আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: কারাগার

নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই

কারাগারে ঘুমানোর বিশেষ কোন নিয়ম নেই। চোখ খুলে থাকতে থাকতে সে দেখলো উঁচু জানালার গরাদে আলো আসছে। ভোর হচ্ছে। ছাদ থেকে ঝুলানো বাতিটা উর্ণনাভের অভয়ারণ্য। কেন্দ্রে ডিম ভর্তি মাকড়সা ।

রাত তিনটা থেকে একটা বন্দী মাছি ছটফট করছে। ঠান্ডায় কাশি পায় তার। নানান চিন্তা ঘুরতে থাকে মাথায়। এবার শীত পড়ছে আগে আগে। জেল থেকে লেপ দিতে পারতো।

ঠান্ডা অথচ পাতলা কম্বলে অর্ধেক দেহ ঢেকে ঘুমাচ্ছে তিনজন। দক্ষিণ প্রান্তে দেয়ালে পিঠ স্থাপন করে বসে আছে কব্জিকাটা মতিন। মামলাটা ঝুলছে অনেক বছর। এখানে যখন আসে বেশ জোয়ান ছিল। চোয়ালে মাংস ছিল।

জেলের বছর ৯ মাস। তবুও বছর কাটতে চায় না। মতিন ভারী গলায় ডাকলো, জুলা চোর, শুনলাম জেল বলে তুইল্যা নিবো। কবে নিবো জানস? এমন সময় সোনার ছিনতাইয়ের অভিযুক্ত মানুষটা ঘুমের ভেতর কঁকিয়ে ওঠে, বাপজান, ও বাপজান। তারপর যান্ত্রিক শব্দটা থেমে যায়।

জেল স্থানান্তরে জুলহাসের কোন আগ্রহ নেই । সে বললো, তা অন্য জাগায় গেলে তুমার কি লাভ জেডা? সেই রেশনের জাউ ,পান্যা ডাইল আর টেট্রনের পিরান। মতিন জুলার ধরা পড়ার কারণ জানতে চাইলো। বললো, -এইবারও মাছ? -না জেডা, ফেরামের মুরগী। মাছ নাই।

শহরের বেপারীর ভ্যান আইসা রুইকাতলা কিন্যা লয়। গুড়া মাছ কি আর চুরি করন যায়? কিছুক্ষণের মধ্যে বাইরের সাদা আলো বাড়তে থাকলে মতিনেরও খিদে পায়। মতিন জুলহাসকে জিজ্ঞেস করে, তোর কাছে মাল আছে? -আছে ঘন্টাখানেক পর লোহার ভারী দরজাটা শব্দ করে খুলে যায়। হাতকড়া খুলে আরেকজন আসামীকে ধাক্কা দিয়ে ঢুকিয়ে কারাপ্রহরী চলে যায়। করিডোর ফিনাইলে ধোয়া হচ্ছে।

তীব্র গন্ধে জেলকে হাসপাতাল মনে হচ্ছে। মেঝে মুছতে আসা সুইপার কাছে আসে। জুলহাস বলে, সেলাম মামা। কাটাকুডা কিছু নাই। মামা একটু আড়চোখে তাকায়।

ফিস ফিস করে বলে, "এই বারের গেইটম্যান বদমাইশ। নীতি মারায়। মালের সিস্টামও বুঝে কম"। এক ফাঁকে যাদুকরের মতো বিড়ি-আর ম্যাচ ছুড়ে দেয়। কারারক্ষী কিছু সন্দেহ করে।

উঠে এসে বলে,"ঐ ব্যাডা, তুমার কাম ঝাড়ু দেওন। ফুসুর ফাসুর কর ক্যান?"। জুলহাস ঝাড়ুদারকে বাঁচাতে বললো, " শুনছি আমগো ফরিদাবাদের নতুন জেলে পাঠাইতাছে, এইডাই জিগাইছি?"। কারারক্ষী শুনে গম্ভীর ভাবে বললো, "যা শুনছো ঠিকই হুনছো সামনের পরের মাসে ফরিদাবাদে টেরেন্সফার হইতাছে। -এই জাগায় কী করবো? -জানিনা, মন হয় সুপার মার্কেট উঠবো" * তাং - জুন ২, ২০০৩ মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় আমি মীর বদরউদ্দীন, ফরিদাবাদ মধ্যপাড়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

