আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ এখন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রঃ হাইকোর্ট

বাংলা আমার দেশ

হাইকোর্ট ঘোষণা করেছে, পঞ্চম সংশোধনী মামলায় আপিল বিভাগের রায়ের সঙ্গে সঙ্গে চার মূলনীতি প্রতিস্থাপিত হওয়ায় ৭২র আদি সংবিধান ফিরে এসেছে। সংবিধানে চার মূলনীতি ফিরে আসায় বাংলাদেশ আজ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। তাই ধর্মনিরপেক্ষতার দেশে কাউকে কোন ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা যাবে না। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো: জাকির হোসেনকে নিয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৪ অক্টোবর সোমবার এ রায় ঘোষণা করেন। ঘোষিত রায়ে বলা হয়, সামরিক শাসকেরা বিভিন্ন সময়ে সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে।

কিন্তু পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হওয়ায় সংবিধানের চার মূলনীতি গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র ফিরে এসেছে। আদি সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আমরা এই চার মূলনীতি মেনে চলা ও রায় দিতে বাধ্য। একই সঙ্গে ৭২'র সংবিধান ব্যতীত অন্য কোন সংবিধানকে স্বীকার করতে বাধ্য নই। রায়ে আরো বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও চার মূলনীতির মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা অন্যতম। তাই সব ধর্মের সকল মানুষের নিজ নিজ ধর্ম পালন করার অধিকার রয়েছে।

এছাড়া কোন ধর্মীয় পোশাক কারো ওপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না। একই কারণে কেউ কোন ধর্মীয় পোশাক পরিধান করলে তাকে নিষেধ করা যাবে না। প্রতিটি মানুষ শালীনতা বজায় রেখে নিজ পছন্দ অনুযায়ী পোশাক পরিধান করার অধিকারী। গত ২২ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে নাটোরের সরকারি রাণী ভবানী মহিলা কলেজ, বোরকা না পরলে আসতে মানা শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সরকারের প্রতি স্বপ্রণোদিত রুল জারি করেছিল। রুলের ওপর শুনানি গ্রহণ করে হাইকোর্ট এ রায় প্রদান করেন।

রায়ে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা যাবে না বলেও নির্দেশ প্রদান করেছে। রায়ের নির্দেশনাসূমহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জানিয়ে দেয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাণী ভবানী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যক্রম চলাকালে তাকে সাসপেন্ড করা উচিত বলে হাইকোর্ট অভিমত দেয়। তবে বিভাগীয় কার্যক্রম চলাকালে তাকে শুনানির সুযোগ দিতে হবে। আদালত রায়ে বলেছে, প্রাথমিকভাবে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

এজন্য পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলাকালে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বক্তব্য গ্রহণের জন্য বলা হয়। উল্লেখ্য, আগস্ট মাসে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের দৃষ্টিতে আবেদন আকারে আনেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক ও এডভোকেট কে এম হাফিজুল আলম। প্রতিবেদনে বলা হয়, নাটোর রাণী ভবানী সরকারি মহিলা কলেজে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও খেলাধুলায় ছাত্রীদের অংশ নেয়ার ওপর জারি রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক মাস দুয়েক আগে কলেজে যোগ দেয়ার পরই নির্দেশ দেন বোরকা পরে আসতে হবে ছাত্রীদের। এ নির্দেশ না মানায় অনেককেই কলেজে ঢুকতে দেয়া হয়নি।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অধ্যক্ষ অবাধ্য ছাত্রীদের গায়ে হাত তুলতে পর্যন্ত দ্বিধা করেন না। এছাড়া কলেজের আড়াইশ শিক্ষার্থী তাদের অভিযোগ সংবলিত একটি চিঠি ৭ আগস্ট শিক্ষা সচিব বরাবর কুরিয়ারে পাঠান। চিঠিতে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, জুন মাসে এ কলেজে যোগ দেন অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক। এরপরই তিনি ছাত্রীদের বোরকা ও মার্কিন সাদা কাপড়ের স্কার্ফ পরে আসার নির্দেশ দেন। নির্দেশ অমান্যকারীদের কলেজ গেট থেকে বিদায় করে দেয়া হয়।

দুএকজন ছাত্রী তার চোখ এড়িয়ে কলেজে ঢুকে পড়লে অধ্যক্ষ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও গায়ে হাত তোলেন। তখন আদালত আবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণ করে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত রুল জারি করে। এছাড়া দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিসে নারীদের বোরকা পরতে বাধ্য না করতে নির্দেশ দেয়া হয়। রুলে বোরকা পরতে বাধ্য করা এবং খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড থেকে মেয়েদের বাদ রাখাকে কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।

রুলের শুনানিতে আবেদনকারী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক ও এডভোকেট কে এম হাফিজুল আলম, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল নজরুল ইসলাম তালুকদার ও অধ্যক্ষের পক্ষে মোঃ খলিলুর রহমান অংশ নেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।