আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলা গান ঘুরে দাঁড়িয়েছে : শ্রীকান্ত আচার্য্য

গ্লিটজ : পুরোদস্তুর চাকরিজীবী ছিলেন। সেখান থেকে পেশাদার কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এখনও গান নিয়ে আছেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাই?
 
শ্রীকান্ত আচার্য্য: আমি কখনও পরিকল্পনা করে কিছু করি না। এই মুহূর্ত পর্যন্ত যেমন চলছে আমিও তেমনি চলছি।

একটা সময় আমি চাকরি করতাম। সেটা করতে গিয়ে এমন একটা জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছিলাম যেখানে গান থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলাম। চাকরির ধরনটাই ওই রকম ছিল। কলকাতার ছেলে হলেও আমাকে শহরের বাইরে থাকতে হত। প্রচুর ট্যুর করতে হত আমাকে।

আমি পরে হিসেব কষে দেখেছি প্রতি মাসে বাইশ কিলোমিটার ট্রাভেল করতে হত।
এই করতে গিয়ে আমার একটা সময় মনে হল যে কাজটি করতে আমি সবচাইতে ভালোবাসি সেটি হচ্ছে গান। তা আমার করা হয়ে উঠত না। এটা যখন ভাবনায় এল তখন হঠাৎ করেই আমি একদিন চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। এটার মধ্যে কোনো বাহাদুরি ছিল না কিন্তু।

বোকারা যেমন দুঃসাহস দেখায় আমিও সে রকম করলাম। আমার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর কয়েক মাসের মধ্যে পরপর এমন কতগুলো ঘটনা ঘটল, যা ঘটবে বলে আমি কোনোদিন প্রত্যাশা করিনি। ক্যাসেট কোম্পানি সাগরিকা আমাকে একসঙ্গে দুটি অ্যালবাম করার প্রস্তাব দিল। এই ঘটনাটি ছিল সবচাইতে অপ্রত্যাশিত। আমিও প্রস্তাবটি লুফে নিলাম।

তৈরি হল ‘মনের জানালা’ এবং ‘হে বন্ধু হে প্রিয়’। ক্যাসেট দুটি যখন রেকর্ডিং হচ্ছে সে সময় খবরটা কেউ জানত না, শুধু আমার স্ত্রী ও মা ছাড়া।
আমাদের পরিবার বরাবরই মামার বাড়ি ঘেঁষা। তারা ছিলেন বিক্রমপুরের। তারা ছিলেন আমাদের সামনে রোল মডেল।

সকলেই লেখাপড়া জানা। ও বাড়ির সকলেই নানা জায়গায় বড় বড় চাকরি করতেন। তারা যদি বিষয়টি আঁচও করতে পারতেন, আমার হয়তো গান করা হত না। যাই হোক অ্যালবাম প্রকাশের পরে প্রচুর জনপ্রিয়তা পেল। সেটা পুজোর মৌসুম ছিল।

আমি ভাবলাম মৌসুম ফুরালে হইচই থেমে যাবে। কিন্তু তারপরেও ক্যাসেট বিক্রি হল দেদাড়। আমার আনন্দ হতে লাগল। আবার টেনশনও হল।
সেটা ১৯৯৬ সালের কথা।

তখনই আমি ভাবিনি যে গানবাজনাই পেশা হবে। ভেবেছিলাম ব্যবসা করব। পুঁজি আমার ছিল না এক পয়সাও। তবুও সাহস করে বন্ধুদের সঙ্গে পরিকল্পনা করেছি গার্মেন্টসের ব্যবসার। সেটা কেন করেছিলাম এখন বলতে পারব না।

বিষয়টা এখন চিন্তা করলেই হাসি পায়। যাই হোক, আমার অ্যালবাম দুটির জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়তে থাকে। লোকেও চিনতে শুরু করল। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক আসতে থাকল। আমি দেখলাম আমাকে ফুল টাইমের জন্য গান করতে হবে।

আমি তাই করলাম। এখনও চলছে। আজ এখনও আপনাদের জন্য গান গাইতেই ঢাকায় আসা। আমার ভাগ্যে এটাই ছিল। তাই হয়েছে।


গ্লিটজ : আপনি আধুনিক গানের পাশাপাশি রবীন্দ্রসংগীতও করেন। এর বাইরে নজরুলসংগীত, লালনের গান কেমন লাগে? তাদের গান গাইতে ইচ্ছে করে না?
 
