আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিছু পথ পায়ে হাটা এক সাথে!

আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!

: উমমম, একটা রিকোয়ে্সট করতে পারি? : অফকোর্স রনি, বলো কি বলবে? : ক্যান উই ওয়াক ফর এ হোয়াইল....উইথ ইউ? কিছুক্ষনের জন্য চোখের একটা পলক, তার পর আস্তে করে "ইয়েস"। আমি চলে গেলাম মালিকের কাছে,"বস, কাজতো সব শেষ, একটু শহরের দিকে যাবো। কোনো সমস্যা নেই তো?" মালিক বেশ ব্যাস্ত সারা দিনের হিসাব নিয়ে,"হুমমম, চাবী নিয়ে যাও, নাহলে দরজা আটকে দেবে আর ল্যাপটপটা উপরে নিয়ে যাও নাহলে রাতে তোমার ল্যাপটপ ছাড়া ঘুমুতে হবে। " আমি একটা হসি দিয়ে উপরে চলে গেলাম জ্যাকেট পড়বার জন্য, জানি না কেন করছি, জানি না কিসের আকর্ষন।

দুদিন ধরে পরিচয়, শয়তানি বান্দরামী সবি চলছে, রেস্টুরেন্টের সবাই একটু একটু হাসছে মুখ টিপে, বাট হু কেয়ারস। গায়ে জ্যাকেট চড়িয়ে বাইরে দাড়ালাম, আকাশের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে অজস্র তারার খেলা অবাক করলো। বহুদিন দেখি না এই আকাশের তারা ভরা রাত। আজকে শুক্রবারের রাত কিন্তু শহরের এই দিকটা প্রচন্ড নির্জন। : হ্যালো রনি? তো কেমন চলছে দিনকাল? কখন যে বাইরে দাড়িয়েছে খেয়াল করিনি।

ওর সাথে কথা চলে হিন্দিতে। আফগানি মেয়ে হিন্দি জানে বলেই এই ইন্টারেকশন। যদিও হিন্দি ছাড়া ওর এখানকার ভাষা খুবই সাবলীল আর আমি তাতে লবডন্ক। এখন অবশ্য ও এখানকার নাগরিকও। : তো আজকে হঠাৎ এগিয়ে দিতে? : জানি না, মনে হলো আজকে হুদাই অপেক্ষা করলে কেমন হয়? তা তোমার বাসা এখান থেকে কতদূর? : অনেকদূর।

কিছু ক্ষন চুপচাপ হাটতে হাটতে আমি নীরবতা ভাঙ্গি,"তোমার মন মাঝে মাঝে উদাস থাকে কেনো? সমস্যাটা কি?" : কই আমি তো উদাস থাকি না? মাঝে মাঝে একটু অফমুডে চলে যাই। জানো, এই শহর জুড়ে লাইট জ্বালানো দেখতে খুব পছন্দ। মনে হয় খুব উচুতে দাড়িয়ে দেখি শহরের এই আলোর খেলা, অথবা হতে পারে কোনো বিল্ডিং এর ছাদে দাড়িয়ে। এই বলে আমার দিকে তাকালো। আমিও তাকালাম।

অসাধারন লাগছে চাদের জ্যোৎস্নায় নিয়ন আলোর প্রতিফলনে। আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না,"আশেপাশে তো কোনো পাহাড় নেই, যদি থাকতো তাহলে দৌড়ে চলে যাওয়া যেতো!" : আমার দেশে কিন্তু অনেক পাহাড়! : ও আচ্ছা? : জানো রনি, আমি অনেক টেনশনে আছি। সিগারেট প্রতিদিন এক প্যাকেট শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি এই সমস্যাগুলোর কূল কিনারা করতে পারছি না। : একটা কাজ করো, সুন্দর দেখে একটা নৌকা কেনো আমি বানিয়ে দেই বৈঠা, দেখবা তীরে পৌছাবাই! : রনি, আই এম নট জোকিং।

: ওকে....শেয়ার করতে পারো তোমার সমস্যা গুলো, যদিও আমার হাতে কিছুই নেই শুধরে দেবার, শুধ শুনতে পারি ব্যাস এটাই। জাস্ট এ কিউরিওসিটি। : আমি পরিবারের বড় মেয়ে। আমার উপর অনেক দায়িত্ব যদি ও আমার এক বড় ভাই আছে। তবুও সে ছোট।

আমরা দুই ভাই দুবোন। আমার বাবা মা থাকে আফগানিস্তানে সবাইকে নিয়ে। আমার একটাই টেনশন ওদেরকে এদেশে যেভাবেই হোক নিয়ে আসা। এর জন্য যদি পৃথিবীর যেখানেই যেতে হোক, আমি যাবো! : তোমার ভাইয়ের বয়স কত? : ১১ বছর। : কি? তুমি না বললা তোমার এলডার ব্রাদার।

