আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জল পড়ে পাতা নড়ে, হাসনাত আব্দুল্লাহর পোলাদের কথা মনে পড়ে।

সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল
ছবির ভদ্রলোকরে যারা চিনতে পারেননি, তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। ইনার নাম আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি ৯৬ এর আওয়ামি সরকারের চিফ হুইপ ছিলেন। তবে সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি হাসিনার জ্ঞাতি ভাই। ১৯৯৬ সাল।

আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় এসেছে। বাপের শেখানো পথ ধরেই বরিশাল জেলা শহরে "দুস্টুমি" করা হাসনাতের তিন পুত্র (আশিক, সাদিক আর মইন) ঢাকায় এসে আরো বড় দুস্টুমিতে নেমে পড়েছিল। হবেই বা না কেন? বাপ গডফাদার কাম চিফ হুইপ। ফুফুজান প্রধানমন্ত্রি। তাদের আশির্বাদের ছায়াতলে থাকলে, অল্প বয়স্করা এক আধটুকু দুস্টুমি তো করবেই।

কিন্তু ছোটখাট দুস্টুমি করতে গিয়ে, একেবারে গোখরোর লেজে পা দিয়ে বসেছিল। ধানমন্ডিতে বসবাসরত এক ক্ষমতাধর লোকের বাড়ি দখল করেই ফেলেছিল। কিন্তু যার বাড়ি, তার খুটিটাও শক্ত ছিল। আর বিরোধী দলে বি এন পির অবস্থানও ছিল মজবুত। ফলে ফুফুজান আর বাপজান, কারো আশির্বাদেই কাজ হয়নি।

কান মলা খেয়ে গুনধর পুত্রদের ফিরে আসতে হয়েছিল। ছোটরা নাকি বড়দের কাছ থেকে শিখে। কিন্ত আব্দুল্লাহ পুত্রদের কাছ থেকে তাদের ফুফুজান বাড়ি দখল করতে শিখেছিলেন। তার প্রয়োগ হয়েছিল ১ টাকায় গণভবন দখল করতে গিয়ে। ভালো করে নোট নিয়ে রাখতে পারেন।

সেই অবৈধ দখল, হাসিনারই সমর্থিত লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দেয়। নোট রাখার কথা এজন্য বলা হলো, কেননা দেখা যাচ্ছে খালেদাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার যুক্তি হিসেবে, হাসিনার গনভবন দখল বাতিলের কুযুক্তি দেখানো হচ্ছে। আওয়ামি লিগের রাজনীতি হচ্ছে শঠতার রাজনীতি। তাই এর সাথে সংক্লিষ্ট সবাই মিথ্যাচারে এক এক জন নোবেল জয়িদের মত প্রতিভাবান। নইলে সব শেয়ালের এক রা এর মত এরা কেন বলবে, এটা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত? খালেদার বাড়ি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০০৯ সালে, মন্তিসভার বৈঠকে।

এবং হাসিনার সভাপতিত্ব। এমন নগ্ন মিথ্যাচার করেও সর্বসম্মুখে মুখ দেখাবার মত নির্লজ্জতা একমাত্র আওয়ামি লিগারদের পক্ষ্যেই সম্ভব। ঘর পোড়ার মধ্যে আলু পোড়া খাওয়ার নিমিত্তে এখন চলছে খালেদার বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটনা। আইন শৃংখলা পরিস্থিতিকে ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ পুর্ববর্তি অবস্থানে নিয়ে গিয়েও যারা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির বড়াই করে, তাদেরই এক জন স্বরাস্ট্র প্রতিমন্ত্রি শামসুল হক টুকু। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, মইনুল রোডের বাড়ি এত আলিসানভাবে সাজানোর টাকা খালেদা পেলেন কোথায়? ভালো প্রশ্ন।

এ ব্যাপারে সন্দেহ থাকলে, আইন আদালত আছে, এন বি আর আছে, দুর্নীতি দমন কমিশন আছে। তাদের কাছে এ ব্যাপারে তথ্য চাইলেই তো হতো। তা না করে গণমাধ্যমে এই সব কথা বলার অর্থ কি? অনেকে বলবেন এটা রাজনৈতিক ভাবে খালেদাকে কোনঠাসা করার ফন্দি মাত্র। অনেকে বলবেন, প্রশ্ন তো ঠিকই আছে। আওয়ামী লিগ ক্ষমতায় আসার আগেও যিনি গ্রামের একটা ছনের ঘরে থাকতেন, যার ভাইয়েরা এখনো দোকানের মুদি, এম পি হবার পর, তিনি এমন কোন আলাউদ্দিনের চেরাগ পেয়ে গিয়েছেন যে, ছেলের বিয়েতে তিনি রাজসিক আয়োজন করেছিলেন? আইন আদালত , এন বি আর কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশন করতে গেলে, পাছে তার লুঙ্গির খুটা ধরে কেউ টান দেয়, এই ভয়েই টুকু সাহেব মিডিয়ার সামনে শ্রেফ গলাবাজি করে গিয়েছেন।

