আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাও সেতুংঃ চীনা, কমিনিউস্ট, কবি

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই

মূলঃ জোনাহ রাস্কিন চেয়ারম্যান মাও সমন্ধে আমরা কি ভাবি? বৈপরীত্যে ভরপুর একজন মানুষ- একজন জাতীয়তাবাদী, কমিউনিস্ট, বিপ্লবী, যোদ্ধা, ঠিক তেমনিভাবে(The little Red Book) ছোট লাল বইটির প্রণেতা এবং গনপ্রজাতন্ত্রী চায়নার কয়েক দশকব্যাপী নেতা- সে অবশ্য বিংশ শতাব্দীর চায়নার সর্বোচ্চমানের একজন কবিও বটে। তার সৃষ্টিকর্মের একটি নতুন অনুবাদ তাকে একজন লেখক এবং একজন শিল্পী হিসেবে মূল্যায়ন করার দ্বার খুলে দেয়। একজন সমালোচক ওয়াশিংটন পোষ্ট পত্রিকায় মাও এর কবিতাকে “রাজনৈতিক দলিল” হিসেবে অভিহিত করে, তবে সে আরো যোগ করে, “সাহিত্য হিসেবে এটা মর্যাদার দাবী রাখে”। সাহিত্য থেকে রাজনীতিকে অবশ্য বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়। “প্রথম ঘেরাও” এর সময় মাও লেখে, “দশ লক্ষ শ্রমিক এবং কৃষককে আমরা দিয়েছি জাগিয়ে” তবে এই পঙক্তিটির মত তার অন্য সবকটি পঙক্তি চায়নার বিপ্লব সমন্ধে এমন সুনির্দিষ্ট না হলেও তার কবিতার অধিকাংশই পঙক্তি এমনধারার।

১৮৯৩ সালে একটি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহন করা মাও বেড়ে উঠে চীনা ক্লাসিক সাহিত্যকে ভালোবেসে এবং সেই সময়ে আলোকপ্রাপ্ত হয়ে উঠতে পেরেছিল সংস্কৃতির ব্যাপারেও। “শিল্প-সাহিত্যে এবং বিজ্ঞানে ভুল এবং সঠিকতার প্রশ্নটি শৈল্পিক এবং বৈজ্ঞানিক পর্যায়বৃত্তিক মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে স্থির করা যেতে পারে,” সে লেখেছিল, সারমর্মের ঢঙে এগুলো নির্দিষ্ট হতে পারে না। সে প্রায়ই দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে উচ্চারণ করত যে শিল্পীদেরকে কৃষক এবং প্রলেতারীয়েতের শ্রেনীস্বার্থ সংক্রান্ত ব্যাপারে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে, এমন সময় সে তৈরী করে নেবে নিজস্ব একটি রচনাশৈলী। আমেরিকান লেখক এবং শিল্পীরা তার মর্যাদাবৃদ্ধিকল্পে সুস্পষ্ট ভূমিকা পালন করেছে এবং তার নেতৃত্বে সংগঠিত বিপ্লব সমন্ধে লেখে গেছে প্রবল উৎসাহ নিয়ে। মিসৌরীতে জন্মগ্রহন করা সাংবাদিক এডগার স্নো ১৯৩৭সালে লেখা তার চায়নার আকাশে লাল তারা(Red star over China) নামক গ্রন্থে তাকে বিশালাকারে উপস্থাপন করেছে এবং ১৯৬০ এর দশকে অ্যান্ডি ওয়ারহল তাকে একজন বৈশ্বিক ব্যাক্তিত্বে রুপান্তরিত করেন।

