আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

***উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) এর জেরুজালেম সফর এবং আমাদের জন্যে শিক্ষা***

"সকল বস্তু তার বিপরীত বস্তুর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠে"

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম আলহাদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালমু আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মদ ﷺ। উমর (রা) এর জেরুজালেম সফরের ঘটনা প্রায় মোটামুটি সবাই জানেন আর উমর (রা) সম্পর্কে এই ঘটনাটি অনেক বেশী আলোচিত। সংক্ষেপে ঘটনাটি এরকম, জেরুজালেম নগরী যখন মুসলিমদের দখলে আসে তখন সেখানকার খ্রিস্টান প্রধান “আমিরুল মুমিনীন” বা মুমিনদের নেতা উমর (রা) ব্যতীত অন্যের নিকট বায়তুল মাকদাস মসজিদের চাবি হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে উমর (রা) তার এক ভৃত্যকে সাথে নিয়ে জেরুজালেমের পথে রওনা দেন। তাদের যানবাহন হিসেবে ছিল একটি মাত্র উট।

তাই পালা করে উমর (রা) এবং ভৃত্যটি উটে চড়তেন। উমর (রা) যখন উটে চড়তেন তখন ভৃত্যটির নিকট থাকত উটের দড়ি আর ভৃত্যটি যখন উটে চড়তেন তখন উমর (রা) এর নিকট থাকত উটের দড়ি। এভাবেই যখন তারা জেরুজালেমের নিকটবর্তী হন তখন ভৃত্যের পালা থাকে উটে চড়ার আর উমর (রা) উটের আগে আগে উটের দড়ি নিয়ে হেটে চলছেন। এই ঘটনা দেখে সবাই অভিভূত হয়ে যায়। এইভাবে ঘটনাটি কমবেশী সবাই জানেন।

কিন্তু সেসময় আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল যা আমাদের জন্যে শিক্ষনীয়। সেই ঘটনাটিরই আলোকপাত করব ইনশা’আল্লাহ। উমর (রা) জেরুজালেম শহরের একদম দাড়প্রান্তে, তার হাটে উটের দড়ি, উটের উপর বসে আছেন তার ভৃত্য, উমর (রা) এর গায়ে একটি অতি সাধারণ জামা যাতে রয়েছে চৌদ্দটি ‘তালি’! মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা) আগেই বেড় হয়ে এসেছেন উমর (রা) এর সাথে দেখা করার জন্যে। আবু উবাইদা (রা) উমর (রা) এর অতি সাধারণ, চৌদ্দটি তালিযুক্ত জামা, আর উটের দড়ি ধরে আসছেন আর ভৃত্য বসে আছেন উটের উপর এটা দেখে রোমানরা কি মনে করবে, তাই তিনি বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন! আমরা এমন এক জায়গায় আছি যেখানকার মানুষজন চাকচিক্য পছন্দ করে, তারা মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য্য দেখে মানুষকে বিচার করে, সম্মান করে তাই আপনি যদি একটু ভালো পোষাক পড়তেন তাহলে তা খুবই উত্তম হতো। উমর (রা) আবু উবাইদা (রা) এর কথায় খুশি হতে পারলেন না, তিনি আবু উবাইদা (রা) এর বুকে আঘাত করলেন, আর বললেন, আমি ধারণা করেছিলাম কেউ একজন এই কথাগুলো আমাকে বলবে কিন্তু আমি তোমার পক্ষ থেকে এই কথাগুলো আশা করিনি।

