আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রূপগঞ্জে নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু : যৌনহয়রানির প্রতিবাদে সোচ্চার শিক্ষকের প্রাণ নাশ : কিবোর্ড সিপাহীর দু'পয়সা

বন্ধ জানালা, খোলা কপাট !

১. "রূপগঞ্জের সহযাত্রী"- নামের গল্পটি ২০০৪-তে যখন আমি লেখি, তখন রূপগঞ্জ নামটি আমার কল্পনার হলেও আমি জানতাম, এই নামে এই দেশে একটা জায়গা নিশ্চয় আছে । আর এখন আমি জানি, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ জায়গাটিতে বাপ-দাদার ভিটে মাটির ন্যায্য হিস্যার প্রতিবাদে, ন্যায্য মূল্য পাবার আকুতিতে, কিম্বা শেষ সম্বল ভিটে-মাটি না ছাড়ার যৌক্তিক প্রতিবাদে সেখানকার মানুষ নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারায় । গুলিতে তাদের প্রাণ হরণ করে, এই দেশের প্রাণ রক্ষাকারী হিসাবে নিয়োজীত বাহিনী ! তাদের অপরাধ, সরকারের প্রয়োজনে যে জমি সরকার, 'ইচ্ছাস্বাধীন' ভাবে নিয়ে নিচ্ছে, সে জমির মালিক হিসাবে তারা জমির বর্তমান বাজার মূল্য পেতে চায়, নামমাত্র দামে তাদের জমি দখলের বা বাপ-দাদার ভিটে - মাটি ত্যাগের সরকারী ফতোয়াকে তারা অস্বীকার করে ! আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যখন চলেছিল, আমরা জানি, প্রাণের মায়া ত্যাগ করে, বাপ-দাদার ভিটে মাটির মায়া ছাড়তে না পেরে, সে মাটি কামড়ে মৃত্যুকে মাথার উপরের শূলের মতো ঝুলিয়ে রেখে অনেকে পড়েছিলো । ২. 'ইভ টিজিং' শব্দটিতে কখনই এর ভয়াবহতা, এমনকি নিকৃষ্টতা পুরোপুরি উঠে আসেনা । 'যৌন হয়রানি' শব্দটিই এক্ষেত্রে যথার্থ হতে পারে ।

পুরুষের লুলুপতার শিকার নারী কতোভাবেই না হতে পারে, পুরুষ প্রজাতিটির সে কথা অজানা নয় । পুরুষ প্রজাতিটির কেউ কেউ বিকৃতিতে পশু প্রজাতি হয়ে উঠলে, তখন আমরা ধর্ষণের খবর পায়, কিম্বা অনেক ধর্ষণের খবর ধর্ষিতা এবং তার পরিবার সজ্ঞানে চেপে যায়, সামাজিক ভাবে আরো বেশী হেনস্থা না হবার লজ্জায়, সেসব খবর আমরা পাইনা । আমরা খবর পাই, পুলিশের হেফাজতে নারী তার সম্ভ্রম হারায় এবং অসহায়ত্বের শেষ বিন্দুতে , নারীটি তার স্বেচ্ছামৃত্যুতে প্রতিবাদ জানিয়ে যায় । তারও বহু বছর পর আমরা খবর পাই, কিশোরী, যৌন হয়রানীর শিকার হয় পুরুষের জীভ দ্বারা ; সহ্য ক্ষমতা ছাড়িয়ে গেলে কিশোরী তখন লজ্জায়, ঘৃণায় পুকুরে ঝাপিয়ে লজ্জার সঙ্গে নিজের জীবন ধুয়ে ফেলে চিরতরে। তারওপর আমরা খবর পাই , ৫ বছরের কিশোরী ধর্ষীতা হয়ে প্রাণ হারায় ।

তারও অনেকদিন পরে, 'যৌনহয়রানীর' বিরুদ্ধে আমাদের আইনপ্রস্তুতকারীরা সজাগ হয়ে আইন তৈরী করে, এবং তারও পরে, যৌনহয়রানীর প্রতিবাদ করতে গিয়ে নাটোরে শিক্ষক মিজানুর রহমান পিশাচদের আঘাতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হেরে যান । কিন্তু জিতে যান আদর্শের সঙ্গে । তার অগণিত ছাত্র-ছাত্রী যখন প্রিয় শিক্ষকের জন্য কেঁদে বুক ভাসায়, তখন তার ছাত্র যারা নন, তারাও হয়তো শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রিয়জন হারাবার বেদনাবোধ করেন । বিনা প্রাণে আমাদের অর্জিত হয়না কিছুই । শ্রদ্ধেয় প্রতিবাদী শিক্ষক মিজানুর রহমানের প্রাণের বিনিময়ে এবার যদি, পথে ঘাটে , প্রান্তরে নারীর যৌন হয়রানীর প্রতিকার এদেশে কিছু মেলে ! ৩. কলম সৈনিকের সমার্থক হয়ে কি-বোর্ড সিপাহীরা কি-বোর্ডে ঝড় তুলতে পারে ।

তা দেখে টিপ্পনি কেটে কেউ অবজ্ঞার হাসির সঙ্গে শ্লেষ মিশিয়ে বলতেও পারে,- 'বাপু ! তোমাদের কি -বোর্ড বিপ্লবে কার কি উপকার প্রাপ্তী হয় ! আমি তবু, কি বোর্ড সিপহী-ই হতে চাই । কি-বোর্ডের ভাষাতেই প্রতিবাদ জানাতে চাই । প্রতিবাদের যে দরজাটা আমার জন্য খোলা সেটা কাজে লাগাতে চাই । সরকার তথা সেনাবাহিনীর অযৌক্তিক এবং অন্যায়ভাবে জমিদখলের প্রতিবাদে সোচ্চার মানুষদের স্যালুট জানাই । এই প্রতিবাদীরাই এই দেশকে নতুন মানচিত্র এবং পতাকা দিয়েছে ।

এই দেশকে টিকিয়ে রাখবে, প্রাণ দিয়ে হলেও অন্যায় এর প্রতিবাদ করতে পারা মানুষরাই । সবকিছু সহ্যে'র মধ্যে নিয়ে আসার আমাদের নিত্য প্রতিযোগীতায়, যে দু'একটা আলোর রেখা ধূমকেতুর মতো হঠাৎ আমরা দেখতে পাই, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মিজানুর রহমান এর মতো, বিরলপ্রজ সেইসব পথ দেখানো আলোর রেখাগুলোর প্রতি দাঁড়িয়ে সম্মান জানাই । "কলম সৈনিক এবং কি-বোর্ড সিপাহীদের হাতগুলো, এবং হৃদয়গুলো সচল থাক !"

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.