আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“ চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর ”

আমি একজন বাঙ্গালি রমনী.......

বাংলাদেশের আবহাওয়া ও ভূ-প্রকৃতি অতি বৈচিত্রময়। সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষত: পার্বত্য এলাকায় এই বৈচিত্র্য বেশি দৃশ্যমান। এসব অঞ্চলে সুদূঢ় অতীতকাল থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী আদিবাসী ও মৌলগোষ্ঠীর বিচ্ছিন্ন শাখা জীবনযাপন করে আসছে। তাদের রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্যগত জীবনপ্রনালী। দেশের মূল ভূখন্ডের মানুষের জীবনযাত্রার সাথে তাদের ব্যাপক পাথর্ক্য লক্ষ্যনীয়।

কিন্তু মূল ভূখন্ডের বাংলা ভাষী মানুষগুলো ঐসব বৈচিত্রময় জীবনধারার অধিকারী প্রতিবেশীদের ঐতিহ্য সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নয়। কিন্তু তারাও এই দেশের জাতীয়তার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুতরাং দেশের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী, আদিবাসী ও মৌলগোষ্ঠীর সম্পর্কে আমাদেরকে ধারণা দানের উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরটি গড়ে উঠেছে। অবস্থান ঃ বন্দর নাগরী চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় চেম্বার অব কর্মাস বিল্ডিং এর বিপরীতে “চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর” অবস্থিত। এ যাদুঘরের পূর্ব দিকে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক হোটেল আগ্রাবাদ দক্ষিণে চেম্বার বিল্ডিং পশ্চিমে শেখ মুজিব রোডস্থ বাদাম আলীর মোড় এর উত্তরে পাঠান তলা মহল্লা অবস্থিত।

কিন্তু এর প্রদশর্নী তে সমগ্র বাংলাদেশের জাতিতাত্ত্বিক নিদর্শনাবলী এবং সাথে তুলনামূলক জ্ঞানলাভ পর্যালোচনার জন্য বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশের জাতিতাত্ত্বিক নিদর্শন স্থানলাভ। প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ঃ তৎকালীন পাকিস্তান সরকার চলতি শতকের ষাটের দশকের গোড়ার দিকে - আনুমানিক ১৯৬৫ সালে জাদুঘরটির প্রথম পর্বের নির্মান কাজে শুরু করেছিলো। এই সময় ভবনটির মাঝখানে একটি বড় হলঘর এবং এর পশ্চিম ও পূর্ব প্রত্যেক দিকে পাশাপাশি দুইটি করে হলঘরমুখী চারটি গ্যালারি ছিলো। প্রতিটি গ্যালারিতে ১টি করে কক্ষ দিলো। এই কথাগুলোর পরিচিতি ছিলো যথাক্রমে ১ক, ২ক, ৩ক এবং ৪ক।

আর তখন জাদুঘরটি নাম রাখা হয় “ঈবহঃৎধষ বঃযহড়ষড়মরপধষ সঁংবঁস ড়ভ চধশরংঃধহ” । শুরুতে ১ক কক্ষে পাকিস্তানে বসবাসকারী কয়েকটি জনগোষ্ঠী ; ২ ক, কক্ষে কাফির নামে পাকিস্তানের একটি মৌলগোষ্ঠীর নির্দশনাদি প্রদর্শিত হয়। আর ৩ক ও ৪ক দুটো কক্ষে কেবল বাংলাদেশের পাহাড়ী এলাকার অবস্থানকারী কয়েকটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নিদর্শন প্রদর্শনীর ব্যবস্তা করা হয়েছিলো। তবে ১৯৭৪ সারে আগ পর্যন্ত জাদুঘরটি সাধারণ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিলোনা, ১৯৭৪ সালের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সময়ে এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৮ সালের প্রথম এই জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরটি সম্প্রসারণের পদক্ষেপ গৃহীত হয় এবং ১খ, ২খ, ৩খ এবং ৪খ (৪টি নতুন কক্ষ) নির্মিত হয়।