ফ্রেডেরিক টুটেন দীর্ঘ পদযাত্রায় মাও এর দুঃসাহসিক অভিযান(The Adventure of Mao on the long march) নামে একটি দুর্দান্ত দাদাবাদীয়(Dadaesque) উপন্যাস লেখেন যা ১৯৭১ সালে প্রকাশিত হয়। জন আপডিক দ্যা নিউ ইয়র্কার পত্রিকায় এটার ইতিবাচক সমালোচনা লেখেন এবং সুসান সনটাগ এটাকে ‘চরম উচ্ছলতায় ভরপুর বই” হিসেবে অভিহিত করেন। তখনকার দিনে আমরা যারা বেঁচে ছিলাম সম্ভবত তারা সকলেই মাও বিষয়ক কিংবদন্তী তৈরীতে সাহায্য করেছি। টুটেন তো নিশ্চিতভাবেই এটা করেছে। “আমি দীর্ঘ পদযাত্রায় মাও এর দুঃসাহসিক অভিযান উপন্যাসটি লেখেছিলাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন রাজনৈতিক সময়ে,” সে সুস্পষ্টভাবে বলেছিল, “চীন ছিল অনেকটা কাছাকাছি, এটার বিপ্লব এখনও তরতাজা এবং আপাতদৃষ্টিতে অকলুষিত”।

টুটেন এর সমসাময়িকদের মধ্যে অনেকেই চীনা বিপ্লবকে খাঁটি এবং অকলুষিত বিষয় হিসেবে দেখতেন এবং প্রায়ই ছোট লাল বই(The little Red Book) থেকে উত্থিত প্রশ্নগুলো একে অপরকে মেনে নিতে বাধ্য করতেন। তবে আমি কখনও অতদূর যাইনি, যদিও আমি মাও এর উৎসাহকে ধরতে পেরেছিলাম এবং অংশগ্রহন করেছিলাম সাংস্কৃতিক বিপ্লবে যা বেইজিং থেকে প্যারিস এবং আরো দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। অবশেষে, দ্যা বিটলেস মানসিক সুস্থতার প্রয়োজনীয় বক্তব্য ঢুকিয়ে দিয়েছিল। “তুমি যদি চেয়ারম্যান মাও এর ছবিকে নিয়ে যাও বহন করে, মনে রেখো এটাকে তুমি কোনভাবেই কারো কাছে যাচ্ছো না নিয়ে”, বিপ্লব চলাকালীন সময়ে তারা এই গানটি গাইত। বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, মাও নিজেই এটাকে বিশালাকারে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এম নিক্সন এর কাছে, একজন চরম মাত্রার অ্যান্টিকম্যুনিস্ট যে ১৯৭২ সালে চীন পরিদর্শনে গিয়ে মাও কেই মাও এর নিজের কিছু কবিতা আবৃত্তি করে শুনিয়েছিলেন।

তারপর, নিক্সন এবং চৌ এন লাই, মাও এর কবিতার মর্মার্থ বিষয়ে আলোচনা করেন- যেন তারা দুজনে অধ্যবসায়ী ছাত্র এবং মাও তাদের মহান শিক্ষক। ১৯৭৬ সালে মাও যখন তার তিরাশি বছর বয়সে মারা যায়, তখন পুরো বিশ্ব তার জীবনকে নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা শুরু করে। বইয়ের পর বইয়ে- তার সারাজীবনের স্মৃতি এবং সমন্বিত ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে- শক্তিমান মাও বিগত ত্রিশ বছর ধরে নতুন করে আলোচনায় আসতে থাকে এবং যারা তাকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করত তাদের মধ্যে অনেকেই এখন তার নামে কুৎসা রটায়। মাও সেতুং এর কবিতা(The Poems of Mao Zedong) নামক বইয়ের ভূমিকায় উইলিস বার্নস্টন বলেন, তার রাজনীতির খুবই সামান্য অংশই সাহিত্য সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রভাব ফেলেছে। “সে ছিল একজন মহৎ কবি, একজন সত্যিকারের শিক্ষক”।

বার্নস্টন বলেন, কবিতায় মাওয়ের ছিল অনেকবেশী সংযত দৃষ্টিভঙ্গী- সম্ভবত কৃত্রিমভাবে সংযত- যে কবিতাগুলোকে সে শুধুমাত্র কলমের আঁচড় বলে খারিজ করে দিয়েছে। তথাপি, সে তার পয়ষট্টি বছর বয়সে অনুমতি দিয়েছিল সেগুলোকে প্রকাশ করার। এই বর্তমান সংস্করণটি ১৯৬৩ সালে বেইজিং থেকে প্রকাশিত সংস্করণটির উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। একজন যথাযোগ্য আমেরিকান হিসেবে বার্নস্টন বর্তমান সময়ে মাও এর সৃষ্টিকর্মকে আমেরিকানদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন যখন চীন সত্যিকার অর্থে একটি বিশ্বশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। একজন জীবনব্যাপী শিক্ষক, লেখক, কবি, বোর্জেস এবং সাপফো বিশেষজ্ঞ এবং একজন মেধাবী অনুবাদক বার্নস্টন তার (The Poetics of translation) বইয়ে অনুবাদ সমন্ধে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন আলোচনা করেছেন।

