আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সফরনামা...ঢাকা টু সিলেট



দিনটা ছিল দু;হাজার দশ সালের ১৬ এপ্রিল । মনটা ছিল বেশ ফুরফুরে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যটন সংস্থার সদস্য হিসেবে সিলেট যাচ্ছিলাম ঘুরতে । রাত নয়টায় হল থেকে গিয়ে টিএসসিতে আমাদের অফিসে ঢুকলাম । আড্ডা আর সব কিছু গুছানো শেষে শুরু হল পরিচয় পর্ব আর প্রেসিডেন্ট ভাইয়ার নীতিবাক্য ।

তারপর আমাদের যাত্রা শুরু হল । পর্যটন কর্পোরেশান থেকে দেয়া একটা গাড়ি আর আমরা প্রায় ৪০ জন । গভীর নিঝুম রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে ঢাকা ভার্সিটির একদল তরুণ-তরুণীকে নিয়ে গানের তালে তালে গাড়ি তরতর করে এগিয়ে যেতে লাগল । অনেকদূর যাওয়ার পরে ঘটল একটা বিপত্তি । গাড়িতে নাচ-গান হওয়ায় রাস্তার মধ্যে পুলিশ এসে গাড়ি থামিয়ে দিল ।

এরপর যেই বলা হল আমরা ঢাবির তখন ছেড়ে দিল । আবার চলতে থাকল গাড়ি । রাত তিনটার দিকে সিলেট ঢুকে থামলাম হোটেল উজান-ভাটিতে । কিছুক্ষণ সেখানে আড্ডা দেয়ার পর আবার যাত্রা । চলতে পথে ভোরের দিকে কখন যে একটু তন্দ্রা পেয়েছিল নিজেও জানিনা ।

হঠাৎ তাকিয়ে দেখি ভোরের আভা একটু একটু করে ফুটছে । ড্রাইভারের কাছে শুনলাম, ওখানের নিয়ম হচ্ছে সিলেটে ঢুকে আগে হযরত শাহ জালাল ও শাহ পরান (রহ এর মাযার যিয়ারত করতে হয় । তো আমাদের বাসও আগে ওখানে থামল । আগে যিয়ারত করলাম হযরত শাহ জালালের মাযার । এরপর গেলাম এক হোটেলে নাস্তা করতে ।

মেনু্ ছিল- পরোটা, ভাজি, ডিম ভাজি আর চা । নাস্তা শেষ করে রওনা দিলাম পরিকল্পনা মাফিক আমাদের প্রথম গন্তব্য লালাখালের দিকে । ১০টা মধ্যেই লালাখালে পৌঁছে গেলাম । সারিঘাট থেকে ভাড়া করা হল দুটো ট্রলার । লালাখালের রঙিন পানি চিরে ভেসে চলল আমাদের ট্রলার ।

প্রায় দেড় ঘন্টা চলার পর আমরা ট্রলার থামিয়ে লালাখাল বাজারে গিয়ে উঠলাম । যাওয়ার পথে ঢুকলাম চা বাগানে । চা বাগানে দল বেঁধে চলতে চলতে হঠাৎ দেখা পেলাম এক হাতির । ওমনি সবার মধ্যে হাতির পিঠে ওঠা আর ছবি তোলার হিরিক পড়ে গেল । হাতি ছেড়ে যেতে থাকলাম আরো ভেতরে উচু-নিচু , আঁকা-বাকা পথ পেরিয়ে ।

বাজারে পৌছে একটু রেষ্ট নিলাম । আবার যাত্রা শুরু । এবার যাত্রা লালাখাল থেকে ফেরার । ঘাটে আমাদের ট্রলার ভিড়ানোই ছিল । আমরা গিয়ে উঠলাম ।

আবার চলতে শুরু করল । ঘাটে গিয়ে পৌছলাম । এবার চলতে শুরু করলাম জাফলং এর দিকে । স্পটে পৌছে আগে গেলাম খেতে । ভোজন-পর্ব শেষ হলে ঢুকলাম এক মসজিদের নিচ দিয়ে ।

কেমন যেন সুরঙ্গ-পথের মত লাগল । এরপর ঢুকেই দেখি অপার সৌন্দর্য নিয়ে বসে আছে জাফলং এর সেই নদীটি । ছোটবেলায় মাসিক পত্রিকা শিশুতে যার লোভনীয় বর্ণনা পড়ে লোভ জেগেছিল এক নজর দেখতে । দুইটা নৌকা নিয়ে আমরা গেলাম জাফলং জিরো পয়েন্টে । সেখান থেকে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল ।

গেলাম তামাবিল জিরো পয়েন্টে, একেবারে আসাম সীমান্তে । বিএসএফ এর ভয়কে উপেক্ষা করে তাদের চোখের সামনেই হই হুল্লোড় করে আবার বাসে উঠলাম । এবার গন্তব্য শ্রীমঙ্গল । খিধে পেলে রাস্তার মধ্যে বাস থামিয়ে একটা হোটেলে খেলাম । আবার বাস-দৌড় ।

রাত বারোটায় শ্রীমঙ্গল পৌছলাম । গিয়ে উঠলাম একটা হোটেলে (নামটা মনে পড়ছে না । অনেক দিন হয়ে গেল তো ) রাতটা কখন পার হল টেরই পেলাম না । সকালে উঠে আবার নাস্তা করে দৌড় লাউয়াছড়ার দিকে । পৌচার পর শুরু হল আমাদের বনের মধ্যে ট্রেইল দেয়ার কলা-কৌশল শেখানো ।

এরপর আমরা বনের মধ্যে ঢুকলাম । ঢুকেই তো গা ছমছম করতে লাগল । একটু পরে ভয়টা কমে গেল । তখন মজাই লাগতে লাগল । লাইন ধরে হাটতে থাকলাম ।

অনেক ক্ষণ হাটার পর একটা রেল লাইন পেয়ে সবাই আত্মাহুতি দেয়ার জন্যে বসে পড়লাম । কিন্তু ট্রেন যে আর আসে না বিরক্ত হয়ে যখন সবাই উঠে আবার হাটা দিলাম তখনই ট্রেনটা এল । আবার শুরু হল হাটা । এক পর্যায়ে রাস্তায় উঠে সড়ক অবরোধ করে বসলাম । এবার যাত্রা শুরু হল বাস-পানে ।

(ও বলাই তো হয়নি লাউয়াছড়ায় চারঘন্টার মত ছিলাম । এর মধ্যে আবার গিয়েছিলাম খাসিয়া পল্লীতে ) রওনা দিলাম শেষ গন্তব্য মাধবকুন্ডের দিকে । স্পটে পৌছে আগে পেট ঠান্ডা করলাম । এরপর আকাঁ-বাকা পাথুরে পথ আর ঢাল বেয়ে চলতে থাকলাম মাধবকুন্ডের পথে । দূর থেকে ঝর্ণা দেখতে পেলাম ।

সাথে কলকল শব্দ । আরো কাছে ....একেবারেই কাছে চলে গেলাম । আমিতো এক ছুটে নেমেই গেলাম । সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেকে আবার রওনা দিলাম । এবার উদ্দেশ্য নীলকন্ঠের সাতরঙের চা ।

চা খেয়ে রাতের খাবার খেয়ে রওনা দিলাম ঢাকা অভিমুখে । সেই যাত্রা শুরুর মত আবার সেই একই কাহিনী । উথাল পাথাল ছন্দের মধ্যে দিয়ে ভোর ৭টায় টিএস সিতে এসে নামলাম । শেষ হল আমার সিলেট সফর ।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।