে। এ জন্য যত খরচ, প্রস্তুতি সবই করে থাকে কনের পরিবার। তবে যদি বরের পক্ষ সামর্থ্যবান হয়ে থাকে তাহলে তারা এই খরচের ভার নিতে পারে।

দু’পক্ষই এ সময় পরে প্রচলিত রীতির পোশাক। তবে সবক্ষেত্রে তা ম্যাচিং হতে হবে এমন নয়। কনের বাড়ি প্রবেশের সময় কনের পিতা-মাতার সামনে হাঁটু গেঁড়ে সম্মান জানান। তারপর দু’পক্ষ আলোচনার জন্য বসেন একই কক্ষে মুখোমুখি আসনে। বর ও কনে বসে তাদের ঠিক মাঝখানে।

আবার তাদের ঠিক মাঝখানে বসেন ওলোপা ইদুরো এবং ওলোপা ইজোকো। ওলোপা ইদুরো বর ও তার পরিবারকে কনে ও তার পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর তিনি বরের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব সংবলিত একটি চিঠি পড়ে শোনান। সাধারণত এই চিঠি একটি গোলাপী রঙের ফিতায় বাঁধা থাকে। পড়ার পর এই চিঠিটি দিয়ে দেন কনের পরিবারকে।

এমন অবস্থায় প্রায় সব প্রস্তাবিত বিয়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে। বিয়েতে সম্মত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আয়োজন করা হয় একটি প্রার্থনা সভার। ওলোপার পছন্দমতো প্রতীকী কিছু খাবার আয়োজন করা হয়। এ সময় যেসব খাবার পরিবেশন করা হয় তার মধ্যে রয়েছেঃ ওবি নামের এক ধরনের বাদাম। এ সময় পাঠ করা হয় কিছু শব্দ।

যেমন- ওন মা গবো (তাদের বিয়ে পরিণতি পাবে), ওন মা তু (তারা খেতে পারবে এবং তারা কখনও অভুক্ত থাকবে না), ওন মা ডাগবা (তারা আস্তে আস্তে বুড়িয়ে যাবে)।  দেয়া হয় আটা আইর নামে এক ধরনের বীজ। এটি খুলে দেয়া হয়। খোলার পর তা থেকে যতটা বীজ বের হয় ধরে নেয়া হয় ওই দম্পতির ততটা সন্তান হবে। দেয়া হয় ওয়িন (মধু), চিনি, আখ।

এর সবগুলোর প্রতীকী অর্থ আছে। এ দিয়ে বোঝানো হয় ওই দম্পতির মধ্যে বন্ধন হবে মধুর মতো, মিষ্টি। এসময়ে কিছু মধুর মধুর কথা বিনিময় হয়। বিনিময় হয় উপহার। এরপর পরিবারের সদস্য ও অতিথিদের মধ্যে বিনিময় করা হয় প্রচলিত খাবার।

কোন কোন ক্ষেত্রে এ সময়টাকে উপভোগ্য করে তুলতে নাচ-গানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিয়ে যখন ঠিক হয়ে যায়, এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হয়ে যায় তখন দু’পক্ষের লোকজন আনুষ্ঠানিকভাবে একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হন। এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে হৃদ্যতা বাড়ে। প্রতিটি পরিবারেই তখন একজন মূল উপস্থাপক থাকেন। তিনি তার পক্ষের লোকজনকে পরিচিত করিয়ে দেন।

ওদিকে বরের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব সংবলিত চিঠি দেয়া হয় কনেকে তার জবাব দেয় কনেপক্ষ। বেশির ভাগ সময় সেই চিঠি পড়ে শোনান কনের বোন অথবা তাদের পক্ষ থেকে বেছে নেয়া কোন ছোট মেয়ে। কোন কোন ক্ষেত্রে বরের পরিবার এ অনুষ্ঠানের জন্য খাবার নিয়ে আসে। এর মধ্যে রয়েছেÑ মিষ্টি আলু পামঅয়েল চিনি রাম ছাগল পানীয় এর সঙ্গে থাকতে পারে আরও অনেক কিছু। তারা কখনও কনের জন্য আগেভাগেই নিয়ে যান জিনিসপত্র।

