আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার মনে হয় বাংলাদেশে নতুন একটা অনার্স কোর্স চালু করা উচিত , বিষয় - * বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র * । প্রথম আলোর * বিশ্ব ভ্রমনকারীর বাংলাদেশ দর্শন * আর্টিকাল পড়ে একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমার একটুও লজ্জা হইনি , কারন আমি নির্লজ্জ , বেহায়া ও ইতর । আপনাদের কি অবস্থা

http://www.facebook.com/shahed69

মূল লেখা - Click This Link যারা পড়েন নাই , তাদের জন্য কপি পেস্ট বয়স ৫৭। লম্বা একহারা গড়ন, স্বভাবে নরম-সরম। লাজুক এবং মৃদুভাষীও। কথা বললে মনে হবে অত্যন্ত সংবেদনশীল ও অভিমানী মানুষ। তবে চোখ ভরা অন্তর্গত সাহসের স্ফুলিঙ্গ।

এই আবেগ আর সাহসের কারণেই একাত্তরকে আলিঙ্গন করতে পেরেছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তার সালাউদ্দিন, এখন কানাডার নাগরিক। পেশায় হিসাবরক্ষক। আবদুস সাত্তার খবরের অনুষঙ্গ হতেই পারেন। কারণ এই বয়সে তিনি বিশ্ব ভ্রমণে বের হয়েছেন, তাও গাড়ি চালিয়ে।

সঙ্গী আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয়, নাম স্যাল বয়। ইতিমধ্যে ২২টি দেশ পাড়ি দিয়েছেন তাঁরা। ভূগোল পরিক্রমার অংশ হিসেবে এসেছেন প্রিয় বাংলাদেশে। কানাডার টরন্টো শহর থেকে গত বছরের ২ আগস্ট যাত্রা শুরু করে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে ইংল্যান্ড, তারপর ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, সার্বিয়া, ইউক্রেন, রোমানিয়া, বুলগেরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ ঘুরে তুরস্ক। তারপর ইরান, পাকিস্তান, ভারত হয়ে বাংলাদেশ।

তারপর? তারপর, বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র ভ্রমণ। কত সময়? ছয় মাস। বিশ্ব ভ্রমণ? আপাতত স্থগিত। সঙ্গী স্যাল বয় ফিরে গেছেন কানাডায়। সাত্তার আটকে গেছেন তাঁর গাড়িটা নিয়ে।

শুধু গাড়িও না। বয়সের কারণে এই মুক্তিযোদ্ধার বিশ্বভ্রমণ নিয়ে যাঁরা ভ্রুকুটি করেছেন, অন্যের ব্যর্থতা যাঁদের আনন্দ দেয়, অন্যকে সফল হওয়ার পথে সহায়তা দিতে যাঁদের অনীহা, তাঁদের কাছে হারতে বড় কষ্ট হচ্ছে তাঁর। গত মে মাসে করাচি বন্দর থেকে তাঁদের মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার ২০০৬ মডেলের গাড়িটি চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে জাহাজে তুলে দিয়েছেন আবদুস সাত্তার। ঢাকায় এসে গাড়ি ছাড় করতে যান কমলাপুর আইসিডির শুল্ক কর্মকর্তার দপ্তরে। উপকমিশনার কাগজপত্র দেখলেন।

তারপর ডেকে আনলেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সমিতির কর্মকর্তাদের। আলোচনা করে জানালেন, বিশ্বভ্রমণে এলেও গাড়িটি ছাড় করাতে প্রধান নিয়ন্ত্রক, আমদানি-রপ্তানি (চিফ কন্ট্রোলার অব ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট) দপ্তরের ছাড়পত্র লাগবে। ২২ মে প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে ধরনা। জানানো হয়, তাদের কাছে নয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। কিন্তু বিশ্ব ভ্রমণকারী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ঠাঁই করতে পারছিলেন না।

দুই যুগ ধরে কানাডায় বসবাসকারী আবদুস সাত্তার বলেন, ‘তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের যশোরে। যশোরের চৌগাছা উপজেলার চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তিনি যশোর-২ আসনের সাংসদ মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদের সঙ্গে পরিচিত হন। এরপর তাঁর সুপারিশ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যান। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় গত ২৬ মে খোদ সাংসদকে নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দরখাস্ত জমা দিতে সক্ষম হন। আড়াই মাস পর গত ১১ আগস্ট তিনি মন্ত্রণালয়ের ওই ছাড়পত্র পান।

