আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নো ম্যান্স ল্যান্ড

কিছু দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে এই জীবনে। ভ্রমণ আমার ভাল লাগে্‌ তাই সবার মাঝে তা জানাতে চাই। সবার উপরে ভালোবাসি বাংলাদেশ । ধন্যবাদ পি ডি কে ও পি ইউ কের নো ম্যান্স ল্যান্ড কুর্দিস্থানে দুটো রাজনৈতিক দলের মধ্যে রেশারেশি চলতেই থাকত। মাঝে মাঝে তা গৃহযুদ্ধের আকার নিত।

যদিও সীমিত পরিসরে তবুও কয়েক দিনের জন্য সবকিছু থেমে যেত। ইরবিল পি ডি কের নিয়ন্ত্রনেও সোলেমানিয়া পি ইউ কের নিয়ন্ত্রনে ছিল। সোলেমানিয়ার কিছু কিছু শহর আবার ইসলামিক মুভমেন্টের যোদ্ধাদের দখলে ছিল। সব দলেরই আর্মস উইং আছে এবং এ ধরনের সমস্যা হলেই দুপক্ষ তাদের নিজস্ব বর্ডারে প্রহরা জোরদার করে এবং প্রদেশগুলোর মধ্যে চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে জাতিসংঘের ত্রানবাহী ট্রাক গুলো যেমন চলতে পারে না তেমনি স্বাভাবিক ব্যবসা ও বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

কুর্দিস্থানের সমস্যার মাঝেই পাশের দেশ ইরানের কিছু শরণার্থীকে নরওয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়। সে সময় সোলেমানিয়ার জাতিসংঘ মিশনের কাছে নরওয়ে সরকার সেইসব আশ্রয় প্রার্থী শরণার্থীদের কুর্দিস্থান থেকে তুরস্ক হয়ে নরওয়েতে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করে। মহিলা পুরুষ ও বাচ্চাসহ পঁচিশ জনের একটা শরণার্থী দল ইরাণ থেকে বর্ডার পার হয়ে সোলেমানিয়াতে আসে। এরা ইরানের ভিন্নমতাবলম্বী কোন দলের সদস্য তাই ইরান থেকে তারা নির্বাসিত হয়ে নরওয়েতে যাচ্ছে। তুর¯ক যেতে হলে ইরবিল এর রাস্তা হয়ে এরা যেতে পারবে না তাই বালিসান বা হিরণ ভ্যালীর রাস্তা দিয়ে যেতে হবে, এই রাস্তাগুলোর মাঝামাঝি দুপক্ষের যোদ্ধারা পজিশন নিয়ে আছে।

যোগাযোগ বন্ধ এবং তারা অস্ত্রবিরতী লংঘন করছে। কি বিপদে পড়া গেল, ঠিক এ সময় শরনার্থী দলকে যেতে হবে নরওয়েতে, তুর¯ক থেকে তাদের বিমানের ব্যবস্থা হয়েছে দিন তারিখ সব ঠিক। না যেতে পারলে পরে বড় ধরনের সমস্যা হবে। আই সি আর সির তত্ত্বাবধানে এরা নতুন দেশে যাত্রা করছে এবং ইরাকের মধ্যেও তারা নিরাপদ নয়। দুই তিন সপ্তাহ ধরে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব এবং যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সোলেমানিয়াতে কর্মরত বিভিন্ন বিদেশী এনজিওতে কর্মরত লোকজন ও তাদের অন্যান্য অফিস গুলোর সাথে যোগাযোগ রাখতে পারছিলনা এবং তাদের ও অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছিল।

সবাই দু দলের মাঝের নো ম্যান্স ল্যান্ড পার হয়ে ওপারে যেতে চায়। দেখতে দেখতে শরনার্থীদের বাসগুলোর সাথে আরো বারটা গাড়ীর বিশাল বহর তুরস্কে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। কুর্দিস্থানের দলগুলো জাতিসংঘের অনুরোধ প্রায় সময় রাখার চেষ্টা করত। সেই সাহস নিয়ে একদিন সকালে বিশাল এই বহর নিয়ে আস্তে আস্তে নো ম্যান্স ল্যান্ড এর দিকে রওয়ানা হলাম। ইরানী শরনার্থীরা একদম চুপচাপ।