এর মধ্যে থাকতে পারেÑ জুতা, ব্যাগ, স্বর্ণালঙ্কার। আবার কখনও কখনও তারা কনের জন্য নিয়ে যান পণ। একে কনের দাম হিসেবে অভিহিত করা হয়। ধর্ম অনুযায়ী বর-কনে একে অন্যকে পবিত্র কোরআন অথবা বাইবেল উপহার দেন। উভয়ে উভয়কে পরিয়ে দেন আংটি।

এ সময় তারা দু’জনে কিছু প্রেমের আলাপ করার সুযোগ পান। এরপর কনে তার পিতার গৃহে বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। তবে এক্ষেত্রে সামোয়ানদের মতো কনেকে সতীত্ব পরীক্ষা দিতে হয় না। কেনিয়ার কিকুয়া মেয়েদের পণ ৯৯টি ছাগল কেনিয়ার কিকুয়া উপজাতির বিয়ের রীতি অন্যরকম। এক্ষেত্রে পাত্রপক্ষ কনেকে পণ দিয়ে থাকে।

একে বলে রুরাসিও। এ চর্চা এ সম্প্রদায় কড়াভাবে মেনে চলে। যতক্ষণ পাত্র তার স্ত্রীকে এই রুরাসিও না দেয় ততক্ষণ কনে নিজেকে অবিবাহিত বলে মনে করে। অর্থাৎ সে ধরে নেয় তার বিয়ে হয়নি। রুরাসিও প্রথা আসলে এক ধরনের মজা করা।

এটাকে অনেকটা বাণিজ্যিক বিষয় ধরা যায়। কনের বিয়ে হচ্ছে এ কথা ভেবে তার পরিবার খুব আনন্দ উপভোগ করে। কিন্তু তাদের মধ্যে এক রকম শঙ্কা থাকে পাত্রপক্ষের লোকজনকে নিয়ে। তারা কেমন হবে, আচরণ কেমনÑ এসব নিয়ে তাদের মধ্যে জল্পনা চলতেই থাকে। তারপরও কিকুয়ুরা বলেন, উথোনি নডুরাগাগুও (তুমি তোমার শ্বশুর পক্ষের সঙ্গে অতোটা মিশতে পারবে না)।

একথাটি তাদেরকে মেনে চলতে হয়। পাত্র-পাত্রী পছন্দ হয়ে গেলে খানাপিনার আয়োজন করা হয় কনের বাড়িতে। সেখানে বরপক্ষ দুপুর ঠিক ১টার দিকে গিয়ে হাজির হয়। সেখানে চলে ভূরিভোজ এবং দু’পক্ষে আলোচনা। বরপক্ষ কনেপক্ষের বাড়ির কাছে এসেই দেখতে পায় দরজা বা আলাদাভাবে বানানো গেট বন্ধ।

এ সময় তাদেরকে গান গাইতে হয়। আফ্রিকার বেশির ভাগ সংস্কৃতিতে এ রীতি প্রচলিত আছে। গেটে গিয়ে গান গাওয়া ছাড়া কোন মুক্তি নেই। গেটে গিয়ে তারা যে গান গায় তার মাধ্যমে কনেপক্ষকে গেট খুলতে মিনতি করা হয়। কখনও গানের মধ্য দিয়ে কনেপক্ষকে বোঝাতে হয় পাত্রপক্ষ এসেছে তাদের বরণ করে নিন।

গেটের অন্যপাশে তখন থাকে কনের আত্মীয় তরুণীরা। গেট খুলে দেয়ার জন্য তারা ভালবাসা হিসেবে অর্থ দাবি করে। এ সময় বরের পক্ষের নারী আত্মীয়রা তাদের উদ্দেশে কিছু অর্থ ছুড়ে দেয়। তারপরই অন্যপাশ থেকে গেট খুলে দেয়া হয়। বরপক্ষকে তখন সম্মান জানিয়ে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়।

আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে পুরো পাড়ায়। বিয়ে শেষে চলে খাবার আয়োজন। এর আগে একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হন। এরপর দু’পক্ষের বয়োজ্যেষ্ঠরা আলাদা একটি কক্ষে কনের পণ কত তা নিয়ে সমঝোতায় বসেন। এ সময় সেখানে কোন নারীকে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না।

