আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ন হন্যতে অথবা লা ন্যুই বেঙ্গলী হলেও হতে পারত -শেষ পর্ব

shamseerbd@yahoo.com
ডিসপ্লেতে অহনা নামটি দেখে শাহেদ অবাক। এই নাম্বার থেকে ফোন !!! যে নাম্বারে সে আর কখনো ফোন করবেনা বলে ঠিক করেছিল, যে নাম্বারটি থেকে তাকে আর কখনো ফোন না করতে বলা হয়েছিল সে নাম্বারটি , নামটি দেখে সে খানিকক্ষন থমকে থাকে। মস্তিস্কের প্রসেস ক্ষমতায় সে নিজেই অবাক হয়। কল হতে থাকা এই অল্প সময়ে কত কিছুই যে সে ভেবে ফেলে। যে নামটি সে মাথা থেকে দূর করে দিয়েছিল তাকে নিয়েই কত কিছুই ভাবে সে- অহনার এনগেজমেন্ট কি হয়নি, রাহীর সাথে কি তার ব্রেক আপ হয়ে গেছে.........এমনতর কত ভাবনা।

ভুলতে বসা অহনার মায়াকাড়া চোখ দুটো একসময় তার নিত্য সঙ্গী ছিল । ঐ চোখের মায়ায় সে ডুবেছিল একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এ কথা ও কথা বদল করার মধ্য দিয়ে কখন যে সে পুরোপুরি হারিয়ে গিয়েছিল মনে করতে পারেনা। আর যোগযোগ যখন নিত্যদিনের হয়ে উঠে , মনের গহীনে তখন সে নিত্যনতুন স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে। স্বপ্নবোনার কাজটা সে একাই করেছিল একথা সত্য সে মানে, কিন্তু তাতে অহনার কোন অবদান ছিল কিনা এই ব্যাপারটার ব্যাখ্যা তার কাছে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম হয়ে ধরা দেয়।

অহনার একটু রাগ করা অথবা কথামালার জবাব দিতে সামান্য দেরী হলে তার মাঝে যে অনুভূতির তৈরি হত তা কি এমনি এমনি হয়েছিল নাকি তা দুজনের অনুভূতির আদানপ্রদানের কারনেই তৈরি হয়েছিল ব্যাপারগুলো ভাবতে গেলে সে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে, কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা, কেনই বা এমন হবে সেটাও মেনে নিতে পারেনা, আবার অহনাকেও সে সবসময় দোষ দিতে পারেনা । শাহেদ নিজেকে উজাড় করেই দিয়েছিল, জীবনের এহেন কোন কথা নেই যা সে শেয়ার করেনি, অহনাও থেমে থাকেনি- শৈশব থেকে শুরু করে দৈনন্দিন, বাদ দেয়নি কোন কিছুই। তার দুর্বলতা অহনা টের পেয়ে গেছে একথা ভেবে তার ভালই লাগে, পথ চলা থেমে থাকেনা। টের পেয়েই যেন অহনা তার সব স্বপ্ন দুমড়ে মুচড়ে দেয় একদিন, তাকে জানায় রাহীর কথা । একথাও জানায় প্রেম নয় তারা বন্ধু ছিল, পথ চলার সাথী হবার প্রস্তাব পাবার পর অনেক ভেবেই সে এই ডিসিশান নিয়েছে, অচেনা পথে চেনা একজন সাথী থাকা মন্দ নয় ।

শাহেদ চুপ করে শুনে যায়, ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নের হতাশ চেহারা সে টের পায়, কিছু বলেনা । যোগাযোগে সাময়িক ভাটা পরে, না শেষ পর্যন্ত শাহেদ নিজেকে নিবৃত্ত করতে পারেনি, ফোন করে সে। দুজনে টের পায় উচ্ছাসটা কেমন একটু কম শাহেদের । যদিও সেটা ছিল সাময়িক। অল্প কদিনেই আগের সে উচ্ছাস ফিরে আসে দুজনের আলাপচারিতায়।