আবার ১৯৮৫ সালে জাদুঘরটিরতে পূর্বদিকে ২টি নতুন গ্যালারি (৩ ও ৪) সংযোজন করা হয়। প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ঃ আমাদের সমাজে যারা সামাজিক মূল অগ্রযাত্রা থেকে পিছিয়ে আছে, যাদেরকে সমাজ প্রয়াশই অবজ্ঞ’া করে সে সকল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানানোর জন্য এই জাদুঘরটির স্থাপিত হয়। তবে এটি পর্যাটন শিল্পের উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। প্রতি বছর শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের গবেষণার সাথে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ছাড়াও দেশী বিদেশী বিভিন্ন পর্যটক এ জাদুঘর দেখতে আসেন এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করে। বিষয়বস্তু ঃ জাদুঘরটির প্রদর্শনীগুলোর মূল বিষয় হলো জাতিতত্ত্ব।

নৃতত্ত্ব শাস্ত্রের সাংস্কৃতিক শাখার উপশাখা। এখানে ২৭টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উপকরণকে বিভিন্ন ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। জাদুঘরটির সীমানা ঃ চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরটি ১.২৫ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত সমগ্র এলাকাটি একটি সীমানা দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। জাদুঘরটির বর্তমান অবস্থা ঃ চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর এর মাঝখানে একটি বড় হলঘর এবং পাশাপাশি ২টি গ্যালারী ৪টি কক্ষ এবং পূর্বপাশ্কে ছয়টি কক্ষ রয়েছে। ১ ক কক্ষে কয়েকটি দেশের কিছু সংখ্যক জনগোষ্ঠীর লোকায়েত জীবন ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্বকারী দ্রব্যাদি ও মডেল প্রদর্শিত হয়েয়েছ।

এছাড়াও ভারত, অষ্ট্রেলিয়া, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের কয়েকটি জনগোষ্ঠীর স্বলপসংখ্যক জাতিতাত্ত্বিক নিদর্শন। ১ খ কক্ষে পাকিস্তানে বসবাসকারী পাঞ্জাবী, সিন্ধী, পাঠান, সোমাতি ও কাফির নামক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জীবন ব্যবস্থার ধরণ ও নিদর্শনাদি স্থান লাভ করেছে। ২ ক কক্ষে দেশের ুত্তর পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী মনিপুরী, খাসিয়া ও পঙ্গনদের পরিচিত প্রদর্শিত হয়েছে। ২ খ কক্ষে পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারী গারো, সাঁওতাল, রাজবংশী, ওরাঁও প্রমুখদের পরিচিতি প্রদর্শিত হয়েছে। ৩ নং গ্যালারী তিনটি কক্ষে ত্রিপুরা, খ্যাং বম, চাক, পাংখো প্রমুখদের জীবন ব্যবস্থা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ তুলে ধরা হয়েছে।

