আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ন হন্যতে অথবা লা ন্যুই বেঙ্গলী হলেও হতে পারত -প্রথম পর্ব

shamseerbd@yahoo.com
ফোনবুক থেকে একটা নাম্বার সিলেক্ট করে থমকে আছে অহনা। কল করবে কি করবেনা ডিসিশান নিতে পারছেনা । যে নাম্বার থেকে ফোন আসা সে নিজেই বলে বন্ধ করে দিয়েছিল আজ সে নাম্বারে ডায়াল করতে যে এত কেন ইচ্ছা করছে তা সে বুঝতে পারছেনা । ওপাশের মানুষটির সাথে তার বেশ ভাল সখ্যতা ছিল তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই । সারা দিনে ঘটা এহেন বিষয় নেই সে দিনশেষে ঐ নাম্বারে শেয়ার করতনা ।

মনোযোগী শ্রোতা আর সে সাথে যথেস্ট কেয়ারিং ই ছিল সে মানুষটি । ভার্চুয়াল জগতে হঠাৎ করেই পরিচয়। ফেসবুকে সারাদিনই চলত মেসেজের আদান প্রদান । এই সেই কথা থেকে একসময় তা পরিনত ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় । তার জোরাজুরিতেই অহনা একসময় ফোন নাম্বার দিয়ে দেই ।

ফেসবুকে মেসেজ প্রবাহ কমতে থাকে বারতে থাকে ফোনে কথা বলার ডুরেশন। শৈশব থেকে কৈশোর - পথ চলার পথে ঘটে যাওয়া, জীবনে দাগ রেখে যাওয়া কত ঘটনায় না জানা হয়ে যায় দুজনের, একে অন্যের। চলতি পথের ক্ষুদ্র ঘটনা গুলোও বাদ যায়না , জানা হয় দুজনের ভাল লাগা, মন্দ লাগা। অহনার পছন্দ সাগর পাড়ে হাঁটা আর হাঁটু জলে দাড়িয়ে থাকা, মানুষটির পছন্দ উত্তাল সাগরে গলা ডুবিয়ে বসে থাকা অথবা রাতের নির্জনে সাগর পাড়ে জলচৌকিতে শুয়ে থাকা। কথা চলতে চলতে একদিন সে হাজির হয় সাগর পাড়ে।

সেখান থেকে অহনাকে ফোন করে শোনায় উত্তাল সাগরের গর্জন । অবাক হয় অহনা, উত্তাল সৈকতে হারায়, তারও যে খুব পছন্দের একটা জায়গা ঐ সৈকত। সারারাত কথা হয়, সাথে থাকে উত্তাল সৈকত । অহনা বুঝে মানুষটি বদলায়, বদলে যেতে চায়, কিন্তু সে জানে তার সে সুযোগ নেই। অহনা ঐ পথে হাঁটেনা ।

সখ্যতাটুকু ঐখানেই সীমাবদ্ধ রাখে। সুযোগ মত জানিয়ে দেয় সে যে অন্যকে কথা দিয়ে ফেলেছে। মানুষটি থমকে যায়, অহনা টের পায়। তার ও যে কিছু করার নেই। যোগাযোগে হালকা ভাটা পড়ে।

যোগাযোগ হীনতায় তার কেমন কেমন লাগে, সে প্রশ্রয় দেয়না, কি লাভ জীবনে ঝামেলা বাড়িয়ে। সময় যায়, যোগাযোগ আবার আগের মতই শুরু হয় । কতশত গল্প আবারও জায়গা করে নেয় , অহনা টের পায় মানুষটি আবেগ কে সামলে নিয়ে কি সুন্দর চালিয়ে যাচ্ছে কথোপকথন। সদ্য দেখা মুভীর আলোচনা সমালোচনায় কেটে যায় সময়। অহনা টের পায় দুজনেরই মুভী দেখার হার বেড়ে গেছে।