শ্রীকান্ত আচার্য্য : এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে আমি খুব গান বাজনা শিখেছি। আমার পরিবারে লেখাপড়ার চলটাই বেশি ছিল। পরিবারে কেউ গানবাজনা করার চিন্তা কষ্মিকালেও করেনি। আমার ভিতরে এই জিন কোথা থেকে এল তা আমি জানি না।

এটা নাই বলেই ছোটবেলায় আমার ওরিয়েনটেশন তেমন হয়নি। আমার মা ছোটবেলায় আমাকে গানের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। এমনটা সব ছেলেমেয়েই হয়। খুব ছোট থেকে আমি টানা দশ বছর গান শিখেছি দক্ষিণিতে। এটা আমার ভিত গড়ে দিয়েছিল।

এর পাশাপাশি আমাদের বাড়িতে যে রেকর্ড বাজত তা শুনতাম। আমি প্রচুর গান শুনেছি এবং এখনও শুনি। যাই হোক, আমি এরপরে গান শেখার কথা ভাবিনি কোনোদিন। বাবা জানলে তো আমাকে চাটি মেরে বসিয়ে দিতেন। আমি গান বাজনা যতটুকু জানি বুঝি তা হচ্ছে শুনে।

সব ধরনের গান শোনার আগ্রহ আমার তখনও ছিল এখনও আছে।
নজরুলসংগীত, লালনগীতি অন্যান্য যে কোনো ধরনের গান আমার খুবই পছন্দের। আমি রেকর্ডের যুগে জন্মানো মানুষ। তখনও ক্যাসেট আসেনি, সিডি আসেনি। প্রচুর রেকর্ড শোনা হয়েছে আমার।

আমার শিল্পী হওয়ার পিছনে মূলধন যা, তা এই শোনা থেকে। তাই সব ধরনের গানের প্রতি আমার ভালোবাসা সেটাও শুনতে শুনতেই তৈরি হওয়া। এখন আমি গান ততটুকুই করি যা আমার ক্ষমতা আছে। তার বাইরে আমি গান করতে যাই না।
গ্লিটজ : এখানে গান করতে এসেছিলেন লোপামুদ্রা মিত্র।

তার গান সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? 
শ্রীকান্ত আচার্য্য: লোপা খুব লড়াকু মেয়ে। তার আজকের অবস্থানে আসার রাস্তাটি মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। তিনি প্রথম গান শিখেছেন কলকাতার বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান গীতবিতানে। তারপরে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নিয়েছেন অরূপ ভাদুড়ির কাছে। কিন্তু লোপার আত্মপ্রকাশ হয় সমকালীন বাংলা কবিতা থেকে গান গাওয়ার পরে।

ওর কাকা সুরকার সমির চট্টোপাধ্যায়। তিনিই কবিতায় সুরারোপ করেন। সেই গানগুলো করেই লোপা তার স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠা করেছে। সেই জায়গা থেকে নিজের বেসিক গান নিয়ে তিনি প্রচুর লড়াই করে আজকে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। আমি ওকে সালাম করি।

ওকে দেখে আমিও মনে জোর পাই।
গ্লিটজ : আপনার খুব ভালো বন্ধু কবির সুমন। তার সম্পর্কে আপনার অভিব্যক্তি কী?
শ্রীকান্ত আচার্য্য: সমকালীন আধুনিক বাংলা গানের কথা বলতে গেলে সুমনের কথা আসবেই। সুমনের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ১৯৮৯-১৯৯০ সালের দিকে। সে সময় তিনি প্রবাস জীবনের ইতি টেনে সবে দেশে ফিরে এসেছেন।

আমিও চাকরিজীবন শুরু করেছি। সে কারণে আমি অধিকাংশ সময়ই কলকাতার বাইরে থাকতাম। আমার বন্ধুদের মাধ্যমে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ওই সময়েই সুমনদার প্রথম একক ‘তোমাকে চাই’ প্রকাশিত হয়। অ্যালবামটি প্রকাশের পরে তিনি বাংলা গানের জগতে বোমার মতো ফেটে পড়লেন।

তিনি সেসব বিরল মানুষের মধ্যে একজন যিনি প্রায় একা একটা জেনারেশনকে সমকালীন বাংলা গানের দিকে ফিরেয়ে এনেছেন। এই সময়ে দাঁড়িয়ে সুমনদার পরে আমি নচিকেতার কথা বলতে পারি। সুমনদার শক্তিটা ছিল ক্যারিসমেটিক। তার অ্যালবাম, স্টেজ শো এসবের কারণেই বাংলা গান ঘুরে দাঁড়িয়েছে। লোপা, রূপঙ্কর আমরা তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই গান করছি।

