আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার লে. জেনারেল (অব.) মীর শওকত আলী



বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে ৫ নং সেক্টর কমান্ডার, সাবেক সংসদ সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মীর শওকত আলী আর নেই। গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানে নিজ বাড়িতে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিলাহে ... রাজেউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিম্ফোমা (এক ধরনের ক্যান্সার) রোগে ভুগছিলেন।

বাসায় থেকেই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। গতকাল সন্ধ্যায় হঠাৎ অসুস্থতায় তার মৃত্যু হয়। তার একমাত্র ছেলে মীর জুলফিকার আলী গত বছর লন্ডনে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। মীর শওকতের পরিবারের সদস্যরা জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাসায় চেয়ারে বসে কথা বলা অবস্থায়ই হঠাৎ পড়ে যান তিনি। এরপর ডাক্তার এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ডাক্তার বলেছেন, হার্ট ফেউলিয়রে মারা গেছেন তিনি। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার স্ত্রী এবং কন্যারা যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় আসার পর সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে তার প্রথম নামাজে জানাজা এবং সাড়ে ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ২য় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর দেড়টায় তার লাশ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। পরে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় তাকে দাফন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসী এই যোদ্ধা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদে কর্মরত থাকাকালে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাকে জার্মানিতে রাষ্ট্রদূত করে পাঠান।

পরে তাকে পাঠানো হয় যুক্তরাজ্যে। এরপর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে লে. জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। তার কিছুকাল পর তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠান এরশাদ। পরে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। মনোনীত হন দলের ভাইস চেয়ারম্যন।

১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের খাদ্যমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সম্প্রতি দলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে তার। তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সভাপতি একে খন্দকার, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী আইনজীবী সাংবাদিকসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ প্রয়াত এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে একনজর দেখতে ছুটে যান তার বাসভবনে। মীর শওকত আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এক শোক বাণীতে তিনি বলেছেন, মীর শওকত আলী এ জাতির একজন অকুতোভয় শ্রেষ্ঠ সন্তান।

তিনি স্বজাতির মুক্তির জন্য জীবনপণ লড়াই করে গেছেন। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব এডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সিআর দত্ত, সিরিল সিকদার, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাসগুপ্ত, ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি এডভোকেট সত্যেন্দ্র চন্দ্র ভক্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মঙ্গল চন্দ্র ঘোষ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি বীরেশ চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক বাবুল দেবনাথও পৃথক বাণীতে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী মীর শওকত মীর শওকত আলীর জন্ম ১৯৩৮ সালের ১১ জানুয়ারি পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারে। এখানে ৯ আগা সাদেক রোডে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। প্রথমে তিনি কিছুদিন ঢাকার মাহুতটুলির ফ্রি-প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া করেন।

পরে ১৯৪৫ সালে ঢাকার আরমানীটোলা সরকারি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে এসে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে তিনি এই স্কুল থেকেই মেট্রিক পাস করেন। পরে ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৫ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। কলেজ জীবন পার করেই মীর শওকত আলী পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে সেনাবাহিনীতে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তি হন।

১৮৫৮ সালে তিনি গ্রাজুয়েট ডিগ্রি লাভ করেন। একই সময়ে তিনি সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্তও হন। তিনি ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন রেজিমেন্টে এডজুটেন্ট, কোয়ার্টার মাস্টার, কোম্পানি কমান্ডারসহ সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীতে কাজ করেন। মীর শওকত আলী ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে কোয়েটা স্টাফ কলেজ থেকে চট্টগ্রামের ষোল শহরে ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে পোস্টিং দিয়ে পাঠানো হয় তাকে।

১৯৭১ সালের মার্চের প্রথম ভাগে তিনি ছুটি ভোগ করছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর যখন ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন মীর শওকত আলী ছিলেন চট্টগ্রামে। সে সময় ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডার ছিলেন কর্নেল জানজুয়া এবং সেকেন্ড-ইন-কমান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। মেজর জিয়াউর রহমান ও মেজর শওকতের নেতৃত্বে ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রথমে শওকত আলী মেজর জিয়ার সঙ্গে এক নম্বর সেক্টরে সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে কাজ শুরু করেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।