আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নূর হোসেন, আমরা গাধার পিঠে উল্টো হয়ে বসে আছি.. আমরা সামনে যাচ্ছি..



১০ই নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস। ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরাচার এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলনে উন্মাতাল ছিল ঢাকা শহর। নূর হোসেন নামের ঝাকড়া চুলের এক যুবক বুকে 'স্বৈরাচার নিপাত যাক' আর পিঠে 'গণতন্ত্র মুক্তি পাক' লিখে দেশের সকল জনতার জীবন্ত পোস্টার হয়ে শামিল হয়েছিলেন মিছিলে। বিশাল মিছাল। মিছিলের অবয়ব পাল্টে দিয়েছিল এক জীবন্ত পোস্টার স্বৈরাচারের পোষা পুলিশ বাহিনীর কাছে এই পোস্টার গ্রহনযোগ্য নয়।

মিছিল গ্রহনযোগ্য নয়। তাই বিকাল আনুমানিক তিনটার দিকে মিছিলে চলে গুলি। নিহত হন জীবন্ত পোস্টার নূর হোসেন। নর হোসেন হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে আন্দোলন বেগবান হয়। পরবর্তীতে ৩ বছরের মাথায় স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন হয়।

আজ আওয়ামী লীগ নূর হোসেন দিবস উদযাপন করবে। নূর হোসেন শরীরে 'গণতন্ত্র মুক্তি পাক' শ্লোগান লিখে মিছিলে গিয়েছিল। কিন্তু ঘাতকের গুলি তাকে ঘরে ফিরতে দেয়নি। নূর হোসেন যে আদর্শ, বিশ্বাস এবং স্বপন নিয়ে মিছিলে গিয়েছিল সেই আদর্শের ধারকরা আজ তার হত্যাকারীর পরম সখা। ১৯৯৬ সালে নূর হোসেনের আদর্শের দল বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় আসীন হয়।

ক্ষমতাকে মসৃন করতে তারা ঘাতক এরশাদের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলিকে একে একে দূর্বল করতে থাকে। যাদের ১৯৯৬-২০০০ সময়কালের আওয়ামী লীগের ঐক্যমতের সরকারের কথা মনে আছে তাদের নিশ্চয়ই এটাও মনে আছে ঐক্যমত বাস্তবায়নের জন্য স্বৈরাচার এরশাদ কত সহজে উপহার হিসেবে একের পর এক জামিন পেয়ে গেলেন। তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো পরিণত হতে শুরু করল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলা হিসেবে। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ঐক্যমতের সরকারের পর ক্ষমতাসীন হয় বিএনপি'র ডালভাতের সরকার। তারা এবার আর এরশাদকে কদর করতে ভুল করে নাই।

তারাও এরশাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। অবশ্য শাসনামলের শেষ দিকে চতুর এরশাদ ডিগবাজী দিয়ে পুরানো বন্ধুদের সাথে যোগ দিয়ে মহাজোট গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। নিজেদের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দল হিসাবে দাবী করা আওয়ামীলীগ ‍‍নিবর্াচনী ‍বৈতরনী পার আর সরকার গঠনের জন্য স্বৈরাচারের প্রাণ পুরুষ এরশাদকে নিয়ে জোট গড়ে। এই মহাজোট গড়ার জন্য গণতন্ত্রের মানসকণ্যার কোনরুপ দ্বিধাবোধ বা লজ্জা নামক অনুভূতিটি ক্রীয়াশীল হয়েছিল কিনা জানা নাই। আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের অন্যতম নির্বাচনী ওয়াদা 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার' সম্পাদন।

১৯৭১ সালে হোমো এরশাদের ভূমিকা ছিলো বিতর্কিত। তিনি তখন অবস্থান করতেন পশ্চিম পাকিস্তানে। যতদূর জানা যায় তিনি সেখানে বাঙালী অফিসারদের বিচারের জন্য যে মার্শাল কোর্ট গঠন করা হয়েছিল তার সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তার ভূমিকা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যায় তার একটি সাম্প্রতিক মন্তব্যে। মাসখানের আগে তিনি বলেছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামীলীগের একক নির্বাচনী এজেন্ডা, মহাজোটের বা জাতীয় পার্র্টির এজেন্ডা নয়।

' মহাজোটের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কোন নেতাই এরশাদের এই বক্তব্যের উত্তরে কিছু বলেন নাই। কারন তারাও সত্যটা জানেন। অথচ বিতর্কিত যুদ্ধাপরাধীর সাথে জোট গড়ার ক্ষেত্রেও স্বাধীনতা যুদ্বে নেতৃত্ব দেওয়া দলের নেত্রী বা কোন নেতা হীনমন্যতায় ভুগেন নাই। কারন ক্ষমতাই শেষ কথা, বাকী সব বাতুলতা। আজ আওয়ামী লীগ মহা সমারোহে শহীদ নূর হোসেন দিবস পালন করবে।

মহাজোটের অন্যান্য শরীক দলও দিবসটি পালন করবে। নূর হোসেনের চেতনা বাস্তবায়নের কথা বলবে। অথচ মহাজোটের শরীক একটি দল যে এই দিবসটি ভুলে যেতে চায় তাদের পালের গোদাকে নূর হোসেন হত্যাকান্ডের জন্য বিচারের মুখোমুখি করবে না। কারন গণতন্ত্রের জন্য জীবন উতসর্গ করা নূর হোসেন অপেক্ষা জীবিত এরশাদ ভোটের রাজনীতিতে অনেক বেশী লাভজনক। নেতাদের কাছে গণতন্ত্র বাজে কথা, নূর হোসেন ফালতু সেন্টিমেন্ট( বছরের একটি দিনে যাকে নিয়ে বড়জোড় হইচই করা যায়), কাজের জিনিস হল ভোটের হিসাব আর মসনদ লাভের তরীকা।

তাই স্বৈরাচার আর গণতন্ত্র মিলেমিশে একাকার। মহাজোট একদিন আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবে। অবশ্য ডিজিটাল গণতন্ত্র আমরা পেয়ে গেছি। নূর হোসেন-এর শ্লোগান ব্যর্থ হয়নি। গণতন্ত্র মুক্তি পেয়েছে।

গণতন্ত্র মুক্তি পেয়েছে দেশ থেকে। এমন এক দেশ থেকে যেখানে মীরজাফররা কখনো মরে না। আমাদের ইতিহাস বিজয়ের ইতিহাস, আমাদের ইতিহাস মীর জাফরদের পূনঃ বাসিত করার ইতিহাস। নূর হোসেন, আমরা গাধার পিঠে উল্টো হয়ে বসে আছি। আমরা সামনে যাচ্ছি।

আমরা গণতন্ত্রে আছি, স্বৈরতন্ত্রেও আছি। আমরা ক্ষমতালোভী মৌমাছি। তুমি লোভহীন মরে গেছ সেই ভাল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।