৪ নং গ্যালারীর ৩টি কক্ষে মারমা, চাক, ও চাকমাদের জীবনব্যবস্থার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। আর মাঝখানের বড় হলঘরটিতে দেয়াল সংলগ্ন কিছু প্রদর্শনী রয়েছে পাশাপাশি ২টি সাজঘর আর টেবিল আকৃতির কয়েকটি আধারে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অলংকারাদি প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও হলঘরের চারপাশের দেয়ালের উপরাংশে সারিবদ্ধভাবে চিত্রাঙ্গণের মাধ্যমে দেশ বিদেশের বিভিন্ন মৌলগোষ্ঠী ও জনগোষ্ঠী দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দৃশ্য তুলে ধরার প্রয়াস গৃহীত হয়েছে। জাদুঘরে প্রদর্শিত বিভিন্ন জাতি, জনগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের তালিকা ঃ দেশ অঞ্চল জাতি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী আদিবাসী বাংলাদেশ সমগ্র বাংলাদেশী - - বাংলাদেশ বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের উত্তর ও পূর্বাংশ - চাকমা - বাংলাদেশ বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের উত্তর ও পূর্বাংশ - মারমা - বাংলাদেশ বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের উত্তর ও পূর্বাংশ - ত্রিপুরা - বাংলাদেশ কক্সবাজার ও পঠুয়াখালী - রাখাইন - বাংলাদেশ পাবর্ত্য জেলা - - চাক বাংলাদেশ পাবর্ত্য জেলা - - মুরং বাংলাদেশ পাবর্ত্য জেলা - - লুসাই বাংলাদেশ পাবর্ত্য জেলা - - পাংখো বাংলাদেশ পাবর্ত্য জেলা - - খ্যাং বাংলাদেশ পাবর্ত্য জেলা - - কুমি বাংলাদেশ ঢাকা বিভাগের উত্তরাঞ্চল - গারো - বাংলাদেশ ঢাকা জেলার উত্তরাঞ্চল - - হাজং বাংলাদেশ ঢাকা জেলার উত্তরাঞ্চল - - কোড বাংলাদেশ ঢাকা জেলার উত্তরাঞ্চল - - দালু বাংলাদেশ ঢাকা জেলার উত্তরাঞ্চল - - মান্দাই বাংলাদেশ উত্তর পূর্বাঞ্চল - মনিপুরি - বাংলাদেশ উত্তর পূর্বাঞ্চল - খাসিয়া - বাংলাদেশ উত্তর পূর্বাঞ্চল - - বোনা বাংলাদেশ উত্তর পূর্বাঞ্চল - - কুকী বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চল (রাজশাহী) - - সাঁওতাল বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চল (রাজশাহী) - - বাবুবলী বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চল (রাজশাহী) - - রাজবংশ বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চল (রাজশাহী) - - ওরাও বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চল (রাজশাহী) - - স্পলিয়া পাকিস্তান উত্তর পশ্চিম সীমান্ত - - পাকিস্তান প্রদেশ - পাঠান পাকিস্তান সিন্ধু - সিন্ধী পাকিস্তান পাঞ্জাব - পাঞ্জাবী পাকিস্তান আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্ত অঞ্চল (কাফিরিস্তান) - - কাকর পাকিস্তান সোয়াত - সোয়াত ভারত অরুনাচল - - লোদি ভারত মধ্য প্রদেশ - - যুওয়া ভারত মধ্য প্রদেশ - - সুরয়া ভারত মিজোরাম - - মিজো রাশিয়া কিরগিজ - কিরগিজ অষ্ট্র্রেলিয়া প্রত্যন্ত অঞ্চল - অষ্ট্রাল জাদুঘরের প্রদশর্নীতে যে জাতি, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী মৌলগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের জীবনধারার বিভিন্ন দিক উপস্থাপনায় ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে উপস্থাপিত হলো ঃ- ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী ঃ ক্স চাকমা ঃ রাঙামাটি বান্দরবন ও খাগড়াছড়ি পাবর্ত্য জেলাগুরোতে চাকমাদের বসবাস। এদের দৈহিক গড়নের মধ্যে মঙ্গোলীয় বৈশিষ্ট্য লক্ষ্যনীয়।

এরা তিব্বতি বর্মী অহমিয়া ও বাংলার সংমিশ্রনে গঠিত একটি বিশেষ ভাষায় কথা বলে। জাদুঘরে চকমাদের মাচংঘর পুরুষ চাকমাদের বিশেষ পোশাক জুম্মুছিলুম লেংটি পাগড়ি আবার মেয়ে চাকমাদের পোশাক ছিলুম, খাদি পিনন প্রদর্শনীয় জন্য সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও পুরুষ ও নারী চাকমাদের প্রতিকৃতিও জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। চাকমাদের ব্যবহৃত অলংকার ও তাদের তৈরি দ্রব্য সামগ্রীও জাদুঘরে সজ্জিত আছে। ক্স মারমা ঃ মারমাদের এক সময় মগ নামে আখ্যায়িত করা হতো।

এরা মঙ্গোলীয় মালয়ী ইন্দোনেশীয় দৈহিক বৈশিষ্ট্য বহন করেছে এবং তিব্বতী বার্মীজ ভাষায় কথা বলে। লেখার জন্য মায়ানমারের বর্ণমালা ব্যবহৃার করে। বর্তমানে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলসহ কক্সবাজারে এদের বসতি দেখা যায়। চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর এ মারমাদের বিশেষ পোশাক পুরুষদের জন্য শার্ট ব্যবহৃত অলংকার ও অন্যান্য দ্রব্য মেয়েদের লুঙ্গি ব্লাউজ এবং তাদের ব্যবহৃত অলংকারও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও তাদের জুম চাষের একটি প্রতিকৃতি ও সেখানে আছে।

