আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিসিএস (ভূমি) ক্যাডার প্রয়োজন

অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় ভূমি এখন অনেক আলোচনার বিষয়। যে দেশে লোকসংখ্যা অনুপাতে ভূমির স্বল্পতা সবচেয়ে প্রকট সেদেশে ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্ব সহজে অনুমেয়। অথচ আমাদের দেশে ভূমি প্রশাসনের সার্বিক অবস্থা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এ প্রসঙ্গে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মাননীয় ভূমিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এক. ভূমি হলো আইনের ভাষায় সম্পত্তি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় ক্ষমতার উৎস, অর্থনীতির ভাষায় উৎপাদনের উপকরণ, নৃবিজ্ঞানের ভাষায় আমাদের কৃষ্টির অংশ এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমাজের লোকের কাছে চৎবংঃরমব ংুসনড়ষ। সিভিল সার্ভিসে বিসিএস (মৎস্য), বিসিএস (বন), বিসিএস (সমবায়), বিসিএস (আনসার) ইত্যাদি মিলিয়ে ক্যাডারের সংখ্যা ৩০টি অথচ বিসিএস (ভূমি) বলে কোনো ক্যাডার সার্ভিস নেই। ভূমি মন্ত্রণালয়টি চলে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের প্রেষণে নিয়োজিত যাদের ভূমিতে স্থায়ী কার্যকাল নেই এমন কর্মকর্তা দ্বারা। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণে তারা সাবলীল নন। ভূমি মন্ত্রণালয়ে তাদের দায়বদ্ধতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। অভিযোগ হলেই এদের মূল মন্ত্রণালয় তথা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। যেমন তেজগাঁও এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশাল অঙ্কের ঘুষের অভিযোগ বিগত ২৯/৪/২০১৩ তারিখের বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত হয়। জানা যায়, তিনি যেহেতু ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব কর্মকর্তা নন, সেহেতু তাকে তার মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসনে ফেরত নেওয়া হয়, এটাই তার শাস্তি। বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন জুনিয়র কর্মকর্তা হলো এসিল্যান্ড।

তাই বলা হয়, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অনেকেরই দুর্নীতির অভিযোগ হয় এসিল্যান্ড হিসেবে। প্রচলিত আছে ঢাকা শহরসহ সাতটি বিভাগীয় শহরে তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারের অধিকাংশ দুর্নীতিবাজ জুনিয়র অফিসারকে এসিল্যান্ড হিসেবে পোস্টিং দেওয়া হয়। অথচ ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব স্থায়ী ২৫-২৬ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রথম শ্রেণীর ৪০০ অফিসার রয়েছেন, তাদের এ পদে পদায়ন করছে না অদৃশ্য কারণে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের মৃত স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানের মাঠ প্রশাসন আনকোরা অনভিজ্ঞ প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য দ্বারা চলতে পারে না।

দুই. ভূমি মন্ত্রণায়ের অধীন, ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভূমি সেটেলমেন্ট ও ভূমি অধিগ্রহণ বিভিন্ন আইন ও বিবিধ সহায়তায় পরিচালিত হয়। এসব আইন এবং বিধিকে দুর্বল ও জটিল মনে করে অনেকেই এসব আইন এড়িয়ে চলতে চায়। এমনকি শিক্ষিত লোকেরাও নিজেদের প্রয়োজনের সময় অনন্যোপায় হয়ে পেশাদার, টাউটের দ্বারস্থ হয়ে প্রতারণার শিকার হন। তাই স্কুল কলেজের পাঠ্যসূচিতে ভূমির বিভিন্ন আইন, ভূমির নামজারির আইন, ভূমি রেকর্ড ও জারিনের পদ্ধতিসমূহ এবং ভূমি অধিগ্রহণের বিধিমালাসমূহ অন্তর্ভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন।

তিন. আধুনিকতা যুগের দাবি। এ দাবিকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। ভূমিতে একেবারেই এগোচ্ছে না ভূমির ডিজিটালকরণ। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সূত্রে কয়েকটি প্রকল্পের কথা জানা যায়। দুটি প্রকল্প শুরু হলেও শেষ হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, দক্ষ লোকবল নেই, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের আমলাতন্ত্রের গ্যাড়াকলে পড়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আইন সংশোধনের যে প্রয়োজন, তা অদ্যাবধি হয়নি। তা জনসমক্ষে তুলে ধরা প্রয়োজন। তা না হলে সরকারের ভূমিবিষয়ক সব উদ্যোগই বিফলে যাবে। সেই সঙ্গে সরকার হারাবে জনপ্রিয়তা, যা কখনোই কাম্য হতে পারে না।

নাফিজ আজাদ, রায়পুরা, নরসিংদী।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.