তার ভেতরে আছে সূক্ষ্ম কাব্যিক কল্পনার সমাবেশ এবং তার আরো আছে পুরাতন চীনা ঢং। সাংস্কৃতিক বিপ্লব চলাকালীন সময়ে তিনি চীনে ছিলেন- চৌ এন লাই তাকে আমন্ত্রন জানিয়েছিল। ১৯৮০ এর দশকে তিনি বেইজিং এ সাহিত্য পড়াতেন। উপরন্তু তার এই আশি বছর বয়সে, তিনি পর্যাপ্ত পরিমানে অভিজ্ঞ এবং প্রাজ্ঞ- যুদ্ধ এবং বিপ্লবের ভেতর দিয়ে তার জীবনকে চালিয়ে নিয়ে গেছেন এটা জানতে যে যদি আমরা শুধুমাত্র এমনধরনের কবিদেরকে পড়তে চাই যারা সম্পূর্নরুপে মানুষ ছিলেন তাহলে আমাদেরকে কতিপয় দামী কবিদেরকে পাঠ করতে হবে। উদাহরন স্বরুপ,এজরা পাউন্ড, টি এস এলিয়টদেরকে নয়।

ছত্রিশটি কবিতা এখানে স্থান পেয়েছে, এদের মধ্যে কিছু তিন লাইনের মত ছোট ছোট কবিতা, অন্যগুলো বেশ দীর্ঘ। এগুলোর মধ্যকার প্রায় অর্ধেক কবিতা লেখা হয়েছে মাও এবং কমিনিউস্টরা ক্ষমতা অধিগ্রহণ করার পর। সবগুলো কবিতাই চীনা এবং ইংরেজী ভাষায়। বার্স্টন মাওয়ের লিপিকলার(Calligraphy) ধরন অক্ষুণ্ণ রেখেছেন, প্রত্যেকটি কবিতার পাদ মন্তব্য(Footnotes) অন্তর্ভূক্ত করেছেন এবং অনুবাদের উপরে একটি মন্তব্য, “চীনা কবিতা অনেক বেশী মাত্রায় চিত্রকল্পের উপর নির্ভর করে এবং অন্য কাব্য-কলা গুলোকে সবচেয়ে কম হারিয়ে চিত্রকল্পগুলোকে প্রানবন্তভাবে অনুবাদ করতে হয়”- এই বিষয়টাও মাথায় রেখেছেন। পদ্যরচনার কৌশল(Versification) সমন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে বার্স্টন আরো জানায় যে মাও কবিতায় তার আদর্শ প্রধানত গ্রহন করেছেন তাং(৬১৮-৯০৭) এবং সাং (৯৬০-১১২৭) যুগের কবিদের কাছ থেকে যা দেখায় যে কবিতার ঐতিহ্য চীনে কতদূর পিছনে বিস্তৃত, যেখানে সম্রাটদের প্রত্যাশা থাকত লিখিত কবিতার উপর।

একজন তরুণ পাঠক প্রথমবারের মত তার সৃষ্টিকর্মের সংস্পর্শে এসে, কবি মাও সেতুং এবং একজন কমিউনিস্ট বিপ্লবী মাও সেতুং কে মেলাতে পারে নি। বার্স্টন যেমন আমাদের দেখায় যে, মাও এর কিছু মহৎ কবিতা চরম মাত্রায় ব্যাক্তিগত, যেমন “The Gods”(সবচেয়ে উপরে থাকা মানুষেরা) কবিতাটি তার স্ত্রী এবং বোনদেরকে নিয়ে লেখা যাদেরকে মাও এর প্রতিপক্ষ- চীনা জাতীয়তাবাদীরা ১৯৩০ সালে মস্তক ছিন্ন করে হত্যা করেছিল। কবিতাটি একটি শক্তিশালী চিত্রকল্পের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে- “উর্দ্ধগামী বিশালাকার চালের পাত্র থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে”- এটা উন্মোচিত করে তার আক্রম্যতা(vulnerability) এবং তার ক্ষতির, অনুভূতির ব্যাপকতা যা সে অন্যথায় জনসাধারনের কাছে প্রকাশ করতে অস্বীকৃত হত। এমনকি তার চরম মাত্রার ব্যাক্তিগত কবিতাও রাজনৈতিক ঘটনা-প্রবাহ দ্বারা প্রভাবিত ছিল। অধিকাংশ না হলেও এই সংস্করণের অনেক কবিতাই অনেক বেশী রাজনৈতিক, এমনকি প্রচারনামূলক এবং এগুলো পড়ে যুদ্ধ এবং বিপ্লবের কথা না ভাবাটা কঠিন।