জীবনে কতকিছুইত ঘটে। চাইলে কত কিছুইত ঘটানো যায়, সে চেস্টা করে দেখতেও কোন দোষ নিশ্চয় নেই- নিজেকে এভাবেই মোটিভেটেড করে শাহেদ। অহনা আর রাহীর মাঝে প্রেম ছিলনা- অন্তত অহনা তাকে তাই বলেছে এবং সে সেটা বিশ্বাস ও করেছে। যেটা হয়েছে সেটা হল চলার পথে সাথী প্রয়োজন, চেনা জানা হলে ভাল, তাই হয়ত অহনা ঐ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অহনা তাকে বিশ্বাস করে, অনেকখানি ডিপেন্ড করে , একজন মানুষ আরেকজনের সাথে যতটুকু কমফোর্ট হতে পারে তারা দুজন তাইই , দুজন দুজনের সাথে ভাল লাগা মন্দ লাগা সবই শেয়ার করে।

মুগ্ধতা খুজে পাওয়া ঐ চোখে শাহেদ নিজের মোহগ্রস্ততা টের পাই, নিজেকে উজাড় করে দেয় সে। সাগর সৈকতের মুক্ত হাওয়ায় বসে অহনাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনে চলে সে। মেয়েটি তার সাথী মুঠোফোনে, স্বপ্নের পালে সে হাওয়া দেয় কিনা সেটা শাহেদ বুঝতে পারেনা , তবুও হাওয়া ভেবে আরও বেশী উড়ে চলতে তার ভালই লাগে। সময়ে অসময়ে ভাবের আদান প্রদান- লাঞ্চ ডিনার থেকে শুরু করে ভালা লাগা মন্দ লাগা, সদ্য দেখা মুভীটার ব্যবচ্ছেদ কিছুই বাদ যায়না। একাকিত্বে শাহেদ হিসেব মেলাতে পারেনা।

সে যদি রাহীকে বিয়ে করবেই ঠিক করে রাখে তবে অচেনা শাহেদের প্রতি তার এই আচরনের মানে কি। কেনইবা এত শেয়ার করা শৈশব থেকে পারিবারিক সব বিষয়, ভবিষ্যত পরিকল্পনা, তবে কি রাহীর সাথে মেয়েটির যে কথা দেয়া সেটা ঠিক ততটা শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ নয় । শাহেদ দ্বিধান্বিত, বুঝতে পারেনা কি করা উচিৎ তার, মুগ্ধতা ছড়ানো চোখ দুটো কে নিজের করে নেয়ার চেস্টা চালাবে, নাকি মুগ্ধতা উপেক্ষা করে নিজের মত পথ চলবে। কি আছে জীবনে, একবার চেস্টা করে দেখলে ক্ষতি কি- এই ভাবনার ই জয় হয়। কথা চলতে থাকে তার সাথে অহনার।

এমনি এক দিন নিজের মন খারাপ করা কথামালায় গল্প সাজায় মেয়েটি। রাহীর সাথে তার এই সম্পর্কে বাবা মা কেউ আপত্তি করেনি, কারন রাহীকে তার পছন্দ, কিন্তু মা ঠিকি একদিন কথায় কথায় বলে ফেলেছেন এই রাহীকে তার পছন্দ নয়, অহনার আরও ভাবা উচিৎ। কথাগুলো বলার সময় অহনা কি ভেবেছিল বা আদৌ কিছু ভেবেছিল কিনা সেটা শাহেদ জানেনা , আর এ না জানাটাই যেন তাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখায়, অহনাকে নিজের করে পাবার কথা ভাবায়। কথার ফাঁকে একদিন শাহেদ দেখা করতে চায়। অহনা অবাক হয়ে বলে আমরা দুজন দুশহরে কি করে দেখা হবে।

আমি বাসায় আসি তারপর নাহয় দেখা যাবে। সে মানতে রাজী নয়, ক্যাম্পাসে গিয়েই দেখা করতে চায়। সত্যিবলতে তার জেদের কাছেই হার মানে অহনা । জীবনে আর কোন যাত্রাই তার মনে এমনতর অনুভূতির জন্ম দেয়নি। একটি মেয়ের সাথে যাকে সে মনে প্রানে চায় এখন তার সাথে দেখা করতে সে ছুটে চলেছে- ব্যাপারটা কেমন যেন গল্প উপন্যাসের প্লটের মত মনে হচ্ছে তার কাছে।