এ যেন গল্প চালিয়ে নেয়ার জন্যই সময় করে দুজনই দেখে নেয় দুটো নতুন মুভী, তারপর চলে সে নিয়ে আলোচনা। একে অন্যের দেখা মুভীটা যোগাড় করে দেখে নেয়, তারপর চলে ভাললাগা মিলিয়ে নেয়া । সময় বয়ে চলে। তিনিও তেমন একটা যে জোরাজুরি করেন ঠিক তা নয়। দেখা হয়না, কথা হয়।

মন খারাপ হলেই যেন অহনা জানে কাকে ফোন করতে হবে। কস্ট গুলো লাঘব না হউক শেয়ারেত কিছুটা হালকা হয়ই । অহনা ঠিক বুঝতে পারেনা এভাবে সে মানুষটিকে মোহগ্রস্ত করে ফেলছে কিনা। এটা সত্য কথা বলতে শেয়ার করতে তার ভাল লাগে। মানুষটির জেদের কাছে একদিন হার মানে অহনা।

তিনি দেখা করবেন , প্রথমে না না করেও শেষমেষ সে রাজি হয়। অহনার সাথে দেখা করতে তিনি এত লম্বা পথ পাড়ি দিবেন ভাবতে তার খারাপই লাগে, তাই সে রাজি হচ্ছিলনা । তিনি রওয়ানা দেন। এমন হঠাৎ করে রওয়ানা দিলে টিকেট পাবেন কিনা, সে টেনশন যেন অহনাকে পেয়ে বসে। ক্ষনে ক্ষনে ফোন দিয়ে জানতে চায় টিকেট পেয়েছেন কিনা।

টিকেট পাবার পর সেও যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। অহনা তার এ অনুভূতির কোন কারন খুজে পায়না । ঠিক কাকডাকা ভোরে নয় , খানিকটা বেলা করেই শহরে পৌছে সে কল দেয় । অহনা তাকে বাস কাউন্টারেই ওয়েট করতে বলে নিজেই সেখানে হাজির হয়। ব্যাপারটা তার কাছে টিভি নাটকের মনে হয় এখন ।

বাস কাউন্টারে একটা ছেলে বসে আছে, চোখে কালো সানগ্লাস পরে একটা মেয়ে এসে ঢুকল, কাউন্টারে বসা সবাই তাকাল, তারা দুজনই দুজনকে চিনে নিল, বের হয়ে এল কাউন্টার থেকে !!! অহনার কাজ থাকায় দুপুরের আগেই তাকে উঠতে হল , একসাথে লাঞ্চ করার ইচ্ছা সে পূরন করতে পারলনা। তিনি সাথে সাথেই ফিরতি পথ ধরলেননা, বললেন এক বন্ধুর কাছে যাবেন, অহনা ফ্রী হলে যেন কল দেয়, আবার দেখা করবেন। দেখা হল একদম শেষ সময় এ, যখন তার বাস ছাড়ার অল্প সময় বাকি, অহনা তাকে কল করে হলে আসতে বলেছিল। চুপচাপ বসে থাকা, অহনা বুঝতে পারছিল তিনি অনেক কথায় বলতে চান, কিন্তু সব জেনে তিনি আর কিছুই বলেননা। এক সময় ফিরতি পথ ধরে সে ।

রাহী অহনার ছোটবেলার বন্ধু। এক সাথেই বেড়ে উঠা যদিও আলাদা কলেজে পরেছিল তারা, একসাথে স্যারের বাসা ছাড়াও সব বন্ধুদের সাথে আড্ডায় দুজনেই থাকত। প্রেম বা ভাল লাগা অমন কিছু ছিলনা তাদের মাঝে, কখনও হবে এমনটাও কেউ ভেবেছে বলে মনে হয়না, রাহী ভেবেছিল কিনা অহনা সেটা জানেনা, তবে তাকেও কিছুই কখনো সে জানায়নি। গতবছর হঠাৎ একদিন রাহী সরাসরি বলে বসে আমি তোকে বিয়ে করব। ফাজলামী ভেবে অহনা একটা কিল বসিয়ে দিয়েছিল , কিন্তু না রাহী ছিল সিরিয়াস।