“দীর্ঘ পদযাত্রা” (Long march) কবিতাটি শুরু হয়েছে এভাবে, “লাল ফৌজ কখনও দুর্ভোগের ভয়ে ভীত নয় এই পদযাত্রায়, এবং এখানে মনে হয় বাহিনীগুলোকে উৎসাহ দিতেই এটা লেখা হয়েছে। “চীনের কন্যা”দের প্রতি নির্দেশ করে লেখা “মিলিশিয়া নারী”(Militia Women) কবিতাটির উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদেরকে বিপ্লবের মধ্যে নিয়ে আসা। “টিংজৌ থেকে চাংশা”(Tingzhou to Changsha) কবিতাটি অন্তর্গতভাবে রাজনৈতিক; “স্বর্গের সৈন্য” রা(Soldiers of Heaven) লেগে থাকো এবং পরাজিত কর “তিমি”কে(The Whale), তবে এগুলো সুস্পষ্ট প্রতীকবাদ। দীর্ঘ পদযাত্রার নানা ধরনের দুর্ভোগের মধ্যেও মাও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতেন। নানা বর্ণের ফুল, ধবল তুষার, টগবগে ঘোড়া, রাজহংসী, সুনীল আকাশ, স্রোতস্বিনী নদী, উজ্জ্বল চাঁদের সৌন্দর্যের প্রতি তার মনমুগ্ধতাকে যুদ্ধ কখনো কমিয়ে আনতে পারেনি।

পাহাড়-পর্বত সর্বদা তার চোখকে মুগ্ধ করে রাখত, তার সর্বাধিক জনপ্রিয় “তুষার”(Snow) কবিতায় যেমন সে লিখেছিল, রুপালী সাপের ন্যায় পর্বতমালা নৃত্য করে। এই সংস্করণের সর্বশেষ কবিতা “গৌ মরৌ এর প্রতি”(To Gou Moruo) তে মনে হয় মাও জয়ের প্রতি মানুষের আকাংখ্যার অহমিকাকে প্রতিফলিত করেছেনঃ আমাদের এই ছোট্ট গ্রহে/ গুটিকতক মাছি দেয়ালে হানে প্রচন্ড আঘাত। / করে তারা গুঞ্জন, গুনগুন,/ পিপড়া বেয়ে উঠে দেবদারু গাছ / ফেটে পড়ে দম্ভে / তাদের সুবিশাল সম্রাজ্য সমন্ধে। বসনিয়ান-সার্ব জাতীয়তাবাদী যুদ্ধনেতা রাডোভান কারাডযিক- যাকে ইদানিং সময়ে গ্রেফতার হয়েছে এবং যাকে মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের সম্মুখীন হতে হবে- এর কবিতার মত মাওয়ের কবিতায় মোহাচ্ছন্ন হিংস্রতা প্রকাশিত হয় না। সে মাঝে মাঝে অবশ্য “রাইফেলের বন”(forest of rifles) চিত্রকল্পটির মত করে যুদ্ধাস্ত্রগুলোর উপরে কল্পনার রঙ মাখায়।

