আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৫ আগস্ট V/S জন্মদিন



১৫ আগস্ট। বাঙ্গালির জীবনে এক ভয়াবহতম শোকের দিন। নিষ্ঠুরতার চরম নিদর্শন ঘটেছিল এই দিনে। জাতির পিতা, যিনি আবার ছিলেন তার আজন্ম লালিত স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশের ফাউন্ডার ও স্ট্যান্ডিং রাষ্ট্রপতি। তাকে তার নিজ বাসভবনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল এইদিনে।

তার সাথে আরও হত্যা করা হয়েছিল তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে, প্রিয় সন্তানদের, এমনকি তার প্রাণপ্রিয় দুই পুত্রবধূকেও হত্যা করা হয়েছিল গর্ভবতী অবস্থায়, যা ছিল চরম অমানবিক। মাংসাশী হিংস্র পশুরাও সচরাচর যা করে না; তাই করা হয়েছিল এইদিনে। এই বাংলায়। বঙ্গবন্ধুর ভাই-ভাগ্নেদেরও সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল একইসাথে। যাকে বলে, পরিকল্পিত এক ভয়াবহতম গণহত্যা ঘটেছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসায় এইদিনে! তা পিশাচেরা যে আঙ্গিকেই বলুক না কেন বা ত্যানা প্যাঁচাতে থাক না কেন! জন্মদিন পালন করা দোষের কিছু নয়।

ইচ্ছা, শখ ও সামর্থ্য থাকলে, যে কেউ, যেকোন বয়সেই সেটা করতে পারেন। এটা সম্পূর্ণরূপেই একজন ব্যক্তির একান্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ইচ্ছা বা অধিকার। কিন্তু কথা এসে যায় তখন, যখন কেউ এই অধিকারকে মিস ইউজ করেন বা নিজ জন্মদিনকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘড়ির কাঁটার মত এদিক ওদিক সরিয়ে এমন এক নির্দিষ্ট জায়গায় স্থাপন করেন যেটা আদৌ তার জন্ম দিন না, কোন কালেও ছিলও না এবং যেটা নিয়ে প্রায় সবাই সন্দিহান। যার কোন প্রমাণও নেই, তা সেটা ডকুমেন্টারি হোক বা সাক্ষী সাবুদ মারফতই হোক! আর ব্যাপারটা যখন ঘটে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধর ব্যক্তির ক্ষেত্রে! তখন সেটা হতে হয় নির্ভুল ভাবে প্রমাণিত সত্য! হ্যাঁ! হতে পারে সেটা আসলেই তার জন্মদিন কিন্তু আগের ৪টা জন্মদিনের তারিখগুলোর রেকর্ড যেসব কাগজপত্র ও সার্টিফিকেটে আছে তা কি সবই ছিল ভুল? বলবেন, “সেটাও হতে পারে! এইসব তারিখ গুলো সবই ছিল ভুল এবং এই ভুলে তার কোন হাত ছিল না। আসলে এই ভুলগুলো করেছিলেন তার প্রাণপ্রিয় মরহুম বাবা, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, বিয়ের কাজী বা নির্বোধ দলীয় অতি উৎসাহীরা।

