আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক ফোটা চোখের জল



(জীবনকে যে দেখতে পারে সে সুন্দরকে জানে আর যে সুন্দরকে জানে সে সত্যকে দেখতে পায়। কারন সত্যিই সুন্দর। ) হিমি দেখতে যেমন অপূর্ব কাজ কর্মেও তেমনি যাদুকরীর মত। সত্যিই কি এই রাজকুমারীর মত মেয়েটি আমার সাথে থাকবে!আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। পৃ্থিবীর নানা দেশে নানা মানুষের কী কষ্ট।

সবার কষ্টের একটি প্রকাশ আছে- তা হলো চোখের জল। নানান দেশের মানুষের নানান রকম ভাষা। একে অন্যের ভাষা না শিখলে বুঝে না,অথচ সব মানুষের কষ্টের ভাষা এক। হিমির চোখে জল দেখলে আমার বুকে ভূমিকম্প হয়। হিমির সাথে আমার দ্বিতীয় বার দেখা হয় স্কয়ার হাসপাতালের ক্যান্টিনে।

হিমি আমার পাশের চেয়ারে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,তোমার নামটা কিন্তু সেদিন জানা হয়নি। আমি উচ্ছল কিশোরের মতন দু'পা দুলাচ্ছিলাম। মাথাটা উঁচু করে তাকিয়ে ছিলাম হিমির চোখের দিকে। আমার নাম বললাম। হিমি আশ্চর্য নরম সুরে বলল,তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে,তুমি খুব সুন্দর।

তোমার হাতটা একটু দাও ছুঁয়ে দেখি। একটা সুন্দর মানুষ যে কোনো মানুষকে শান্তি আর আনন্দ দিতে পারে। আমি হিমির সহজ আর গভীর কথাতে মুগ্ধ হলাম। মনে হলো যেনো,পৃথিবীটা প্রানময় হয়ে উঠেছে। সেদিন আরো কিছুক্ষন কথা হয়।

হিমির শেষ কথাটা ছিল এই রকম- তুমি তো লেখক,মানুষের মনের কথা বুঝতে পারো তাহলে আমার চোখের জল তোমাকে কত কষ্ট দিতে পারে তা বুঝ না?কথা শেষ করে হিমি আমাকে প্রানপ্রন আকুতি দিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। চাষের কাজে লাগাবার জন্য যখন গরুকে বলদ বানানো হয়,তখন চাষের সুবিধা হয় সন্দেহ নেই। কিন্তু যে গরুটা কে নির্বীর্য করা হয়,তার দ্বারা সৃষ্টিলীলা চলে না। আমার হয়েছে এই দশা। শনির দশা।

সবচেয়ে বড় কথা হলো- একজন তরুনীর তারুন্য আর আমার দুর্বল দর্শন মিলে,এক অপরুপ জীবনের মোহ তৈরী হচ্ছে একটু একটু করে আমার বুকের ভেতর। হায় কপাল! কি যে করি! আমি জানি,হিমির মুখে একটু হাসি ফোটাতে পারলে পৃ্থিবীর মুখেও হাসি ফুটবে। পৃ্থিবীর হাসির চেয়ে আর মূল্যবান কোন কিছু আমার কাছে নেই। "ন হি পুত্রস্য কামার পুত্রঃ প্রিয়ো ভবতি আত্মনস্ত কামায় পুত্রঃ প্রিয়ো ভবতি। " আমি বুঝি না,মাও সেতুং কেন বলেছেন- "আমরা যত শিখছি ততই নির্বোধ হচ্ছি।

"সেদিন দুপুরে বাসায় ভাত খাচ্ছিলাম,হঠাৎ মা আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল- পৃ্থিবীর মনের কথা তুমি পড়তে পারো কিন্তু জগতের মানুষের সাথে পলিটিক্স না করলে গেইন করা যাবে না। তারপর সুর করে গাইল, "বড়ি তুলসী,চড়ি তুলসী,করলাম তুলসী সার/গোবর দিলে তুলসী তলায়,জন্ম হয় না আর। "মা একবার ক্যাট ক্যাট শুরু করলে আর থামার নাম নেয় না। কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আবার বলতে শুরু করল,তুমি কি 'Youth and man's Life' বইটা পড়ছ?আমি কোনো কথা বলি না দেখে মা চোখ বড় বড় করে বলল,তোমার সবার কাছে নিন্দনীয় হওয়ার পেছনে আর একটি কারন আছে- তাহলো ধনী পিতা মাতার সন্তানদের প্রচুর অবকাশ থাকায় তোমার কথা উপভোগ করার জন্য অনেকেই তোমার কাছে স্বেচ্ছায় আসে। আর তুমি মনে কর,তোমার ইহ-জীবন সার্থক।

"তুমি আর্শীবাদ করো মোরে মা/আমি যেনো বাজাতে পারি/সে অভিযানের দামামা... মনে মনে এই কথা বলতে বলতে আমি ঘর থেকে বের হয়ে পড়ি। হিমিকে নিয়ে চলে যাবো,সুমেরুর কাছাকাছি 'টরমজোতে'। যদিও শীতের সময় সেখানে সূর্য ওঠে না,দিনের বেশির ভাগ সময় থাকে অন্ধকার। আমি আর হিমি সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালা দিয়ে দেখব শুধু সাদা বরফ আর বরফ। আমি জানি যে,মৃত্যু হল ক্ষুদ্র আনন্দের ব্যাপার।

তবুও আমি অনুভব করি- আমি বড় ক্লান্ত,আমি বড়'ই ক্লান্ত। আমার মধ্যে যুক্তিবোধ আর আবেগ কঠিন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাইরের কোনো কাজ করার শক্তি আমার নেই। আমি জানি লড়াই না করে ভালো কিছু অর্জন করা যায় না। যা কিছু সৌন্দর্যময় ও স্বাধীন সব কিছুর কথা 'আগে হোক পরে হোক' আমার মনে উঁকি দেয়।

আমার জীবনের প্রকান্ড আবেগের মধ্যে প্রেমের আবেগ খুব টনটনে। ইদানিং খুব ভাবছি,জীবনের এইসব রোমান্টিক দিক গুলো নিয়ে ডকুফিল্ম বানাব। The Call of death is a Call of Love.Death Can be Sweet if we answer it in the affirmative if we accept it as of the great eternal forms of life and transformation. এই মুহূর্তে উইলিয়াম ব্লেইকের 'কলুষিত ভজনালয়' কবিতাটি খুব মনে পড়ছে। আচ্ছা এই কবিতাটিতে কি যীশুখৃষ্টের দ্বাদশ শিষ্যদের অন্যতম 'জুডাস ইস্ক্যারিয়টের' কথা আছে?আমার মনে হয়,মানব জীবনের সব রহস্য আছে বাতাস,আত্মা আর অন্ধকারের মধ্যে। অন্ধকার পৃ্থিবী হাজার হাজার আলোকে জোছনাময় হয়ে উঠুক।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।