আমার বিনীত নিবেদন এই যে, আমাদের এই বিদ্যালয়টি ১৯৭২ সাল হইতে অত্র এলাকায় বিদ্যার আলো ছড়াইতেছে। ফরিদাবাদ শহরের অনতিদুরে হইলেও এইখানে একটি মাত্র মাদ্রাসা ব্যতিত অপর কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। পাড়ার উৎসাহী অভিভাবক এবং জ্ঞানপিপাসু ছাত্রবৃন্দের অশেষ পরিশ্রমে ইহা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর কয়েকশত ছাত্র এই বিদ্যালয় হইতে মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সম্প্রতিকালে বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী মাঠ দখল করিয়া কারাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হইয়াছে।

এই ক্ষুদ্র জমিনখানি পাড়ার সমাজসেবক উসমান চৌধুরীর দানে প্রাপ্ত। গত তিন বছরে বহু প্রতিবাদ করিয়াও মাঠ দখল নিবৃত্ত করিতে পারিতেছি না। অতি সম্প্রতি একখানা নোটিশ গোচরীভূত হইয়াছে। বিদ্যালয়টি ভাঙ্গিয়া জেলখানার বর্ধিতাংশ নির্মাণের নির্দেশ আসিয়াছে। বলা বাহুল্য সামনে বার্ষিক পরীক্ষা, এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ছাত্রগণ ব্যস্ত।

আমি আকুল আবেদন করিতেছি যে, বিদ্যালয় ভাঙ্গিয়া অন্যত্র সরানোর পরিবর্তে জেল খানা অন্যত্র নির্মানের জন্য হুজুরের কৃপা হয়। মীর বদরউদ্দীন প্রধান শিক্ষক ফরিদাবাদ মধ্যপাড়া বিদ্যালয় * শহরের পরিস্থিতি উত্তপ্ত। দেশে অপরাধ বাড়ায় এক বছরে আসামী প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমান সদর কারাগার থেকে ফরিদাবাদ ৫ মাইল দুরে। কয়েকশত বিঘা জমিদখল করে নতুন কারাগার নির্মাণ চলছে।

শেষ পর্যায়ে এর সীমা আর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৃদ্ধ বদরউদ্দীনের নেতৃত্বে এর প্রতিবাদে ব্যানার নিয়ে মুখো মুখি দাঁড়িয়ে আছে ছাত্র এবং গ্রামবাসী। পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করেছে। পুলিশের আইজি খবরের কাগজের দিকে বিরক্ত হয়েছিল। পুলিশী নির্যাতনের খবর ছাপানো্ হয়েছে ছবি সহ।

এমন সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ফোন পায় -আইজি সাহেব -স্যার -ফরিদাবাদে সমস্যা কি? -স্যার, উসমান চৌধুরীর দানের জায়গাটাতে যে ইস্কুল ছিল সেটা স্কুলের ছেলেরা পিকেটিং করছে। আমরা কাঁদুন গ্যাস দিয়েছি। আজকে ১৪৪ দেয়া হবে। -পাবলিক সেন্টিমেন্ট তো ইস্কুলের দিকে। হেডমাস্টার কে কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেন।

ফয়সালা করেন। -জি স্যার, লোক পাঠিয়ে সাধিয়েছি। কিন্তু সে উল্টা ক্ষেপে গেছে, স্যার। -মুগুর না দিলে বাঙালির শায়েস্তা হবে না। একশানে যান -কিন্তু স্যার? * পিকেটিং চলছে।

বুলডোজার দিয়ে স্কুলের এক অংশ ভাঙতে আসছে পুলিশের দল। টিয়ার শেল নিক্ষিপ্ত হলো। ছাত্ররা বৃষ্টির মতো পাথর নিক্ষেপ করতে থাকলো। ঠিক এমন সময় পুলিশ রবার বুলেট নিক্ষেপ করে। কিছু একটা ফোটার শব্দ হয়।

* জুলহাস কারাগারে বসে থাকা মীর বদরউদ্দীনের দিকে চেয়ে বললো, স্যার, আপনারেও ধইরা আনছে। -জ্বি -এ জায়গাটা পরিষ্কার। আরাম করে বসেন। স্কুলের গ্রেফতার কৃত তিনটা ছেলেটাকে জেল থেকে নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হবে। জুলহাস বিনম্র ভাবে বললো, স্যার, আপনেরা জেলে থাকলে পোলাপানগর ক্ষতি।

হেগো কথা মতো চললেই হয়। দীর্ঘক্ষণ বিরতি। তারপর বৃদ্ধ বদরমাস্টার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে -যে দেশে বিদ্যালয় ভেঙে জেল হয়, সেই দেশে জেলে থাকাই উত্তম। ---- ড্রাফট ১.০

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.