আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হংকংকে উড়িয়ে দেওয়ার আতিশয্যে...বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট দল

অন্তহীন আমাদের পথচলা,জীবনের বাঁকে-বাঁকে গতির পরিবর্তন। আর চাওয়া - পাওয়ার অসম সমীকরণ। এই নিয়েই আমাদের জীবন

অজানা হংকংকে নিয়ে কিছুটা চিন্তিত ছিল বাংলাদেশ। দুশ্চিন্তার সে মেঘ উড়ে গেল মাত্র এক ঘণ্টায়। হংকংকে ২৫ রানে অল আউট করে ১০ উইকেটে জেতা বাংলাদেশ মহিলা দলের নতুন অভিজ্ঞতা।

প্রতিপক্ষকে এমন নির্মমভাবে উড়িয়ে দেওয়ায় আনন্দ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু গতকাল গুয়ানডং ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হারিয়ে এশিয়ান গেমসে শুভ সূচনার পর মেয়েদের ছোটাছুটি দেখে কোচ দীপু রায় চৌধুরীর মনে ভিড় করছে নতুন দুশ্চিন্তা, 'হংকং টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দুর্বল দল। তাই ওদের হারিয়ে আনন্দে ভেসে গেলে ভুল হবে। গোল্ড মেডেল জিততে হলে আমাদের আরো অনেক দূর যেতে হবে। ' অবশ্য হংকংকে হারিয়ে জয় বুভুক্ষু মহিলা ক্রিকেট দলের লাফালাফি ম্লান হয়ে গেছে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের 'সরকারি প্রতিক্রিয়া'র কাছে_'ঐতিহাসিক জয়'।

মেয়েরা যত বলছেন যে 'না স্যার, আমাদের শিরোপা জিততে হবে। আরো ম্যাচ আছে'_ততই নিজের সিদ্ধান্তে অনঢ় হচ্ছিলেন বাংলাদেশের ক্রীড়া অভিভাবক। মন্ত্রী মহোদয়ের এ উচ্ছ্বাসে সাড়া না দিয়ে কি পারেন এ দেশীয় কর্মকর্তারা? কর্তার দেখাদেখি তাঁরাও মেয়েদের সঙ্গে গ্রুপ ফটো তোলায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠেন। যেন হংকংকে হারিয়ে সোনা জেতা হয়ে গেছে মহিলা ক্রিকেট দলটির! আজ জাপানের বিপক্ষে দ্বিতীয় পুল ম্যাচে মুখোমুখি হবেন সালমা খাতুনরা। আগের দিন নেপালকে ১০ উইকেটেই হারিয়েছে জাপানিরা।

কাগজে-কলমে বাংলাদেশ দলের সোনা জয়ের পথে মূল বাধা পাকিস্তান, যাদের কাছে কাল সকালেই কর্পূরের মতো উড়ে গেছে থাইল্যান্ড। থাইদের চেয়ে হংকং কতটা ভালো, তা দলটির সহ-অধিনায়ক কিনু গিলের মুখ থেকেই শুনুন, 'আমি জীববিজ্ঞানের ছাত্রী। ক্রিকেটটা শখের বশে খেলি। এটা কোনো দিনই পেশা হিসেবে নেব না। আমাদের দলের সবাই তা-ই।

' সেখানে খেলোয়াড় কোটায় চাকরি করছেন বাংলাদেশ দলের অনেকে। ১৬ জনকে চুক্তির আওতায় এনেছে বিসিবি। ক্রিকেটটা ক্রমেই পেশা হয়ে উঠছে বাংলাদেশের মেয়েদের। ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বাসের ওই বাড়াবাড়িটুকু বাদ দিলে প্রশংসা করতেই হবে আসমা খাতুনদের। সেটি মাঠের ক্রিকেটেও দুই দলের ব্যবধানটা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য।

উইকেটটা বাংলাদেশের জসিমউদ্দিন তৈরি করেছেন ঠিকই। তবে এর আচরণ সম্পর্কে কোনো পূর্বধারণা নেই বলে কিছুটা সংশয়ে ছিলেন আসমা। অবশ্য টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে তাঁকে কিছুটা নির্ভার করেন হংকং অধিনায়ক কোনি অং। নতুন বলে জাহানারা আলম ও লতা মণ্ডলকে বোঝার সামর্থ্য হংকংয়ের মেয়েদের এখনো হয়নি। তবে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমতী মনে হয়েছে চামেলি খাতুনকে।

বেশি কিছু করার চেষ্টায় না গিয়ে উইকেট টু উইকেট বল করে তিনি তুলে নিয়েছেন দুটি উইকেট। তিথি রানী সরকারের শিকার একটি। বাকি সবাই রান আউটের শিকার! এর দায় হংকংয়ের ঘাড়ে চাপানো যায়, তবে বাংলাদেশ মহিলা দলের ফিল্ডিংকেও কৃতিত্ব দিতে হবে। মাত্র ২৬ রান দরকার। রুমানা আহমেদের ধৈর্য থাকতে পারে; কিন্তু ফারজানা হক পিংকির অত সময় নেই! ১৭ বলে ১৭ করে ৩.৪ ওভারেই উৎসবের বাঁধ ভেঙে দেন এ ওপেনার।

জয়ের পর কোচ দীপু রায় স্বপ্ন দেখছেন, 'আমরা গোল্ড মেডেল জিততে এসেছি। ' কোচের এ ঘোষণাকে চাপ বলে মনে করছেন না অধিনায়ক সালমা, 'কোনো চাপ নেই। সোনা হাত ফসকে বেরিয়েও যেতে পারে। তবে আমাদের লক্ষ্য এশিয়ান গেমসের শ্রেষ্ঠত্ব। ' ভারত ও শ্রীলঙ্কা অংশ নিচ্ছে না।

আছে শুধু পাকিস্তান। যাদের হারানোর অভিজ্ঞতা আছে সালমা খাতুনদের। গুয়ানজোতে তেমন আরেকটি দিন এলে পরে সেই দিনটি সত্যি সত্যি ঐতিহাসিকই হবে। সংক্ষিপ্ত স্কোর হংকং মহিলা দল : ১৭ ওভারে ২৫/১০ (গিল ১১, হিল ৪; চামেলি ৪/২, তীথি ৪/১)। বাংলাদেশ মহিলা দল : ৩.৪ ওভারে ২৬/০ (রুমানা ১*, ফারজান ১৭*)।

ফল : বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।