আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক পাষণ্ড পিতা কাহিনী !! যেটা ঐশীর ঘটনাকেও হার মানায় আমাদের অজান্তে কতইনা জীবন অকালে শেষ হয়ে যাচ্ছে ।

স্বপ্ন আমার দেয়না ধরা :( তাই তো এতো অপেক্ষা

১৯৯৭ !! কাহিনীটা যেহেতু বাস্তব তাই নাম গুলা অবস্তব দেওয়া হলো । ১৯৯৭ ঘটনা চাঁদপুরে । আরজ আলী সুরজ আলী নামে দুই ভাই ছিল , আরজ আলীর বয়স হবে ৫৫ - দুই মেয়ে চার ছেলে নিয়ে তার সংসার ,আর সুরজ আলীর বয়স হবে ৫১ দুই মেয়ে তিন ছেলে । দুই ভাইয়ের ছেলে মেয়েই বড় হয়েছে । আরজ আলী আর সুরজ আলীর বাপ ছিল গ্রামের মোটামুটি পয়সা এলা ব্যাক্তি ।

কিন্ত তার বাপ মারা যাওয়ার পর থেকেই দুই ভাই দুই বাড়িতে গিয়ে উঠেছে । একই গ্রামে দুইটা বাড়ি ছিল বাপ দাদার আমলের , একটা বাড়ি গ্রামের উওরপাশে আরেকটা বাড়ি ছিল গ্রামের দক্ষিনপাশে । দুই ভাই দুই বাড়িতে থাকে আর তাদের সন্তানরাও সাথে থাকে । এতো দিন দুই ভাই মোটামুটি সুখেই ছিল বাপের রেখে যাওয়া জমিজমা বিক্রি করে খেয়ে খেয়ে ! কিন্তু সমস্যা হলো আরজ আলী আর সুরজ আলীর ছেলে মেয়ে এখন অনেক বড় হয়েছে তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত । তাই আরজ আলীর বড় ছেলে কুদরত আলী চাচ্ছে সে বিদেশে চলে যাবে ।

তখন দক্ষিণ কুরিয়াতে অনেক লোক যাচ্ছিল তাই তার ইচ্ছে ছিল দক্ষিণ কুরিয়াতে যাওয়ার । কিন্তু দক্ষিণ কুরিয়াতে যেতে তখন প্রায় ৩ লাখ টাকার প্রয়োজন ছিল ! আর তিন লাখ টাকা তখন অনেক টাকা । কিন্তু হঠাত করে এতো টাকা কই পাবে আরজ আলী ? তাই বাপের নামে থাকা পশ্চিম চকের বিশাল জমিটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলো আরজ আলী । কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালো ছোট ভাই সুরজ আলী ! বাপের নামে জমি দুই ভাই সমান ভাগ পাবে । কিন্তু আজর আলী সেই জমি নিজের একার বলেই দাবী করে যাচ্ছে ।

আর এই কারণেই দুই ভাইয়ের মধ্যে সংঘর্ষ ! আর এই সংঘর্ষ দুই ভাই এর ছেলে পেলেদের মধ্যেও বিরাজ করে । আরজ আলীর দাবী সে ছোট বেলা থেকেই অনেক কষ্ট করেছিল বাপের সাথে । আর বাপের এতো জমিজমায় তার অবধান ছিল অনেক । কিন্তু সুরজ আলীর দাবী তার বাপ মা তার সাথে ছিল বৃদ্ধ বয়সে । বাপ মা কে সে অনেক বছর খাওয়াইছে পড়াইছে , চিকিৎসা করিয়েছে , তাই বাপের নামের জমিটা একক দাবীদার শুধুই সে ।

