আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটবেলা-বড়বেলার খেলাধুলা এবং অতঃপর (২য় পর্ব)

মুক্ত আকাশ দেখব বলে বয়ে চলা। আকাশ কেন মুক্ত হয় না।

প্রাইমারী স্কুলে পড়ি আমি। কিন্তু অন্যদের থেকে একটু বেশী লম্বা। তাই খেলতে গেলে স্যাররা বাঁশি বাজায় তোমার মাপ দিয়ে যাও আবার।

মাপ দেওয়া হয় আর আমি বাদ পরি। তখন লম্বা হওয়াটাকে কত যে অপবাদ দিতাম। আমি লংজাম্প ভাল পারি। কিন্তু দিতে পারছি না। এভাবে কতবার বাদ পরেছি।

ক্লাস সিক্সে উঠেছি। স্কুলে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। আমার খুব ইচ্ছা হল লংজাম্পে নাম দেই। নাম দিলাম। খেলা ৩টা গ্রুপে হচ্ছে।

জুনিয়র, ইন্টারমিডিয়েট, সিনিয়র। দূর্ভাগ্য আমার। মাপে পড়লাম ইন্টারমিডিয়েট গ্রুপে। বন্ধুরা সবাই জুনিয়র গ্রুপে। আমি হিটে টিকে গেলাম।

আমি ছাড়া বাকিরা ক্লাস ৮ বা ৭ এর। হিটে টিকার পর কনফিডেন্স বেড়ে গেল। ফাইনালে আমার পক্ষে অনেক হাততালি। আমি সবার চেয়ে ছোট। বেশ জোরে লাফ দেয়ার চেষ্টা করলাম।

১২ফুট ৫ ইঞ্চি যেতে পারলাম। যে থার্ড হয়েছে তার থেকে ১ ইঞ্চি কম। সবাই তখন বলছিল আমাকে যেন যুগ্মভাবে থার্ড করা হয়। কিন্তু করা হয়নি। খুব মন খারাপ হয়েছিল সেদিন।

১ইঞ্চি কম গেছি এই জন্যে না। কেন এতো লম্বা হলাম। আর একটু ছোট হলে অনায়াসেই জুনিয়র গ্রুপে প্রথম হতে পারতাম। আমার খুব প্রিয় একটা খেলার কথা বলব। তখন আমাদের গ্রামে নতুন বিদ্যুত এসেছে।

বলে রাখা ভাল আমাদের গ্রামে বাংলাদেশের অনেক গ্রামের চেয়ে আগেই বিদ্যুত এসেছে। আমরা মাঝে মাঝে বিকেল বেলা ব্যডমিন্টন খেলি। আমার বড় ভাই, মামাতো ভাইয়রা একসাথে। ব্যডমিন্টন খেলা্টা কেমন জানি নেশার মত হয়ে যাচ্ছে। আমরা সবাই ভাল খেলতে শুরু করেছি।

বেশ উন্নতি হয়েছে আমাদের। কিন্তু একটা বড় সমস্যা হল ফ্লাওয়ারের দাম। ওই সময়ে এতো দাম দিয়ে কি ফ্লাওয়ার কিনা যায়! আর নষ্টও হয় অনেক। তাই খেলা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এমন দূর্দিনে এগিয়ে এলেন আমাদের পরিবারের লোকজন।

বললেন ব্যডমিন্টন যখন খেলবি ভাল করেই খেল। তারপর আমরা রেকেট, ফ্লাও্য়ার, নেট সব কিনলাম নতুন করে। এরপর রাতের বেলা বিদ্যুতের লাইন টেনে খেলা শুরু করলাম। এরপর এ্টা রেগুলার হয়ে যায়। তখন কিন্তু কাঠের রেকেট দিয়ে খেলেছি।

স্টিলের রেকেট আমাদের নাগালের বাইরে। আমারটা অবশ্য সাইজে অনেক ছোট ছিল। হেহেহেহেহে। এখন ওই সাইজের রেকেট দেখলে খুব হাসি পায়। ঢাকাতে এসে অবশ্য ব্যডমিন্টন খেলতে পারিনি আর।

স্কুল পাশ করলাম। সরকারী কলেজে ভর্তি হলাম। অনেক বড় খেলার মাঠ, সাথে ছোট ছোট অনেক অনেক মাঠ। কিন্তু আমাদের কলেজে ফুটবল বা ক্রিকেট এর চেয়ে বেশী খেলা হত কার্ড। তখন আমি কার্ড খেলতে পারিনা বা শিখিনি।

আমার পরিবারে কার্ড খেলাটা বিরাট অন্যায়ের পর্যায়ে পড়ে। তাই শিখিওনা। কি করা যায় খেলতেতো হবে। শুরু করলাম বাগাডুলি খেলা। আমাদের গেমস রুম থেকে বোর্ড আর মার্বেল নিয়ে বসে যেতাম ২/৩ জন।

হয়ত ৮/১০ টা বোর্ড নিয়ে বসে পড়েছি আমরা বন্ধুরা। সময় কে্টে যেত। এটাও একদিন একঘেয়ে লাগল। তারপর শুরু করলাম ফ্রিজবী খেলা। আমি তখন নিয়ম জানি না।

একদিন সব বন্ধুরা বসে ভাল করে নিয়ম জেনে নিলাম। তারপর খেলতে শুরু করে দিলাম। ১০জন করে। খুব ভাল লাগত। ফুটবলের মত খেলা যায়।

