আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইভ টিজিং প্রতিরোধে কারাতে

জানতে চাই নিজেকে....

‘কলেজে যাওয়া-আসার পথে বখাটেরা নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে। অভিভাবক বা প্রশাসনকে জানাতে গেলেও বিপত্তি। অনেকেই উল্টো মেয়েদের দোষ দেয়। ক্ষোভে-লজ্জায় আত্মহত্যা করে অনেক মেয়ে। কিন্তু এভাবে আর চলা যায় না।

তাই ঠিক করেছি কারাতে শিখব। মুখ বুজে বখাটেপনা আর কত দিন সহ্য করব? এবার শুরু হবে প্রতিরোধ। ’ কথাগুলো বলছিল কারাতে শিখতে যাওয়া টাঙ্গাইলের শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্রী তমা মণি। তার মতো অনেকেই উত্ত্যক্তকারীদের প্রতিরোধ করতে কারাতে শেখা শুরু করেছে। উত্ত্যক্তকারীদের থেকে আত্মরক্ষায় টাঙ্গাইলের স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের কারাতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কর্মসূচি শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

গতকাল রোববার শহরের শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা কলেজে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক এম বজলুল করিম চৌধুরী। কলেজের অধ্যক্ষ মো. মারুফুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও উন্নয়ন) সাইফুল্লাহিল আজম, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহাম্মেদ, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি হারুন অর রশিদ, কলেজের শিক্ষিকা শায়লা সুলতানা, কারাতে প্রশিক্ষক মালিহা তানজিনা প্রমুখ বক্তব্য দেন। প্রথম দিন ৪০ জন ছাত্রী কারাতে প্রশিক্ষণ নিতে নাম লিখিয়েছে বলে জানান প্রশিক্ষক মালিহা তানজিনা। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ পেলে একজন ছাত্রী উত্ত্যক্তকারীর হাত থেকে নিজেকে সহজেই রক্ষা করতে পারবে। এতে উত্ত্যক্তকারীদের মনোবল ভেঙে যাবে।

টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সরকারি সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) তানিয়া বখ্শ জানান, ‘আইনে প্রতিটি নাগরিকের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। দণ্ডবিধির ৯৬ থেকে ১০৬ ধারায় শারীরিক, ব্যক্তিগত সম্পত্তি, অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ, কাম-লালসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে। তাই আত্মরক্ষার জন্য মেয়েরা কারাতে প্রশিক্ষণ নিয়ে তা প্রয়োগ করতেই পারে। ’ জেলা প্রশিক্ষক বলেন, ‘ফজিলাতুন্নেছা কলেজে এই কারাতে প্রশিক্ষণ শুরু হলো। পর্যায়ক্রমে জেলার সব বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজে এই কার্যক্রম শুরু হবে।

’ পুলিশ সুপার বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণ মেয়েদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। তারা উত্ত্যক্তকারীদের কবল থেকে নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করতে পারবে। ’ প্রশিক্ষণ নিতে আসা প্রথম বর্ষের ছাত্রী ইশরাত জাহান বলেছে, ‘আমাদের নিরাপত্তা আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে। তাই কারাতে প্রশিক্ষণ নিতে অনেক ছাত্রী আগ্রহী। ’ ওই কলেজের ছাত্রী রুখসানা সিরাজি, অনুপমা রায়, রেহানা সিরাজি, কনক সাহাসহ অনেক ছাত্রী একই মত প্রকাশ করে।

এই কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবকেরাও। ফজিলাতুন্নেসা কলেজের এক ছাত্রীর অভিভাবক আবদুল আজিজ বলেন, ‘ছাত্রীদের কারাতে শেখানোর এই উদ্যোগ ভালো লেগেছে। এর মধ্য দিয়ে মেয়েদের নিরাপত্তা অনেকটাই নিশ্চিত হবে বলে আমার বিশ্বাস। ’ শহরের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর মা এলিজা আক্তার বলেন, ‘কারাতে শিখলে বখাটেদের প্রতিরোধে মেয়েদের কারও দ্বারস্থ হতে হবে না। নিজের নিরাপত্তা নিজেরাই দিতে পারবে।

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ছাত্রীদের জন্য এই কর্মসূচি দ্রুত চালু করা দরকার। ’ তবে ভিন্নমতও রয়েছে। কয়েকজন তরুণ প্রথম আলোকে বলেন, এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ছেলেদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে মেয়েদের। দু-চারজন বখাটের জন্য পুরো তরুণ সমাজের বদনাম হতে পারে না। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সহসভাপতি বাদল মাহমুদ বলেন, ‘মেয়েদের কারাতে শেখানোর উদ্যোগটা ভালো।

তবে এটা নারীদের উত্ত্যক্ত করা বন্ধে বড় পদক্ষেপ নয়। সরকারের দায়িত্ব উত্ত্যক্তকারীদের চিহ্নিত করে আইনে সোপর্দ করা এবং নিরপেক্ষভাবে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা। ’ টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও উন্নয়ন) সাইফুল্লাহিল আজম বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যদি ১০টি করে মেয়েকেও আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো যায়, তবে তারা উত্ত্যক্তকারীদের প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। ’ তিনি জানান, বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের শারীরিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের মাধ্যমে ছাত্রীদের কারাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। গত ৮ নভেম্বর প্রথম আলো-য় প্রকাশিত সংবাদ ।

সবার সুচিন্তিত মতামত কামনা করছি...........

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।