তাদের অনিশ্চিত যাত্রায় আরো কত দুর্ভোগ আছে এই চিন্তায় তারা আচ্ছন্ন। বাকী বিদেশীরা ভাবছে গুলি না খেয়ে পার হতে পারবো তো। ফিরে আসতে হবে কি? যাক ঘন্টাখানেকের মধ্যে আমরা পি ইউ কের সীমান্তে পৌঁছে গেলাম। এখানকার পাহাড়ে তাদের যোদ্ধারা অস্ত্র তাক করে পজিশন নিয়ে আছে। এক কিলোমিটার দুরের পি ডি কে পজিশনের দিকে।

মাঝের এক কিলোমিটার রাস্তা হলো কিলিং গ্রাউন্ড, যে কোন পক্ষ ভুল বশত একটা গুলি করলেই রক্তারক্তি কান্ড শুরু হয়ে যাবে গুলির শব্দ শুনে। এই সময়ে কেউ যদি নো ম্যান্স ল্যান্ডে থাকে তাহলে ক্রস ফায়ারে অবধারিত মৃত্যু। আমাদের একটা দল ইরবিল থেকে পি ডি কের ঘাটির কাছে এসে তাদের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করছে, তাদেরকে বোঝাতে চাইছে এরা পি ইউ কের সমস্যা না এবং পি ডি কের এলাকা দখল করবে না। এরা শরনার্থী ও বিদেশী সাহায্য সংস্থার লোকজন। এপক্ষের লোকদেরও এভাবে বোঝানোর চেষ্টা চলছে।

এপক্ষ বলছে আমরা কোন গুলি করব না তবে ওদিক থেকে গুলি হলে আমাদেরকে তার জবাব দিতেই হবে। যাক এক ঘন্টা সমঝোতার পর দুই পক্ষই রনেক্ষান্ত দিল এবং আস্তে আস্তে বিশাল বহর নো ম্যান্স ল্যান্ড এর দিকে এগুতে লাগল। দুরু দুরু বুকে গাড়ী বহরের সবাই রাস্তার শেষে পৌঁছাতে চাইছে এক কিলোমিটার রাস্তা যেন শেষ হতে চায় না। অবশেষে কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই অপর পাড়ে পৌঁছে গেল গাড়ীর বহর। সবাই খুশীতে চিৎকার দিয়ে উঠল।

শরনার্থীরা তাদের পথে রওয়ানা হয়ে গেল আমাদের ফেরার প্রস্তুতি শুরু হলো। আবার একই পথেই ফিরতে হবে। কেউ কেউ বলল এপথে না গিয়ে আরো ত্রিশ কিলোমিটার ঘুর পথে সোলেমানিয়াতে ফিরবে। তারা রিস্ক নিতে চায় না। ডাচ ও ডেনিশ একটা টিম বলল তারা যাবেই না।

অগত্যা তাদেরকে আলাদা ভাবে যেতে দিতে হলো। এপারের বৃদ্ধ নেতাকে সালাম দিয়ে বললাম চোয়ানী কাকা ? কেমন আছেন, মুশকিলা? অর্থাৎ কোন সমস্যা। বলল মুসকিলা নেহিয়া সমস্যা নেই। যাবার সবুজ সিগন্যাল পেলাম দু দলের কাছ থেকে আবার সেই দীর্ঘ এক কিলোমিটার অঘটন ছাড়া ড্রাইভ করে পিইউকে এলাকায় চলে এলাম। সোলেমানিয়াতে এসে ওয়ারলেসে অন্য দলের খোঁজ নিলাম।

তাদের আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। মৃত্যু ভয়ের কাছে সময়, দুরত্ব, দুর্গম পথ কোন ব্যাপারই না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।