তার গানই আমাদের উৎসাহ দিয়েছে এবং দিচ্ছে।
গ্লিটজ : আপনার নিজের জনপ্রিয় গানগুলো সম্পর্কে বলুন।
 
 
শ্রীকান্ত আচার্য্য: আমার প্রথম দুটি অ্যালবামের অধিকাংশ গানই বাংলা সংগীতের দিকপালদের গাওয়া। আমি সেগুলো নতুন করে গেয়েছি। এর একটি ছিল আধুনিক গানের ক্যাসেট, অন্যটি রবীন্দ্রসংগীতের।

সেই গানগুলো খুব জনপ্রিয়তা পায়। আমি প্রত্যেকবার ইমিগ্রেশন পার হয়ে আসার সময় এটা বুঝতে পারি। আবার অনুষ্ঠানেও আমাকে ওই গানগুলো করতেই হয়। এর পাশাপাশি নিজের বেসিক কিছু আছে যেগুলো মানুষ পছন্দ করে। ‘আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’-সহ অনেকগুলো গানই বাংলা গানের শ্রোতারা খুব পছন্দ করেন।

এগুলো আমারও প্রিয়।
গ্লিটজ : ‘আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’-- গানটি দুই বাংলাতেই দারুণ জনপ্রিয়। এই গানটি তৈরির গল্পটা বলুন?
শ্রীকান্ত আচার্য্য: এই গানটি লিখেছেন লীলাময় পাত্র। সুর করেছেন আমার খুব প্রিয় গায়িকা লোপা মুদ্রার স্বামী জয় সরকার। জয় এখন কলকাতার সংগীতে একটি বিশিষ্ট নাম।

১৯৯৯-২০০০ সালের কথা। এর আগে ‘নরম আলোর বিকেল’ শিরোনামের একটি গান করি। এটি এদিকে আসেনি। প্রথম তিনি এই গানটার সুর করেন। এর কথা লিখেছিলেন শুভদাস গুপ্ত।

এরপরে লীলাময় পাত্র আমাকে এবং জয়কে আলাদা আলাদা খাতায় গানের কথা লিখে দিয়ে যেতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে ‘শ্রাবণ সন্ধ্যা’ গানটির দুটি লাইন সুর করে জয় আমাকে শোনায়। কিন্তু দুই লাইনের পর প্রায় ৮-৯ মাস পার হয়ে গেলেও গানটি শেষ করছিল না সে। একদিন আমার বাসায় এলে আমি জয়কে বলি তোমার এখন তাৎ¶ণিক সুর করতে হবে গানটি। এরপর সে আমার সামনেই এর সুর করে।

তার দুই মাসের মধ্যেই গানটির রেকর্ডিং হয়। ২০০০ সালে ‘বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’ অ্যালবামের শীর্ষ সংগীত হিসেবে এটি প্রকাশ করি। এরপর গানটি দুই বাংলাতেই দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। তবে এই গীতিকারের লেখা আর কোন গীতিকবিতা থেকে আমরা গান করতে পারিনি।  
গ্লিটজ : গানে আপনার আইডল কে?
শ্রীকান্ত আচার্য্য: আইডলের কথা যদি বলেন, তাহলে আমি বলব, আমি যাদের গান শুনে বড় হয়েছি তারাই।

এই তালিকায় আছেন মান্না দে, হেমন্ত মুখপাধ্যায়। ছোট থেকেই বোম্বের সিনেমার গান শুনতাম খুব। ওখানকার শিল্পীদের মধ্যে কিশোর কুমার, মোহাম্মদ রফি, লতাজি, আশাজি আছেন। তারপরে শ্যামল মিত্র। আমি ভীষণ গজলের অনুরাগী।

সেক্ষেত্রে মেহেদী হাসান ও জগজিৎ সিংয়ের অসম্ভব ভক্ত। অজয় চক্রবর্তীকে ভালো লাগে। এই সময়ে কবির সুমন আমার প্রিয়। হরিহরণজিকে ভালো লাগে। এখন যারা গান করছেন তাদের গান শুনেও প্রতিদিনই কিছু না কিছু শিখি।

সুতরাং একজন শিল্পীর নামের মধ্যে আমি আটকে থাকতে পারব না। সবাই ইনফ্লুয়েন্স করেছেন আমাকে।
গ্লিটজ : গান নিয়ে কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে কী?
শ্রীকান্ত আচার্য্য: আমি তখন নতুন গান করি। কিছুদিন আগেই প্রয়াত সুরকার অজয় দাস আমাকে একদিন প্লেব্যাকের জন্য ডাকলেন। সেটা আমার প্রথম প্লেব্যাক ছিল।

