আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সফলদের স্বপ্নগাথা-১: আশার কথা বলো স্বপ্ন দেখাও—অপরাহ উইনফ্রে

এক্সট্রা এনার্জি এক্সচেঞ্জার
অপরাহ উইনফ্রে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী, ধনী ও কৃষাঙ্গ উপস্থাপক। তাঁর বিশ্বখ্যাতি স্বপরিচালিত দ্য অপরাহ উইনফ্রে শোর জন্য। ১৯৮৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই শো ৯ সেপ্টেম্বর ২০১১-তে শেষ হওয়ার কথা। তবে তার আগে ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি “ইট’স ইয়োর লাইফ, ওন ইট” স্লোগান নিয়ে অপরাহর নিজস্ব টিভি চ্যানেল ওন: দ্য অপরাহ উইনফ্রে নেটওয়ার্ক যাত্রা করবে। ফোর্বস সাময়িকীর জরিপে অপরাহ উইনফ্রে এবার চতুর্থবারের মতো বিশ্বসেরা সেলিব্রেটি নির্বাচিত হয়েছেন।

আমেরিকার মিসিসিপিতে ১৯৫৪ সালের ২৯ জানুয়ারি তাঁর জন্ম। ২০০৯ সালের ১০ মে ওয়ালেস ওয়েড স্টেডিয়ামে ডিউক ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে তিনি এই বক্তব্যটি দেন-- "আজ থেকে আমাকে সবাই ডক্টর বলে ডাকবে। সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি খুবই খুশি। আমি ২৫ বছর ধরে শো করি।

জীবনের বড় শিক্ষাগুলো আমি আমার নিজের কাজ থেকেই শিখেছি। বিস্ময়কর হলেও সত্য, এখনো আমি আমার শো থেকে অনেক কিছু শিখি। গত বছর আমরা মনিকা জর্জ নামের এক মহিলাকে নিয়ে শো করেছিলাম। আমার শোতে কাকে অতিথি হিসেবে নিচ্ছি, অনেকে তা জানতে চেয়েছিলেন। সবাই ভেবেছিলেন, কোনো অভিনয়-তারকাই হবেন আমার শোর অতিথি।

কিন্তু আমার অধিকাংশ শোতে অতিথি হিসেবে স্বনামধন্য কোনো জনপ্রিয় ব্যক্তি থাকেন না। বরং খুব সাধারণ মানুষ, যাঁরা জীবনে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন, তাঁরাই আমার শোর প্রিয় মুখ। মনিকা জর্জ সে রকমই এক মানুষ, যাঁকে কখনোই আমি ভুলতে পারব না। গত বছর স্বামী টনি ও মনিকার কোলে আসে তাঁদের দ্বিতীয় কন্যা সোফি। সোফিকে প্রসবের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মনিকার গায়ে জ্বর আসে।

দ্রুত বর্ধনশীল এক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে সারা শরীরে ব্যথায় কাতরাতে থাকে। মনিকা প্রায় মরতেই বসেছেন যেন। চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেন। কিন্তু ইতিমধ্যে ব্যাকটেরিয়াটা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেহে। চিকিৎসকেরা সমব্যথিত কণ্ঠে বললেন, ‘মনিকা, আপনার দুটো হাত, সঙ্গে পা দুটোও কেটে ফেলা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই!’ মনিকা তখন কী বলেছিলেন জানেন? বলেছিলেন, ‘তা-ই করুন।