তবে শুধু নারী ও শিশুরা এই সমঝোতার বিষয়ে পরে জানতে পারে। কিকুয়ুদের প্রথা অনুসারে প্রতিটি কিকুয়ু কনের জন্য পণ হিসেবে দিতে হয় ৯৯টি ছাগল। এক্ষেত্রে কখনও ১০০টি ছাগল দিতে পারে না পণ হিসেবে। কারণ, বাকি একটি ছাগল পরে দিয়ে থাকে বরের পক্ষ তার বাড়িতে গেলে। আধুনিককালে ছাগলের পরিবর্তে পণ হিসেবে নগদ অর্থ দেয়ার রীতি চালু হয়েছে।

নগদ কত অর্থ দিতে হবে তাও নির্ধারণ করে দেন বয়োজ্যেষ্ঠরা। এক্ষেত্রে একজন মধ্যস্থতাকারী রাখা হয় যাতে, বরপক্ষ হয়রানির শিকার না হয় এবং কনে পক্ষ যাতে মনে না করতে পারে তাদেরকে পণ হিসেবে দেয়া অর্থের মাধ্যমে ঠকানো হয়েছে। যখন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে নগদ অর্থের বিষয়ে সমঝোতা হয়ে যায় তখন পণের পুরো অর্থ যদি বর পক্ষের কাছে না থাকে তাহলে তারা পণের কিছু অংশ পরিশোধ করে। বরপক্ষ এ সময় প্রতিশ্র“তি দেয় সময়মতো বাকি অর্থ পরিশোধ করা হবে। যদি বর তার স্ত্রীর পণের টাকা পুরোপুরি শোধ না করে তাহলে তাদের ঘরে যদি মেয়ে শিশু জন্ম নেবে তাকে বিয়ে দেয়ার সময় তারা মেয়ের জন্য পণ দাবি করতে পারবে না এবং এ পণ তারা পাবেও না।

তাই কোন দম্পতির ছেলে হবে, কার মেয়ে হবে কেউ তা জানে না। ফলে পণের টাকা যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় সে জন্য বেশির ভাগ বরই পণের টাকা পরিশোধ করে। নামিবিয়ায় বিয়ের আগেই কনে অপহরণ নামিবিয়ায় বিয়ের ধরন উপজাতি ভেদে বিভিন্ন। সেখানে বাস করে সান উপজাতি, নামা, দামারা, ওভামবো এবং হেয়ারো উপজাতি। সেখানে বিয়ের আগে কনেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় নিজ গোত্রের লোকেরা।

তারপর তাকে চামড়ায় তৈরি বিয়ের মস্তকাবরণ সহ একটি পোশাক পরায়। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে বলা হয়Ñ তুমি এখন একজন গৃহিণী হতে চলেছো। এখন তোমার দায়িত্ব তোমার। এ সময় তাকে গরুর দুধের মাখন থেকে তৈরি ফ্যাট দিয়ে শরীর মাখিয়ে দেয়া হয়।

এর মাধ্যমে বোঝানো হয় সে এখন একটি নতুন পরিবারের সদস্য। তবে বিয়ের পর কনে যেহেতু অনাগত সন্তান ও তার উত্তরাধিকারের একমাত্র যোগসূত্র তাই বিয়ের আগে তার প্রতি বরেরও কিছু দায়িত্ব থাকে। যেহেতু বিয়ে হলো দুটি জীবন, দুটি পরিবার ও দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কের সেতুবন্ধন তাই এক্ষেত্রে বরকে কিছু ভূমিকা পালন করতে হয়। একটি পার্টিতে পাত্র ও পাত্রী পক্ষকে মাংস বিতরণ করতে হয়। তবে সেই মাংস হতে হয় নির্ভেজাল।