এই আড়াই মাসে প্রায় প্রতি কার্যদিবসে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ধরনা দিয়েছেন। কারণ? সাত্তার জানান, ‘কর্মকর্তারা বলেছেন, আপনি না আসলে তো কাজ হবে না। ’ এই ছাড়পত্র নিয়ে সাত্তার আবার যান প্রধান নিয়ন্ত্রক, আমদানি-রপ্তানির দপ্তরে। ১৮ আগস্ট সেখান থেকে ছাড়পত্র নিয়ে যান চট্টগ্রাম শুল্ক কার্যালয়ে। সেখানে যাওয়ার পর শুল্ক কর্মকর্তারা বলেন, ‘এত ছাড়পত্রের দরকার নেই।

এগুলো কেবল বিদেশিদের জন্য প্রযোজ্য। ’ সাত্তার জানান, তিনি বিদেশি নাগরিক এবং কানাডার নাগরিক হিসেবেই তিনি বিশ্বভ্রমণে বের হয়েছেন। জবাব, ‘আপনি তো দেখতে বাংলাদেশিদের মতো। এ ছাড়পত্র আপনার জন্য না। ’ তাহলে আমাকে কী করতে হবে? জানতে চান সাত্তার।

পরামর্শ—আপনি রাজস্ব অধিদপ্তরে (এনবিআর) যান। আবদুস সাত্তারের জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তাঁকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে—১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে আপনার গাড়িটি নিলাম করা হবে। সাত্তার দ্রুত ছুটে যান এনবিআরে। লিখিত আবেদন করে নিলাম স্থগিত করাতে সক্ষম হন।

এবার চট্টগ্রাম শুল্ক কার্যালয়ের পরামর্শে ২৪ আগস্ট দরখাস্ত করেন এনবিআরে। ৮ সেপ্টেম্বর এনবিআর তাঁকে চিঠি দিয়ে জানায়, গাড়ির দাম ধরে ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দিয়ে গাড়িটি ছাড় করাতে পারবেন তিনি। এই পত্র নিয়ে সাত্তার যান চট্টগ্রাম শুল্ক বিভাগে। সেখানকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সাদা কাগজে একটি খসড়া হিসাব দিয়ে তাঁকে ৯৫ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে বলেন। কিন্তু এত বড় অঙ্কের টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার অবস্থা এখন আর সাত্তারের নেই।

তা ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশে এমন ব্যাংক-জিম্মা দিতে হয়নি তাঁদের। বিশ্ব ভ্রমণকারীর জন্য চট্টগ্রাম শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সর্বশেষ পরামর্শ ছিল—এনবিআরের চেয়ারম্যানের কাছে বিশেষ বিবেচনার জন্য আবেদন করেন। আবার এনবিআরের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করা হয়। দুই সপ্তাহ পর এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব রেজাউল হকের জবাব, ‘এ ব্যাপাবে চেয়ারম্যান মহোদয়ের কিছু করার নেই। এটা তাঁর ক্ষমতার বাইরে।

’ গতকাল জানতে চাইলে এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ভ্রমণের জন্য এক দেশ থেকে আরেক দেশে গাড়ি নিতে হলে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়, যাকে বলে ‘কারনেট দ্য প্যাসেজ’। এটি থাকলে বিনা শুল্কে এক দেশ থেকে আরেক দেশে গাড়ি নেওয়া যায়। দেশে আনার আগেই তাঁকে এই অনুমতি নিতে হতো। কিন্তু তিনি এই অনুমতি নিয়ে আসেননি। অন্য দেশগুলোতে তো তিনি এই সমস্যায় পড়েননি।

জবাবে রেজাউল হক বলেন, ‘সবাই তাঁকে ছেড়ে দেয়নি। তিনি গাড়ি নিয়ে পাকিস্তান থেকে ভারতে যেতে পারেননি। ’ বাংলাদেশ কি গত ছয় মাসে এই সমস্যার সমাধান করতে পারত না? রেজাউল হক বলেন, ‘এনবিআর আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারে না। তাঁকে এখন বলা হয়েছে, গাড়ির মূল্য অনুযায়ী একটি অঙ্কের টাকা জিম্মা রাখতে হবে। গাড়ির দাম অনুযায়ী সেটি ঠিক করা হয়েছে।

