আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাইট হো, জীভস- ৫ম অধ্যায়



রাইট হো, জীভস রূপান্তরঃ শরীফুল হাসান পাচঁ আমি জীভসের দিকে আমার তির্যক চাহনি দিলাম। -‘জ়ীভস’, আমি বললাম, ‘আমি তোমার কাছে এটা মোটেও আশা করিনি। তুমি জানো গতরাতে আমি অনেক দেরি করে ফিরেছি। তুমি আরো জানো, আমি এখন আমার চা শেষ করতে পারিনি। তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারো আন্ট ডাহলিয়ার গলার ঐ স্বর একজন মাথাধরা ব্যাক্তির উপর কি প্রভাব ফেলতে পারে।

আর তুমি এখন আমার কাছে ফিঙ্ক-নটলদের নিয়ে এসেছো। এটা কি কোন ফিঙ্ক অথবা নটলদের সাথে দেখা করার উপযুক্ত সময়?’ - কিন্তু আপনি তো আমাকে বলেছিলেন যে আপনি মিঃ ফিঙ্ক-নটলের সাথে দেখা করবেন উনার সমস্যা সমাধান করার জন্য। এখনকার মানসিক অবস্থায় আমি গুসির সমস্যা সমাধানের ব্যাপারটা একবারেই ভুলে গিয়েছিলাম। গুসি এখন আমার মক্কেল। আমি তাকে ফিরিয়ে দিতে পারিনা।

শার্লক হোমস কখনই তার মক্কেলকে ফিরিয়ে দেয়না এই কারনে যে সে সারারাত ডক্টর ওয়াটসনের জন্মদিনের পার্টিতে ব্যস্ত ছিল। আনি আশা করতে পারি আমার মক্কেল আমার সুবিধামতো সময়ে আসবে, কিন্তু এই সকালে তার আস্তানা ছেড়ে সে যখন এসেই পড়েছে, তো,আমারো তার শ্রোতা হতে কোন সমস্যা নেই। -‘ঠিক’, আমি বললাম, ‘ঠিক আছে, নিয়ে এসো’। -খুব ভালো,স্যার। - কিন্তু যাওয়ার আগে, তোমার সেই চাঙ্গা করার মতো কিছু নিয়ে এসো।

-খুব ভালো,স্যার। এখন সে ফিরে এসেছে তার মহৌষধ নিয়ে। আজ এই সকালে আমার বাচা-মরার মুহুর্তে জীভসের এই চাঙ্গা করার জিনিসটা নিয়ে কিছু বলা দরকার। এটা কি দিয়ে তৈরি আমি বলতে পারবোনা। জীভসের ভাষায় কিছু সস, কাচা ডিমের সাদা অংশ আর কিছু লাল মরিচের গুড়ো, কিন্তু এই মিশ্রনটা গলাধকরনের পর অনুভুতিটা চমৎকার।

এক চুমুক খাওয়ার পর মনে হয় কিছুই ঘটেনি। মনে হয় পুরো প্রকৃতি কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে। তারপরই মনে হয় একটা প্রলয় ঘটে গেছে। চারদিকে যেন আগুন ঝরছে, শরীরের নিম্নাংশে মনে হয় যে লাভা বয়ে যাচ্ছে। পৃথিবী জুড়ে যেন প্রবল বাতাস বইছে।

মাথার পেছনে হাতুড়ির বাড়ি পড়ছে। এই সময়টায় কান ভো ভো করতে থাকে, চোখের মনি ঘুরতে থাকে আর ভ্রুদুটো আপনা-আপনি বেকে যায়। আর তারপর, যখন আপনার মনে হবে যে আপনার উকিলের সাথে দেখা করে সব সমস্যা মেটাতে হবে, হঠাৎই সব কেমন ঝিম মেরে আসে। বাতাস থেমে যায়। কানের ভো ভো করা বন্ধ হয়ে যায়, পাখি গান গাইতে থাকে, চারদিকে বাজনা বেজে উঠে।

দিগন্তের সীমানায় সূর্যের কিরন ঝিকমিকিয়ে উঠে। তার পর মুহুর্তেই মনে হয় সারা শরীরের শান্তির সুবাতাস বইছে। আমি মাত্রই পাত্রটা খালি করেছি, মনে হচ্ছে নতুন জীবন ফিরে এসেছে। জীভস, যে মাঝে মাঝে কাপড়চোপড় আর প্রেম সংক্রান্ত ব্যাপারে ভিন্ন পথে চলে যায়,কিন্তু মাঝে মাঝে মৃতের মাঝেও প্রান ফিরিয়ে আনতে পারে। এখন যেমন আমার এনেছে।

