আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মরা মুরগি যায় কোথায়?

প্রতিদিন যা পড়ি পত্রিকার পাতায়, ভাললাগা-মণ্দলাগা সবই শেয়ার করি সবার সাথে।

স্টাফ রিপোর্টার মানবজমিন: রাত ১২টা। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে ৫ হাজার ব্রয়লার মুরগি এনেছেন রাজধানীর কাপ্তান বাজারের আড়তদার মুন্না মিয়া। গরম বেশি হওয়ায় স্ট্রোক করে অর্ধশতাধিক মুরগি পথেই মারা গেছে। আড়তে এসেই এগুলোকে জীবিত মুরগি থেকে আলাদা করে রাখেন তিনি।

পরে কোথাও ফেলে দেন। রাজধানীতে ১০টির মতো ব্রয়লার মুরগির আড়ত রয়েছে। তার মধ্যে কাপ্তান বাজারে পাইকারি মার্কেটটি (মুরগি পট্টি নামে পরিচিত) সবচেয়ে বড়। এ মার্কেটে রাত ১২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত হাট বসে। প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখ মুরগি বেচাকেনা হয়।

এছাড়াও যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, মিরপুরসহ অনান্য আড়তে বেচাকেনা হয় প্রায় ১২ লাখ ব্রয়লার মুরগি। এ সময়ে অতিরিক্ত গরমে স্ট্রোক করে প্রতিদিন ৬০ হাজারের বেশি মুরগি মারা যায়। তবে এগুলো কোথায় যায় এর খোঁজ রাখে না কেউ। এ মরা মুরগি সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিনে ফেলে দেয়ার কথা থাকলেও আড়তদারদের চোখের সামনে থেকে একশ্রেণীর লোক কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারাও ভয়ে মুখ খোলে না।

তবে সূত্র মতে, অসাধু চক্রের মাধ্যমে চলে যায় রাজধানীর বিভিন্ন নামকরা হোটেল রেস্টুরেন্টে। এগুলো দিয়ে তৈরি হয় চিকেন ফ্রাই, বার্গার, স্যুপ। তবে কোন রকম পচন ধরলে সেগুলো চলে যায় পাঙাশ মাছের খামারে। মুরগি সংগ্রহে এ চক্রটি সিটি করপোরেশনের সুইপার এবং নেশাগ্রস্তদের ব্যবহার করে। এদের মধ্যে রয়েছে সুইপার শুক্কর আলী, বাবু, মাদকাসক্ত খালেক, টাইগার ইসমাইল ও মহিলা সদস্য নাজমাসহ ২০ জনের একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ।

বিনিময়ে এদের ৩/৪শ’ টাকা দেয়া হয়। প্রতিদিন রাত ২টা থেকে ৩টার দিকে মরা মুরগি বহনের জন্য রাজধানীর আড়তগুলোতে কোল্ড স্টোরেজ গাড়ি পাঠানো হয়। এর আগে চুক্তিবদ্ধ আড়তদারদেরকে এক শ্রেণীর সাদা ড্রাম দেয় চক্রটি। তারা মরা মুরগিগুলোকে বিশেষ ড্রামে রাখে। পরে সুযোগ বুঝে সিটি করপোরেশনের সুইপার এবং নেশাগ্রস্তদের দিয়ে গাড়িতে বোঝাই করে।

রাতের মধ্যেই মুরগিগুলোর চামড়া-মাংস আলাদা করে ৪/৫ কেজি ওজনের প্যাকেট করে। পরে এগুলো ফাস্ট ফুড় তৈরির কারাখানা, বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে সরবরাহ করে। তারা ৬০/৭০ টাকার দরে এসব মুরগি কিনে নেয়। আবার কিছু মুরগি অসুস্থ অবস্থায় জবাই করা হয়েছে বলে বিক্রি করে চক্রটি। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল ক্যান্টিনে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে পচা মুরগি খাওয়ানোর অপরাধে ম্যানেজার রুস্তমকে পিটিয়ে বের করে দেয়া হয়।

গত বছর মহসিন হলেও পচা মুরগি খাওয়ানোর অপরাধে এক ক্যান্টিন ম্যানেজারকে পিটিয়ে পুলিশে দেয় ছাত্ররা। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এ চক্রটি দেশের বিভিন্ন পোল্টি খামারে গিয়ে অসুস্থ ব্রয়লার মুরগি কিনে হোটেলে সরবরাহ করে। খামার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি ব্যাচ (কমপক্ষে ১ হাজার) মুরগির ১০ শতাংশ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসব মুরগি ৫ থেকে ৭শ’ গ্রামের বেশি ওজন হয় না। এগুলো ৩০/৪০ টাকা কেজি দরে খামার মালিকদের থেকে কিনে চক্রটি।

পরে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্ট গিয়ে পৌঁছে দেয় তারা। হোটেল মালিকরা এ ছোট আকারের মুরগি দিয়ে জাল-মিষ্টি স্যুপ তৈরি করে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।