আলু পোড়ার দ্বিতীয় অংকে আছে বিটিভি নামের এক মিথ্যার বাক্স। যাদের কাজ সরকারে যেইই আছে, তাদের পদলেহন করা। এত দিন সরকারের মুখপাত্র ছিল, পাবলিক নিয়তি মনে করে শুধু মুখ চেপে হেসেছে। কিন্ত খালেদার বাড়ি ছাড়ার পর, বর্তমান সরকারের প্রযোজনায় খালেদার ঘর থেকে পর্ণ পাওয়ার সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার করা হয়েছে। হাসিনা ভেবেছিল, খালেদাকে পানিতে আর ভাতে দুই ভাবেই মারা যাবে।

কিন্ত বিটিভির খবরে সাধারণের আস্থা কোনদিনও ছিল না। তাই সেই খবর প্রচারের পর উলটো বুমেরাং হয়েছে। খোদ আওয়ামি লিগের অনেক সমর্থককেই এই কুরুচিপুর্ণ পদক্ষেপের বিরোধীতা করেছেন। ব্লগেই আওয়ামী লিগের সমর্থক কয়েকজন ব্লগারকেও দেখলাম এর বিরোধিতা করতে। যার জন্য তারা অবশ্যই ধন্যবাদ যোগ্য।

এতে প্রমানিত হয় যে, এই কলিকালেও দৈত্যকুলে প্রল্লাদ জন্মায়। অবশ্য আঃ লিগের অনেক উগ্র সমর্থক ব্লগার এই গতকালের হরতালে বি এন পির মিছিল করতে ব্যার্থতাকে নিজেদের সাফল্য মনে করে মিছে আত্মতৃপ্তিতে ভুগেছিলেন। অথচ আমাদের রাজনীতি বিবর্তিত হচ্ছে দুটি বলয়ে। একটা আওয়ামী লিগ, আরেকটা আওয়ামী বিরোধী। বি এন পির কর্মসুচিতে কিংবা ভোট বাক্সে সমর্থনদাতাদের বেশির ভাগই নিরব আম জনতা।

আর মিডিয়াতে বি এন পির জোর বলতে কিছুই নেই। তাই বি এন পির কর্মসুচিতে আওয়ামী লিগের মতই শোরগোল হবে, এমনটি ভাবার পেছনে সুযুক্তি নেই। বর্তমান আওয়ামি সরকারের শাসনামলের প্রায় দুই বছরে বি এন পি মাত্র দুটা হরতাল করেছে বা করতে পেরেছে। যদিও ইস্যুর অভাব ছিল না। এক সাধারন মানুষের দুর্বিসহ দুর্দশার কারনে অন্তত ৫টি হরতালের যৌক্তিকতা থাকতো।

বি এন পি সেটা করেনি। এখন বাড়ি থেকে নেত্রি উচ্ছেদ হওয়াতে তাদের সম্বিত ফিরে এসেছে। অনেক সাধারণ মানুষ এ বিষয়টাকে সহজভাবে নিতে পারেননি। আর এই ঘটনায় এটাই প্রমানিত হয়েছে যে, আমরা যে দুটি দলকে রাজনৈতিক সমর্থন দান করে থাকি, তারা কেউই সাধারণ মানুষ কিংবা দেশের স্বার্থে সচেতন নন। আর এ কারণেই আমাদের সোনার এই দেশ এখনও অন্যের দয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে বেচে আছে।

কথা হচ্ছিল হাসিনার ভাতিজাদের নিয়ে। শেষও করছি, তাদের কথা বলেই। আগের বার ভাতিজার কাছ থেকে ফুফুজান শিখেছিলেন। এবার যদি ফুফুজানকে দেখে ভাতিজারা শিখে, তাহলে সেটা নিরীহ আম জনতার জন্য কোন সুখবর হবে না। কে না জানে? হাসিনার কাছে আত্মিয়স্বজনের আবদার অনেক অনেক গুরুত্বপুর্ণ।

খালেদাকে বাড়ি থেকে এই উচ্ছেদকে সাধারনের জন্য অশনি সংকেত বলেই মনে হচ্ছে। এই দানবীয় অগ্রযাত্রাকে না থামানো গেলে, আপনি আমি যে কেউই নিজ ভুমিতে পরবাসি হতে পারেন। তাই প্রতিবাদের ভাষাটি শক্ত হতে হবে। কেননা আঃ লিগ শক্তির ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষা বুঝতে অপারগ।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।