মনে হচ্ছে, বারট্রাম উষ্টার একটু আগেই যে বালিশের তলায় হাবুডুবু খাচ্ছিল, সে এখন অনেক উন্নত,শক্তিশালী বারট্রাম উষ্টার হয়ে উঠেছে। - ধন্যবাদ,জীভস, আমি বললাম। - কি যে বলেন স্যার। -তোমার জিনিসটা দারুন কাজের, একেবারে ঠিক জায়গায় হাত দিয়েছে। আমি এখন জীবনের সব সমস্যার মোকাবেলা করতে পারবো।

- জেনে খুব খুশি হলাম, স্যার। - আন্ট ডাহলিয়ার সাথে কথা বলার সময় এটা না খাওয়া খুব বোকামী হয়েছে। যাইহোক, এখনকার অবস্থা নিয়েই ভাবতে হবে আগে। গুসির কথা বলো। কাল রাতের নাচের উৎসব তার কেমন কেটেছে? - উনি নাচের উৎসবে হাজির হতে পারেননি স্যার।

আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে জীভসের দিকে তাকালাম। -জীভস, আমি বললাম, আমি স্বীকার করছি, তোমার ঐ জিনিস খেয়ে এখন অনেক চাঙ্গা বোধ করছি, কিন্তু আমাকে আর উচুতে তুলোনা। আমরা গুসিকে ক্যাবে তুলে দিয়েছিলাম আর সে রওনাও দিয়েছিল তার সেই নাচের অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে। সে নিশ্চয়ই গিয়েছে। -না,স্যার।

মিঃ ফিঙ্ক-নটলের কাছে যা শুনলাম, উনি ভেবেছিলেন অনুষ্ঠানটা হবে ১৭ সাফোক স্কয়ারে। , কিন্তু আসলে অনুষ্ঠানটা হচ্ছিল ৭১ নরফোক স্কয়ারে, এরকমটা হওয়া মোটেও অস্বাভাবিক না মিঃ ফিঙ্ক-নটলের মতো স্বাপ্নিক মানুষের পক্ষে। - স্বাপ্নিক মানুষ না বলে মাথামোটা মানুষ বলা যায়। -জী,স্যার। -আচ্ছা? - ১৭ সাফোক স্কয়ারে পৌছানোর পর উনি ক্যাবকে টাকা দিতে যাচ্ছিলেন।

- কে তাকে বাধা দিল? - আসলে উনার কাছে কোন টাকা ছিলনা। উনি টাকা আর অনুষ্ঠানের টিকিট দুটোই রেখে এসেছিলেন উনার চাচার বাসায় যেখানে উনি আপাতত উঠেছেন,সেখানে উনার বেডরুমের ড্রয়ারে। ক্যাবওয়ালাকে অপেক্ষা করতে বলে উনি ডোর বেল বাজালেন। বাসার খানসামা এলে উনি অনুরোধ করলেন যেন সে ক্যাবওয়ালাকে ভাড়াটা দিয়ে দেয়, উনি নাচের অনুষ্ঠান শেষ করে খানসামাকে তা শোধ করে দেবেন। কিন্তু খানসামা অস্বীকার করলো যে সেই বাড়িতে কোন নাচের অনুষ্ঠানই হচ্ছেনা।

-অস্বীকার করলো? -জী,স্যার। -তারপর... - মিঃ ফিঙ্ক-নটল তখন ক্যাবওয়ালাকে বললেন তার চাচার বাসার দিকে নিয়ে যেতে। -ভালো, তো এখানেই তো ঘটনা শেষ হতে পারত? সে বাসায় ঢুকে পরত, তারপর টাকা আর টিকিট নিয়ে ফের বের হতে পারত। - আমার বলা উচিত ছিল যে মিঃ ফিঙ্ক-নটল উনার শোবার ঘরের চাবিও হারিয়ে ফেলেছিলেন। - তো সে বাসার লোকজনকে জাগিয়ে তুলতে পারত, তাই না।

- উনি প্রায় পনেরো মিনিট ধরে দরজা ধাক্কালেন, কিন্তু কোন সাড়া না পাওয়ার পর উনার মনে হল যে, উনি বাড়ির কেয়ারটেকারকে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন তার ছেলের সাথে পোর্টসমাউথে গিয়ে দেখা করার জন্য। - অদ্ভুত,জীভস। -জী,স্যার। - স্বাপ্নিক মানুষেরা এভাবেই বেচে থাকে, তাই না? -জী,স্যার। - তারপর কি হলো? - মিঃ ফিঙ্ক-নটল বুঝতে পারছিলেন ক্যাবওয়ালার কাছে তার আচরন রহস্যময় মনে হচ্ছে।

ঘড়ির কাটা তখন অনেকদুর চলে গেছে আর উনি ভাড়ার টাকাও দিতে পারছেন না। - সে ওকে ব্যাখ্যা করতে পারতো। - ক্যাবওয়ালার কাছে আপনি ব্যাখ্যা করতে পারেন না, স্যার। উনি অবশ্য করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু উনার মনে হল ক্যাবওয়ালা উনাকে সন্দেহ করছে। - আমি হয়তো পালাতাম।