তার পর আর কি গ্রামের বিচার সালিশের আয়োজন করা হলো । কিন্তু দুই ভাই জমির একক দাবীদার ! গ্রামের বিচারে একপর্যায়ে দুই ভাইকেই জমি ভাগ করে নিতে বলা হয় । কিন্তু কোন ভাই এতে রাজি নয় ! তাই গ্রামের মাতাব্বরা সেখানেই বিচার শেষ করে চলে যেতে বাধ্য হয়ে ছিল। এই জমি নিয়ে প্রতিদিনই দুই ভাইয়ের সন্তানদের মধ্যে মারামারি চলতেই থাকে ! আরজ আলীর ৪ ছেলে দিনের বেলায় গিয়ে জমিতে ধান লাগিয়ে আসে আর সুরজ আলীর তিন ছেলে রাতের বেলায় গিয়ে সেই জমিতে মটরশটি লাগিয়ে আসে এভাবে আর কয় দিন ?এক পর্যায়ে মারামারি মাথা ফাটাফাটি !এখন আর গ্রামে সালিশ বিচার নয় সোজা থানায় চলে গেছে এই ঝগড়া । দুই ভাই তাদের অপরের সন্তান এবং ভাই এর বিরুদ্ধে মামলা করে আসে ।

কিন্তু টাকার টাকা যাচ্ছে কোন মীমাংসা হচ্ছেনা । মারামারি করে মাথা ফাটিয়ে আবার থানায় দৌড়াদৌড়ী , এভাবে প্রায় ৬ মাস কেটে গেলো এই জমি নিয়ে আরজ আলী এবং সুরজ আলীর । দুই ভাই প্রায় নিঃস্ব ! জমির চাইতে আরো অনেক বেশি টাকা খরচ করে ফেলেছে দুই ভাই , এই বিচার সালিশ আর মামলা করে কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা । এই দিকে আরজ আলী পাশের গ্রামের জমিদার রহমান খাঁ'কে ঠিক করে ফেলেছে তার কাছে জমি বিক্রি করবে । ৫ লাখ টাকার জমি ৩ লাখে বিক্রি করে দিচ্ছে ছোট ভাই সুরজ আলীর সাথে বিরোধ থাকার কারণে ! রহমান খাঁ এলাকার মধ্যে সব চাইতে প্রভাবশালী ব্যাক্তি কোন কিছুই তার কাছে অসম্ভব নয় ।

আর বড় ভাই আরজ আলী যদি এই জমি রহমান খাঁ কে দিয়ে দেয় তাহলে রহমান খাঁ এর সাথে কিছুতেই মামলা বা বিচার সালিশ করে জমি পাবেনা সুরজ আলী !! তাই দুই দিন ধরে সুরজ আলীর ঘুম নেই এই চিন্তায় কি করা যায় ? শেষমেষ আর কিছু না পেয়ে ক্লাস টেনে পড়ুয়া মেয়ে রেহেনা'কে তার খালার বাড়ি মুন্সিগঞ্জে পাঠিয়ে দেয় এবং থানায় গিয়ে বড় ভাই এবং তার ৪ ছেলের বিরুদ্ধে তার মেয়ে রেহেনা'কে গুম ও হত্যা মামলা করে । এই দিকে এই নিয়ে উত্তাপ্ত হয়ে উঠে গ্রাম এবং আশেপাশের এলাকা সহ থানার পুলিশ ! প্রতিদিন পুলিশ আসে আরজ আলী এবং তাদের ছেলেদের ধরতে । আরজ আলী এবং তার চার ছেলে সবাই গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে । এক মামলাই কুপোকাত আরজ আলী সহ তার ছেলেরা রাতে পুলিশ সকালে পুলিশ ,পুলিশ আর পুলিশ !! এভাবে এক সপ্তাহ চলে যায় । আরজ আলী আর তার ছেলেরা গ্রাম ছাড়া !! তার কিছু দিন পরই পাশের গ্রামে একটি মেয়ের গলিত লাশ পাওয়া যায় নদীর পাড়ে !! এই লাশ নিয়ে শুরু হলো সুরজ আলীর আরেক খেলা !!সে এই লাশ তার মেয়ের লাশ বলেই দাবী করলো এবং গ্রামের কিছু উৎসাহিত লোক ও সায় দিলো এটা সুরজ আলীর মেয়ের লাশ !! থানা থেকে পুলিশ এলো লাশ নিয়ে গেলো চারিদিকে খবর দেওয়া হলো কেউ এই লাশের দাবীদার নেই শুধু সুরজ আলী ছাড়া ।