এরপর উমর (রা) বললেন, “আমরা হচ্ছি সেই জাতি যাদের আল্লাহ তাআলা ইসলাম দ্বারা সম্মানিত করেছেন, আমরা যদি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে সম্মান খুজি তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদের অসম্মানিত করবেন। ” অতি চমৎকার এবং শিক্ষণীয় এই কথাটি আমাদের জন্যে। আজ আমরা মুসলমানদের অধপতনের কারণ খুজে বেড়াই, সমস্যার সমাধান কল্পে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে মুসলমানদের পিছিয়ে পড়ার বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করি। কিন্তু আমরা কি চিন্তা করেছি, কিভাবে রাসূল ﷺ এর সাহাবীদেরকে আল্লাহ তাআলা সম্মানিত করেছেন? মুসলমানরা বিশ্বে সম্মানিত হয়েছিল, আটশ বছর শাসন করেছিল আর আমাদের এই সম্মান এই জন্যে অর্জিত হয়নি যে আমরা উন্নত প্রযুক্তির টেকনোলজি ছিল, আমাদের সম্মান এই জন্যে অর্জিত হয়নি যে আমরা ব্যবসায় খুব পারদর্শি ছিলাম, আমাদের সম্মান এই জন্যে অর্জিত হয়নি যে আমরা খুব দামি, উন্নত পোষাক পড়তাম, আমাদের সম্মান বিজ্ঞানের কারণে অর্জিত হয়নি, আমাদের সম্মান অর্জিত হয়েছে ইসলামের মাধ্যমে। ইসলাম দ্বারা আল্লাহ তাআলা আমাদের সম্মানিত করেছেন।

আজ আমারা আমাদের সম্মান, আমাদের প্রতিপত্তি খুজে বেড়াই ইসলামকে বাদদিয়ে অন্য উপায়ে। আর ঠিক যর্থার্থই আল্লাহ তাআলা আমাদের অসম্মানিত করেছেন ইসলাম বাদদিয়ে অন্য উপায়ে সম্মান অন্বেষণ করার জন্যে, অন্য উপায়ে আমাদের উন্নতি অন্বেষণ করার জন্যে। ইসলাম অনুযায়ী আমাদের জীবন অতিবাহিত করা যেখানে মুসলিম মাত্রই প্রধান কর্তব্য সেখানে নিজের মনের অনুযায়ী ইসলামকে মেনে চলাকেই যথেষ্ট হিসেবে প্রতিয়মান করা হচ্ছে। আধুনিক টেকনোলজি, উন্নত পোষাক, সম্পদ প্রতিপত্তি আমাদেরকে কোনভাবেই সম্মানিত করবে না। সবার আগে ইসলামকে নিজের জীবনে ধারণ করতে হবে তাহলেই মুসলমানরা আবার সম্মানিত হবে।

পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার পর যখন জিজ্ঞেস করা হয়, জীবনে কি হতে চাও? উত্তর হিসেবে পাওয়া যায়, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বড় বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী ইত্যাদি ইত্যাদি। আচ্ছা এই লক্ষ্যগুলো যখন অর্জিত হয়ে যাবে তারপর সে কি করবে? সে কি তখন চুরি করবে? জ্ঞান পাপী হবে? তাইতো হচ্ছে আজ আমাদের চারপাশে। মিথ্যার বেসাতী চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। যে ইসলামকে ধারণ করা উচিত ছিল সবার আগে অর্থাৎ ডাক্তার হতে চাও কোন সমস্যা নেই হও কিন্তু সবার আগে তোমাকে মুসলিম হতে হবে। বড় বিজ্ঞানী হতে চাও, কোন সমস্যা নেই কিন্তু সবার আগে তোমাকে সত্যিকার একজন মুসলিম হতে হবে।

আজ অতীব দুঃখজনক হলেও সত্য সেই ইসলামকে আমরা জীবন সয়াহ্নে এসে আকড়ে ধরি! সারা জীবন নিজের জীবনটাকে ইচ্ছামত, ইসলাম বহির্ভূতভাবে চালিয়ে বুড়ো বয়সে এসে যখন শরীর ঘুনে ধরে, শক্তির ক্ষয় হয় তখন হুশ হয় কিন্তু এতদেরীতে হুশ হয়ে যে খুব একটা বেশী লাভ হয় না তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। চারিদিকে আজ হাহাকার, অধিকার বঞ্চিত মানুষের মেলা, অধপতিত মুসলিম। আমরা যত কিছুই করি না কেন, যতই ফন্দি-ফিকির করি না কেন কোনভাবেই আমাদের উন্নতি হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা আবার ইসলামকে আকড়ে ধরব। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা রাসূল ﷺ এবং খুলাফায়ে রাশেদার আদর্শকে আকড়ে ধরব। আল্লাহ তাআলা আমাদের বুঝার সুমতি দান করুন।

আমীন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।