আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই ছেলেটা দেখত স্বপ্ন, সেই ছেলেটা ভাবুক

শারদশশীর অনন্ত অপেক্ষায় তোর চোখের সবুজ রঙ আকাশনীল হয়ে গেলে ঠিক ধরে নিস আমি হারিয়ে গেছি ঘাসেদের দলে...
সেই ছেলেটা পাগল পাগল সেই ছেলেটা লাজুক সেই ছেলেটা দেখত স্বপ্ন সেই ছেলেটা ভাবুক আর দশটা ছেলের মত ছিল না সেই ছেলেটা। সেই ছোট্টটি থেকেই সে ছিল অন্যরকম। নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখত, কারো সাথে মিশতে চাইত না। অসামাজিক বলে তাকে খেপাত বন্ধুরা, আর সে মুচকি মুচকি হাসত। কি যেন এক আগ্রহ তাকে প্রকৃতির কাছে নিয়ে যেত, আমাদের সামাজিক পৃথিবী তাকে টানত না।

একটু বোকা বোকা, লাজুক ছিল ছেলেটি। স্বপ্ন দেখত সে। সুন্দর একটা পৃথিবীর স্বপ্ন। আস্তে আস্তে বড় হল সে। পৃথিবীর নিয়ম কানুন গুলো একটু একটু করে শিখতে লাগল... আর ততই তার মধ্যে চেপে বসল নিয়ম ভাঙ্গার প্রবল ইচ্ছা।

আর দশটা ছেলের মত ছিল না সে। তার কাছে পার্থিব রীতিনীতি গুলো অসহ্য হয়ে উঠতে লাগল। লেখাপড়ায় খারাপ ছিল না সে। কিন্তু কখনো তার মনে হত না প্রথম সারির একজন ছাত্র হওয়া দরকার। যতই দিন যেতে লাগল, ততই পড়ালেখার কারণে বাবা-মা, আত্নীয় স্বজনের খোটা খেতে লাগল সে।

কিন্তু সে তো সার্টিফিকেট বগলদাবা করে দশটা-পাচটা অফিস করতে চায়নি কখনো। সে তো চেয়েছিল মেঘ হতে, আকাশের বুকে পাখিদের সাথে উড়তে, বৃষ্টি হয়ে ঝড়তে। তাকে কি আর লেখাপড়া টানে? সেই ছেলেটা দেখত আমাদের দেশের দুর্দশা। নষ্ট নিয়ম-কানুনের গ্যড়াকলে পড়ে কিভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছে এই সবুজ প্রান্তর। সেই ছেলেটা দেশটা কে বদলে দিতে চাইত।

নানান রকম চিন্তাভাবনা চলত তার মাথায়। কাছের বন্ধুরা শুনে বলতঃ তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? সেই ছেলেটা তবু দমত না। তার মনে হত আর একটা মুক্তিযুদ্ধ দরকার। সে যুদ্ধে যেতে চাইত। কিন্তু একা একা কি আর যুদ্ধ করা যায়? সেই ছেলেটারও যুদ্ধ করা হল না।

সেই ছেলেটা লিখত, ইচ্ছে মতন চলত তার কলম। কখনো সে লিখত গান, কখনো কবিতা... ডায়েরী লেখা ছিল তার প্রতিদিনের প্রিয় কাজ। বাতাস ছিল তার বন্ধু। সে বাতাসের সাথে ছুটত তার প্রিয় লাল রঙের সাইকেলে। সেই ছেলেটা গাইত, ছবি আকতে ভালবাসত।

খুব মন খারাপ হলে অন্য সবার মত চিৎকার করে কাদত না সে। তার কান্না ছিল লুকানো হৃদয়ে। সে ছেলেটা ভাবত আমাদের সবার দুটো ডানা আছে। সে ডানা দুটোর নাম দিয়েছিল স্বাধীনতা। কিন্তু আমাদের সামাজিকতায় এসব কল্পনার কোন অবকাশ ছিল না।

তাই সবাই উপহাস করত ছেলেটাকে। একদিন ক্ষুদ্ধ ছেলেটি ঠিক করল এসবের যখন কোনই মূল্য নেই, তখন কি হবে তার “স্বাধীনতা” দিয়ে? সেই ছেলেটা বুঝতে পারল, এখন থেকে প্রায়ই কারণে অকারণে তার মন খারাপ থাকবে, আর এটা মেনে নিয়েই তাকে বেচে থাকতে হবে... বেচে থাকতে হবে সাধারণ একজন হয়ে। সে অনুভব করল তার আসলে কোন ক্ষমতা নেই। সে কখনোই সে সমাজ, এই পৃথিবীটাকে পরিবর্তন করতে পারবে না। তাই সে মরিয়া হয়ে সিদ্ধান্ত নিল এভাবে আর নয়।

সে তার “স্বাধীনতা” দুটো কেটে ফেলল। অনেক কষ্ট হয়েছিল, নির্ঝরের মত ঝরেছিল রক্ত। রুধিরাক্ত ডানা দুটো সে কবর দিয়েছিল তার জানালার পাশে। সেই এপিটাফে কিচ্ছু লেখা ছিল না। সেই ছেলেটা চায়নি সমাজের হাসির পাত্র হতে।

তার কবিতার খাতা, ডায়েরী অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে ছিল। প্রিয় বন্ধুর এই নীরব প্রস্থান তারা কখনোই মেনে নিতে পারেনি। তার অনেক দিন পর। ছেলেটা ফিরে এল “স্বাধীনতার” এপিটাফের পাশে। ঝুকে পড়ে স্পর্শ করতেই মনে পড়ে গেল সবকিছু... সেই ছেলেটা এখনো কাদে।

যখন দেখে তারই মত কোন স্বাপ্নিক কিশোর নিরন্তর স্বপ্ন বুনে চলেছে...
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।