কিন্তু সেই গানটির শিল্পী হিসেবে ছবির প্রযোজক আমাকে পছন্দ করলেন না। কিন্তু অজয় দা-ও একরোখা ছিলেন। তিনি বলেছিলেন গানটি শ্রীকান্তই গাইবে, নইলে আমি কাজই করব না। এরপর দুটি গানের রেকর্ডিং করি। কিন্তু পরে একটি গানে কুমার শানুর কণ্ঠ বসানো হয়।

বিষয়টি আমার খুব খারাপ লেগেছিল। তবে আমি ভেঙে পড়িনি। ফলে অনেক সিনেমার কাজই আমি করেছি, এখনও করছি।
গ্লিটজ : ক্রেজি ভক্তদের কোনো স্মৃতি কি মনে দাগ কেটে আছে?
শ্রীকান্ত আচার্য্য: কটি কথা বলে রাখি, আমি বাইরে গিয়ে যত শো করি তার আয়োজক কিন্তু ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বাংলাদেশি। এরমধ্যে একটি ঘটনা না বললেই নয়।

একবার অস্ট্রেলিয়া শো করতে গিয়েছিলাম। তো শো শেষে এক ভদ্রলোক স্টেজে উঠে আমাকে একটি রুমাল দিয়ে মোড়ানো কৌটা গিফট করলেন। বললেন, বাসায় গিয়ে এটি খুলতে। বাসায় গিয়ে খুলে দেখি পিস করা পদ্মার ইলিশ। খুব অবাক হয়েছিলাম।

পরে মাছগুলো ভেজে মজা করে খেয়েছিলাম। জীবনে অনেক উপহার পেয়েছি তবে এটা শ্রেষ্ঠ উপহার বলে মনে করি।
গ্লিটজ : একজন শিল্পী হিসেবে আপনি শ্রোতাদের কাছে কতটা পৌঁছাতে পেরেছেন?
শ্রীকান্ত আচার্য্য: যেখানে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ আছেন সেখানে অল্প হোক, বেশি হোক পৌঁছাতে পেরেছি। আমার গানের শ্রোতা যেমন কলকাতায় আছে, তেমনি ঢাকাতেও আছে। আমি চট্টগ্রামেও গান করতে গেছি।

বিভিন্ন দেশে আমি শো করেছি। সেসবের অনেকগুলোই আয়োজন করেছেন আমার বাংলাদেশি বন্ধুরা। তবে একটি কথা বলব বাংলা গান সত্যিকার অর্থে আবেগ দিয়ে বেশি শোনেন বাংলাদেশিরা। এটা স্বীকার করতেই হবে। এটা আমি কলকাতার মানুষদেরও বলি।

এ দেশের মানুষ ভাষার আবেগের অনেক কাছাকাছি।
গ্লিটজ : ‘কাঁটাতার’ শিরোনামে আপনার একটি গান আছে। এই গানের কথাগুলো আপনি কি অনুভব করেন?
শ্রীকান্ত আচার্য্য: আমার মা এ দেশের। বিক্রমপুরে তার বাড়ি। দেশভাগের আগে মামারা চলে যান বিক্রমপুর থেকে।

আমার মায়ের কাছে বিক্রমপুরের গ্রামের কাহিনি আমি অনেক শুনেছি। এখনও মা আমাকে সেসব গল্প শোনান। আমার মায়ের মতো অনেকের শেকড় এখানে। সেই টানটা কিন্তু তাদের থেকেই গেছে। তাদের আবেগটা আমিও অনুভব করেছি।

আমার মনে হয়ে আমার কোনো গান যদি তাদের দুঃখবোধের সঙ্গে মিলে যায় বা তাদের যদি কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে, তাহলে আমি শিল্পী হিসেবে সার্থক। এটা আমি সত্যি অনুভব করি।
গ্লিটজ : এখন যে গানগুলো হচ্ছে তা কি কোথাও গিয়ে একই রকম হয়ে যাচ্ছে, তারা কি কোথাও গিয়ে স্থির হয়ে গেছে?
শ্রীকান্ত আচার্য্য: একদম ঠিক বলেছেন। আমারও এটা মনে হয়। আমরা যেন গানের জন্য একটা ছাঁচ বানিয়ে ফেলেছি।

এখানে কারও কোনো পরিচয় নাই। আমরা হোমোজেনাইজড ফর্মে চলে যাচ্ছি। এই পরিস্থিতি শুধু বাংলা গানের ক্ষেত্রে নয়। এমনটা ভাবার কারণে শিল্পীরা ঠিক শিল্পী হয়ে উঠছে না। এখন তো কোন গানটা কার এটা বলা মুশকিল।

