আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আন্দোলনের বাতাসে চুল উড়ে যাবে

আগামী অধিবেশনে নির্দলীয় সরকারের বিল সংসদে এনে পাস করতে আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এখনো সময় আছে নির্দলীয় সরকারের বিল পার্লামেন্টে এনে তা পাস করুন। দেশে অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। সংবিধান থেকে এক চুলও নড়া হবে না- নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের জবাবে তীব্র সমালোচনা করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, বাতাসে গেলেই কিন্তু চুল উড়ে যাবে। জনগণের এমন আন্দোলন শুরু হবে, সব চুল উড়ে দিশাহারা হয়ে যাবেন।

চুল তো থাকবেই না, অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি পড়বে। প্রধানমন্ত্রীকে গণতন্ত্রের পথে আসার আহ্বান জানিয়ে বেগম জিয়া বলেন, আসুন আলোচনা করে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া। বর্ণাঢ্যভাবে সাজানো অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেন। আলোচনা সভার দ্বিতীয় পর্বে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর তথ্যচিত্র দেখানো হয়।

এরপর অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

প্রায় এক ঘণ্টার বক্তব্যে খালেদা জিয়া দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক অবস্থা, সরকারের ব্যর্থতা, আগামীতে ক্ষমতায় গেলে করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এক চুলও নড়বেন না। এত আস্ফালন কেন। এত জোরগলায় কথা বলা কিংবা লাফালাফি ভালো নয়।

প্রধানমন্ত্রী জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। এখন তার দলের নেতা-কর্মীদের সাহস দিতে জোরে কথা বলছেন। তিনি জনগণকে ভয় পাচ্ছেন। কারণ ক্ষমতা চলে গেলে তারা এলাকায় যেতেই পারবে না। কিন্তু আমরা তা চাই না।

নতুন ধারার সরকার ও ঐক্যের রাজনীতি প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে নতুন ধারার রাজনীতির চালু করব। বিভক্তি ও অনৈক্যের পরিবর্তে ঐক্যের রাজনীতি করব। আওয়ামী লীগসহ সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করব। কেবল তাই নয়, সরকারও হবে নতুন ধারার। আন্দোলন ও কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমাদের দাবি ছোট_ একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন।

আপনারা বলেছেন, অনেক উন্নয়ন করেছেন। তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে আপনাদের কেন এত ভয়? সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করে নির্বাচন দিন। এই সরকারের অধীনে উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু করে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। দেশের মানুষের তাদের প্রতি কোনো আস্থা নেই। ৯০ ভাগ মানুষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়।

এই সংখ্যা এখন ৯৫-৯৮ ভাগে উন্নীত হয়েছে। জাতীয় পার্টিও বলছে, বিরোধী দল না গেলে তারা নির্বাচনে যাবে না। জানি না তারা কথা ঠিক রাখবে কিনা। তবে জনগণের সামনে এ কথা বলা হয়েছে। আশা করি তারা কথা রাখবেন।

সরকারকে বলব, এখনো সময় আছে পার্লামেন্ট অধিবেশন ডেকেছেন। নির্দলীয় সরকারের নাম যা-ই হোক। এ সংসদেই নির্দলীয় সরকারের বিল নিয়ে পাস করুন। গণতন্ত্রের পথে আসুন। জনগণের দাবি পূরণ করুন।

আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসন করি। আমরা আন্দোলন করতে চাই না। আলোচনার পরিবেশ তৈরি করুন।

নির্দলীয় সরকারের আন্দোলনে নেতা-কর্মীদের সর্বাত্দক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, আন্দোলন মাত্র শুরু হয়েছে। আগামীতে আরও কর্মসূচি আসবে।

