আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি এবং আমার বন্ধুরা

ঈদ মুবারাক

অনেকদিন ব্লগের সাথে সম্পর্ক হীন। একদম যে ঢুকি না তা নয়। ঢুকি নিজের ব্লগের চেহারাটা একবার দেখেই বের হয়ে যাই। লেখাজোখা আর হয় না। ভুলেই গেছি কি করে লিখতে হয়।

আর সত্যি কথা বলতে কি আমি খুব একটা লিখি না। যখন খুব বেশি আবেগে ভাসমান অবস্থা তখন কি একটা পোকা মাথার ভেতর কুটকুট করে লিখতে বলে আর আমিও লিখে ফেলি হাবিজাবি কিসব। অ-নেক দিন লিখি না। কিছু একটা লিখব বলেই বসেছি। আচ্ছা যা মনে পড়ছে তাই লিখে ফেলি কেমন।

লেখাটা পড়ে কারো ধৈর্যচ্যুতি ঘটে থাকলে বিনয়ের সাথে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আগেভাগেই। আমার জীবনের একটা বিরাট অংশ জুড়ে আছে পড়াশোনা আর পড়ার জন্য আমার একার যুদ্ধ। পড়তে আমার ভালই লাগে। কিন্তু খুব বেশি ফাঁকিবাজ হবার জন্য খুব ভাল রেজাল্ট করতে পারিনি কখনও। কিন্তু লতায়পাতায় যে করেই হোক প্রথম দশটা মেয়ের মাঝে আমিও ছিলাম।

বই পড়ার নেশার জন্য ক্লাস সেভেনে ৩টা সাবজেক্টে ফেল করে বসলাম। উফফ! আজো মনে পড়লে দম বন্ধ হয়ে যায় ভয়ে। সেইদিন কি ভয়ে ভয়েই যে বাসায় ফিরেছিলাম রিপোর্টকার্ড হাতে নিয়ে। আব্বু এতই রেগে গিয়েছিল যে পারলে তুলে একটা আছাড় দিত আমাকে। না এত কিছু ঘটে যাবার পরও আমার তেমন পরিবর্তন হয়নি।

ধুমছে চলছে বই পড়া। আমি তখন ক্লাসের লাড্ডু মার্কা ছাত্রী। তাই রেজাল্ট খারাপ হয়েছে আব্বু রাগ করবে এটাই স্বাভাবিক। এমন করেই কেটে গেল ডিসেম্বরের ছুটিটা। কিন্তু ক্লাস এইটের প্রথম দিনের প্রথম ক্লাস আমার মাঝে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দেয়।

প্রথম ক্লাস নিয়েছিলেন বিজ্ঞান আপা। উনি আমাদের ক্লাস টিচারও ছিলেন। আমাদের সব ভাল মন্দ অভাব অভিযোগ সব কিছু আপাকেই দেখতে হতো। ক্লাস শুরু হবার পর আপা সবার রিপোর্টকার্ড দেখছিলেন। তো আমারও ডাক পড়ল।

মাথা নিচু করে আপার সামনে যেয়ে দাঁড়ালাম। 'কয় বিষয়ে ফেল?' আমি বললাম 'তিন'। আপা বললেন 'কয় বিষয়ে? জোরে বল শুনতে পাইনি। ' বাধ্য হয়েই ক্লাসের মেয়েদের শুনিয়ে বলতে হল 'তি-ই-ন বিষয়ে আপা' সারা ক্লাসে হাসির রোল উঠল। সেইদিন যে অপমান আমাকে সহ্য করতে হয়েছিল তারপর থেকে যে কদিন স্কুলে কাটিয়েছি এমন সুযোগ আর কাউকে দিইনি।

সে যাই হোক আমার পড়াশোনা আমার গল্পের বই পড়ার মরণনেশা সবকিছু মিলে খুব আনন্দেই কেটে গেছে স্কুলের দিনগুলি। যারা একটা সময় আমার সাথে কথাই বলত না ভাল ছাত্রী নই বলে সেই তারাই হয়ে গেল আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। স্কুলের আমরা কজন এখনও আছি পরস্পরের বন্ধু হয়ে। মনে পড়ে আমাদের কৃষি শিক্ষাসফরের একদিনের কথা। সেদিন ছিল আমাদের নার্সারী পরিদর্শন দিবস।