তখন প্রযক্তিও এমন উন্নত ছিলনা ! তাই এই লাশ সুরজ আলীর মেয়ে রেহেনার লাশ বলেই নিশ্চিত করলো পুলিশ । এখন আর গুম নয় হত্যা মামলা হলো আরজ আলী আর তার সন্তানদের বিরুদ্ধে একে একে ধরা পড়লো আরজ আলী এবং তার ৪ সন্তান ! মানুষের মুখে বলাবলি শুরু হয়ে গেছে আরজ আলী সহ তার ৪ সন্তানের হয় তো যাবতজীবন জেল হবে । কিন্তু সুরজ আলী পড়েছে আরেক টেনশনে তার মেয়ে রেহেনা এখনো জীবিত আছে যদি কোন দিন এইটা ফাস হয়ে যায় তাহলে উল্টা তার জেল খাটা লাগবে এবং মানসম্মান সব শেষ হয়ে যাবে , আর এই জমিও পাবেই না । রাত দিন তার একই চিন্তা রেহেনাকে নিয়ে কি করা যায় কি করা যায় । সম্পদের জন্য পশু হয়ে উঠা সুরজ আলী নিজের মেয়েকে খুন করে গুম করার কথা চিন্তা করা শুরু করে ! কিন্তু খুন করাটা ব্যাপার নয় কিন্তু একটা লাশ গুম করাটা অনেক কঠিন কাজ ।

আর যদি এইটা ফাস হয়ে যায় তাহলে সুরজ আলীর সব যাবে । সুরজ আলীর খাওয়া দাওয়া বন্ধ । একদিকে সম্পদ মানসম্মান জেল অপর দিকে নিজের আদরের মেয়ে ! কোনটা সে রক্ষা করবে ? সুরজ আলী এখন এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে কি সিদ্ধান্ত নিবে সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা । শুধু দুই চোখে অন্ধকার দেখছে নদীর ধারে পড়ে থাকা লাশটি কেনো যে নিজের মেয়ের লাশ বলে পরিচয় দিতে গেলো সুরজ আলীর এখন কি করবে আর কিছু চিন্তা করে পাচ্ছেনা একটা ভুলের জন্য দুইটা পরিবার আজ ধ্বংসের মুখে ! নাহ আর সহ হচ্ছেনা সুরজ আলীর সকাল ৫ টা ঘুম থেকে উঠেই মুন্সিগঞ্জ চলে যায় সুরজ আলী , মেয়ে কে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে এই বলে খালার বাড়ি থেকে মেয়ে রেহানা কে নিয়ে মুন্সিগঞ্জ লঞ্চ ঘাটে আসে সুরজ আলী । লঞ্চ ঘাটে এসে মেয়ের পায়ে ধরে ক্ষমা চায় সুরজ আলী মেয়ে রেহেনা কে বলে মা আমার কাছে আর কোন পথ নেই , আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা ।

তোকে যদি বাড়িতে নিয়ে যাই তাহলে আমার মানসম্মান বাড়ি ঘর সব যাবে এবং আমাকে জেলও খাটতে হবে ! তুই পারোছ আমাকে বাচাতে আমাদের সবার ভবিষ্যৎ উদ্ধার করতে । ১৬-১৭ বছরে মেয়ে রেহানা কোন দিন বাবা কে কাদতে দেখেনি এখন তার পায়ে ধরে কাদছে বাবা তখন রেহানা কাদু কাদু কন্ঠে বলে বাবা কি করতে হবে আমাকে বলো ? সম্পদের জন্য পশু হয়ে ওঠা সুরজ আলী রেহেনা কে ঢাকার লঞ্চে উঠিয়ে দেয় । রেহানার হাতে ১ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলে মা' তুই ঢাকা চলে যা । ঢাকাতে তো কত মানুষই কাজ করে খাচ্ছে , তোর দোহাই লাগে কোন দিন বাড়ি ফিরে আসবিনা । আর তোর পরিচয় যেন পৃথিবীর কেউ না জানে ।

তুই যেই দিন বাড়িতে আসবি সেই দিন আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা । নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকে বাবার দিকে রেহানা বোরখা নিচ দিয়ে হাত দিয়ে দু চোখে মুছে লঞ্চের ভিতরে গিয়ে বসে রেহানা । এইটুকু বয়সে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে স্বপ্নেও কখনো ভাবেনি রেহানা । দুনিয়ার সব কিছু ছেড়ে সে চলে যাচ্ছে অচেনা এক শহরে ! এই শহরে সে কোথায় থাকবে ?কি খাবে এই চিন্তা তার মাথায় নেই সে নিরবে কেদে যাচ্ছে । মাঝে মাঝে ভাবছে লঞ্চ থেকে ফাল দিয়ে নদীতে পড়ে আত্মহত্যা করার কথা ! আবার ভাবছে তার লাশ কি হবে ?এই লাশ যদি দেশের মানুষ জেনে যায় আমার তাহলে তো বাম মা ভাই সবাই ফেসে যাবে ।

