আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাতি-বন্দনা



হস্তী শব্দটি বেশ প্রাচীন। তাই ঋগ্বেদেও শব্দটি রয়েছে। হস্তীর আরেক নাম দন্তী। রামায়ণ ও মনুসংহসিতায় দন্তী শব্দটি রয়েছে। হস্তী যৌগরূঢ় শব্দ।

যৌগিক অর্থ সমূহের মধ্য থেকে শব্দ যখন বিশেষ কোন একটিকেই গ্রহণ করে, তখন তাকে বলা হয় যৌগরূঢ় শব্দ। হস্তী শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ 'যার হস্ত আছে'। হস্ত বা হাত অনেকেরই আছে। কিন্তু হস্তী শব্দটি দিয়ে অন্য কিছু না বুঝিয়ে শুধু তাকেই নির্দেশ করে যার হস্তই শুঁড় বা হাতের মত শুঁড় রয়েছে, তার মত একটি বিশেষ জীবকে। এক সময় 'হস্তীমৃগ' বলতে হাতওয়ালা পশু বোঝাতো।

মৃগ বলতে এখন হরিণ বোঝালেও এক সময় মৃগ মানে ছিল পশু। পরে 'হস্তী' হয়ে গেল হাতি আর 'মৃগ' হয়ে গেল হরিণ। ইংরেজিতেও এক সময় deer বলতে পশু বোঝাতো। এখন deer মানে হরিণ। শেকসপিয়ারের King Lear নাটকে samll deer মানে ছোট হরিণ নয়, ছোট পশু।

হস্তী শব্দটি ফারসিতেও রয়েছে। আর ফারসি থেকেই তা হিন্দিতে ঢুকেছে। এ কারণে হিন্দিতে হস্তী মানে 'অস্তিত্ব'। । আর এ থেকে অর্থ দাঁড়িয়েছে 'গণ্যমান্য কেউ'।

হিন্দিতে 'বড় হস্তী' মানে বড় মাপের গুণী। তবে হস্তী শব্দের সংস্তৃত গঠন হচ্ছে হস্ত + ইন। সংস্কৃত হস্তী থেকে বাংলায় হাতি শব্দটি এসেছে। অন্যদিকে হাত + ই = হাতি। এ হাতি মানে হস্ত পরিমিত (বার হাতি শাড়িও তার কুলায় না), হাতের দিকে (ডান হাতি রাস্তা ধরে পূর্ব দিকে এগোবেন)।

সাধারণ অর্থে হাতি শব্দটি তৃণভোজী বৃহদাকার চতুষ্পদ জন্তুর জন্য নির্দেশিত হয়। আবার এ হাতি দিয়ে আলঙ্কারিক অর্থে অতিকায় স্থূল ব্যক্তিও বোঝায় (এতো প্রার্থী নয়, যেন হাতি)। হাতী বানানভেদ (ঘন সন্দল কাফুরের বনে ঘোরে এ দিল বেহুঁশ। হাতীর দাঁতের সাঁজোয়া পরেছে শিলাদৃঢ় আবলুস - সিন্দাবাদ, ফররুখ আহমদ)। মনে রাখবেন, কেউ যদি দাবি করেন, মানুষের হাত আছে।

তাই মানুষই হাতি। তাহলে কিন্তু তার যুক্তি ফেলে দেয়া যাবে না। যাই হোক, হাতির মাথায় মোটেও মুক্তো জন্মে না। কিন্তু রূপকথার রাজকুমারীরা নিত্যই গজমুক্তোর মালা পরেন। মুঘল সম্রাট শাহ আলমের বিখ্যাত হাতি 'মওলা বক্স' এর কাহিনী হয়তো অনেকে জানেন।

তবে সাহিত্যপ্রেমীরা প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের 'আদরিণী' গল্পের কথা ভুলতে পারেন না। হাতিরা কিভাবে দাঁত দিয়ে পর্বতের সানুদেশ খননে ব্যস্ত তার অসাধারণ বর্ণনা রয়েছে 'মেঘদূতে'। অথবা অভিজ্ঞান শকুন্তলমে তপোবনে মত্ত হাতির উৎপাতের কথা ভাবুন। হিন্দু পুরাণে রয়েছে, ৮টি হাতি ৮ দিক থেকে পৃথিবীকে আকাশে ধরে রেখেছে। সেজন্য তারা দিগগজ বা দিগনাগ।

এছাড়া আরও চারটি হাতি পৃথিবীকে নিচ থেকে ধরে রেখেছে। এদের মধ্যে পূর্বদিকের হাতিটির নাম 'বিরূপাক্ষ'। এই হাতি মাথা নাড়লে পৃথিবীতে ভূমিকম্প হয়। জাপানে ঘন ঘন ভূমিকম্পের হোতা তাহলে এই বিরূপাক্ষই

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।