আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘোড়া-বন্দনা



সেক্সপিয়ার বিশেষ বৈশিষ্ট্যের ঘোড়ায় চড়ার ইচ্ছে জানিয়েছিলেন। যার পাখা থাকবে রূপকথার ঘোড়ার মতো। কতই না আক্ষেপ করে তিনি লিখেছেন : O for a horse with wings! থাক, তার ইচ্ছের কথা। আমাদের বীর-বাহাদুর জেনারেল মইন উ আহমেদের ঘোড়াগুলোর কথা কি মনে আছে? ভারতীয় এক জেনারেল তাকে ৬টি ঘোড়া উপহার দিয়েছিলেন। ওগুলোর খবর এখন সম্ভবত কেউ রাখেন না।

তবে দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডারের 'বুসিফেলাস', মহাবীর রুস্তমের 'রাখস', কুখ্যাত হালাকু খানের চাচা চেঙ্গিস খানের 'নাইমান', হযরত আলীর (রাঃ) 'দুলদুল' আর রানা প্রতাপ সিংহের 'চেতক বা চৈতক'-এর নাম পাবলিক কিন্তু ঠিকই মনে রেখেছে। সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে তিনটি জাগতিক উপাদানের ভূমিকা নাকি সবচেয়ে বেশি। এগুলো হলো চাকা, ঘোড়া আর লোহা। ঘোড়া জাতে ওঠার কাহিনী তাহলে এটাই!! শুধু মানুষ নয়, দেবতাদেরও চোখ পড়েছে ঘোড়া উপরে। হিন্দুদের সূর্যদেবতা সাত ঘোড়ায় টানা রথে চড়ে আরামসে আকাশে চক্কর মারেন।

পুরাণ মতে, এ সাতটি স্বর্গীয় ঘোড়ার নাম উষ্ণিক, বৃহতী, জগতী, ত্রিষ্টুভ, অনুষ্টুভ, পংক্তি ও গায়ত্রী। সংস্কৃত ঘোটক থেকে বাংলায় ঘোড়া শব্দটি এসেছে (ভিন্ন মতও আছে)। বলা হয়, সংস্কৃত 'ঘুট্' ধাতু থেকে ঘোটক শব্দের উৎপত্তি। ঘুট্ মানে 'দ্রুত বেগে দৌড়াতে দৌড়াতে থেমে যাওয়া। 'ঘোড়া এ কাজটি খুব ভালো করেই পারে।

তবে অশ্ব শব্দটি ঘোটকের চেয়েও পুরনো। যজুর্বেদে অশ্ব শব্দটি রয়েছে। অশ্ ধাতু থেকে অশ্ব তৈরি হয়েছে। অশ্ ধাতুর ব্যাখায় বলা হয়েছে 'অল্প খাদ্যদ্রব্য দিলে এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলে যে খায় না'। ঘোড়াও কিন্তু এ আচরণ করে।

যাই হোক, অশ্ব শব্দের মূলানুগ অর্থ হচ্ছে ' যে পথ ব্যাপ্ত করে। ' ঘোড়ার আরেক নাম তুরগ। শব্দটি অশ্বের চেয়েও প্রাচীন। ঋগ্বেদে শব্দটি রয়েছে। তুরগ মানে 'ইচ্ছে করলেই দৌড়ের বেগ যে বাড়াতে পারে'।

তুরঙ্গম মানেও ঘোড়া। এই শব্দটি দিয়ে ঘোড়ার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা যায়। কারণ তুরঙ্গম শব্দের মূল অর্থ হচ্ছে 'স্ত্রী না থাকলেও যে সংযমী থাকতে পারে, যৌবনে যে উন্মত্ত হয় না'। ঘোড়া কিন্তু বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গী ছাড়াই দিব্যি সময় কাটিয়ে দিতে পারে। আচ্ছা, আপনারাই বলুন, বাংলা নিয়ে না পড়েও মূলত শব্দ নিয়ে লিখতে যাওয়াটা কি আমার জন্য 'ঘোড়ারোগ' নয়? ভীষণ ভয়ে থাকি।

কখন যে প্রাজ্ঞরা আমাকে 'ঘোড়ার ডিম' অফার করে বসেন। জীবনানন্দ দাশের উদ্ধৃতি দিয়েই পালাচ্ছি : 'যে ঘোড়ায় চড়ে আমরা অতীত ঋষিদের সঙ্গে আকাশে নক্ষত্রে উড়ে যাব সেই সব শাদা শাদা ঘোড়ার ভিড় যে কোন জ্যোৎস্নার নদীকে ঘিরে স্তব্ধ হয়ে অপেক্ষা করছে কোথাও'।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।