আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

না হয় ফিরে এসো শঙ্খচিল হয়ে.........!!

আমায় গেঁথে দাওনা মা'গো একটা পলাশ ফুলের মালা ... .

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে। মা কুসুম কুমারী দাশের লেখা আদর্শ ছেলে কবিতার মতই মায়ের আদর্শ ছেলে ছিল মিলু। পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান তাঁর মায়ের পদাংক অনুসরণ করে নিজের নামটাও লিখে নিয়েছিলেন বুলবুল আর ভানুসিংহের নামের পাশে। বাংলা কবিতায় আধুনিকতার পথ প্রদর্শকদের মাঝে যাদের নাম আগে উচ্চারিত হয় তিনি তাদের এক জন। ১৯৯৯ সালে যখন তাঁর মরনোত্তর জন্মদিন পালন করা হচ্ছিল ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়ে গেছেন।

হতভাগা মিলু জীবনদশায় তাঁর কাব্য প্রতিভার জনপ্রিয়তাটুকু দেখে যেতে পারেননি। বেঁচে থাকা অবস্থায়ও মরনের আগ পর্যন্ত বাস্তুচুতির বেদনা বহন করতে হয়েছে এই হতভাগাকে দেশ ভাগের ফলে। ১৯৪৫ সালে তাঁর প্রিয় বরিশাল ছেড়ে চিরকালের জন্য চলে যেতে হয়েছিল কলকাতায়। যে কয়দিন বেঁচে ছিলেন নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি সেখানে। তাইতো রবীন্দ্র , নজরুল দেশবাসীর কাছ থেকে যে সম্মননা পেয়েছিলেন মিলু তার তিলমাত্রও পাননি তাঁর জীবৎকালে।

সে কারনেই হয়ত প্রিয় দেশ আর মাটির কাছে এ ভাবেই ফিরে আসতে চেয়েছিলেন......... আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে, হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়। জ্বী লিখছিলাম প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশের কথা। কবির ডাক নাম ছিল মিলু। আজ ১লা অক্টোবর। কবির প্রয়ান মাস এটা।

তাই কবিকে স্মরণ করতে ইচ্ছে করলো তাঁর কাব্যের মধ্য দিয়ে। চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য ; অতি দূর সমুদ্রের পর হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি দ্বীপের ভিতর, তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে ; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’ পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন। আজ এই বিশ্বায়নের যুগ কবির লেখা এই লাইন কয়টির আবেদন এতটুকু কী ম্লান করতে পেরেছে! সারারাত চিতাবাঘিনীর হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে - বাঁচিয়ে নক্ষত্রহীন, মেহগনির মতো অন্ধকারে সুন্দরীর বন থেকে অর্জুনের বনে ঘুরে ঘুরে সুন্দর বাদামি হরিণ এই ভোরের জন্য অপেক্ষা করছিল। সেকেলে এই কবি আজকের আধুনিক হরিনদের মনের কথা ঠিকই পড়ে নিয়েছিলেন। কয়েক ছত্র কথা তাই তাদের জন্য তিনি লিখে যেতে ভুল করেননি যে যুগেও।

মানুষকে স্থির- স্থিরতর হতে দেবে না সময়; সে কিছূ চেয়েছে বলে এতো রক্ত নদী। অন্ধকার প্রেরণার মতো মনে হয় দূর সাগরের শব্দ- শতাব্দীর তীরে এসে ঝরে : কাল কিছু হয়েছিল - হবে কি শাশ্বতকাল পরে। বা, আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না; আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে, পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করবার অবসর আছে। জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা অন্য সবাই এসে বহন করুক। আমি প্রয়োজন বোধ করি না।

লাগাম ছাড়া পাগলা গোড়ার মত মানুষগুলো যখন ছুটছে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে। তখন এই লাইন গুলো স্মরণ করে কি লাগাম টেনে ধরবে তারা ! নিজের জন্য। জীবনের জন্য। আজ আমরা যারা আধুনিকতার দোহাই দিয়ে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির আপন আলোটুকু নিভিয়ে দিচ্ছি সিদ্ধ হস্তে খুব যতনে, সেকেলে এই আধুনিক কবির লেখা গুলো আলোর দিশারী হয়ে পথ দেখাক আজকে অন্ধকারের যাত্রীদের এই প্রত্যাশায় উচ্চারন করি, প্রিয় কবি-- আবার না হয় ফিরে এসো শঙ্খচিল হয়ে ....... ** সাহায্য - কবি সম্পর্কীয় বিভিন্ন গ্রন্থ ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।