কারাডযিক এর কবিতা সুস্পষ্টভাবেই মৌলবাদী এবং নারকীয়; “কৃষ্ণগহ্বরের আমি দেবতা” সে দম্ভ করে বলে। মাও এর কবিতা আমাকে আরেকজন এশিয়ান কম্যুনিস্ট নেতা হো চি মিন এর কবিতার কথা মনে করিয়ে দেয় যেগুলো সে ১৯৪২ সালে কারাগারে বন্দী থাকা কালীন সময়ে লেখেছিল এবং যেগুলো কারাগারের দিনলিপি(Prison Diary) শিরোনামে প্রকাশিত হয়। হো চি মিন তার বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গীকে ছদ্মাবরনে পুরেছিলেন যাতে করে কারাধ্যক্ষ তার সৃষ্টিকে বাজেয়াপ্ত করতে না পারে এবং তার উপর মাত্রারিক্ত শাস্তির বোঝা চাপিয়ে না দেয়। সে লেখে, “যখন কারাগারের দরজা যাবে খুলে, সত্যিকারের ড্রাগন আসবে বেড়িয়ে পাখা মেলে” যা সবচেয়ে বেশী পরিচিত এবং প্রতিনিয়ত উদ্ধৃত করা পংক্তি। আমি যদি মাও কে কোন আমেরিকান কবির সাথে তুলনা করতে চাই তাহলে আমি বলবো সে হচ্ছে ওয়াল্ট হুইটম্যানের সমগোত্রীয়, যদিও এখানে আরো বলা যায় হুইটম্যানের পঙক্তিগুলো দীর্ঘ, যার ফলে ছন্দময়তায় ভিন্নতা আছে এবং কন্ঠভঙ্গী ও এক নয়।

ওয়াল্ট হুইটম্যানের এর মত মাও তার নিজেরই গান গায়। এখানে আছে সর্বশক্তিমান “আমি” ঠিক তেমনিভাবে সবকিছু দেখতে পাওয়া চোখ এবং এই আমি হতে পারে ব্যাকুল এবং বিষন্ন এখানে যেমন- সরে যেতে থাকা, মুমূর্ষ স্বপ্নগুলোকে আমি চেয়ে চেয়ে দেখি। “সাঁতার কাটা” কবিতায় মাও লেখে, “আমি ওয়াচাং মাছের মত সমুদ্র হিল্লোলে ভেসে থাকা করি অনুভব / কাটি সাঁতার ইয়াংজি নদীতে। সে যেভাবে নিজেকে চায়নার সাথে সম্পৃক্ত করে ঠিক তেমনি ভাবে হুইটম্যান নিজেকে সম্পৃক্ত করে আমেরিকার সাথে, এবং মনে হয় যেন তা সাযুজ্যপূর্ন হয়েছে কারন বিংশ শতাব্দীর চায়না উনবিংশ শতাব্দীর আমেরিকার মতই ছিলঃ একটি দেশ নানা ধরনের সামাজিক পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে অর্থনৈতিকভাবে প্রচন্ড গতিতে এগিয়ে চলছে, এবং বিশালাকার সৃষ্টিশীল এবং ধ্বংশাত্বক শক্তিগুলোকে ছেড়ে দেওয়া, এগুলোর সবকিছুই মাও নিজেই ঘটিয়ে তুলছেন। মাওয়ের ভেতরেঃ অজানা গল্প(In Mao: The Unknown Story) বইটির লেখক চ্যাং এবং হাল্লিডে মাও কে চিত্রিত নিজেকে অনেক ক্ষমতাশালী ভাবা বাতিকগ্রস্ত একজন লোক হিসেবে যে একটি নতুন জাতি গড়ে তুলতে পুরাতন চায়নার অধিকাংশ বিষয়কে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে।

বার্নস্টন তাকে দেখায় এমন একজন কবি হিসেবে যে পুরাতন থেকে ধার করেছিল এবং সাহায্য করেছিল পুরাতনকে সংরক্ষণ করতে, একই সময়ে শপথ করেছিল এটাকে পুরোপুরি উল্টিয়ে ফেলতে এবং নতুন করে যাত্রা শুরু করতে। ১৯৬০ এর দশকে দ্যা বিটলেস মাও এর জীবন-উপাখ্যানের ব্যাপারে আমাদেরকে ন্যায়সঙ্গতভাবে সতর্ক করে দিয়েছিল, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় যে তারা চাইত আজকের দিনে আমরা যেন তাকে অধ্যয়ন করি। এমনকি তারা সম্ভবত বার্নস্টনের একত্রিত করা দুর্দান্ত সংস্করনটিকে মাথার উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়। এটা কি ভালো দেখায়!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।