অহনা সময় চায়। কারো সাথে যেহেতু তার এনগেজমেন্ট নেই তাই সে ভেবে নেয় অপরিচিত কাউকে বিয়ে করার চেয়ে পরিচিত কাউকে করাই ভাল। রাহীকে জানায় তার বাবা মা যদি মেনে নেয় তবে তার কোন আপত্তি নেই । রাহী সোজা তার বাবা মাকে নিয়ে অহনার বাসায় হাজির হয়। অহনার বাবা মা ভাবে অহনার সাথে প্রেম আছে, তাই তারা না করেননি।

বাবা কখনো কিছু না বললেও অহনার মা সবসময় আপত্তি জানিয়েছেন। তার পছন্দ হয়নি এ সম্পর্ক । তার সাথে সবই শেয়ার করেছে অহনা । সে শুনে গেছে, কখনোই কোন মন্তব্য করেনি, কিংবা আগ বাড়িয়ে তার রিলেশন নিয়ে কিছু জানতেও চাইনি, সময়কে বয়ে যেতে দিয়েছে। অহনার মত বদলাবে বা অহনা একটু ভিন্ন ভাবে ভাবতে শুরু করবে সে হয়ত অমনটি ভাবতে পারে , কিন্তু অহনা তাকে কখনো তেমন কোন উপলক্ষ্য তৈরি করে দেয়নি ।

অবশ্য তার নিজের আচরন নিয়েও সে মাঝে মাঝে সন্দিহান। এমনটা কেনইবা বা করছে সে, কি দরকার এত কথা বলার, এত শেয়ার করার, একটা ডিপেন্ডেন্সী তো তৈরি হয়ে যাচ্ছে। হালকা মন খারাপ হলেই রাহীকে ফোন করার চেয়ে তাকে ফোন করতেই তার ভাল লাগে। রাহীর সাথে সম্পর্ক নিয়ে তার মাঝে কোন দ্বিধা না থাকলেও এই ব্যাপারটাতে তার নিজের অবস্হানটাও নিজের কাছে ক্লীয়ারনা। লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে অহনা বাসায় চলে আসে।

দুজনই এখন একই শহরে, যদিও একবারও দেখা হয়নি। সে দেখা করতে চাইলেও অহনা এড়িয়ে যায়। অহনা টের পায় সে অনেক বেশী দুর্বল হয়ে পড়েছে অহনার প্রতি, একেবারে ইগনোর করে অহনারও সে শক্তি হয়ে উঠেনা। রাহীর জোরাহুরি যেন তাকে মুক্তি দেয় এই অবস্হা থেকে । এনগেজমেন্ট করে ফেলতে চায় সে।

অহনাও বিনা দ্বিধায় রাজি হয়ে যায়। বাসায় জানায়। এই খবর যখন অহনা শেয়ার করে তারপর অনেকক্ষন তারা দুজন চুপ করে থাকে । কিছুক্ষন পর অহনা যখন জানতে চায় কি ব্যাপার কিছু বলছনা কেন, তার উত্তরটি ছিল ভয়ানক- অনেক কিছুই বলতে চেয়েছিলাম, তুমি সব থামিয়ে দিলে। পরেরদিন অহনা একটা মেসেজ পাঠায় আমাদের আর ফোনে কথা না বলা দুজনের জন্যই ভাল হবে।

না, তারপর থেকে সে আর কোন ফোন করেনি। ফেসবুকে মাঝে মাঝে অহনা কিছু জানতে চাইলে হ্যাঁ না বলে উত্তর দিত। এরপরও অনেকবার অহনা ফোন করতে গিয়ে থেমে গেছে নিজের পাঠানো মেসেজের কথা মনে পড়ায়। সময়গুলোকে মিস করলেও পাত্তা দেয়নি, সেটা মঙ্গলজনক হবেনা ভেবেই । ।

