আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইশতিয়াক আহমেদ এর ফোর টুয়েন্টি পোস্ট : রাজু ভাইকে মনে পড়ে



রাজু ভাইকে আমি কখনও ফোর টুয়েন্টি বলি নাই। বিল্ডিং এর ছোটরা বলতো। প্রথম দিকে আড়ালে আবডালে বললেও পোলাপনগুলো বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বদ হয়ে যাওয়ায় তারা আড়াল থেকে প্রকাশ্যেই বলতো। রাজু ভাইয়ের সঙ্গে বাড়ী থেকে নামলেই শুনতাম, কোত্থেকে যেন মব্দের ঢিল ছুড়ছে কেউ...রাজু ভাই টাউট...রাজু ভাই ফোর টুয়েন্টি। আমি বুঝতাম এটা আবীরের কণ্ঠ।

কখনও বুঝতাম এটা সানির কণ্ঠ। কখনও ... আমি বড় হয়েছি স্বার্থ চিন্তা আছে। জীবনের বাঁক কোনদিকে নেয় কোনদিন রাজু ভাইরে দরকার পড়ে যায়। কারণ রাজু ভাই প্রতিদিন বলে যেদিন টাকা আসা শুরু করবে... দেখবেন। আমিও সেই লোভে তাকাইয়া থাকি ভবিষ্যতের দিকে...রাজু ভাই টাকা কতদুর? রাজু ভাই কোনও দিন সস্তা বিজনেস নিয়া ভাবতেন না।

তিনি ভাবতেন প্রজেক্ট নিয়া। তার সবচেয়ে আলোচিত প্রজেক্ট ছিল, মাশরুম এর প্রজেক্ট। তার মতে, কখনো সরকার ১০০ কোটি। কখনো ১৫০ কোটি টাকা দিয়াই দিছে। আটকাইয়া গেছি মনত্রী আর আমলাদের দূনীর্তিতে।

আমার মেজাজ খারাপ হয়, দূর মিয়া একটা প্রজেক্টে এত টাইম। আর এই ব্যাঙ্গের ছাতার লাইগা এত টাকা ক্যান দিবো? রাজু ভাই রাগতেন না, আরে মিয়া এই ব্যাঙ্গের ছাতা দিয়াই একদিন এত টাকা কামামু.... আর কালও অর্থমন্ত্রী এক সেমিনারে কইছে মাশরুম নিয়া...শোনেন নাই? আমি চুপ করে যাই। কইছে নাকি? অনেকদিন রাজু ভাই আলোচনায় নাই। তিনি ব্যাস্ত। কী নিয়া জানতে পারছিনা।

একদিন আমার বাসায় এলে। মন বিষন্ন। ভাই আপনার ওয়েভ ক্যাম আছে? আমি না জানাই। রাজু ভাই বলেন, একটা কিনেন না। আমার মা বাবা একটু এসে আমাকে দেখে যাবে।

আমি অবাক হই। কাহিনী কী? মা বাবা আপনারে ঘরে রাইখ্যা ওয়েভ ক্যামে দেখতে আসবো কোন দুঃখে? না ভাই। আমি কাল ইংল্যান্ডে চলে যাচ্ছি। সকাল ৭ টায় ফ্লাইট। আমার মন খারাপ হয়।

পরদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গেই রাজু বাইয়ের কথা মনে পড়ে। আহারে লোকটা তো এখন বিমানে। আমি রাজু ভাইয়ের শুন্যতা বয়ে নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হতেই, নিচে দেখি রাজু ভাই হাটতেছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি যান নাই নাকি আমি ইংল্যান্ডে আইসা পড়ছি? রাজু ভাই বললেন, মিয়া ফাইজলামী কইরেননা। ফ্লাইট পিছাইছে।

পনের দিন পর। আবার তেরো দিনের মাথায় রাজু ভাইয়ের আগমন, কাল দুপুরে চলে যাচ্ছি। দোয়া কইরেন। আমি বললাম, না দোয়া করতে পারমু না। আপনের যাওয়া হয় না।

ফাও কষ্ট... মিয়া যেদিন ইংল্যান্ডের রাণীর বাড়ীর সামনে থেকে ছবি তুইল্যা পাঠামু, সেদিন বুঝবেন। আমি চুপ করে যাই। আবার আমাকে ঘিরে ধরে রাজু বাইয়ের শূন্যতা। আহারে নানা প্রজেক্টের লোকটা চলে যাচ্ছে...পরদিন দুপুর পর্যন্ত মন খারাপ বয়ে চললাম। কিন্তু সন্ধ্যায় আবার বাড়ীর নিচে রাজু ভাই।

কারে যেন গালাগালি করছে...এইবার আর তারে জিজ্ঞাসা করার সাহস পেলাম না। সে কই বা আমি কই? শেষ খবর, রাজু ভাইয়ের আর মাশুরুম বা ব্যাঙ্গের ছাতার প্রজেক্ট হয় নাই। তারা চলে গেছে গ্রামের বাড়ীতে। শুনেছি, একটা ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরে বসেন। যেকানে ছাতাও বিক্রি হয়।

তবে ব্যাঙ্গের না। আর রাণীর বাড়ির সামনে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটা তো আর হয়নি। তবে রাজবাড়ীতেই তারা থাকেন। গ্রামটা ওখানেই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.