এক কোটি টাকা তিনি কীভাবে দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এনবিআরের এ বিষয়ে কিছু করার নেই। ’ আবদুস সাত্তার জানান, গত ছয় মাসে বন্দরে কনটেইনার ভাড়া, পোর্ট ট্যাক্স, পার্কিং ইত্যাদি বাবদ দুই লাখ টাকার ওপরে বিল এসেছে। তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা ছিল, বাংলাদেশ ঘুরে আমরা সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড-মিয়ানমার-চীন যাব। তারপর মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো ঘুরে যুক্তরাষ্ট্র হয়ে কানাডা ফিরব। কিন্তু এখন সব ভেস্তে যেতে বসেছে।

’ আপনি কারনেট দ্য প্যাসেজ নেননি কেন? জানতে চাইলে সাত্তার বলেন, ‘কানাডায় থাকতে এ বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের জানা ছিল না। অন্য কোনো দেশও এটা চায়নি। ’ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শুল্ক কার্যালয়ের কমিশনার (আমদানি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটক হিসেবে এখানে আসার জন্য তাঁর যে অনুমতি, সেটি ছিল না। তবে বিষয়টি কাস্টমস হাউসের রপ্তানি শাখা দেখে। তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগযোগ করতে হবে।

চট্টগ্রাম শুল্ক কার্যালয়ের কমিশনার (রপ্তানি) জামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদেশ থেকে কোনো গাড়ি আনলে এলসি থাকতে হয়। এলসি না থাকলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি আনতে হবে। কারণ, গাড়ি তো আর শুল্ক ছাড়া দেওয়া যায় না। এ কারণে আমরা তাঁর কাছে শুল্ক দাবি করি। তিনি শুল্ক মাফের জন্য আবেদন করেন।

আমরা বলি, এটি মাফ করতে পারে এনবিআর। আমাদের কিছু করার নেই। এরপর তিনি এনবিআরে যোগযোগ করলে এনবিআর তাঁকে গাড়ির দাম অনুযায়ী টাকা ব্যাংকের জিম্মায় রাখতে বলেন। তাঁর গাড়িটি জাপানি। ইয়োলো বুক অনুযায়ী তাঁকে জিম্মা দিতে হবে এক কোটি টাকা।

’ এই টাকা না থাকলে তিনি কী করবেন জানতে চাইলে জামাল হোসেন বলেন, ‘তিনি বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছেন আর তাঁর কাছে টাকা নেই, সেটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। আর টাকা না থাকলে তিনি আবার এনবিআরে যান। আবেদন করুন। এনবিআর চাইলে এটি মাফ করতে পারে। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই।

’ অন্য দেশগুলোতে তিনি কীভাবে গাড়ি ছাড়ের অনুমতি পেলেন জানতে চাইলে জামাল হোসেন বলেন, ‘অন্য কোনো দেশ মাফ করতে পারে। কিন্তু এ দেশে কোনো ধানাই-পানাই নেই। ’ বিশ্ব ভ্রমণকারীর গাড়িটি ছাড় করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন যশোর-২ আসনের সাংসদ মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তাঁর সব কথা শুনে তাঁকে নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গেছি। সেখানকার যুগ্ম সচিব, মহাপরিচালক সবার সঙ্গে দেখা করেছি।

লোকটি তো কোনো খারাপ কাজে আসেননি। কিন্তু তাঁকে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এক কোটি টাকা লোকটি কোথা থেকে পাবেন। বিষয়টি দুঃখজনক। আমি অনেক চেষ্টা করেছি।

পারিনি। আপনারা মিডিয়া পারলে কিছু করেন। ’ ‘নিজেকে জানো, বিশ্বকে জানো’ স্লোগান নিয়ে সাত্তাররা বিশ্বভ্রমণ শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশকে ‘জেনে’ সে ভ্রমণ এখন প্রায় বাতিলের খাতায়। পরিবেশ বাঁচাও, পৃথিবী বাঁচাও; স্বাস্থ্য বাঁচাও, পরিবার বাঁচাও—এ ছিল তাঁদের সচেতনতামূলক প্রচার।

এখন সাত্তার নিজে বাঁচতে চান। বেঁচে-বর্তে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চান কানাডায়। আরেকটি ইচ্ছা তাঁদের ছিল—বাংলাদেশ ভ্রমণ শেষ করে যখন বাকি বিশ্বের পথে পা বাড়াবেন, তখন তাঁরা প্রচার চালাবেন প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য সুন্দরবনের জন্য, বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের ‘বন্য আমলাতন্ত্র’ তাঁকে বেঁধে রেখেছে আইনের লতাগুল্ম দিয়ে। মুক্তিযোদ্ধা সাত্তারকে মুক্ত করুক বাংলাদেশ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।