এটা হিন্দি গানের ক্ষেত্রেও হচ্ছে। অন্য ভাষার গানগুলোরও একই দশা। এখন গানের ক্ষেত্রে শিল্পী গুরুত্ব পাচ্ছে না। গায়কিটাই প্রধান হয়ে গেছে। এখন তো ঢাকার ও কলকাতার ফিচারগুলো একই রকম হয়ে যাচ্ছে।

একই রকম গায়কি। সবাই একইভাবে গান করছে। কম্পোজিশনের ক্ষেত্রে সবাই ভাবছে একটু অ্যাংলোসাইজড হলেই বুঝি সেটা ভালো শোনাবে। অবশ্যই পাশ্চাত্যের প্রেরণা থাকতেই পারে। এটা নজরুলের ভিতরে যেমন ছিল রবীন্দ্রনাথও নিয়েছেন।

তাদের বিশালতা হল তারা সেটাকে নতুন করে গড়েছেন। সব দেশই গান করছে একটা ছাঁচের মধ্যে।
গ্লিটজ : গান নিয়ে দুই বাংলা মিলিয়ে একসঙ্গে কাজের কোনো পরিকল্পনা আছে?
শ্রীকান্ত আচার্য্য: সিনেমা খুবই সাজানো গোছানো জায়গা। কিন্তু গান বাজনার ক্ষেত্রে এটা সম্ভব নয়। এখানে ব্যক্তি পর্যায়ে কাজ হয়।

সিনেমা বিষয়টাই কালেকটিভ। গান করতে হয় একা একটা ঘরে বসে। এটা এখনও ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিষয়। এটা একটা অর্গানাইজড সেক্টরে আনা খুবই কঠিন। তবে এখন যারা এই বাংলায় গান করছেন তাদের গান কিন্তু ওই বাংলার নতুন শিল্পীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে শুনছেন।

এক্ষেত্রে আমি বলব আমরা যেমন মাঝেমাঝে এখানে গান করতে আসি, এদেরও ওখানে গিয়ে গান করা উচিত। এর আগে ফিডব্যাক কিন্তু কলকাতা মাতিয়ে এসেছিল। তার একটা দারুণ প্রভাব আমরা দেখেছি সে সময়। গানটা যদি বিনিময় করা যায়, তবে বাংলা গানের ক্ষেত্রে খুবই ভালো। আমি চাই যেভাবে রেজওয়ানা চৌধুরী ওখানে গান করতে যাচ্ছেন সেভাবে অনুশেহ, বাপ্পা মজুমদার, অর্ণব যাবেন গান করতে।

এদের ওখানে গিয়ে অনেক বেশি লাইভ অনুষ্ঠানে গান করা উচিত। যতক্ষণ না লাইভ শো হবে, যতক্ষণ না কয়েক হাজার দর্শক হইহুল্লোড় করে গান না শুনবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তার ইমপ্যাক্ট হবে না।
গ্লিটজ : এ বিষয়ে আপনারা কি কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন?
শ্রীকান্ত আচার্য্য: এটা তো বলতে পারছি না। তবে আমি এটাকে সমর্থন করি। এ বিষয়ে আমি আশাবাদী।

ভবিষ্যতে এই ঘটনাগুলো ঘটবে। তাতে করে বাংলাগানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেককে বিষয়টি বলতে পারি। কিন্তু আয়োজন করা তো সম্ভব না। আমরা যদি অপেক্ষা করি ইতিবাচক কিছু দেখতে পাব।


গ্লিটজ : গীতিকারের সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে, এটা কেন?
শ্রীকান্ত আচার্য্য: আগে যারা গান লিখতেন তারা সিনেমার জন্য লিখতেন, শিল্পীর জন্য লিখতেন, নিজেরাও লিখে তা অন্যদের দিয়ে গাইয়ে নিতেন। দিনদিন এই সুযোগ কমে এসেছে। এখন গীতিকারদের সম্পর্কে সবার ধারণা তারা যেন বানের জলে ভেসে এসেছে। আমি নিজেও এটা নিয়ে এখন অব্দি লড়াই করে যাচ্ছি। এখন গীতিকারদের কেউ মূল্য দিতে চায় না।

সুরকার হয়তো গান করে একশ টাকা পান। কিন্তু গীতিকারকে কুড়ি দিতে চায় না। এতে সম্মান  ও সম্মানী দুটিই কমে গেছে। ভালো গীতিকবিতার সংকট এ কারণেই।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।