আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যাযাবরের বাসর......... (বাংলাদেশী জাহাজীর গল্প- পর্ব-৩/শেষ))

"সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই।

সত্যি কথা বলতে কি আমার ফিউচার একরকম ঠিক হয়ে ছিল..। যেহেতু আমার একজন মামা জাহাজের কেপ্টেন তাই আমার মধ্যবিত্ত বাবার সপ্ন তার একছেলেকে জাহাজে পাঠাবেন...। . টাকা পয়সার আধিক্য তো আছেই তার উপর একটা সম্মান জনক চাকুরী- বাবা হিসাবে এটা নির্দোষ চাওয়া বলে আমার মনে হয়..। বাবার সপ্ন পূরণ করতে আমিও একদিন ট্রলি বেগ নিয়ে উঠে গেলাম লোহার সেই বিশাল জাহাজে আর পার্মানেন্ট ভাবে নাম লেখালাম ""যাযাবরের "" তালিকায়.. .।

সেই থেকে এ যাযাবর আসি..। ভালোই লাগে আমার.. ছুটে চল অবিরামভাবে.. স্বাধীনতার সুখ পেলাম বুঝি এত দিনে!!! যাযাবর এই জীবনে প্রেম হয় না- এই টা খুব সত্যি কথা...। ভাগ্য ভালো যে আমি যাযাবরের খাতে নাম লেখানোর আগেই প্রেম করেছিলাম...। নয়তো হয়ত আমার দ্বারা আর প্রেম করা সম্ভভ ছিল না, অন্তত এই জীবনে নয়..। বর্ষা, এই মেয়েটা গত ৩ টা বছর এই যাযাবররের প্রেম মাথায় তুলে রেখেছে...।

ঢাকা ভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সে..। তার সাথে আমার পরিচয় যখন আমি ইন্টার পরীক্ষার্থী..। একদিন ও আমাকে প্রশ্ন করেছিল- তুমি জাহাজে গেলে আমার কি হবে? অভিযোগ ৩ - 'আপনাদের যাযাবর জীবনে বৌএর স্থান কোথায়...? এতদিন পর পর দেশে আসেন আপনাদের বউতো পরকিয়া করবে..। খন্ডন - আগে একটা সময় ছিল যে একজন মেরিনার জাহাজে গেলে ১০-১২ মাস পর দেশে আসে..। জীবন খুব কষ্টের ছিল..।

পরিবারের সাথে যোগাযোগ হত কম..। এই ঘটনাগুলো আরো ১০-১৫ বছর আগেও ঘটত.। কিন্তু এখন যোগাযোগ বেবস্থার উন্নতির সাথে সাথে মারিন লাইফ খুব ইজি হয়ে গেসে..। জাহাজ যেখানে থাকুক না কেন হতে পারে সেটা কোনো পোর্টএ কিংবা যেকোনো মাঝ সমুদ্রে আপনি চাইলেই যেকোনো সময় আপনার পরিবারএর সাথে কথা বলতে পারবেন..। এখন সব মার্চেন্ট শিপ এ "মিনি এম" (সেটেলাইট ফোন) থাকে..।

জাহাজের টপ ফোর অফিচার / ইঞ্জিনিয়ার জাহাজের বিভিন্ন রেনক গুলো জানতে ক্লিক করুন চাইলে বউ নিয়ে শিপ এ সেইল করতে পারে..। বিশ্বের সব জাহাজ কোম্পানি এই সুযোগ টা মেরিনারদের দিয়ে থাকেন..। আগে একজন মেরিনার ১০ মাস চাকুরী করতেন ৩ / ৪ মাস ছুটি কাটাতেন...। কিন্তু মেরিনার দের উত্তরউত্তর বেতন বৃদ্ধি এবং শিপিং কোম্পানিগুলোর পলিসিএর কারণে এখন কেউ চাইলেও ৬ মাসের বেশি চাকুরী করা সম্ভভ নয়..। যদি কোনো মেরিনার কোন কোম্পানিতে পার্মানেন্ট থাকেন (মেরিনাররা সাধারনত কিছু দিন পরপর কোম্পানি চেঞ্জ করেন) তবে compani পলিসি অনুজাই চাকুরী করতে হয়..।

বর্তমনে বেশিরভাগ কোম্পানি ৪ মাস চাকুরী ২ মাস ছুটি কিংবা ৫ মাস চাকুরী ৩ মাস ছুটি এই নীতি অবলম্বন করে.....। তাহলে বুঝতে পারছেন যে মেরিনারদের চাকুরিত খুব বেশি খারাপ নয়..। তারপরও যদি বউ পরকিয়া করে তাহলে এটা আমাদের ভাগ্য কিংবা বউএর চরিত্রের সমসসা আছে বলে ধরে নিতে হবে..। হাচা কতা কুব তিতা- যাউগ্গা এই লেখাটাতেও বহুত পেচাল হওয়া গেছেগা ... ভাইজান.. বাংলাদেশ এ বেশির ভাগ মানুষ সকাল ১০ থকে বিকাল ৫ টা এই টাইপের চাকুরী করে আমরা একটু বেতিক্রম হইলে কুনু সমিস্সা আসে বলি মনে লাগে না.. আপনেরা সারাদিন অফিসের হাউকাউ শেষ কইরা বাসের সাথে বাদুরের মত লটকায়া ঘরে ফিরেন.. তারপরে লুডসেডিংএর ধাক্কা সামলায়া কোনমতে খাতে হুইত্তা ঘুম .. নিজের বিবি জনের দিকে ভালু মত চাইবারও টিম নাই.. শেষ কবে বিবির লগে ভালো মন্দ একটু কথা কৈসেন তার ও ইআদ থাকে না.. আমার এক জাহাজী বন্ধু বলে- আরে বেটা আফসোস করছ কেন.. যারা দেশে থাকে তারা জীবনে বাসর পায় ১ বার, এর বেটা আমদের তো বাসর হবে প্রতি ৬ মাস পরপর.. (!) বুঝেন ঠেলা.. জাহাজীর গল্প আপাতত এখনে শেষ.. আপনারা ভালো থাকবেন.. এই কামনা..

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।