“ - বিশ্বাস করলাম! অতএব ধরে নিচ্ছি ১৫ আগস্ট তার জন্মদিনই কিন্তু হটাৎ করে ১৯৯১ সাল থেকে কেন তা পালন করতে “শুরু” করা হলো? যেখানে জন্ম সাল ১৯৪৪ বা ১৯৪৬ বা ১৯৪৭; আরও আগেই তো তা পালন করার কথা ছিল বা হতে পারত, সুযোগ তো ছিল? ধরে নিলাম বাবা-মা অত সচ্ছল ছিলেন না তাই পালন করা হয় নি, যেটা আমাদের দেশে হামেশায়ই হয়। কিন্তু স্বামী তো ছিলেন একজন ডাকসাইটে সেনা অফিসার, বীরবিক্রম মুক্তিযোদ্ধা থেকে সেনাপ্রধান হয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত। তার জীবিত অবস্থায় কেন একটি বারের জন্যও জন্মদিন পালন করা হল না? হয়ে থাকলে শুনলামও তো না? নিদেন পক্ষে ঘরের ওয়ালে “HAPPY BIRTHDAY TO YOU” লেখা সম্বলিত একটা ওয়াল পেপার সাঁটানো, মোমবাতি-কেক-করতালি-হাসি মিস্ত্রিত একটা ছবি দেখতে পারলেও তো সব লেঠা চুকে যেত! হোক না সেটা সাদাকালো বা রঙ চটা! তাতেই নিন্দুকদের মুখে তালা পড়ত! সুটকেসে-এ্যালবামে কি এই ধরণের কিছু নেই? “তখন শখ হয়নি তাই জন্মদিন পালন করা হয়নি!” - ওহ! তাই? “যে বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পাবো বা সরকার প্রধান হবো সেই বছর থেকে জন্মদিন পালন করবো” - এই রকম একটা পণ ছিল, তাই ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসেই পণ রক্ষা করা হয়েছে! এই আর কি! বাহ! ভাল! বেশ ভাল! এক্সিলেট পণ! তা জানেন তো আপনার জন্মদিনে মানে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন এবং নিহত হওয়ার সময় তিনি ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি তথা সরকার প্রধান। আপনি একজন সরকার প্রধান হয়ে আর একজন সরকার প্রধানের মৃত্যু দিনে প্রথম বারের মত ঘটা করে জন্মদিন পালন করার সিদ্ধান্ত নিলেন? কাজটা কি ঠিক করলেন? শুনেছি তিনি আপনাকে তার মেয়ের মত দেখতেন? সংসার রক্ষা করেছিলেন আপনার? মরহুম রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি কি সামান্যতম সম্মান বা মানুষ হিসেবে সৌজন্য বোধ পেতে পারতেন না? আপনার প্রটোকল কি বলেছিল সেদিন? তার জন্য কি আপনার মনের ভিতর একটুও খচ খচ করলো না? জন্মদিন পালনই কি সব? নাকি এর মধ্যে রাজনীতি আছে? আছে প্রতিহিংসা? দুর্জনেরা কিন্তু এর মধ্যে বেইমানীও খোঁজেন? কি দরকার এইসবের? রাজনীতি করার জন্য তো আরও ভূরি ভূরি ইস্যু আছে! দুর্জনেরা কিন্তু আরও বলে, এই জন্মদিন পালনের মধ্যমে আপনি প্রমাণ করছেন যে, ১৫ আগস্টে নির্মম হত্যাকাণ্ডটা না ঘটলে আসলেই আপনার জন্ম হত না! ওয়েট! ওয়েট! এখানে তো কয়েকটি জন্ম সালও পাওয়া যাচ্ছে? কিন্তু মানুষের জন্ম তো একদিনই বা একবারই হয়। তা তিনটার মধ্যে কোণটা আসল? জন্ম তারিখ যখন ঠিক করা হলো, তখন জন্ম সালটাও পাকাপাকি ভাবে ঠিক করা হোক এবং তা ঘটা করে সবাইকে জানিয়েও দেওয়া হোক! তা না হলে পরে আবার দুর্জনেরা এটা নিয়েও ত্যানা পেঁচাতে থাকবে! ১৫ আগস্ট ২০১৩ সালে জন্মদিনের কেকে যদিও ৬৯ দেখতে পাচ্ছি, তথাপিও মনে হচ্ছে, জন্ম সালটা সেই ভাবে হাইলাইট হচ্ছে না! মানে আমজনতার মনে দাগ কাটছে না।

দাবী! আমজনতার মনে দাগ কাটানো জবরদস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক! এটা এই জন্য প্রয়োজন যে, ভবিষ্যতে যদি “জন্মসাল” পালন করার প্রয়োজন পড়ে বা শখ হয়! সেটা করার মত এখনকার মত এত সুন্দর পরিবেশ নাও থাকতে পারে! তাই এর ভিত্তিটা এখনই পোক্ত করে রাখতে হবে! তখন তা নতুন করে করতে গেলে বড়ই মুশকিল হবে কারণ ওই সময়ের উইকি-ফেবু-ব্লগি জেনারেশন কিন্তু নিদেনপক্ষে কিছু রেফারেঞ্চ-লিঙ্ক ছাড়া কিছুই বুঝবে না। মানবে না! ছাড়বেও না! এখনই যা অবস্থা! শান্তি নাই! উফ!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।