- এই চিন্তাটাই মিঃ ফিঙ্ক-নটলের মাথায় চলে এসেছিল। উনি তীব্র বেগে ছুট লাগালেন, পেছনে ঐ ক্যাবওয়ালা, সে মিঃ ফিঙ্ক-নটলের ওভারকোটটা ধরে ফেলল আর মিঃ ফিঙ্ক-নটল কোনমতে ওটা শরীর থেকে ছাড়িয়ে দৌড় দিলেন, ওভারকোটটা না থাকায় নিচে পড়া সেই আজব পোষাকটা বের হয়ে এলো। ক্যাবওয়ালা এমন ধাক্কা খেল তা বলার বাইরে। মিঃ ফিঙ্ক-নটল পিছু তাকিয়ে দেখলেন লোকটা একটা রেলিং ধরে দুহাতে মুখ চেপে আছে। উনার ধারনা লোকটা প্রার্থনা করছিল ভয়ে।

সন্দেহ নেই একজন অশিক্ষিত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ,স্যার, হয়তো মদও খায়। -আমার ধারনা আগে না খেলেও এই ঘটনার পর সে মদ খাওয়া শুরু করবে। আমার ধারনা তখনি সে মদের দোকান খোলার অপেক্ষায় ছিল। - হতেও পারে, স্যার। - এই পরিস্থতিতে গুসিরও মদ খাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

তারপর কি ঘটল, দাঁড়াও আমি চিন্তা করছি। এতো রাতের লন্ডন.. অথবা দিনের বেলাতেও... এরকম পোষাক পড়া লোকের জন্য কোন আশ্রয় নেই। - জী,স্যার। - আমি দেখতে পাচ্ছি একটা বুড়ো পাখি রাস্তার এদিক-ওদিক ঘুরছে, ঠোকর খাচ্ছে, ডাস্টবিনে পড়ে যাচ্ছে। - মিঃ ফিঙ্ক-নটলের কাছে যা শুনেছি আপনার বর্ননার সাথে অনেকটাই মিলে যাচ্ছে।

এরকম একটা রাতের শেষে উনি কোনমতে মিঃ সিপারলীর বাড়ি খুজে পান। ওখানেই উনি রাতটা কাটান আর সকালে জামা-কাপড় বদলে নেন। আমি বালিশে হেলান দিয়ে আরাম করে বসলাম। স্কুলের পুরানো বন্ধুর জন্য কিছু করার চেষ্টা করা সবসময়ই ভালো, কিন্তু গুসির মত গাধার উপকার করতে যাওয়া একটু বোকামীই হয়ে যাচ্ছে মনে হয় যে গতরাতে সং সেজে পুরো শহরে ঘুরেছে। আমি এমন একটা কাজ হাতে নিয়েছি যা খুব বড় বলে মনে হচ্ছে এখন।

গুসির যা দরকার তা হচ্ছে খড়ের গাদার ভেতর বসে আমার মত পোড় খাওয়া অভিজ্ঞ একজন মানুষের উপদেশ শোনা। আমার মনে যে গুসির কেসটা জীভসকে ছেড়ে দেয়ার চিন্তা আসছেনা , তা নয়। কিন্তু উষ্টারদের সহজাত গৌরবকে আমি ভূলুন্ঠিত করতে পারিনা। আমরা উষ্টাররা যখন লাঙ্গলে হাত দিই তখন তরবারিকে তুলে রাখি। আর মেস-জ্যাকেটের ঘটনার পর জীভসের কাছেও আমি কোন দূর্বলতা প্রকাশ করতে পারিনা।

-আমার ধারনা তুমি বুঝতে পারছো,জীভস, আমি বললাম, পুরো ব্যাপারটা ঘটেছে তোমার ভুলে। - স্যার? - “স্যার?” বলে লাভ হবেনা। তুমি জান। তুমি যদি শুরু থেকে নাচের অনুষ্ঠানে যেতে প্ররোচনা না দিতে, যা আমি শুরু থেকেই মানা করছিলাম, তাহলে এত ঘটনা ঘটতো না। -জী,স্যার, আমি স্বীকার করছি আমি আশা করিনি... - তুমি সবসময়ই আশা করো, জীভস, আমি বললাম, একটু কড়া করে, তুমি যদি তাকে পিয়েরোর পোষাকও পড়তে দিতে ঘটনা এতোদূর গড়াতো না।

যাইহোক, গলাটা একটু নরম করলাম, এই বিষয়ে আর কথা নয় এখন। গুসি অপেক্ষা করছে তুমি বলছিলে, তাই না? - জী,স্যার। - এক্ষুনি নিয়ে এসো, দেখি আমি ওর জন্য কি করতে পারি।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.