নাহ কিছুই ভাবতে পারছেনা রেহানা কি করবে সে ঢাকার শহরে ?এর আগে কখনই ঢাকাতে আসেনি সে !ছেলে হয়ে জন্ম নিলে হয় তো এতো কঠিন পরিস্থিতির মুখামুখি হতে হয়তোনা তাকে । রাস্তার ধারে পরে থাকলেও কেউ কিছু বলতোনা । কিন্তু জন্ম নিয়েছে মেয়ে হয়ে সবাই কেমন যেন আড়া চোখেদেখে মেয়েদের আর তার উপরের শহরে মানুষ একটু অন্য রকম । বাংলা সিনেমাতে সে দেখেছে নারীদের দুরবস্থা ,তার পরেও ভাবছে ঐ গুলা সিনেমা বাস্তব জীবন তো আরো কঠিন । এই চিন্তা করতে করতে লঞ্চ সদরঘাটে এসে থামলো ।

সবাই লঞ্চ থেকে নেমে যাচ্ছে কিন্তু রেহানা কোথায় যাবে ?হাজার হাজার মানুষের ভিরে ? সদরঘাট থেকে রেহানা একটা বন-রুটি আর একটি কলা কিনে খেতে খেতে লঞ্চ ঘাট থেকে বেড়িয়ে এলো । এখন সে কোথায় যাবে ? কোথায় থাকবে সেই চিন্তায় তার দুচোখ দিয়ে ঝর্নার ধারা বয়ে যাচ্ছেন। বুড়িগঙ্গা ব্রিজে মাঝে এসে সে দাড়িয়ে আছে কোন দিকে যাবে সে !! আবার মাঝে মাঝে চিন্তা করছে নাকি এখান থেকে ফাল দিয়ে পানিতে পরে আত্মহত্যা করবে । নাহ এখন আর কিছুই চিন্তা করতে পারছেনা রেহানা । রাত ১১টা বাজে সারা দিন ঢাকার শহর ঘুরেছে , কোথায় থাকবে কোন কিছুই ঠিক করতে পারেনি সে ।

নাহ এই জীবন দিয়ে আর কি হবে গাড়ির নিচে পরে আত্মহত্যা করার চিন্তা করলো রেহানা কিন্তু এতো রাতে রাস্তায় গাড়িও নেই মাঝে মাঝে দুই একটা রিক্সা আসছে । রেহানার আর এই জীবন সহ হচ্ছেনা তাই রাস্তার পাশে বসে চিৎকার করে কান্না শুরু করেছে সে রেহানার কান্নার শব্দ শুনে থমকে দাঁড়ালেন মাঝ বয়সী এক ভদ্র লোক । সে রেহানার সামনে গিয়ে বলে তুমি কাদছো কেন কি হয়েছে বলো ? রেহানা কাদু কাদু কন্ঠে বলে দিলো এই দুনিয়াতে আমার কেউ নাই ঢাকার শহরে এতো এতো মানুষ কিন্তু আমার থাকার জায়গা নাই। ঢাকার শহরে এমন অভিনয় করে অনেক মেয়েই ব্লাকমেইল করে !এই কথা চিন্তা করে তার পরেও রেহানা কে বলে চলো আজকে তুমি আমার বাসায় থেকে সকালে চলে যেও । ভদ্র লোকের সাথে রেহানা চলে গেলো কোন কিছু চিন্তা না করেই ।

