আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেষ পর্যন্ত শিখেই ফেললাম একটা বাংলা ফিক্সড লেআউট কিবোর্ড! আপনিও চেষ্টা করবেন নাকি?

আমার ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগ: http://bit.ly/gaWV2X
অভ্র দিয়ে লেখালেখি করি তা প্রায় অনেক দিন হয়ে গেল। এ সময়ের পুরোটাই লেখালেখি করেছি ফোনেটিক দিয়ে। ফোনেটিক টাইপিং নিঃসন্দেহে টাইপিং এর জন্যে ভাল উপায় কিন্তু সমস্যাও একেবারে কম নয়। তাই হঠাৎ একটা সময় মনে হল একটা ফিক্সড লেআউট কিবোর্ডে টাইপিং শিখে নিলে কেমন হয়! কেননা সবচেয়ে দ্রুত গতিতে টাইপিং এর জন্য ফিক্সড লেআউট কিবোর্ডে টাইপিং এর বিকল্প নেই। সাথে সাথেই গবেষনা শুরু করে দিলাম।

অভ্র’র সাথে যেসব ফিক্সড লেআউট কিবোর্ড থাকে সগুলো হচ্ছে- অভ্র ইজি, বর্ণনা, মুনির, জাতীয় আর প্রভাত। অভ্র ইজি কিবোর্ড শিখতে ইজি হবে ধরে নিয়ে শেখা শুরু করলাম। শেখার জন্য আধাঘন্টা সময়ও খরচ করলাম। কিন্তু কিছুতেই বাগে আনতে পারলাম না। ফিক্সড লেআউটের জন্য অভ্র’র সাথে যে হেল্প ফাইল আছে সেটা খুলে দেখা গেল সেখানে লেখা আছে সবচেয়ে সোজা হবে বর্ণনা কিবোর্ড।

লেআউট দেখে বর্ণনা কিবোর্ড অভ্র ইজি’র চেয়ে অনেক ইজিও মনে হল। যারা ইংরেজি টাইপিং ভাল পারেন আর তার সাথে অভ্র ফোনেটিক দিয়ে লেখালেখি করে অভ্যস্ত তারা মাত্র আধাঘন্টা সময় দিলেই খুব সহজে এই কিবোর্ড শিখে নিতে পারবেন। কেননা বর্ণনা কিবোর্ডের সাথে ফোনেটিক টাইপিং এ ব্যবহৃত কীগুলোর অনেক অনেক মিল। কেবল বাকি কয়েকটা কী (key) মুখস্ত করে নিলেই কিছুক্ষণের মাঝেই বর্ণনা কিবোর্ডে লেখালেখি করা সম্ভব। আর এ লেখাটি ফিক্সড লেআউটে টাইপিং করা আরো সহজ করে দেবে।

প্রথমে দেখে নেয়া যাক ফোনেটিকের তুলনায় ফিক্সড লেআউট কিবোর্ডে টাইপিং এ কী কী সুবিধা পাওয়া যায়- ১. প্রথম এবং সবচেয়ে বড় সুবিধা keystroke অনেক কম লাগে। দ্রুত টাইপিং করতে চাইলে ফিক্সড লেআউট কিবোর্ডে টাইপিং এর বিকল্প নেই। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। ফোনেটিকে ‘আসল’ শব্দটি লিখতে হলে লিখতে হবে এভাবে- a + s + o + l । অর্থাৎ ৪টি কী চাপতে হবে।

মাঝখানে o না দিলে স আর ল মিলে যুক্তাক্ষর হয়ে যাবে। কিন্তু ফিক্সড লেআউট টাইপিং এ লিখতে চাইলে- a + s + l । ব্যস হয়ে গেল! ২. ফোনেটিকে কিছু অক্ষর লিখতে অনেক কী প্রেস করতে হয় (যেমন: ধ লিখতে- Shift + D + h বা Dh) সে তুলনায় ফিক্সড লেআউটে সব অক্ষরের জন্য নির্দিষ্ট কী (Y) রয়েছে, এতে করে সময় অনেক কম লাগে। ২. ফোনেটিক টাইপিং এ কোন শব্দের পরে স্পেস দিয়ে দিলে পরে সেটা এডিট করা এক মহা যন্ত্রণার কাজ বিশেষত যদি যুক্তাক্ষর থাকে। ফিক্সড লেআউট টাইপিং এ সমস্যা নেই।

শব্দগুলো এডিট করা তুলনামূলক অনেক সহজ। যেহতু একটি কী প্রেস করলে নির্দিষ্ট অক্ষর লেখা হয় তাই এক্ষেত্রে বিড়ম্বনা কম। ৩. যে কোন একটা ফিক্সড লেআউট কিবোর্ড শিখে নিলে ফোনেটিকের এক ভার্সন থেকে আর এক ভার্সন এর পরিবর্তন নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। অর্থাৎ এক ভার্সন থেকে পরের ভার্সনের পরিবর্তন এর সাথে অভ্যস্ত হতে হবে না। ফিক্সড লেআউট টাইপিং শুরু করবার আগে যে সেটিংসগুলো দেখে নিতে হবে- ১. অভ্রতে টাইপিং স্টাইল ‘Modern Typing Style’ সিলেক্ট করে নিতে হবে।

২. ‘Automatic Vowel Formatting’ অন করে নিতে হবে। এখন দেখে নেয়া যাক ফিক্সড লেআউট টাইপিং এর বেসিকগুলো: ১. স্বরবর্ণ লেখার ক্ষেত্রে ‘অ’ সরাসরি কিবোর্ডে আছে (Shift + A)। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে লিংক কী চেপে সংশ্লিষ্ট কার বা মাত্রা দিয়ে সেই স্বরবর্ণ লিখতে হবে। যেমন: ও লিখতে- লিংক কী + O । তাছাড়া ‘Automatic Vowel Formatting’ সিলেক্ট করা থাকলে কোন শব্দের শুরুতে কিংবা কোন স্বরবর্ণের পরে কিংবা কার বা মাত্রার পরে (যেমন: আমরাও) লিখতে লিংক কী চাপতে হবে না।