কোন কিছুই ঠিকমত হচ্ছেনা যেমনটি সে চেয়েছিল। বাসার পরিস্হিতি যে এমনটা হতে পারে অহনার কখনোই তা মনে হয়নি, কিন্তু তাই হল চোখের সামনে দিয়ে। এই এনগেজমেন্টে যে তার মার এত আপত্তি , সমবয়সী ছেলেকে বিয়ে করা কি এমন প্রোবলেম তা সে বুঝে উঠতে পারেনা। অনুষ্ঠানের পর থেকেই সে দেখছে তার মায়ের নীরবতা, এই নীরবতায় যে পুড়ে পুড়ে খাচ্ছে তা সে কারো সাথে শেয়ার ও করতে পারছেনা। মা ঠিক মত কথা বলছেনা - এর চেয়ে কস্টের আর কিছু তার জীবনে হতে পারেনা।

নতুন জীবনের শুরুর আগের দিন গুলোতে কোথায় সে প্রজাপতির মত উড়বে তা নয় সে যেন ডানা ভাঙ্গা পাখিরমত মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, কোন কিছুই ভাল লাগছেনা। মা তার রিংটা একবারের জন্যও দেখলোনা এ দুঃখ সে ভুলতে পারছেনা। তার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে, সেটাও পারছেনা। জীবন থেকে সব আনন্দ এমন হঠাৎ করে হারিয়ে যাবে, এতটা নিস্প্রভ হয়ে যাবে সে মেনে নিতে পারছেনা। নির্ঘুম অনেকটা সময় পার করে অহনা ডায়াল করল শাহেদ এর নাম্বারে কিছুটা দ্বিধা নিয়ে, ফোন ধরবেত, কিংবা ধরলে সে কি বলবে, ঐ প্রান্ত থেকেই বা কি উত্তর আসে।

সে নিজেইত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল , এখন আবার নিজেই............. অহনার দ্বিধাকে অগ্রাহ্য করে শাহেদ ফোন ধরল, খুব শান্ত ভাবেই সে হ্যালো তুমি বলেছিল, তারপর দুজনেই চুপ অনেকক্ষন। অহনাই কথা শুরু করল, কেমন আছ জানতে চেয়ে। আবেগহীন কন্ঠের প্রতিউত্তর আর সেই সাথে জানতে চাওয়া তুমি কেমন আছ। কথা চলতে থাকে , দুজনেই ভুলে যায় মাঝের যোগাযোগ হীনতা। মন খারাপ করা কথা গুলো সব এক নিঃশ্বাসে বলে চলে অহনা, মনোযোগ দিয়ে শুনে শাহেদ, এটা ওটা জানতে চায়, সে ও বলে চলে।

একসময় সে হঠাৎ করে বলে বসে আমি ভেবেছিলাম তুমি ফোন ধরবেনা। নিরুত্তাপ শাহেদ বলে কেন ? না মানে আমিই তোমাকে ফোন করতে মানা করে এখন নিজেই কল করে বসেছি। ও এই জন্য, ফোন করেছে, ধরবনা কেন, সমস্যা কোথায় !!! অহনাও আর কথা বাড়ায়ইনি। অনেক কথায় হয়, সে ঠিক বুঝতে পারেনা, শাহেদ কি ভদ্রতার খাতিরে কথা বলে চলেছে কিনা, অহনা বলে চলে, কস্টগুলো কমে কিনা সে বুঝতে পারেনা, তবে সব না বলা কথা বলতে পেরে তার ভালই লাগছে এটা বুঝতে পারে। একসময় কথা শেষ হয়, অহনার ঘুম পাওয়ায়, শাহেদ ও শুভকামনা করে ফোন রেখে দেয় ।

নানা চিন্তা এসে অহনার মাথায় ভীড় করে, মায়ের কথা মনে পড়ে, কান্না পায় । চোখের কোনে হালকা জলের উপস্হিতি সে টের পায় । কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে অহনার খেয়াল নেই.... সকালে ঘুম ভাঙ্গে রাহীর ফোন পেয়ে, রাহী মনে করিয়ে দেয় আজ ঘুরতে যাবার কথা। ফোন রেখে অহনা ভাবতে থাকে আজ কোন রং এর জামা পড়ে বের হবে ........ (পরের পর্বে সমাপ্ত)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।