ভদ্র লোকের বাসায় দুইটা মাত্র রুম । একটায় সে থাকে আরেকটায় বই পত্রের অভাব নেই । বইপত্রের রুমেই সে রেহানাকে থাকতে বললো । রেহানা বোরখা খুলে কান্না থামিয়ে ঘুম যাওয়ার কথা চিন্তা করলো । কিন্তু ভদ্র লোক রেহানাকে দেখে অবাক হলো !এই তো বাচ্চা মেয়ে :O তাই পাশে এসে বসে রেহানা কে সব জিজ্ঞাসা করলো তুমি কোথা থেকে এসেছো আর কি জন্য এসেছো ? রেহানা বাপের দেওয়া ওয়াদা মনে করে বলে ফেললো আমি রাজশাহী থেকে এসেছি আমার মা বাবা কেউ নাই চাচারা বাড়ি থেকে বেড় করে দিছে ভদ্র লোক এই কথা শুনে দুঃখ প্রকাশ করলো এবং নিজের পরিচয় দিলো ।

সে একজন কলেজের শিক্ষক বাড়ি ময়মনসিং এই বাসাতে সে একাই থাকে । বউ বেডি সবাই দেশের বাড়িতে থাকে ,এক দুইমাস পর পর সে দেশে যায় ৩-৪ দিন থেকে চলে আসে । পরিচয় পর্ব শেষ রেহানা ঘুমিয়ে পড়লো । সকাল ৮টার দিকে রেহানাকে ডেকে তুলে দিলেন মাস্টার সাব ,বললেন তুমি কোথায় যাবে যাও এখন আমি রুম তালা মেরে কলেজে চলে যাচ্ছি । রেহানার মাথায় আকশ ভেঙ্গে পড়লো সে এখন কোথায় যাবে এই চিন্তায় ।

নির্বাক হয়ে রেহানা বাসা থেকে বেড় হয়ে গেলো বোরখা পরে । আবার সারা দিন কাদতে কাদতে চোখের জ্বলে ঢাকার শহর ঘুরে বেড়ালো । রাত ১০টার দিকে আর কোন পথ না পেয়ে আবার চলে এলো সেই মাস্টারের বাসায় ! মাস্টারের রুমের দরজার সামনে বসে বসে কাদছে রেহানা মাস্টার দরজা খুলে জিজ্ঞাসা করলো আবার কি হয়েছে তুমি এখানে এসেছো কেন ? রেহানার মুখে কোন জবাব নেই কেদে কেদে বুক ভাসাচ্ছে :'( মাস্টার রেহানাকে রুমের ভিতরে নিয়ে বসালো আর বললো আমি কি পাপ করেছি নাকি তোমাকে একদিন বাসায় থাকতে দিয়ে কিন্তু রেহানা কেদেই যাচ্ছে সারা দিন কিছুই খায়নি সে । মাস্টার তাকে বুঝানোর চেস্টা করলো এইটা ঢাকার শহর , এখানে একজন আরেক জনকে থাকতে দেয়না খেতেও দেয়না । আর তুমি আমার বাসায় থাকলে আমার ও বদনাম হবে ,বাড়িওলা আমাকে বাড়ি থেকে বেড় করে দিবে ।

তখন আমি পরবো আরেক সমস্যা। কিন্তু রেহানার কোন জবাব নেই । মাস্টার রাগ করে তার রুমে গিয়ে বসে থাকলো । আর রেহানা কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়লো । সকাল ৮ টার দিকে পরোটা আর ডাল বাজি এনে রেহানাকে ঘুম থেকে ডেকে তোললেন মাস্টার সাহেব ।

রেহানা কে পরোটা আর ডালবাজি খেতে দিয়ে মাস্টার সাহেব বাইরে থেকে বাসা তালা মেরে চলে গেলেন । সারা দিন রেহানা বাসায় বসে বসে কান্না করলো । রাত ৯টার দিকে মাস্টার বাসায় এলো এক পেকেট বিরানি নিয়ে ! ঢাকার কোন নামীদামী হোটেলের বিরানি হবে । রেহানা বিরানি খেয়ে উঠেছে মাত্র তখনই মাস্টার তার মনে কথা বলে ফেললো এই মেয়ে তুমি যদি আমার বাসায় থাকতে চাও তাহলে আমার বউ হয়ে থাকতে হবে !!! আশেপাশের মানুষ নানান ধরনের কথা বার্তা বলাবলি শুরু করেছে , বাড়ির মালিক যদি জেনে যায় তাহলে আমাকে বাসা থেকে বেড় করে দিবে । তাই তোমাকে যদি থাকতে হয় তাহলে আমার বউ সেজেই থাকবে !!! রেহানা দুই চোখে আর কোন উপায় না পেয়ে মাস্টারের কথা রাজি হয়ে গেলো শুরু হলো অবৈধ সম্পর্ক রেহানা আর মাস্টারের ! রেহানা রান্না বান্না করে রাখে আর মাস্টার বাসায় এসে খায় একই সাথে ঘুমায় ।