বাসর রাত যেখানে কাটায় বর-কনে তাদের বন্ধু-বান্ধবীরা কাঁধে করে তাদেরকে সেখানে নিয়ে যায়। বিয়ের অনুষ্ঠানাদির সময় কনেকে অবশ্যই বেশ কয়েকবার তার পোশাক ও গহনা পরিবর্তন করতে হয়। বিয়ের আগে প্রথমে পাত্রকে তার পরিবারের সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে আলোচনা করতে হয়। তারা যদি তাতে সম্মতি দেয় তাহলে তারা কনের পরিবার সম্পর্কে জানতে চায়। তারপর তারা ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চলে যান কনের বাড়িতে।

এ পর্যায়ে দেখাশোনা মিলিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে অনুষ্ঠানাদি চলতে থাকে। সেখানে দাদী বা নানীকে বলা হয় কুকু। এটা সম্মান অর্থে ব্যবহৃত। এই দাদী বা নানীই পুরো অনুষ্ঠান দেখভাল করেন। তাদের বয়স সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ এর মধ্যে হয়ে থাকে।

তারা বিয়ের সময় পাত্রের সাজে সেজে থাকেন। নামিবিয়ায় বিয়ের আগে যেসব অনুষ্ঠান পালন করতে হয় তার মধ্যে রয়েছেঃ কনের মুখে ও শরীরে মাখানোর জন্য গরুর দুধের মাখন থেকে তৈরি ফ্যাট। এর মাধ্যমে কনেকে নতুন পরিবারভুক্ত সদস্য হিসেবে গণ্য করা হয়। সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানের জন্য জবাই দেয়া হয় ছাগল। কনের পণ হিসেবে পাত্রপক্ষকে পরিশোধ করতে হয় ৪০টি গবাদিপশু।

কনে যতক্ষণ পর্যন্ত দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম না দেয় ততক্ষণ পর্যন্ত তার বিয়ের স্বীকৃতি দেয়া হয় না। বস্তাভর্তি আটা ও চিনি। বিয়ার ও অন্যান্য সামগ্রী আরও আছে অনেক রীতি। তার মধ্যে অন্যতম বিয়ের কয়েক সপ্তাহ আগে কনেকে অবশ্যই গাঢাকা দিতে হয়। বিয়ের দিন তার সারা শরীর ঢাকা থাকে।

তার চোখে কেউ তাকাতে পারে না। তার মুখের নেকাব সরানো হয় না। জোরে কথা বলতে পারে না। এ সময় সে তার বান্ধবীদের (ওমুটিকি) নিয়ে একটি ছোট্ট রুমের ভিতর অবস্থান করে। এই বান্ধবীরাই তাকে তার নতুন পরিবারের কাছে দিয়ে আসার সময় সঙ্গী হয়।

এ সময় আরও কিছু রীতি পালিত হয়। যেমন কুপেকা মসুয়াকি এটা একটি রীতির নাম। পাত্রপক্ষের নারী আত্মীয়রা পাত্রের পক্ষ থেকে কনেকে যেসব টয়লেট্রিজ উপহার দেয় তাকে কুপেকা মসুয়াকি বলে। কোউরি শেলস এটি দিয়ে উর্বরতা ও সমৃদ্ধিকে বোঝানো হয়। কোলা নামের বাদাম ভাঙাÑ আনুষ্ঠানিকভাবে যখন বিয়ের ঘোষণা দেয়া হয় তখন এই বাদাম ভাঙা হয়।

কনের মুক্তিপণ কনের মুক্তিপণ কনের পিতা বা কনে নিজে নিতে চাইলে তার কাছে তা দিতে হয়। জাম্পিং দ্য ব্র“ম তোয়ালের মতো দীর্ঘ একটি জিনিস দেয়া হয়। এ থেকে বোঝা যায় যে, তারা নতুন একটি সংসার শুরু করেছে। ইজিওগোলো প্রথম সন্তান জন্ম দেয়ার পর কনে তখন বিশেষ ধরনের একটি এপ্রোন পরতে পারে। এটা এমন একটি ডিজাইনের এপ্রোন যা দিয়ে মা ও সন্তানকে একত্রে আগলে রাখা যায়।

কুপিকা বেগি এ পর্বে পাত্রপক্ষের নারী অতিথিরা কনের কাছে পাত্রের পক্ষ থেকে উপহার নিয়ে যান। এরপর বাসর রাতের জন্য সাজার প্রস্তুতি নেন কনে। এ সময় তাকে নারকে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।