: ঠিকই তো বলছি, আমার দুভাইয়ের মধ্যে সেই বড়। : শিট ম্যান! এত পিচকিরে কিভাবে আনবা? স্টুডেন্টও না কাজের ওয়ার্ক পারমিটেও না। আমি আগে যেই রেস্টুরেন্টে কাজ করতাম সেই রেস্টুরেন্টের মালিক আদম ব্যাবসা করে। তারে দিয়া কিছু করানো যাইতো। মাগার তোমার ভাইতো পুচকা।

আচ্ছা ইমিগ্রেশেন তো সিস্টেম আছে যদি কারও পরিচিত থাকে তাহলে তার সাথে থাকবার জন্য আসতে পারে। : আমি সেটা করেছিলাম কিন্তু ওরা এক কথা বলছে আমি আরেক কথা বলছি দেখে ওরা ভিসা দেয় নাই। : ও ম্যান! আচ্ছা তুমি এখানে কিভাবে আসছো? বিয়ে নাকি ওয়ার্ক পারমিট নাকি এ্যাসাইলাম? : আই ওয়াস গ্যাং র‌্যাপাড এন্ড এবাউট টু বি কিলড। পরে রেড ক্রসের সহায়তায় জেনেভায় নিয়ে যায়। ওখানে কিছু দিন থেকে এখানে পাঠিয়ে দেয়।

পরে এপ্লাই করে নাগরিকত্ব পেয়ে যাই! আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষন। একটা মেয়ে এরকম স্বাভাবিক ভাবে নিজের কথা বলতে কখনো শুনিনি। ও তখনও আনমনে আগের মতো হাটছে। হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে মিস্টি একটা হাসি দিয়ে," কি শকড? এখন কি মনে হয় তোমার? আর আসবে না আমার সাথে?" : আমি একটু ধাক্কা খেলাম বোধ হয়। যাই হোউক, পাস্ট ইজ পাস্ট।

: চলো ডিস্কোতে যাই তাহলে। : আমি মদ খাই না, ডিস্কোতে যাবার কোনো মানেও হয় না, পকেটে টাকাও নাই! : আই ওয়াজ জোকিং ইয়ার। : তারপর আর ট্রাই করোনি? : করেছিলাম, তখন আমি এক পিজ্জার শপে কাজ করতাম। ঐ পিজ্জার মালিক ছিলো প্লেবয়। তার অফার গুলো সব মেয়েরই জন্য ওপেন, তাকে সুখি করো বিছানায় সে সবকিছুই করে দেবে।

আমাকেও বলেছিলো এক মাসের জন্য ওর সাথে ঘুরে আসতে, ও আমার বাবা মা ভাই সবাইকে এদেশে এনে দেবে। : শিট ম্যান! : আমাকে সবাই মানা করেছিলো। কিন্তু আমি তখন খুবই ডেসপারেট ছিলাম। পরে নিজের কাছেই হেরে যাই! : আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখেও তুমি কেনো এতো ডেসপারেট হও? : আমি মজবুর হয়ে গিয়েছিলাম। আর কত দেয়ালে পিঠ আটকে যাবে? : আল্লাহ সবার জন্যই কোনো কিছু রেখেছেন, তা এমন কইছু যা আমরা ভাবতে পারি না।

যখন ওটা পাই তখন অতীতের সব দুঃখ এক লহমায় ভুলে যাই। মনে করতে পারো এটাই তার পুরস্কার। : তাহলে মানুষ অসুখী থাকে কেনো? : আসলে মানুষ ভাবে এক ভাবে সুখী হতে কিন্তু আল্লাহ চান আরেক খাবে। আমরা পথ হারাই। যারা পথ হারায় না তারা দিনের শেষে সুখি হয় আর আমরা যারা আমাদের পথে সুখি হতে চাই তারা দেখা যায় কিছু পাই আবার কোনো কিছু পাই না।

হয়তো হয়তো মাঝে ভালো নিয়তের কারনে কখনো কখনো আল্লাহ কবুল করে নেন, তবে সেটাও রেয়ার। ও থেমে পড়লো,"রনি, ইুনো? গতবছর তোমার মতোই একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছইলো, নাম জিৎ। ঠিক তোমার মতোই সে। যখনই আমি তোমাকে দেখি ওর কথাই মনে পড়ে। মাঝে মাঝে খুব বকতো, বলতো এটা করো না ওটা করো না।

আবার মাঝে এ্যাডভাইস দিতো। কিন্তু কি জানো, হঠাৎ একদিন সে চলে গেলো ইন্ডিয়ায়। কিছু কিছু সম্পর্ক খুব কাদায় এখন" : কেন এখন আর যোগাযোগ নাই? : আছে, তবে এখন সে ইন্ডিয়া থেকে ইউএস যেতে চায়। আসলে সমপ্রক জিনিসটা খুবই ক্ষনস্হায়ী। : মোটেও না, মানুষ হারাতে পারে কিন্তু সম্পর্ক না।