রেহানা মাঝে মাঝে মাস্টারকে তার অধিকারের জন্য চাপ দিতো তাকে যেন সে বিয়ে করে । কিন্তু মাস্টার বলতো তার বউ আছে সন্তান আছে তারা কিছুতেই মেনে নিবেনা এই সব । এইভাবে প্রায় ৬-৭ মাস কেটে গেলো রেহানার । সে এখন ঢাকার শহর চিনতে শিখেছে ,নিজের অতীত ভুলে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেস্টা করে যাচ্ছে । মাস্টার তার দেশের বাড়ি ময়মনসিং গেছে ৪ দিনের জন্য ।

এই ৪ দিন রেহানা অনেক ফ্রী , এখন আর কোন আঘাতই রেহানার কাছে আঘাত বলে মনে হয় না । অনেক ঘুরে ফিরে একটা গার্মেন্টস সে একটা চাকরি পায় । প্রথম দুইমাস কোন বেতন পাবেনা দুই মাস পর কাজ শিখলে ১৬০০ টাকা করে মাসিক বেতন পাবে। তাই প্রতিদিন কাজ শিখার জন্য সেই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে যায় । আর মাস্টারও রেহানার এই কাজে বাধা দিচ্ছেনা ।

এইভাবে আরো ৬ মাস কেটে গেলো রেহানার। রেহানা এখন খুবই চালু এবং দুরন্ত হয়ে গেছে। গার্মেন্টস মালিক তার কাজে খুশি হয়ে বেতন বাড়িয়ে ২০০০ টাকা করে দিয়েছে । রেহানা তার আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলো এবং গার্মেন্টস এর কয়েক জন মেয়ের সাথে রুম ভাড়া করে থাকার চিন্তা করলো । আর এতে মাস্টারও বাধা দিলোনা ।

আর বাধা দিয়েও রেহানাকে বেধে রাখতে পারবেনা মাস্টার । কারণ রেহানা এখন আর আগের মতন বোকা নেই । নতুন বাসায় গিয়ে কেমন যেন অশান্তি লাগিছে রেহানার মাস্টার এর জন্য তার খুব খারাপ লাগাতো আর এই বাসায় অনেক মেয়ে তাদের চিল্লাচাল্লি তার কান তব্ধা হয়ে যেতো এবং রাতে সে মাস্টারকে মনে প্রানে কামনা করতো । তাই আবার বাধ্য হয়ে সে মাস্টারের সাথে থাকা শুরু করলো । এইভাবে যাচ্ছিল দিন কাল সুখেই কোন চিন্তা ভাবনা ছাড়া রেহানার ।

মাঝে মাঝে অতীত চিন্তা করে নেশাও করতো রেহানা । কিন্তু মাস্টারের বাধায় বাসায় নেশা করাটা তেমন ভাবে সম্ভব হয়ে উঠেনি । এই দিকে রেহানাকে পেয়ে মাস্টার সব কিছু ভুলে যেতে বসেছে । সে এখন আর বাড়িতে ঠিক মতন টাকা পাঠায়না । এবং মাস শেষ হলে দেশের বাড়িও যায় না , আর এই কারণে মাস্টারের সংসারও ভেঙ্গে যেতে বসেছিল।

মাস্টার আর রেহানা নতুন বাসায় উঠেছে দুইজনে টাকা পয়সা দিয়ে নতুন ফানিসার পত্রে ঘর ভরেছে । ২০০২ সাল ! কিন্তু সত্য তো কখনই চাপা থাকেনা !! হঠাত একদিন রেহানার স্কুলের এক বান্ধুবির সাথে গার্মেন্টস এ দেখা ! রেহানার বান্ধুবি রেহানাকে দেখে ঠিকই চিনেছে ,কিন্তু রেহানা তার পরিচয় গোপন করেই যাচ্ছে । কিছুতেই সে স্বীকার করছেনা তার বাড়ি চাঁদপুর ! কিন্তু এক সময়ে আর অস্বীকার করে থাকতে পারলোনা রেহানা । রেহানা তার স্কুল জীবনের বান্ধুবি পারভিনের কাছে তাদের এলাকার খবর জানতে চাইলো ? পারভিন সব খুলে বললো তোমার বড় ভাই এখন কুয়েত থাকে , তোমার আব্বা বাজারে একটি দোকান দিয়েছে । আর তোমার বড় চাচা আর তার ছোট ছেলে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে কিন্তু তার তিন ছেলের ১৪ বছরের জেল হয়েছে তোকে খুন করেছে সেই অভিযোগে ।