আগামী দিনের আন্দোলনের জন্য তোমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। খালেদা জিয়ার বক্তব্যের বড় অংশজুড়ে ছিল আগামীতে সরকার গঠন করলে কোন কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনের ইশতেহার পরে দেব। তবে আগামীতে ক্ষমতায় গেলে প্রশাসনকে দলীয়করণমুক্ত করে মেধাভিত্তিক প্রশাসন গড়ে তুলব। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেব।

মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ হবে।

এক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, অতীতে আমাদেরও কিছু ভুল ছিল। দেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা চাকরি পাচ্ছে না। তারা রাজপথে আন্দোলন করছে। কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে সরকার তার দলীয় কর্মী, অদক্ষ ও অযোগ্যদের চাকরি দিচ্ছে।

আমরা ক্ষমতায় গেলে মেধাভিত্তিতে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করব। অল্প কিছুসংখ্যক কোটা থাকবে।

নতুন কৃষিনীতি প্রণয়ন, কৃষি ভূমির ব্যবহারের বিধিনিষেধ আরোপ, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করে স্থায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ, গ্যাস উৎপাদন ও সরবারহ বৃদ্ধি, শিক্ষা খাতের উন্নয়ন বিশেষ করে নারীশিক্ষার উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার, যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, পুলিশ প্রশাসনকে দলীয়করণমুক্ত করে নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, দক্ষ জনশক্তিকে বিদেশে প্রেরণ, পোশাক শিল্পের উন্নয়ন, দুর্নীতি নির্মূল, ভঙ্গুর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও এর অবকাঠামোর উন্নয়ন, বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা- উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দ্রুত ট্রেন সার্ভিস চালু, পদ্মা নদীতে দুটি সেতু নির্মাণ, মানবাধিকার সুরক্ষা প্রভৃতি তার সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবে বলে জানান খালেদা জিয়া। বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলব। কারও আধিপত্য আমরা মেনে নেব না।

মানবাধিকার সংস্থা 'অধিকার' সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্রর মুক্তির দাবি করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেফাজতে ইসলামের ওপর হামলায় তিনি যে মৃতের পরিসংখ্যান দিয়েছেন তা সত্য। সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। অথচ সরকার তাকে মুক্তি দিচ্ছে না। আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে উল্লেখ করে তারও মুক্তি দাবি করেন তিনি।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সাভারের রানা প্লাজার ঘটনায় হতাহতরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না।

সরকার এদের ক্ষতিপূরণের জন্য বহু অর্থ তুলেছে। ওইসব কোথায় গেল। চিকিৎসাধীন পঙ্গু শ্রমিকদের হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। তাদের ওষুধপত্র পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। আমার প্রশ্ন, রানা প্লাজার ক্ষতিপূরণের অর্থ কোথায় গেল।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকারের সাড়ে চার বছরে ৫ হাজার পোশাক শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এখান থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে গেছে। তিনি অভিযোগ করেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণের দুর্নীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতিবাজদের নামের তালিকা সরকারকে দিয়েছে। তারা তদন্ত করতে বলেছে। কিন্তু সরকারের আজ্ঞাবহ দুর্নীতি দমন কমিশন আবুল হোসেনসহ দুর্নীতিবাজদের চোখে দেখে না।

সংগঠনের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক কাজী আসাদুজ্জামান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, কেন্দ্রীয় নেতা মুনীর হোসেন, আলী রেজাউর রহমান রিপন, ইয়াসীন আলী, সাইফুল ইসলাম পটু, লিটন মাহমুদ, কামরুজ্জামান বিপ্লব, শাহাবুদ্দিন মুন্না প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, এম কে আনোয়ার, আ স ম হান্নান শাহ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল মান্নান, শামসুজ্জামান দুদু, বরকত উল্লাহ বুলু, জয়নুল আবেদীন, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, আসাদুল হাবিব দুলু, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাবেক এমপি লুৎফর রহমান খান আজাদ, এটিএম আলমগীর, হাফিজ ইবরাহিম, সাইফুল আলম নিরব, জাফরুল হাসান, নূরে আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশীদ হাবিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.