এবং যতটা দ্রুত সম্ভব আমার হাত-পা কেটে ফেলুন। কেননা, আমাকে বাসায় যেতে হবে এক্ষুনি। সোফির যত্ন নিতে হবে তো। ’ স্বাস্থ্যবান সন্তানসহ হাসপাতাল থেকে হাত-পা নিয়ে সশরীরে বাসায় ফেরার সময় হাসিমাখা মুখখানা কারও নিশ্চয়ই আনন্দে-উল্লাসে ভরে থাকার কথা। কিন্তু যদি বাড়ি ফিরতে হয় কোনো হাত ছাড়াই, যে দুটো হাত দিয়ে সন্তানকে কোলে তুলবেন? যদি ফিরতে হয় কোনো পা ছাড়াই, যে দুটোকে ভর করে সন্তানের সঙ্গে চিড়িয়াখানায় ঘুরবেন? পরের দুই মাসে মনিকার শরীরে ৩৭ বার অস্ত্রোপচার হয়েছে! তবু তিনি বেঁচে আছেন।

বেঁচে আছেন তাঁর সোফিকে নিয়ে। এখনো তাঁর মুখে মধুমাখা হাসি। অন্তরে অমলিন সুখ আর শান্তি। মনিকা আমাকে বলছিলেন, ‘সোফির হাত-পায়ের নখগুলো রাঙাতে পারি না বলে কষ্ট হয়। কিন্তু তাই বলে তো আর মন খারাপ করলে চলবে না।

মলিন মুখ দেখলে তো মেয়ে কষ্ট পাবে। ’ এই গল্প থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে। হয়তো হতাশা কুরে কুরে খাবে তোমার ভেতরটা। কখনো প্রচণ্ড রাগ হবে। নিজেকে কখনো খুব অপরাধী মনে হবে।

হয়তো এমন ব্যাকটেরিয়া আছে, যা তোমার হূদয়কে কুরে খাবে। কিন্তু শোনো, জীবনের কঠিন সময়ে তোমরা যদি মনিকা জর্জের মতো সাহসী হও আর চিন্তা করো, অন্যের সামনে মলিন মুখে থেকে লাভ কী, তবে আমি হলফ করে বলতে পারি, তোমরা সফল হবেই হবে। কারণ, তোমার সুখ তোমার কাছেই। তোমার কাজের ফল তো তোমাতেই বর্তাবে। তোমরা জানো নিশ্চয়ই, জীবনে আমাদের অনেক পরিবর্তন দরকার।

যদি জীবনটাকে বদলে দিতে হয়, তাহলে ‘কী হতে পার’ সেটাই ভেবো। তুমি ‘কে বা কেমন’ এসব ভেবো না। তাহলেই সফল হতে পারবে। তখন আমার বয়স সবে আট। একদিন আমি গির্জায় গেছি।

সেদিন গির্জায় গভর্নর পদে ভোটপ্রার্থী জে হুকারও এসেছিলেন, নির্বাচনী প্রচারণার জন্য। জে হুকারের মতো তাঁর স্ত্রী টিশ হুকারের অবশ্য কোনো খ্যাতি ছিল না। কেউ তাঁকে চিনতও না। টিশ দেখতে খুব সুন্দরী ছিলেন। আর আমি তো তখন ছোট্ট একটা কালো মেয়ে।

যদিও আমরা নিজেদের কালো বলতাম না। আমার থেকে কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন টিশ। চোখে চোখ পড়তেই তিনি আমার দিকে হেঁটে এলেন। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘বাহ্, নজরকাড়া চেহারা তোমার। তোমার ঠোঁট দুটোও কী অসাধারণ!’ তাঁর মুখে আমার প্রশংসার কথাগুলো বাড়ি ফেরার সময় বারবার মনে হচ্ছিল।

বাড়িতে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। টিশ হুকারই প্রথম ব্যক্তি, যিনি আমার দিকে ওভাবে তাকিয়েছেন এবং আমাকে ‘সুন্দরী’ বলেছেন। এ ঘটনার পর থেকে নিজেকে আমি আলাদাভাবে চিন্তা করতে শুরু করি। যদি কাউকে টিশের মতো মূল্যায়ন করে থাকো, তুমি হয়তো জানো না, চিরদিন তারা তা মনে রাখবে। তাই, যদি পারো কাউকে এমন কিছু আশার কথা বলো, স্বপ্ন দেখাও।