রেহানা কি বলবে বুঝতে পাচ্ছেনা তাই পারভিনকে মাথায় হাত রেখে অনুরোধ করলো তার বেচে থাকার খবর যেন কেউ না জানে । তার পরেও রেহানার দুরচিন্তার শেষ নেই যদি কোন দিন পারভিন তার বেচে থাকার কথা সবাইকে জানিয়ে দেয় । কি করবে সে বুঝে উঠতে পারছেনা , তাই সব চাইতে কাছের মানুষ আপন মানুষ মাস্টারের কাছে তার জীবনের ঘটে যাওয়া সব অতীত শেয়ার করলো । আর মাস্টারও বুদ্ধি দিলো পারভিন বলে দিলে দিবে তাতে কি ?যেই মা বাপ ভাই বোনোরা তোমার কথা চিন্তা করেনি তার জন্য তুমি কেনো এতো চিন্তা করো । মাস্টারের কথায় রেহানার দুরচিন্তা কেটে গেলো ,কিন্তু রক্ষা হলো না ।

২০০৩ এর ফেব্রুয়ারির দিকে পারভিন তার গ্রামে ছুটিতে গিয়ে রেহানা বেচে আছে সেই কথা বলে দিয়েছিল তার মা'এর কাছে ! কিন্তু পারভিনের মা আরেক জনকে বলেছে রেহানা বেচে আছে , আর সেই মহিলা বলেছে আরেক জনকে । এইভাবে এলাকায় ছড়িয়ে পরে রেহানা বেচে আছে সেই খবর !! রেহানার খবর জানতে পেরে তার বাবা সুরজ আলী সাথে সাথে ঢাকা চলে আসে এবং রেহানার সাথে দেখে করে বলে তুই এখনো মরছ নাই !!তোর বেচে থাকার খবর এখন সারা গ্রেমে ছড়িয়ে গেছে এখন আমাদের কি হবে কে জানে পাষণ্ড বাপের মুখে এই কথা শুনার পর রেহানার আর কোন হুদিস পাওয়া যায়নি !! রেহানা কি বেচে আছে না মারা গেছে কেউ আর এই খবর পায়নি ঢাকার শহরে কতই তো পরিচয় হীন লাশ পাওয়া যায় !হয় তো মনের কষ্টে সেই সব লাশের ভিরে রেহানাও হারিয়ে গেছে এটা কোন কল্পিত কাহিনী নয় । ১০০% সত্য ঘটনা !! রেহানার নিরুদ্দেশ হওয়ার পর তার বাড়িতে কি ঘটেছে বা রেহানার কি হয়েছে তায় আর কেউ জানেনা । তবে শেষ মুহূর্তে এসে মাস্টার রেহানাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল ! হয় তো রেহানার ঘটনা প্রকাশ না হলে রেহানা আর মাস্টার এর সম্পর্কটা বৈধতা পেতো ঠিক এইভাবেই মাস্টার রেহানার ঘটনাটার বননা দিয়েছিল । রেহানার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তাকে ভোগ করেছে !সে জন্য সে অনুতপ্ত ।

সে পাগল হয়ে খুজে বেড়িয়েছে রেহানাকে । রেহানাকে খুজে পেলে তাকে তার অধিকার ফিরিয়ে দিবে বলে ! কিন্তু রেহানার কোন খোজ মিলেনি । রেহানার সম্পর্কে আর কিছু জানার চেস্টা করবেননা প্লীজ । ঘটনাটা সত্য বা গল্প যেইটা খুশি মনে করতে পারেন । তবে কোন প্রশ্নের উওর দিতে আমি প্রস্তুত নই ।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।