সিএনজি নিয়ে বাস কাউন্টারের দিকে যাবার সময় কত ভাবনা যে তার মাথায় খেলে যায়, বন্ধুরা জানলে যে কি পরিস্হিতি তৈরি হবে ভেবে সে মজা পায়, আর অহনাকে নিজের করে নিতে পারলে এ যাত্রা যে হয়ে উঠবে তার জীবনের সেরা যাত্রা ভেবে কিছুটা রোমাঞ্চিত হয় সে, তাতে আরও ভাললাগা ছড়িয়ে দেয় ক্ষনেক্ষনে অহনার জানতে চাওয়া কোথায় এখন, টিকেট পাবে তো......... আজ রাতে আর কথা না বলে দুজনেই ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, সকালেতো দেখা হচ্ছেই । অহনা হয়ত ঘুমিয়ে পড়ে আর শাহেদ টের পায় শরীরের বেড়ে যাওয়া রক্তপ্রবাহের গতি-অদ্ভুত এক অনুভূতি যার সাথে তার কোন পরিচয়ই ছিলনা। কারো জন্য সে ছুটে যাচ্ছে, মুগ্ধতা ছড়ানো দুটো চোখ তার অপেক্ষায়- অন্যরকম এক শিহরন খেলে যায় তার মাঝে। আধোঘুম আধো জাগরনের এই পরিস্হিতি দূর করে দেয় মায়াবী ভোরে অহনার ফোন। কোথায় এখন, আর কতদূর- শাহেদের কানে যেন বেজেই চলে এই কথাগুলো, এভাবে মা ছাড়া আর কেউত কখনো জানতে চায়নি।

কাউন্টারেই তাকে অপেক্ষা করতে বলে যথা সময়ে হাজির হয় অহনা। শাহেদ বসে আছে, একটা মেয়ে দরজা ঠেলে কাউন্টারে ঢুকল , চোখে কালো সানগ্লাস- মুগ্ধতা ছড়ানো চোখ দুটো না দেখলেও দুজনের কারোরই অসুবিধা হয়নি একে অন্যকে চিনে নিতে। অহনায় তাকে নিয়ে চলে তার পছন্দের রেস্টুরেন্টে । পথে অহনার হাতে সে তুলে দেয় একবক্স চকলেট, বাসে যাত্রা বিরতিকালে কিনে নিয়েছিল সেটা। কিভাবে যে সময় বয়ে চলে দুজনের কেউই হয়ত টের পায়না।

বান্ধবীর ফোনে অহনার সম্বিৎ ফিরে আসে, কথায় ছেদ পড়ে, তাকে যেতে হবে। শাহেদ কি করবে এই নিয়ে কথা হয়, সে আরেকবার দেখা করতে চায়, অহনাও রাজী হয়, জানায় এক বন্ধুর ওখানে যাবে শাহেদ। না, বন্ধুর বাসায় জায়নি সে, হাজারো প্রশ্নের মুখোমুখি হবার চেয়ে শহরটার এক কোনে যেটা একসময় তার খুব পরিচিত ছিল সেখানে গিয়ে অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু করে, কখন আবার অহনার দেখা পাবে। আবার তাদের দেখা হয়েছিল , বেশ অনেক ঘন্টা পর, শাহেদের খারাপ লাগেনি সে অপেক্ষা, আবার দেখা হবে এই ভাবনায় তার মন ভাল রাখার জন্য যথেস্ট । অল্প সময়ের জন্য হলেও তাদের দেখা হয়েছিল, অহনার হলে গিয়েছিল সে।

এই ঘটনা শাহেদের জীবনকে অনেকখানি বদলে দিয়েছিল এ কথা সে স্বীকার করে। অহনাকে জয় করে নেবার তীব্র একটা ইচ্ছা তার মাঝে সবসময় কাজ করা শুরু করে। শিক্ষাজীবন শেষ করে ফিরতি পথে অহনা। যাত্রা পথে নস্ট হয়ে যাওয়া বাসের কল্যানে পুরোটা সময় তাকে মুঠোফোনে সঙ্গ দিয়েছিল শাহেদ। ভাল লাগা ঘিরে থাকে শাহেদের পথ চলাতে....... অহনাও যেন যোগাযোগটা আরো বাড়িয়ে দেয়, জীবনের নানা পরিকল্পনা শেয়ার করে দুজনে।