তো আমরা স্কুলের কাছাকাছি একটা নার্সারীতে যাচ্ছি সবাই। তখন প্রায় দুপুর হয়ে এসেছে। প্রচন্ড গরম তবুও সবাই বেশ হৈ হৈ করতে যাচ্ছি। আমি আর আমার এক বান্ধবী গল্প করতে করতে যাচ্ছিলাম। এমন সময় রাস্তার ইলেক্ট্রিক তারের উপর বসা এক বদমাস কাক আমার ঐ বান্ধবীর মাথায় পু করে দিল।

থপ করে যখন ওটা ওর মাথায় পড়ল ও তখন আমার দিকে তাকিয়ে' কি পড়ল রে?' জিজ্ঞেস করতে করতে মাথায় হাত দিল আর হাতে মাখা পু দেখেই এক চিৎকার 'তুই তো ছিলি তারের নিচে তোর মাথায় না পড়ে আমার মাথায় পড়ল কেন? আল্লাহর এইটা কেমন বিচার?' আমি বহু কষ্টে হাসি চেপে ওকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম এই বলে যে আমি তো আর কাককে বলি নাই যে দেখেশুনে ওর মাথায় পু করতে। এতে আমার দোষ কোথায়?' বাকীরা তো হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছিল। আর ও তো রেগে একদম কাঁই হয়ে গেল। আমার এই বান্ধবীর কপালটা আসলেই খারাপ। এই বিষয়ক বহু কেলেংকারী ঘটনা ঘটেছে এই পর্যন্ত তার জীবনে।

যেমন ও যখন অনার্সে ২য় বর্ষে তখন একদিন নাচের ক্লাস শেষ করে আসার পথে এই ধরনের একটা ঘটনা ঘটে। সেইদিন বিকেলে নাচের ক্লাস থেকে ও ফিরছিল ওর এক বন্ধুর সাথে গল্প করতে করতে। ও পড়েছিল উঁচু হাইহীল। অতি উচ্চ হীল পড়ে বেশ স্টাইল করে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিল। সামনেই বেশ বড় এক নালা ছিল আর ওরা নালার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল।

বন্ধুটি ওকে সতর্ক করে দেয় 'এই দেখে হাঁটো। ওই নালায় একবার পড়ে গেলে কিন্তু একটানে বুড়িগঙ্গায় নিয়ে ফেলবে। ' ও হেসেই উড়িয়ে দেয়। বৃষ্টির জন্য রাস্তায় পানি জমে ছিল এখানে ওখানে। হাসাহাসির এই পর্যায়ে সেই কাদায় কেমন করে যেন পা পিছলে যায় আমার বান্ধবীটির।

আর যায় কোথায় এক টানে নালায়। নর্দমার ময়লার মাঝে ও ডুবেই গেছিল প্রায়। ওর বন্ধুটি কোন রকমে ওর চুল ধরতে পেরেছিল। আর তাতেই সেদিন বেঁচেছিল আমার বান্ধবীটির প্রাণ। যা হোক বহু কষ্টে ওকে নালা থেকে তুলে আনে।

কিন্তু এইরকম ময়লা গায়ে নিয়ে তো আর বাড়ী ফেরা যায় না। এক মার্কেটের বাথরুমে যেয়ে কোন রকমে সাফ সুতরো হয়ে বাসায় ফিরেছিল। আর একদিনের ঘটনা বলি। ক্লাস টেনে পড়ি তখন। কি কারনে যেন সেদিন টিফিন পিরিয়ডের পরের ক্লাসটা হয়নি।

আমরা তো মহা খুশী। চিল্লাচিল্লি হাসাহাসি চলছে। কে জানি আমার ওই বান্ধবীটার চুল টান দিয়েছে পেছন থেকে এসে। ও একবারে চিল চিৎকার দিল। ও আবার ওই মেয়েটার চুল ধরে টান দিল।

সেই মেয়ে আরো জোরে চিল্লানি দিল। আমাদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বড় আপা মানে আমাদের হেডমিস্ট্রেস রেগেমেগে ক্লাসে আসছিল । ওরা দুজন তখন এ ওকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। ক্লাসরুমের দরজায় এসে মাত্র এসে দাঁড়িয়েছে বড় আপা। আর তখনই হাহাহিহি করতে করতে ও পড়ে গেল বড় আপার সামনে।

বড় আপা কালক্ষেপণ না করে কষে এক চড়! বেচারার সে কি কান্না সেদিন। খুব খারাপ লেগেছিল। আজ আর নয়। যারা এতক্ষণ এই এলেবেলে লেখাটি পড়লেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।