হয়তো আজ থেকে অনেক বছর পর যখন তোমার নাতি পুতি হবে তখন তাদেরকে কোলে নিয়ে বলবে জীতের কথা, বলবে ছেলেটা কেনো অন্য সবার থেকে অন্যরকম ছিলো। হয়তো তোমাদের সাথে আর কোনো দিন দেখা হবে না অথবা হলেও ভাবনা চিন্তা অনেকটা পাল্টে যাবে কিন্ত সম্পর্ক থাকবে অমলিন। : এত কথা তবু জানো কিভাবে? : জানি না। : একটা কথা শুনবে রনি? এট খাটাখাটি করো না। তোমার যেটা কাজ সেটা করো।

এখন তুমি জোসে আছো, কিন্তু যখন তুমি দেখবে তুমি সব হারিয়ে ফেলছো, ক্লান্ত হয়ে যাবে তখন দেখবে বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে! : তোমার কোনো আইডিয়াই নাই গত আট মাস আমি কিভাবে খেটেছি। : আমি জানি, কিন্্তু তোমার এখন স্বার্থপরতার সময় হয়েছে! : তোমার বাসা দেখি অনেক দূর। তুমি এতদূর হেটে আসো? : হুমমমমম। রনি দেখো ওটা হলো এই আকশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা। আমার ফেভারিট টাইম পাস কি জানো? ঐ তারাটার সাথে কথা বলা, নিজের সমস্যা নিয়ে ডিসকাস করা, উইশ করা।

: কোনোএন সার পাও ঐ তারা থেকে? : মাঝে মাঝে পেয়ে যাই, মনে হয় উত্তরগুলো আমার বুকের ভিতর ছিলো। : তো বুকের ভিতর শুধু উত্তরই খেলা করে নাকি কারো হাসি মনে রাখবার বা অন্যকিছু রাখবার জন্য এতটুকু জায়গা আছে? : অন্যকিছু বলতে? : এই ধরো এ্যাকাউন্ট নাম্বার, পাস ওয়ার্ড অথাবা বাড়ির ঠিকানা! : মানে? আমি কি তোমার সাথে এতক্ষন জোক করছি? : নো ম্যান, একচুয়ালি আই এম জোকিং! হটাহৎ দাড়িয়ে চোখ দুটো ছোট করে,"ড়নি ইউনো ইু আর রিয়েলি দ্যা গান্ধিজী'স বান্দর। " : এ্যাবসলুট। আই এম প্রাউড টুবি গান্ধিজী'স বান্দর! হাটতে হাটতে কখন যে ওর বসার সামনে এসে পড়লাম জানি। বললো বাসে করে যেতে, প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে মনে হয় টেম্পারেচার ২ এ নেমে এসেছে।

আমার পকেটে টাকা নাই দেখে ওর বাস কার্ডটা দিতে চাইলো। আমি হেসে বললাম,"তোমার হাসির মূল্যাটার দাম অনেক, এটার ঋণ শোধ করতে আমার একজনম লাগবে, এই বাস ভাড়ার ঋণ আরো বেশী হয়ে যায়!" ও তাকিয়ে রইলো আর আমি অবাক হয়ে দেখলাম এই ভীনদেশী মেয়েটি খুব পরিচিত একজনের মতো চোখের পানি ঝরালো। মনে পড়ে গেলা ২০০৭ এ দেখা এক অচ্ছুৎ রাজকুমারীর কথা, যাকে আমি পেয়েও হারাই। যার জন্য আমি আজও পাগল হয়ে বসে বসে আধারে কেদে ফেলি, যাকে মন থেকে মুছবার জন্য শত স হস্র বার চেস্টা করছি। সেই বৃত্তে আমি আবারও পা ফেলছি! আমার পথ চলা থেমে যায়, উল্টো দিকে হাটতে শুরু করি, আবার পিছন থেকে ডাক,"রনি তুমি রাস্তার মাঝ দিয়ে হাটতো, দ্রুত ফুটপাত ওঠো! রনি কি বলছি, কথা শোন! আমি ওর থেকে দূরে চলে আসতে থাকি।

ওর কথা একসময় হারিয়ে যায় হাই ওয়ের গাড়ির শব্দে! মাঝে মাঝেসম্পর্ক নামক ফাদে আমি নিজেই পা দেই ইচ্ছা করি তারপর আবারও পস্তাতে থাকি। অনেকটা আদমের সেই গন্ধব খাবার মতোই, আমার কেনো শিক্ষা হয় না আমি বুঝি না। হয়তো আমার জীবনের সমাপ্তিটা খুবই দরকার, কিন্তু কিভাবে সেটাওজানিনা!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।