আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঐশী ট্রাজেডী : সংবাদ মাধ্যমের ভুমিকা



অপ্রাপ্ত বয়স্ক কেউ কোনো অপরাধ করলে সাধারণত এটা তার ব্যক্তিগত অপরাধ বলে ধরা হয় না। এটা কারো দ্বারা প্ররোচিত বলে ধরা হয়। সে ক্ষেত্রে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চারপাশের মানুষেরা, বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদি উঠে আসে। কোনো মাদ্রাসার সাত বছরের শিশু যদি ভুলক্রমে কোনো মিছিলের পাশ দিয়ে হেঁটেও যায়, তবু সাংবাদিক ভাইয়েরা তার মাদ্রাসা, পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজন এর চুলচেড়া বিশ্লেষণ করে ছাড়েন। তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের ঘুম হারাম করে ছাড়েন।

একবার একটি প্রতিষ্ঠিত অনলাইন সংবাদ মাধ্যম মিছিলে একটি শিশুর ছবি দিয়ে মালিবাগ জামিয়ার হেফজ বিভাগের ছাত্র বলে বিশাল ফিচার করা হল। "হুজুরে যাইতে বলসে, জিহাদ করতে বলসে, তাই সে গেসে" ইত্যাদি ইত্যাদি। মজার ব্যাপার হলো, যে হুজুরের নাম আসল, সেই নামের কোনো হুজুরই মাদ্রাসায় নেই, ছাত্র তো দূরের কথা। মাদ্রাসার নামটাও 'বেচারা' সঠিক লিখতে পারেন নি। কিন্তু মুখরোচক আগ-পিছ মিলিয়ে, হয়ত বা পুরনো কোনো নিউজকে কপি-পেস্ট করে পাঠকপ্রিয় একটি নিউজ করে ফেললেন।

এবার ঐশী প্রসঙ্গে ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। একাধিক সংবাদে পড়লাম যে, ঐশী অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ক্লাস এইটে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তার চলাফেরায় পরিবর্তন আসে। খুব সকালে বের হওয়া ও রাত করে ঘরে ফেরা অভ্যাসে পরিণত হয়। নাচের অনুষ্ঠানে যাওয়া আসা বেড়ে যায়। এমনই কোনো এক নাচের অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় অপর এক ঘাতক বন্ধুর সাথে।

তো, সে ক্ষেত্রে স্কুলটির পরিবেশ, পড়াশোনা, ছাত্র-শিক্ষকদের মাদক সংশ্লিষ্টতা, শিক্ষকদের মতামত, অভিভাবকদের বক্তব্য, ক্লাসমেটদের অবস্থা, নাচের অনুষ্ঠানগুলোর খোঁজ খবর ইত্যাদি নিয়ে রিপোর্ট হতে পারত। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সাংবাদিক ভাইয়েরা এ বিষয়ে নীরবতা পালন করছেন। মাদক নিয়ে কিছু লেখা আসছে, কিন্তু যে পরিবেশ মাদক নিতে শেখাল, সেই পরিবেশ নিয়ে কোনো লেখা আসছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো অনেক দিন পর কোনো বিষয়ে কিছু বলার মত খুঁজে পেল। তাদের ধন্যবাদ, অবশেষে তাদের নিদ্রা তো ভাঙল।

আমরাও মনে করি ঐশীকে রিমান্ডে নেয়া উচিৎ নয়। মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে। কিন্তু অপরাধ তো হয়েছে। কাউকে না কাউকে তো অপরাধের দায় নিতেই হবে। কে নিবে সে দায়? পর্দার আড়ালের প্রকৃত অপরাধী সমাজকে চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে তো ঐশীদের ওপরই দায় চাপানো হবে।

আর ওদিকে তৈরী হবে আরো হাজারো ঐশী, যাদের কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে খোদ সেসব ঐশীদের বাবা-মা। সত্য স্পষ্ট হওয়ার পরও সুশীলদের এসব নীরবতা আগামীতে ঐশীময় প্রজন্মেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে!! ঐশী ঘটনাকে কিশোর অপরাধ বলে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আজ দেশের প্রতিটি বাবা-মা উদ্বিগ্ন। আর লজ্জিত প্রতিটি সন্তান। এ ঘটনা বাবা-মা আর সন্তানদের মধ্যে যে একটি "সন্দেহ" রেখা টেনে দিয়েছে তা নিশ্চিত।

রেখাটিকে মুছে ফেলতে আজই আমরা যদি কুরআনমুখী না হই, তাহলে আমাদের বিপর্যয় সুনিশ্চিত। লেখক ইউসুফ সুলতান আরো পড়তে ক্লীক করুন.....।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।