আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাসাবাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ, অতঃপর

খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... বাসাবাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ, অতঃপর হা সা ন কা ম রু ল প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। গ্যাস সংযোগ বন্ধের আগের আদেশ প্রত্যাহার করে পেট্রোবাংলার দেয়া নতুন গ্যাস সংযোগ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর সব প্রতিবন্ধকতা দূর হয়। সরকার প্রথম গ্যাস সংযোগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় ২০০৯ সালে। সিলেট ছাড়া অন্যান্য জেলার শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সংযোগ না দেয়ার সিদ্ধান্তও নেয়া হয় তখন। এরপর ২০১০ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে আবার তা বন্ধের উদ্যোগ নেয় সরকার।

এবং সেই সময় সংযোগ বন্ধের ব্যাখ্যায় জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলেছিল, গ্যাস উৎপাদন সন্তোষজনক না হওয়ায় আপাতত গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে গ্যাস উৎপাদন সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছলেই তা দেয়া হবে। এ সিদ্ধান্তকে সাময়িক বলে মন্ত্রণালয় থেকে অভিহিত করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, গ্যাস উৎপাদন প্রতিদিন ২ হাজার ২শ’ ঘনফুট হলে নতুন করে সংযোগ দেয়া হবে। Click This Link কিন্তু গ্যাস উৎপাদনের এ রেকর্ড গত এক বছর আগেই কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছার পরও সরকার নতুন সংযোগ প্রদানে গড়িমসি করতে থাকে।

এমনকি নিষেধাজ্ঞা পর্যন্ত মন্ত্রণালয় প্রত্যাহার করেনি। ফলে শিল্পে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফ্ল্যাট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক লাখ ফ্ল্যাট রেডি করার পরও গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর করতে পারেনি। এমনকি নতুন নির্মিত ফ্ল্যাটগুলো বিক্রির জন্য ক্রেতাও খুঁজে পায়নি। কারণ ব্যবসায়ীরা বলতে পারেননি তারা কবে নাগাদ এসব ফ্ল্যাটে গ্যাস সংযোগ দিতে পারবেন! সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ীরা গত তিন বছর ধরে অপেক্ষা করে আসছে।

তবে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যেসব রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী রয়েছেন, তাদের কেউ কেউ রাজনৈতিক প্রভাব ও অন্যান্য পন্থায় অবৈধ উপায়ে গ্যাস সংযোগ নিয়েছে । ২০১২ সালের এপ্রিলে জ্বালানি বিভাগ নির্ধারিত ভিত্তিতে কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ উš§ুক্ত করে। বাসাবাড়িতে তা তখনই দেয়ার কথা থাকলেও সরকার পিছিয়ে যায়। তিতাসের হিসাব মতে প্রায় ৫৭ হাজার গ্রাহক সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অবৈধ উপায়ে গ্যাস সংযোগ নিয়েছে। তবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলছেন, অবৈধ উপায়ে গ্যাস সংযোগ গ্রহণকারীর সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার।

এখন অবৈধ গ্রাহককে জরিমানার আওতায় এনে বৈধ্যতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার, যা অবৈধ উপায়কে উৎসাহিত করা হবে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি নতুন গ্রাহককে সংযোগ দেয়া হবে পর্যায়ক্রমে। প্রায় ১ লাখ নতুন গ্রাহক যারা ইতিপূর্বে আবেদন করেছেনÑ এসব গ্রাহককেই শুধু সংযোগের আওতায় আনা হচ্ছে। নতুন করে কেউ আবেদন করার সুযোগ পাবে না বলে সুস্পষ্টভাবেই বলে দেয়া হয়েছে। নতুন সংযোগে প্রতিদিন ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হবে।

প্রেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের ভাষ্য মতে, প্রতিদিন প্রায় ১৮ লাখ টাকার গ্যাস চুরি হয়। তবে চুরির পরিমাণ আরও বেশি বলে তিতাসের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। পেট্রোবাংলা তার নিজস্ব জরিপে প্রমাণ পেয়েছে, এসব অবৈধ সংযোগে প্রতিদিন ৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহƒত হয়। অবৈধ এ সংযোগ বন্ধের দাবিতে একটি মানবাধিকার সংগঠন ২০১২ সালে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করে এবং ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর উচ্চ আদালত সরকারকে অবৈধ সংযোগ বন্ধসহ বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগের নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশ আমলে না নিয়ে সংযোগ বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।

যদিও সরকার গ্যাস সংকটের কথা মাথায় রেখে বৈধ সংযোগ দেয়া থেকে সাধারণ গ্রাহককে বঞ্চিত করে; কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধ সংযোগ প্রদান হরহামেশাই চলতে থাকে। মন্ত্রণালয় বা পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে দৃশ্যত কোন পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। সরকারকে তিতাসের মিটার টেম্পারিং ও অবৈধ সংযোগ বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। এবং খুঁজে বের করতে হবে কারা কোন উদ্দেশ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহককে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়েছে। মিটার টেম্পারিং ও অবৈধ সংযোগ প্রদানে তিতাসে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট, যারা মোটা অঙ্কের টাকার মাধ্যমে সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে থাকে।

রাজনৈতিক বিবেচনায় ও পকেটমানির মাধ্যমে তিতাসের যে সিন্ডিকেট এ অবৈধ গ্যাস সংযোগের ব্যবসা করে যাচ্ছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে কোন সরকারই কোনরূপ পদক্ষেপ নেয়নি। তবে তারা কারা, এটা সরকারের অজানা নয়। যারা তিতাসে যাতায়াত করে তারাও জানে। কিন্তু এক্ষেত্রে কোন প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। শক্তিশালী এ সিন্ডিকেট এতটাই দাপুটে যে, তারা পেট্রোবাংলা ও মন্ত্রণালয়কে থোরাই কেয়ার করে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বিভিন্ন ফোরামে এ অবৈধ সংযোগ নিয়ে উচ্চবাচ্য করলেও তার রানিংমেট ও মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তারা তিতাসের সঙ্গে যোগসাজশে এ ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকে। সরকারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে যুগান্তরে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যাই হোক, সরকারকে সাধুবাদ যে, দেরিতে হলেও বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন এ সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে যেন নিয়মনীতি মেনে চলা হয়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও সংশ্লিষ্ট বিভাগের।

হাসান কামরুল : জ্বালানি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক যশমবড়ষড়মরংঃ@মসধরষ.পড়স ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।