আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মা ! আজ কি আমরা মাংশ খাবো না



ছোট্ট ছেলে, বয়ষ আট। সকাল থেকেই ঘুরঘুর করছে মায়ের আঁচল ধরে। কিছুক্ষণ পর পর মাকে বলছে, মা, আজ সকলের ঘরে মাংশ রান্না হচ্ছে। আমরা কি আজ মাংশ খাবো না । মা তাকাচ্ছেন ছেলের মুখের দিকে, বলছেন-হবে বাবা, হবে।

তোর বাপ মাংশ আনতে গেছে। এলেই রান্না হবে। একটু সবুর কর বাবা, একটু... ছেলেটি ছোখ থেকে সন্দেহ দূর হয় না। এমন আশ্বাস সে অনেক দিথেকেই শুনে আসছে। তাই আশ্বাসে আর বিশ্বাস রাখতে ভরসা পাচ্ছে না।

আমাদের সমাজের অসহায় ও গরীব সেই অংশটি, যারা জীবনে কখনো দু'দিনের খাবার কখনো একত্র করতে পারেনি! মাংশের গন্ধ যারা ভুলেই গেছে। সারাটা বছর ধরে এই একটি দিনের জন্য অপেক্ষা করে ওরা। আজ ঈদ। আজ ধনীরা কুরবানী করবেন। গরীবকে মাংশ দেবেন।

তৃপ্তি করে খাওয়া হবে। এবং দু'টি দৃশ্য দৃশ্য নং-১ লোকটি কিছু মাংশ নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। সামান্য কিছু মাংশ। কেজি দু'এক হবে। তা দেখেই তার ছোট্ট বাচ্চাদুটি'র কি চীৎকার ! কী লাফালাফি! ছেলেদের এই আনন্দ দেখে লোকটির চোখে পানি এসে গেলো।

সে মনে করতে পারল না শেষবার সে কবে তার সন্তানের মুখে হাসি দেখেছিলো! তৃপ্তির হাসি ! দৃশ্য নং-২ লোকটি মাথা নিচু করে বাড়ি ফিরে আসছে। ব্যাগ খালি। সে কিছু পায় নি। কেউ তাকে দেয় নি কিছু। বাড়ি আসতেই বাচ্চাদুটি দৌঁড়ে এসে ঘীরে ধরে লোকটিকে।

বাপজান, মাংশ কই? লোকটি জবাব দেয় না। চোখ থেকে তখন ঝরঝর করে পানি পড়তে থকে । মাথা নিচু করে ফেলে সে। নিজেকে একজন ব্যর্থ পিতা বলে ধীক্কার জানাতে থাকে। তারপর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে।

নিরবে। কিছু বলে না। শুধুই তাকিয়ে থাকে। চোখের পানি এক সময় মাটি স্পর্শ করে। আজ ঈদ।

সামর্থবানরা কুরবানি দিয়ে ফেলেছেন। এখন সম্ভবত চলছে কাটাকাটি ও বাটাবাটির কাজ। ইতিমধ্যেই মগজ- কলিজি ধরনের লোভনীয় অংশগুলো চলে গেছে রান্না ঘরে। কিছুক্ষনের মধ্যেই আয়েশ করে খাওয়া হবে। কিন্তু আমরা কি মনে রেখেছি অদের কথা? ।

লজ্জার মাথা খেয়ে এতটুকু মাংশের আশায় ঘুরে বেড়ায় মানুষের দরজায় দরজায়। আমরা কি জানি উপরের দৃশ্যগুলো আমার দেশের অতি বাস্তব দৃশ্য । আমরা কি জানি, আমরা চাইলেই পারি অসহায় অই মুখগুলোতে একটি দিনের জন্য হলেও হাসি ফোটাতে। আমরা কি পারি না ডীপের গলা অব্দি জ্যাম না করতে অদের থলিকে একটু ভারি করে দিতে। পারিনা?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।