হঠাৎ মাঝ রাত্রিতে মন খারাপ করে থাকা অহনার ফোন তার ঘুম জড়ানো ক্লান্তিও দূর করে দেয় । শাহেদ হিসেব মিলানোর চেস্টা করে। এখনই সময় কিনা ভবে অহনাকে তার মনের কথা খুলে বলার। যে মেয়েটির সাথে প্রায়ই সারাদিনই তার যোগাযোগ, সব কিছু যার সাথে সে শেয়ার করে, মেয়েটিও তাই। যদিও শাহেদ জানে রাহীর কথা, তবুও তার মাঝে কোন দ্বিধা কাজ করেনা।

এত দিন ধরে অহনা বাসায়, অথচ একদিনও রাহীর সাথে সে ঘুরতে বের হলনা, কখনো ফোন করে যে মেয়েটির ফোন সে ওয়েটিং এ পেলনা, মন খারাপ করা সময়ে যে শাহেদকেই স্মরন করে- অবলীলায় তাকে মনের কথা বলে দেয়া যায়, এমনটি ভাবতেই তার ভাল লাগে। শাহেদ সময় চায়, অহনা রাজী হয়না, সেও খুব একটা জোর করেনা, সময় আসবে এমনটিই ভাবে। শাহেদের সময় আর আসেনি, অহনা কি বুঝেছিল সে জানেনা, তবে একদিন অনেকক্ষন কথা বলার পর হঠাৎ করেই অহনা বলে বসে আমার এনগেজমেন্ট এর তারিখ ঠিক হয়েছে। এই কথা শুনে কতক্ষন সে চুপ করে ছিল মনে নেই, হু হা এই কথা সে কথা বলে সে ফোন রেখে অহনাকে একটা বার্তা পাঠায়- বলতে চেয়েছিলাম অনেক কিছুই, তুমি সব থামিয়ে দিলে। অহনার ইচ্ছাতেই তাদের সব যোগাযোগ প্রায়ই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ।

আজ হঠাৎ করে অহনার ফোন , শাহেদ ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বললো । ওপ্রান্ত থেকে মৃদু গলায় অহনা জানতে চাইল কেমন আছ। ভালো, তুমি- কথা চলতে থাকে, অহনা বলে চলে , শাহেদ মন দিয়ে শোনে, সময় গড়িয়ে যায়। অহনার মন খারাপের কারনগুলো একে একে সব জানা হয়ে যায় শাহেদের, কি বলবে বুঝতে পারেনা, একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে এই বলে প্রবোধ দিতে চায়- আবার বলতে বলতে এও ভাবে ঠিক না হলে কি তার কোন সুযোগ আছে, না হিসেব মেলাতে পারেনা সে। কথার ফাঁকে অহনা জানতে চায় তার ফোন দেখে শাহেদ কি ভেবেছিল, এটাও জানায় সে ভেবেছিল শাহেদ হয়ত ফোন ধরবেনা ।

শাহেদ শুধু হাসে কিছু বলেনা । ফোন রেখে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় সে। আকাশে ষোড়শী চাঁদ তার যৌবনের রুপটুকু সর্বস্ব উজার করে বিলিয়ে দিয়েছে। হঠাৎ কোথা থেকে বিশাল একখন্ড মেঘ এসে পুরো চাঁদটাকেই ঢেকে দিল, যেন শাহেদের ঘুম জড়ানো হৃদয়েরই প্রতিচ্ছবি । অনেকক্ষন অপেক্ষা করেও মেঘের সরে যাবার কোন লক্ষন দেখলনা সে।

একসময় রুমে এসে নিজেকে বিছানায় এলিয়ে দিল...................( শেষ ) প্রথম পর্ব- অহনা (Click This Link)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।