আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘রামায়ন্থ কবি বাল্মিকীর কল্পকাহিনী। সে কল্পকাহিনীকে নির্ভর করে রামমন্দির নির্মাণের জন্য বাবরি মসজিদ সরকারি মদদে ভাঙা হয় কী করে?



মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, ‘স্বয়ং তিনি সাক্ষী যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরাই মিথ্যাবাদী। ’ ‘বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির ছিলো না’- বিচারপতির এই তথ্য বিবৃতির পরও সেই মসজিদের জায়গা আবার তিনভাগ হয় কী করে? পৃথিবীর তিন শত কোটি মুসলমান এলাহাবাদ হাইকোর্টের এ রায়কে চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। আর ভারতের তথাকথিত উলামায়ে দেওবন্দসহ বাংলাদেশের যে সমস্ত মাওলানারা এবং তাদের নেতা-নেত্রীসহ যারাই এই রায়ের পক্ষে বলেছে, তাদের এই সমর্থন কোন মতেই শরীয়তসম্মত হয়নি। মুসলমানগণ পৃথিবীর কোথাও মন্দির-গির্জা ভেঙ্গে মসজিদ করেনি। কারণ, তা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর খিলাফ।

এলাহাবাদ হাইকোর্টের লক্ষ্মো বেঞ্চের যে তিন বিচারক বাবরি মসজিদের তথাকথিত বিরোধপূর্ণ মালিকানা তিনভাগে বিভক্ত করে রায় দিয়েছে; সে তিন বিচারকের একজন এসইউ খান তার রায়ে বলেছে, “অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ মুঘল সম্রাট বুযূর্গ বাবর নির্মাণ করেছিলেন। তবে তা রামমন্দির ধ্বংস করে নয়। ” এছাড়া ‘রামায়ন্থ রচয়িতা কবি বাল্মিকী নিজেই স্বীকার করেছে তথা রামায়নের প্রথমেই লেখা রয়েছে যে, ‘এটি তার কল্পকাহিনী। ’ সুতরাং এই কল্পকাহিনীকে কল্পকাহিনী হিসেবে গ্রহণ না করে এবং বাবরি মসজিদের প্রকৃত ইতিহাসকে এড়িয়ে গিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট মনগড়া রায় দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এখানে রাজনৈতিক প্রভাবকে প্রধান্য দেয়া হয়েছে তথা জঙ্গিবাদী হিন্দুদের অন্যায় দাবিদাওয়াই পূরণ করা হয়েছে।

অপর দুই বিচারক সুধীর আগারওয়াল ও ডিডি সার্মা বিচারক এসইউ খানের এই রায়কে খণ্ডাতে পারেনি। সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, মুঘল সম্রাট বুযূর্গ বাবরই ১৫২৭ সালে এই মসজিদ তৈরি করেছিলেন। আর এই তথ্য যখন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রমাণিত হয় তখন সত্যিকার অর্থে ন্যায় বিচারের স্বার্থে ঐ মসজিদের জায়গা তিনভাগে ভাগ করার প্রশ্নই উঠে না। এলাহাবাদের হাইকোর্টের এই রায় পৃথিবীর প্রায় তিনশ’ কোটি মুসলমান অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এই রায়ের মধ্যে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বীজ দেখতে পাচ্ছে এবং এটাকে মূলত রাজনৈতিক রায় হিসেবে মূল্যায়ন করছে।

রায় ঘোষণা উপলক্ষে ভারত জুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিলো। এক লাখ সত্তর হাজার নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিলো। দ্রুত পরিসি'তি নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৮টি বিমান ঘাঁটিতে মোতায়ন রাখা হয়েছিলো। তার অর্থ এই যে, জঙ্গি হিন্দুরা দাঙ্গা-হাঙ্গামা লাগাবার জন্য কত উদগ্রীব ছিলো অথবা তারা সরকারের উপর কত বেশি চাপ প্রয়োগ করেছিলো ও প্রভাব সৃষ্টি করেছিলো। রায়ে মূলত জঙ্গিবাদী হিন্দুদেরই জঙ্গিপনার প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছে।

দিল্লি জামে মসজিদের ইমাম, ইমাম বোখারীসহ ভারতের সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন যে, এলাহাবাদ আদালত অন্ধবিশ্বাসের ভিত্তিতে রায় দিয়েছে। যে সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং দলীলপত্র আদালতে পেশ করা হয়েছে তা তারা আমলে নেয়নি। ভারতীয় পার্লামেন্টের মুসলমান সদস্যরাও বলেছেন, ‘এ রায়ে মুসলমানদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি অনেক বিধর্মীরাও এতে ন্যায় বিচারের খিলাফ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে। যেমন, ভারতের সাংবিধানিক আইনজ্ঞ রাজীব ধাওয়ান বলেছে, ‘আদালত বিরোধপূর্ণ এলাকার মালিকানা বিষয়টি উপলব্ধি করার প্রাথমিক ও মূল দায়িত্বকে কণ্টকাবিদ্ধ করে ফেলেছে।

কারণ, যদি কোনো সম্পত্তি ভাগ করে দিতে হয়; তাহলে প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে এর মূল মালিককে। কিন্থ আদালত এ বিষয়টিকে আমলে নেয়নি। যদি আমলে নিতো তাহলে মুসলমানদেরকে এর প্রকৃত মালিক হিসেবে খুঁজে পেতো। ’ ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ নির্মিত হয় প্রথম মোঘল সম্রাট বুযূর্গ বাবরের শাসনামলে ১৫২৭ সালে। এটি ছিলো উত্তর প্রদেশের বৃহৎ মসজিদগুলোর অন্যতম।

