আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইভ টিজিং: চাই প্রতিরোধ, চাই মুক্তি


ইভ টিজিং দক্ষিন এশিয়ার একটি অন্যতম সমস্যা। এ শব্দটি মূলত একটি পুরুষ দ্বারা নারীকে যৌন নিপীড়ন,উত্যক্ত করা,বা লাঞ্ছনা প্রদান বুঝাতে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তান এই তিনটি দেশে সর্বাধিক পরিমানে ব্যবহৃত হয়। ইভ টিজিং শুধু একটি সামাজিক সমস্যাই নয়,বরং এটি একটি ভয়াবহরকমের সামাজিক ও মানসিক ব্যাধি। বাজে অঙ্গভঙ্গী,অশ্লীল মন্তব্য, অশ্লীল ছবি ও ভিডিও প্রদর্শন,শিষ বাজানো,গায়ে হাত দেয়া ,হাততালি দেয়া ইত্যাদি ইভ টিজিং এর সাধারন কিছু উদাহরন। আধুনিককালে মিসড কল দেয়া বা অশ্লীল মেসেজ আদান প্রদান করাও ইভ টিজিং এর পর্যায়ে পড়ে।

ইভ টিজিং শব্দটি মূলত একটি ইন্ডিয়ান ইংলিশ শব্দ। এই শব্দটি প্রথম মিডিয়া ও জনগনের আলোচনায় আসে ১৯৬০ সালে,কারন ৬০ দশক থেকেই অধিক সংখ্যক নারীরা স্কুলে এমনকি কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাতায়াত শুরু করে। অধিকাংশ নারীবাদী লেখিকারা ইভ টিজিংকে কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্ষনের সাথেও তুলনা করেছেন,যা সাধারনত বিভিন্ন পাবলিক প্লেস,পাবলিক যানবাহন ও রাস্তাঘাটে ঘটে থাকে। বাংলাদেশে ইভ টিজিং শব্দটির প্রচলন হয় মূলত স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর কল্যানে। পাশ্চাত্য ও ভারতীয় সংস্কৃতির অনুকরন,বিভিন্ন অপসংস্কৃতির প্রচার ই এর মূল কারন।

এক্টি শক্তিশালী মিডিয়া একটি দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি,কিন্তু বাংলাদেশে তার উল্টো চিত্র,এখানেই বরং ইভ টিজাররা উস্কানী পাচ্ছে বেশী। বিভিন্ন নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্রে ইভ টিজিংকে যেভাবে উপভোগ্য করে প্রদর্শন করা হচ্ছে তাতে সমস্যার হাল তো হচ্ছে না ই বরং তা আরো প্রকট আকারে ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আর এর জন্য দায়ী মিডিয়া ব্যাবসায়ীদের নতজানু মনমানসিকতা,যাদের কাছে ব্যাবসা আর মুনাফাই শেষ কথা। আজকাল এসব ব্যাধিগ্রস্থ ইভ টিজারদের জন্য কোন নারীই রাস্তাঘাটে নিরাপদ নয়। স্কুলছাত্রী হতে শুরু করে অভিভাবক শিক্ষিকা কেউই স্বাধীন নয়।

ইভ টিজিংকে আর বড় করে দেখলে,অফিসপাড়ায় বসের কাছে সুন্দরী সহকর্মী,শিক্ষকের কাছে ছাত্রী সবাই কোন না কোনভাবে টিজিং এর শিকার হচ্ছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে টিজারদের প্রায় ৩৩% ই মধ্যবয়স্ক লোক এবং শতকরা ১১ জন নারী অফিসে তার বসের দ্বারা কোন না কোনভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। আরো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে দক্ষিন এশিয়ায় প্রতি ৫১ সেকেন্ডে একজন নারী টিজিং এর শিকার হচ্ছে। ইভ টিজিংকে অনেকেই নিছক ফান বলে উড়িয়ে দেন। কিন্তু কিছু কিছু মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মতে তা করা কোনভাবেই উচিত নয়,কারন ইভ টিজিং একটি মেয়ের কোমল মনে শুধু ফোবিয়াই সৃষ্টি করেনা বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তা একটি মেয়েকে চিরদিনের জন্য মানসিক ভারসাম্যহীনও করে তুলতে পারে।

আর এ থেকেই ইভ টিজিং এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করা যায়। ১৯৯০ সালের পর থেকে ইভ টিজিং এর ভয়াল থাবা বাংলাদেশের সুক্ষ সামাজিক বুননকে প্রকটভাবে ধ্বংস করতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে এসিড নিক্ষেপ নামক আরো একটি শব্দ নির্যাতনে নতুন মাত্রা যোগ করে। যদিও বাংলাদেশে ইভ টিজিং এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইন রয়েছে,তারপরও ইভ টিজাররা আইনের ফাক গলে বেড়িয়ে পড়ছে এবং প্রতিনিয়ত সমাজকে দূষিত করে চলছে। বাংলাদেশ শিশু ও নারী নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর মতে ইভ টিজিং এর সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড তবে এসিড নিক্ষেপের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডও হতে পারে।

কিন্তু এতদসত্ত্বেও মাত্র ৪৮% নারী এসব আইন সম্পর্কে অবহিত আছেন। ইভ টিজিং যে একটি মেয়ের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে কতটা বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে তা একমাত্র ইভ টিজিং এর শিকার আরেকটি মেয়েই বুঝতে পারবে। যে কোমল বালিকাটির ঠোঁটভরা মধুর অপাপবিদ্ধ হাসি থাকার কথা,ইভ টিজিং এর কঠিন যন্ত্রনায় পড়ে তাকেই মুখে তুলে নিতে হয় বিষের পেয়ালা। বাংলাদেশে গত এক বছরে প্রায় শতাধিক মেয়ে ইভ টিজিংএর কবলে পড়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। এই কি আমরা চাই? এ কি আমাদের কাম্য?? ইভ টিজিং এর ফলে যে শুধু সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে তাই নয়,আমরা অর্থনৈতিক ভাবেও উন্নত বিশ্ব থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ছি।

ইভ টিজিং এর ফলে অনে মেধাবী ছাত্রীই অকালে ঝরে পড়ছে,বা-মা তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। এতে নারী শিক্ষার হার কমে যাওয়ারও আশংকা রয়েছে। তাই ইভ টিজিং প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। সর্বস্তরে ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা,পারিবারিক সুশিক্ষা,অভিবাবকদের সচেতনতা, অপসংস্কৃতির আগ্রাসন বন্ধ করাই ইভ টিজিং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট। আসুন আমরা সবাই মিলে বখাটে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করি।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।