একসময় এ্টাতেও একঘেয়ামি চলে আসে। ফিরে যাই ক্রিকেটে। কিন্তু তখন আর ডিউস বলে খেলা হয় না। টেপ টেনিস জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছে। খেলা যায় নিঃসন্দেহে।

কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। আমি ভাল খেলিনা। তাই বন্ধুরা আমাকে তেমন পাত্তা দিচ্ছে না। আমাকে রাখছে অকেসনাল বোলার হিসেবে আর হার্ড হিটার হিসেবে। শেষের দিকে এসে কিছু বল খেলব আর শেষের দিকে ২/৩টা ওভার বল করাবে।

অনেক সময় আমার ব্যাটিং আসার আগেই দল জিতে যায় আবার আমার বোলিং আসার আগেই প্রতিপক্ষ আউট হয়ে যায়। ক্রিকেটটা আর জমে না। এভাবে কখন যে ফাইনাল পরীক্ষার সময় চলে আসে! তাই খেলাধুলা একেবারে বাদ হয়ে গেল। তবে যেটা হয়েছে ফ্রিজবীটা ভালই শিখে নিয়েছিলাম। তারপর কিছুকাল গেল।

খেলাধুলার সাথে যোগাযোগ নেই। সময় অন্যভাবে কেটে যায়। টিউশনী, আড্ডা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড—কিন্তু আমি খুব ভাল করে খেয়াল করে দেখলাম খেলাধুলা আমাদেরকে অনেক বাজে চিন্তা থেকে দূরে রাখে। তখন ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বর্ষে। বন্ধুদেরকে বললাম চলনা ক্রিকেট খেলি।

কেউ তেমন রাজি হয় না। তাই আমাদেরও আর হয়ে উঠে না। আমাদের ইয়ার ফাইনাল শেষ। প্রায় সবাই বাড়িতে চলে গেছে। আমরা কয়েকজন ঢাকাতে আছি বাসায়।

এক বন্ধুর ফোন-তুই কি ফুটবল খেলতে পারিস? বললাম পারি কিন্তু কেন? না মানে ভার্সিটিতে টুর্নামেন্ট হচ্ছে, প্রতি ব্যাচ থেকে ১টা করে টিম খেলবে, আমাদের ব্যাচের ১১জন হচ্ছে না। সবাইতো বাড়ি চলে গেছে। তুই পারলে চলে আয়। আমি চলে গেলাম হলে। আমরা মোট ১৩ জন হলাম।

এর মাঝে ১জন কোচ আর একজন ম্যানেজার আবার তারা ২জন অতিরিক্ত খেলোয়ার। আমরা শুধু অংশগ্রহন করব মানে খেলার জন্যে খেলা। ৬টা টিম খেলছে। অবাক কান্ড প্রথম ২খেলায় জিতে আমরা সেমিফাইনালে উঠে যাই। তারপর যারা ভাল খেলে তাদেরকে খবর দিয়ে নিয়ে আসা হল বাড়ি থেকে।

কিন্তু আমি আর বাদ পড়িনি। এবং মজার ব্যাপার হল আমরা সেবার চ্যম্পিয়ন হই। ১৩জন খেলোয়ার আর ২ জন কোচ-ম্যানেজার সবাই ১টা করে দেয়াল ঘড়ি পেয়েছিলাম। সেই দেয়াল ঘড়ি এখনও আমার ঘরে আছে বাড়িতে প্রায় ১০ বছর আগের। এরপর আমাদের ব্যাচ আরও ৩ বার চ্যাম্পিয়ন।

প্রতিবার আমি খেলেছি। আমার একটা সুবিধা ছিল রাইট ডিফেন্সে খেলতাম। এই জায়গায় বেশি খেলোয়ার পাওযা যেত না। তাই আমি বাদ পড়তাম না। ফুটবল খেলতে যেয়ে ২/৩টা মজার ঘটনা আছে।

আমাদের ব্যাচ ছিল একটু মারদাঙ্গা। তাই রেফারী যারা হত তারা আমাদের একটু ভই পেত। আমাদের বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত দিতে দ্বিধা করত। একবার আমাদের এক খেলোয়ারকে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়ার ফাউল করে তখন আমাদের ব্যাচের ২দর্শক মাঠে ঢুকে ঐ খেলোয়ারকে বেদম মাইর দেয়। পরদিন ওই ২দর্শককে মাঠে অযোগ্য ঘোষনা করা হয় মানে খেলা চলাকালীন এরা দর্শক হিসেবে গ্যালারী্তেও থাকতে পারবে না।

আর একবার আমি আর আমাদের গোলকিপার নীচে আছি। প্রতিপক্ষ আক্রমন করে বসে। আমাকে কাটিয়ে নিতে পারলে গোল নিশ্চিত। দর্শক থেকে রব উঠে ফেলে দে ফেলে দে ফেলে দে। বেটা আমাকে কাটিয়ে এমন দৌঁড় দিয়েছে আমি আর পারছি না।

পিছন থেকে জার্সি ধরে টান মেরে ফেলে দেই। মাঠে হট্টগোল লেগে যায়। আমাদের সিনিয়র ব্যাচের সাথে খেলা ছিল। ওরা আমাকে লাল কার্ডের দাবী জানায় আর আমার দর্শকরা বলছে লাল কার্ড দেখালে খবর আছে। শেষে হলুদ কার্ড পাই।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা জিতি। (চলবে) ১ম পর্বঃ Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।