এ মসজিদের ইতিহাস ইংরেজদের নথিপত্রেও পাওয়া যায়। বাবরী মসজিদের সাউন্ড সিস্টেম ছিলো খুবই উন্নত। এ জন্যও এ মসজিদের খ্যাতি ছিলো। এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ ঔপনিবেশের প্রশাসক উইলিয়াম বেন্টিকের স্থপতি গ্রাহাম পিকফোর্ড বলেছিলো, বাবরি মসজিদের মিহরাবের এক প্রান্ত থেকে সামান্য ফিসফিস শব্দ করলেও ১০০ ফুট দূরত্বের অন্য প্রান্ত থেকে তা শোনা যেতো। এ মসজিদের কাছে ছিলো একটি অলৌকিক কূয়া যাতে ছিলো ঠাণ্ডা শীতল পানি আর মুসলিম-হিন্দু দু’সম্প্রদায়ই একে পবিত্র বলে মানতো।

এ পানির ছিলো রোগ নিরাময় করার অলৌকিক (কুদরতী) ক্ষমতা। এ সবই ফয়জাবাদ জেলা গেজেটে রেকর্ড করা আছে। ্কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এ বিধর্মীদের উপসানালয়গুলোকে ধ্বংস করতে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি তাদের উপাসককেও গালি দিতে নিষেধ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সম্রাট বাবর ছিলেন একজন ধার্মিক মুসলমান।

যিনি যুদ্ধক্ষেত্রেও হাতির পিঠে নামায আদায় করেছেন। কাজেই তাঁর মতো ধার্মিক মুসলমান বুযূর্গ সম্রাটের পক্ষে মন্দির ভেঙে মসজিদ করার কোনো প্রশ্নই উঠে না। আর সত্যিই যদি তিনি তা করতেন তাহলে এক অযোধ্যার রাম মন্দির কেনো- পুরো ভারতের সব মন্দির ভাঙার যোগ্যতা তার ছিলো এবং পুরো ভারতের সব হিন্দুদেরও হত্যা করার ক্ষমতা তার ছিলো। কিন্থ তিনি কোনো মন্দির যেমন ভাঙ্গেননি, কোনো হিন্দুর গায়েও হাত তোলেননি বরং দয়ার হাত প্রসারিত করেছেন। সুতরাং তাঁর নামে এমন অপবাদ দেয়া জ্বলন্ত ও জীবন্ত ইতিহাসকে বিকৃত করার শামিল।

ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমার বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয় করেন তখন সেখানে নামায আদায় করার উপযুক্ত পরিবেশ ছিলো না। তখন পাদ্রীরা তাদের গির্জায় নামায আদায়ের জন্য অনুরোধ করলে তিনি প্রজ্ঞাচিত কণ্ঠে বললেন, আমি এখানে নামায আদায় করলে এটাকে বরকত মনে করে ভবিষ্যতে কেউ এই গির্জাকে মসজিদ বানিয়ে ফেলতে পারে। সেই গির্জা যাতে ধ্বংস না হয় সেজন্য তিনি তাতে নামায আদায় করেননি। এই হলো ইসলামের আদর্শ। সেই আদর্শের প্রতীক বুযূর্গ সম্রাট বাবরের পক্ষে কখনো সম্ভব নয় হিন্দুদের মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ করা।

রামায়ন রচয়িতা কবি বাল্মিকী নিজেই স্বীকার করেছে তথা রামায়নের প্রথমেই লেখা রয়েছে যে, ‘এটি তার কল্পকাহিনী। ’ সুতরাং এই কল্পকাহিনীকে কল্পকাহিনী হিসেবে গ্রহণ না করে এবং বাবরি মসজিদের প্রকৃত ইতিহাসকে এড়িয়ে গিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট মনগড়া রায় দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এখানে রাজনৈতিক প্রভাবকে প্রধান্য দেয়া হয়েছে তথা জঙ্গিবাদী হিন্দুদের দাবিদাওয়াই পূরণ করা হয়েছে। তবে অযোধ্যার হাইকোর্ট কেবল নয়; সব ধর্মব্যবসায়ী এবং ধর্মব্যবসায়ীভিত্তিক জোট রাজনীতিবিদরাও তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ রায়ের পক্ষ নিয়েছে। ভারতের রায়ের পক্ষ নিয়েছে যেমন কংগ্রেসের দালাল উলামায়ে দেওবন্দ তেমনি এদেশে তাদের শিষ্য হদছ-কমিনী এবং তাদের নেতানেত্রীরাও।

এরা স্পষ্টতই উলামায়ে ‘ছূ’ এবং মুনাফিক। এই উলামায়ে ‘ছূ’ এবং মুনাফিকরাই ইসলামের বড় শত্রু। এই মুনাফিকদের কারণেই মুসলমানদের প্রতি চরমভাবে জুলুম করে এ বৈষম্যমূলক এবং প্রতারণাপূর্ণ একটি রায় উচ্চারিত হয়েছে। মুসলমানদের উচিত ধর্মব্যবসায়ী ও ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতিকারী সব মুনাফিকদের চিহ্নিত ও বর্জন করা। কারণ, তারাই ইসলামের চরম শত্রু।

তাদের জায় ঠিকানা জাহান্নামের অতল তলে যা নিকৃষ্ট আবাসস্থল। (নাউযুবিল্লাহ)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।