আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক দুপুরের গল্প ..............


টুং টাং টুং টাং। জলতরঙ্গের মিষ্টি মিঠেল সুরটা....... ভেঙ্গে ভেঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে............... আবছায়া আলো আঁধারীর পুরো রুমটা জুড়ে এক মায়াময় আবেশ শীতলতা। মোহাবিষ্ঠ তন্দ্রাছন্নতার মাঝে দুপুরের ভাতঘুমটা পলকা হয়ে আসতেই অপু বেশ চিনতে পারলো, বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ চারিধারে সুরের বন্যা বইয়ে চলা তার প্রিয় রিংটোন'টাকে। এক-রাজ্যির আলস্যি নিয়ে চোখ বুজেই বালিশের তলা থেকে হাতড়ে বের করে আনলো সেলফোনটা। ওপাশ থেকে আধো আধো বোলে এক দেবশিশু কন্ঠস্বর।

: এ্যলো এ্যলো এ্যলো : এ্যলো এ্যলো বলো বলো। দুষ্টুমী করে বলে অপুও। : তুমি কে? পাপা? পাপা তুমি? : না আমি আঙ্কেল : লনি আঙ্কেল? লনি আঙ্কেল? : উঁহু আমি সানি আঙ্কেল। আবারও দুষ্টুমী করে অপু। : আমাদের বাতায় আতোনা কেনো? চক্কেত আনবে আত্তা? : আচ্ছা আসবো আর চক্কেতও আনবো।

তুমি এ্যাড্রেস বলো এখুনি আসবো। : এদ্দেস? এদ্দেস কি? : মানে তোমাদের বাসাটা কোথায়? : আমাদের বাসাটা উপলে। : হা হা হা উপলে কোথায়? : তিন তলায়। হো হো করে হাসতে থাকে অপু। আসলেই তো পিচ্চিটার বাসা তিন তলা।

এই যা এতক্ষণে পিচ্চিটার নামই তো জানা হলোনা। তাড়াতাড়ি জিজ্ঞাসা করে ওকে। : কি নাম তোমার বেবী? : আমি বেবী না। আমি বলো। অনেক বলো আমি ।

অনেক ভাত খাই দানো? : ও তাইতো স্যরি স্যরি তুমি তো অনেক বড়ো। এই এত্ত বড় তাইনা? : হুম অনেক বলো এই এত্ত পাপাল মত আমি আমি........লনি আঙ্কেল অনেক মোতা, আমি তার মত মোতা দানো? আরামপ্রদ মধ্যাহ্ন নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটায় যেটুকু বিরক্তি ও আলস্যি ছিলো সেসব ভুলে অপু মেতে ওঠে পিচ্চিটার সাথে আলাপচারিতায়। পিচ্চিটার কলকন্ঠে ভেসে যায় অপু। :আচ্ছা এবার বলো তোমার নাম কি? :আমার নাম? :হুম তোমার নাম। নামটা শুনবার আগেই পিচ্চিটার মায়ের গলা শোনা যায় ।

এই এই কি করো তুমি? কি করো আমার ফোন নিয়ে? উফফ আর পারিনা। আবার আমার ফোন ধরেছো? হাত থেকে ফোন কেড়ে নেওয়ার আর মৃদু ধস্তাধস্তির শব্দটা বেশ শুনতে পায় অপু আর সাথে পিচ্চিটার তারস্বরে চিৎকার। : আমি ততা বব্বো । আমি ততা বব্বো আঙ্কেলের থাতে। পিচ্চিটার কান্নাকাটিতে পাত্তা না দিয়ে ফোনে ভেসে আসে তার মায়ের গলা।

খুবি আন্তরিকভাবে স্যরি দিয়েই শুরু করে সে। : আই এ্যাম ইক্সট্রিমলি স্যরি। বাচ্চাটা খুবই দুষ্টু হয়েছে । ফোন হাতের কাছে পেলেই একে ওকে উল্টা পাল্টা নাম্বারে ফোন করে বসে। এত দুষ্টু হয়েছে।

একে নিয়ে..... স্তম্ভিত অপু! ওর কানে কি ঢুকছে না ঢুকছে বুঝতেও পারেনা সে। হাজার বছরের ওপার থেকে ভেসে আসা সেই চিরচেনা কন্ঠের কথামালা সমুদ্রের ঢেউ এর মত আছড়ে এসে পড়ে ওর হৃদয়ের বালুকাবেলায়। : নীলা! কেমন আছো? ওপারে যেন বজ্রাঘাতে থমকে যায় নীলা। চমকে ওঠে! এতক্ষণে চোখ যায় মোবাইল স্ক্রীনে। অনেক সযতনে অপূর্বা নাম দিয়ে লুকিয়ে সেভ করে রাখা অপুর নাম্বারটাই টিপে-টুপে বের করে এনেছে আজ আবীর।

দরদর করে দু'চোখে বইতে থাকে শ্রাবণধারা। আবারও প্রশ্ন করে অপু। : কেমন আছো নীলা? নিরুত্তর নীলা। ওপার হতে শুধু ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। ।

: আমার নাম্বার কোথায় পেলে? : হিয়ার কাছে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে নীলা। এপারে একটা দীর্ঘশ্বাস। সেটুকু এড়িয়ে একটু হেসে ওঠে অপু। : ফোন করোনিতো একটা দিনও।

: তুমি তোমার দিব্যি দিয়ে বলেছিলে আর কখনও যেন তোমার মুখোমুখি না হই। ফোনেও যেন কথা না বলার চেষ্টা করি। উদগত অশ্রু সম্বরণ করে বলে চলে নীলা.... আমি তোমার কথা পুরোপুরি রাখতে পারিনি। অনেক কষ্টে তোমার বদলে ফেলা ফোন নম্বর'টুকুই শুধু যোগাড় করতে পেরেছিলাম। তোমার বাসার ঠিকানা বা অন্য কোনো কিছুরই হদিস আমি পাইনি।

তারপরও তোমার দিব্যি ভুলিনি, তাই এ পাঁচটা বছরেও........ এমন সময় ডোরবেলের টুংটাং শব্দটা ফোনের ওপ্রান্ত থেকেও পেরিয়ে অপুর বুকে এসে বিঁধে যেন। নীলা ছোট্ট করে বলে, : এখন রাখছি। বাই........ আরো একটি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে অপু বলে, ভালো থেকো ........
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।