২. আগেই বলেছি ফিক্সড লেআউট টাইপিং এ দুটি ব্যঞ্জনবর্ণ পরপর লিখলে যুক্তাক্ষর হয় না। সুতরাং দুটি ব্যঞ্জনবর্ণের যুক্তাক্ষর লিখতে চাইলে ব্যঞ্জনবর্ণ দুটোর মাঝে লিংক কী অর্থাৎ হসন্ত (্ বা H) ব্যবহার করতে হবে। ৩. আবার একই ভাবে ব্যঞ্জনবর্ণের পরে কার না দিয়ে স্বরবর্ণ লিখতে চাইলেও লিংক কী ব্যবহার করতে হবে। (যেমন: রইল লিখতে- র + লিংক কী + ই + ল) ৪. যেহেতু হসন্ত লিংক কী হিসেবে কাজ করে, সেহেতু দুটি ব্যঞ্জনবর্ণের মাঝে হসন্ত দিতে চাইলে লিংক কী বা হসন্ত দুইবার চাপতে হবে। যেমন: ক্‌ক লিখতে- ক + লিংক কী + লিংক কী + ক।

৪. য-ফলা, র-ফলা এবং ঋ-কার কিবোর্ডেই দেয়া আছে। তাই এগুলো লিংক কী + য/র/ঋ অথবা সরাসরি লেখা যায়। ফিক্সড লেআউট এ টাইপিং করতে অভ্র’র ড্রপ ডাউন মেনু থেকে Bornona সিলেক্ট করে নিয়ে টাইপিং শুরু করলেই হল! এখন দেখে নেয়া যাক বর্ণনা কিবোর্ডের লেআউট- উপরের ছবি থেকে বোঝা যাচ্ছে বর্ণনা কিবোর্ডের S, D, F, U, E, G, C, N, M, T, I, J, K, L, P কীগুলোর কাজ একেবারেই ফোনেটিকের মতন। বাকি রইল কেবল অন্য অক্ষরগুলো মুখস্ত করে নেয়া। বর্ণনা কিবোর্ডের সাথে ফোনেটিকের কীগুলোর প্রায় ৭০% মিল আছে।

তারপরেও ফোনেটিকে লিখতে অভ্যস্ত হলে যে কী গুলো সমস্যা হতে পারে সেগুলো হচ্ছে- অ: ফোনেটিকে অ লিখতে O ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বর্ণনা কিবোর্ডে লিখতে হলে- Shift + A । য়: ফোনেটিকে Y দিয়েই য় লেখা যায় কিন্তু বর্ণনা কিবোর্ডে ‘য়’ লিখতে হলে Shift + B প্রেস করতে হবে। হ: বর্ণনা কিবোর্ডে H লিংক কী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই ‘হ’ লিখতে Shift + H প্রেস করতে হবে।

ধ/থ: বর্ণনা কিবোর্ডে ‘ধ’ লিখতে Y এবং ‘থ’ লিখতে Shift + Y প্রেস করতে হবে। দাড়ি (। ): ফোনেটিকের মত বর্ণনা কিবোর্ডে সরাসরি দাড়ি দেয়া যায় না। দাড়ি লিখতে- Shift + L। ফোনেটিকের একটা বড় সুবিধা পাওয়া যায় যুক্তাক্ষর লেখার ক্ষেত্রে।

ফোনেটিকে যুক্তাক্ষর লিখতে কোন কোন অক্ষর মিলে যুক্তাক্ষর গঠন করে তা জানতে হয় না। কিন্তু ফিক্সড টাইপিং এর ক্ষেত্রে তা জানতেই হয়। এটা এক দিক দিয়ে সুবিধাই বটে! যুক্তাক্ষরগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা হয়ে যায় (অন্তত আমি ফিক্সড লেআউটে টাইপিং শেখার আগে অনেক যুক্তাক্ষরের গঠন জানতাম না)। টাইপিং এর সময় যে যুক্তাক্ষরগুলো মোটামোটি সবসময় প্রয়োজন হয় সেগুলো নিচে দিয়ে দিলাম- ক্ষ = ক + লিংক কী + ষ (ক্ষেত্র) ঞ্জ = ঞ + লিংক কী + জ (ব্যঞ্জনবর্ণ) হ্ন = হ + লিংক কী + ন হ্ণ = হ + লিংক কী + ণ হৃ = হ + ৃ (ব্যবহৃত) * বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত প্রায় বাকি সব যুক্তাক্ষর এর বিস্তারিত গঠন আছে অমিক্রন ল্যাবের এই হেল্প ফাইলটিতে। ** এর মাঝে অমিক্রন ল্যাব ঘোষণা করেছে এ মাসের শেষ দিকে অভ্র ৫ এর বেটা ভার্সন রিলিজ দেবার।

তাই সময় থাকতে থাকতে বাংলা ফিক্সড লেআউট টাইপিং শিখে নিন! কেননা অভ্র ৫ এ ফোনেটিকের জন্য আরো অনেক সুবিধা যোগ হচ্ছে বলে গুজবে প্রকাশ। এর মাঝে শিখে না নিলে হয়ত আর কোনদিনই শেখা হবে না!!!! *** প্রথম ছবিটি অভ্র ৫ এর স্প্ল্যাশ স্ক্রিন।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।