তারা তোমার কথা ও তোমাকে চিরদিন মনে রাখবে। এটাও তোমার সফলতা। আমার সফলতার একটা গল্প বলি। আমার পোশাক-আশাকের একটা দোকান ছিল। ৮, ১০, ১২, ১৪, স্থিতিস্থাপক বিভিন্ন আকৃতির পোশাক, জুতা ইত্যাদি ছিল।

সেগুলোই অনেক বেশি মূল্যছাড়ে বিক্রি করতাম। সে দোকানে একবার জোনি জ্যাকস নামে এক মহিলা এলেন। তাঁর কাছে খুব বেশি পয়সা ছিল না। তিনি সবচেয়ে কমদামের আমার একজোড়া কালো জুতা কিনলেন। কিন্তু আমার পায়ের মাপ তখন সাড়ে ১০ থেকে ১১।

আর তাঁরটা মাত্র সাত। তাহলে সে জুতাজোড়া দিয়ে জ্যাকস কী করবেন? জ্যাকস বলেন, যখন তাঁর মন খুব বিষণ্ন থাকবে, যখন কোনো কিছুই তাঁর ভালো লাগবে না। কিংবা কোনো কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না এমন সময় তিনি আমার জুতাজোড়া পায়ে দেবেন, সফলতা না পাওয়া পর্যন্ত খুলবেন না। তাঁর কাছে সফলতা মানে ছিল নিজের পায়ে দাঁড়ানো। পরে জেনেছি, জোনি জ্যাকস কলেজে ভর্তি হয়েছেন, ডিগ্রি পেয়েছেন।

এবং এটা তিনি করেছেন, যখন তাঁর বয়স ৫০! এখন তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন। এটাই আমার সফলতা। ডিউক থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়াটাও আমার সফলতা। খুব ভালো একটা বাসা, সুন্দর সুন্দর আসবাবপত্র, একটা ব্যক্তিগত বিমান, ইত্যাদি অর্জন করাও এক ধরনের সফলতা। কিন্তু সফলতার বৃত্ত ততক্ষণ পূরণ হয় না, যতক্ষণ না অন্যকে সফল হতে সাহায্য করা যায়।

এটাই সত্যি। ধীরে ধীরে ওপরে ওঠো। এটাই সত্যিকারের লক্ষ্য। আর কতজনকে ওপরে ওঠাতে পারছ, সেটাও দেখ। এ কাজেই আমি আমার জীবন দিয়েছি।

ভেবেছি, কতজনকে আমি হতাশা থেকে তুলে নিয়ে আসতে পারি। ভেবেছি, কীভাবে আরেকজনকে সাহসী করা যায়। কীভাবে তার অবস্থার পরিবর্তন করা যায়, ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়, এগুলো নিয়ে কাজ করেছি। কারণ, এটাই আসল সফলতা। সফলতা মানে সত্যিই এ রকম, অন্যকেও সফল করা।

এ জন্যই আমরা বেঁচে আছি। আমরা বেঁচে আছি নিজের জীবন দিয়ে কীভাবে আমাদের চেয়ে আরও ভালো কিছু করা যায়, তার জন্য। মনে রেখ, আমাদের নিজের পায়েই দাঁড়াতে হবে। এখন প্রশ্নটা হলো, কীভাবে আমরা জীবনযাপন করব, তা নিয়ে। বিনয়ের ও দয়ার সঙ্গে? সাধুতা ও সাহসের সঙ্গে? জীবনের প্রতিটা দিন, প্রতিটি অভিজ্ঞতা তোমাকে পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ এনে দেবে।

গর্বের সঙ্গে নিজের পায়ে দাঁড়াও। আর অন্যকেও তাঁদের নিজ পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য কর। আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও উষ্ণ ভালোবাসা নিয়ো। " (প্রথম-আলো) সফলদের স্বপ্নগাথা-২: তুমিই জয়ী হবে—মাইকেল জ্যাকসন
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.