ক্স ত্রিপুরা ঃ রাঙ্গামাটি কাগড়াছড়ি বান্দরবন হবিগঞ্জ এবং কুমিল্লা ও নোয়াখালীর কিছু কিছু অঞ্চলে এরা ছড়িয়ে আছে। তবে এদের মূল অংশটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বাসিন্দা। এক সময় এরা ত্রিপুরা নামে পরিচিত ছিলো । জাদুঘরে তাদের তৈরি পোশাক নানা জাতীয় অলংকার রঙিন পুতির মালা তাদের জীবনযাত্রার প্রতিকৃতি প্রদর্শিত হয়েছে। ক্স রাখাইনঃ বর্তমানে রাখাইনদের কক্সবাজার ও পটুয়াখালী অঞ্চলে বসবাস করতে দেখা যায়।

জাদুঘরে এদের জীবন প্রণালীর বিবিধ দিক উপস্থাপিত করা হয়েছে। ক্স মুরং ঃ এরা ম্রো নামে পরিচিত। রাঙ্গামাটি ও বান্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এদের বসবাস। মুরং মেয়েদের বিশেষ পেশাক ওয়ানইক্লাই তাদের ব্যবহৃত অলংকার এবং জীবনজীবিকার জন্য ব্যবহৃত সকল সামগ্রী পাশাপাশি তাদের পরিচয়বাহক চিত্র জাদুঘরে সজ্জিত আছে। ক্স মনিপুরী ঃ এদের মূল বাসস্থান ভারতের মনিপুরি রাজ্যের মৈরাও পাহাড়ি অঞ্চলে তবে বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন এলাকায়ও এদের দেখা যায়।

আমাদের সমাজের এই বিশেষ ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সাথে আমাদের পরিচয় ঘটানোর জন্য চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরে এদের পরিচয়বাহক বিভিন্ন নিদর্শন প্রদর্শনীর জন্য রাখা আছে। ক্স খাসিয়া ঃ বাংলাদেমের উত্তর পূর্বাংশে অবস্থিত পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে খাসিয়া অন্যতম। এরা সহজ সরল অকৃত্রিম ও আনন্দময় জীবনব্যবস্থার বিশ্বাসী তাদের ভাষার নাম খাসি। জাদুঘরে খাসিয়া মেয়েদের পোশাক কাজি যাপন,লজনখেস ও পুরুষদের পোশাক ফুংগ মাবু সহ তদের জীবনধারনের জন্য ব্যবহৃত নানা দ্রব্যসামগ্রী স্থান পেয়েছে। ক্স গারো ঃ ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে গারোদের বসবাস করতে দেখা যায়।

তাদের দেহের গড়নে মঙ্গোলীয় বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্ট। চট্টগ্রামের জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক বৃহত্তর আসবাবপত্র, অলংকার, তাদের জীবনযাপনের ধরনের বিবিধ প্রতিকৃতি ইত্যাদি স্থান লাভ করেছে। ক্স পাঠান- সিন্ধী -পাঞ্জাবী ঃ পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্তে অঞ্চলে পাঠানদের বসবাস আর পাঞ্জাবে বাস করে পাঞ্জাবী জনগোষ্ঠী এবং সিন্ধুতে সিন্ধী নাম ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী । তৎকালীন পাকিস্তান আমলে যেহেতু জাদুঘরটি নির্মিত হয় তাই পশ্চিম পাকিস্তানের এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সম্পর্কে ধারণা দানের জন্য বিভিন্ন নির্দশন জাদুঘরকে সংরক্ষিত আছে। ক্স কিরগিজ ঃ রাশিয়ার কিরগিজ অঞ্চলে এদের বসবাস।

