জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, মানুষের প্রতি মানুষের কোন শ্রদ্ধাবোধ নেই। তাহলে কিভাবে আমরা প্রতিবন্ধীদের প্রতি সম্মান দেখাব। তিনি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান বাবু হত্যাকান্ডের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, প্রকাশ্যে পিটিয়ে যেভাবে একজন তরতাজা মানুষকে হত্যা করে উল্লাস প্রকাশ করা হয়েছে, এভাবে পশুপাখিকেও আঘাত করা হয় না।
গতকাল রোববার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস) আয়োজিত ‘প্রতিবন্ধী নারী অধিকার' শীর্ষক এক সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বিপিকেএস'র নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সাত্তার দুলালের সঞ্চালনায় সংলাপ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন আশরাফুন নাহার মিষ্টি।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক নিলুফার বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. এইচ কে আরেফিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আব্দুল হান্নান, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আফিয়া খাতুনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও এনজিও প্রতিনিধি।
অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, একটি দেশের সভ্যতার নিরিখ ও মানদন্ড নির্ণিত হয় সে দেশ বা সমাজে নারীর অবস্থানের ভিত্তিতে। কিন্তু আমাদের দেশের নারীদের কিভাবে অবজ্ঞায় রাখা হয়েছে তা তো সবার জানা। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবন্ধী নারীদের কি অবস্থা তাও অনুভব করা সম্ভব। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এমন এক রাষ্ট্রে বাস করি যে রাষ্ট্র সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র মানুষের কষ্ট দেখে না।
মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য যে প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন করা হয়েছে তাতে প্রতিবন্ধীদের যে অধিকার পাবার কথা তা নেই। প্রথমেই তাদের নিয়ে তামাসা করা হয়েছে। এখানেই তো আইনের বড় দুর্বলতা। কমিশন চেয়ারম্যান সম্প্রতি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নুর বাবু হত্যার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, রাজপথে যেভাবে প্রকাশ্যে একজন তরতাজা মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলে উল্লাস করা হয়েছে, পশুপাখিকেও এভাবে আঘাত করা হয় না। এ থেকে বোঝা যায়, মানুষের মানবিক মূল্যবোধে কতটা ঘাটতি।
তিনি বলেন, মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ না থাকায় এবং আদালতের ওপর আস্থা না থাকায় এ ধরনের ঘটনাসহ গণপিটুনি ও একজন অন্যজনের ওপর আঘাত হানছে। তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর যেভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে তেমনি প্রতিবন্ধীদেরও অধিকার রয়েছে। তিনি প্রতিবন্ধীদের সংগঠিত হয়ে অধিকার আদায় করে নেয়ার পরামর্শ দেন।
নিলুফার বেগম বলেন, আমরা প্রতিবন্ধীদের করুণা দেখাই, অনুকম্পা করি। কিন্তু কেন? তাদেরও তো অন্যান্যদের মত বেড়ে ওঠা ও জীবনযাপন করার অধিকার আছে।
অধ্যাপক ড. এইচ কে আরেফিন বলেন, প্রতিবন্ধীদের অনুকম্পা ও দয়া প্রদর্শন করা হয়। তাদের অধিকার রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে পায় না। এটাও এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন।
আশরাফুন নাহার মিষ্টি তার প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ মানুষ প্রতিবন্ধী। এর ৫ ভাগই নারী।
সে হিসেবে দেশে মোট প্রতিবন্ধীর সংখ্যা দেড় কোটির উপরে। নারী প্রতিবন্ধীর সংখ্যা প্রায় ৭৫ লাখ।
বক্তারা প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা আইন, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।