এরা আমাদের দেশের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর তুলনায় সুবিধার্থে এই জনগোষ্ঠীর বিবিধ নিদর্শনও স্থান পেয়েছে। চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর-এ আদিবাসী ও মৌলগোষ্ঠী ঃ বাংলাদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন আদিবাসী ও মৌলগোষ্ঠী যেমন ঃ চাক, মুরং, লুসাই, পাংখো, বম, খুমি, হাজং, কোচ, দালু, মান্দাই, বোনা, কুকী সাঁওতল বাবুবলী ওরাও পলিয়া এদের সম্পর্কে সাধারণ জনসাধারণকে জানানোর জন্য চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর এদের পরিচয়বাহক উপাদানগুলো প্রদর্শনীর জন্য কক্ষগলোতে সজ্জিত আছে। এছাড়াও পাকিস্তানের কাফিরং ভারতের আদি, মিজো, মুরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার অস্ট্রাল নামক আদিবাসীদের সাথে দেশীয় মৌলগোষ্ঠীর তুলনামূলক বিশ্লেষণ ও তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে তথ্য প্রদানের জন্য এদের সম্পর্কেও প্রয়োজনীয় নিদর্শন জাদুঘরে রাখা আছে। চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর এর প্রতিবন্ধকতাসমূহ ঃ একটি মহান উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে “চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর” টি প্রতিষ্ঠিত হলেও এটি তার লক্ষ্য অর্জনে আজও কাঙ্খিত সফলতা অর্জন করতে পারেনি কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ও কারিগরি দুর্বলতার কারনে। নিম্নে এর কিছু প্রতিবন্ধতাকে তুলে ধরা হলো ঃ-  জাদুঘর পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা কর্মচারীর স্বল্পতা লক্ষ্যনীয়।

 জাদুঘরে কোন আলাদা বিদ্যুৎ সুবিধা নেই, তাই চট্টগ্রাম মহানগরীর ব্যাপক লোডশেডিং সমস্যায় এটি জর্জরিত।  জাদুঘরটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য ইন্টারনেটের অনলাইনে নেই। তাই অনেকে এ যাদুঘর সম্পর্কে জানেনা।  ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার এই সময়ে এখনো চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের অভ্যন্তরীন কাজ আজো মানদাতা আমলের পদ্ধতিতে সম্পাদিত হয়।  দর্শকরে আকৃষ্ট করায় জন্য কোন প্রকারের প্রচার প্রচারনার কাজ আজও কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে নি।

 পর্যটকদেরকে আকৃষ্ট করার জন্যে যে যাদুঘরে কোন রিসেপশন রুম গাইড বুক ইত্যাদি প্রচারের ব্যসস্থা নেয়া হয়নি । জাদুঘরের সময়সূচি ঃ খোলা ঃ গ্রীস্মকালে প্রতিদিন বেলা ২:০০-৬:০০ শীতকালে প্রতিদিন বেলা ২:৩০-৫:৩০ বন্ধ ঃ রবিবার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঃ  চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরকে নিয়ে রূপকল্প ২০১৪-২০২১ এ জাদুঘরের মাষ্টার প্ল্যানিং দুইটি নতুন কক্ষ নির্মানের পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং কক্ষ দুইটিতে যেগুলো আজো সংগৃহিত হয়নি। যে সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক সামগ্রী পোশাক ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হয়েছে; আর প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।  জাদুঘরের সামনের জায়গাটুকু স্থায়ীভাবে জাদুঘরের নামে বরাদ্দ নিয়ে সেখানে বাহারী গাছ শোবন গাছ রোপনের মাধ্যমে স্থানটিতে দর্শক নন্দিত বাগান ও বসার জন্য বেঞ্চের ব্যবস্থা করা সহ জাদুঘরের উন্নয়নের চিন্তা করা হচ্ছে।  জাদুঘরটির মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে তাহাদের সাংস্কৃতি কর্মকান্ড বিনিময় করার একটি পরিকল্পনাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রয়েছে।

 জাদুঘরে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।  ইন্টারনেটে চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর বিষয়ক পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ উদ্যোগ গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের প্রয়োজনীয়তা ঃ  এই জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের মাধ্যমে আমরা আমাদের চতুর্পাশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা ও আচার আচরণ সম্পর্কে জানতে পারি।  এর মাধ্যমে যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ঘটানো সম্ভব তা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙ্গালীদের মধ্যে ভাতৃত্ববোধ গড়ে তুলবে।  আমাদের পর্যাটন শিল্পের উন্নয়নে এমন জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর ভূমিকা রাখতে পারে।

 এ জাদুঘরের মাধ্যমে অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে একটি সেতু বন্ধন স্থাপন করে অতীতের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে শিক্ষা ও সংস্কৃতির ধ্যান ধারণা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।