আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হারুর বিসিএস রিটেন প্রস্তুতি ও পরীক্ষা.....

যা শিখেছি, সেখান থেকেই কিছু বলার ও করার চেষ্টা করি

অনেকদিন যাবত হারুর কোন খোজখবর নেয়া হয়না। কিজানি কেমন আছে বেচারা। শুনেছি বিসিএস’র জন্যে নাকি ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রিলিতে নাকি টিকেও গিয়েছি। এখন লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সব মিলিয়ে একদিন গেলাম ওর বাসায় দেখা করতে। ও দরজা খুলতেই আমি থ। একি অবস্থা হারুর ! ঝুটি করা লম্বা লম্বা চুল, গালে একগাদা দাড়ি, গলায় আইফোন সাইজের একটা তাবিজ আর কালো কাবলি গায়ে। হারুর এই অবস্থা দেখেযে খুব একটা অবাক হয়েছি তা কিন্তু না। কারন হারুকে দেখে সচরাচর আমরা চমকে গিয়েই অভ্যস্ত।

তারপরও, হারুর যেকোন কর্মকান্ডের পিছনে অগুরুত্বপূর্ণ হলেও একটা কারন থাকে। এবারও নিশ্চই আছে। চরমরকম অবাক হওয়ার ভান করে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিরে, তোর এ অবস্থা কেন?’ উত্তর শুনে আমি আবারো থ। -বিসিএস রিটেনের প্রিপারেশন নিতেছি। রিটেনের প্রিপারেশন মানে? প্রিপারেশনের সাথে এই কিম্ভুতকিমাকার বেশের কি সম্পর্ক? -আছে আছে।

বুদ্ধি থাকলে কি আর ঘরজামাই থাকতে হয় ? যারা আহাম্মক তারাই শুধু দিনরাত গাধার মত লেখাপড়া করে। হারু তাদের দলে না। মানে কি? চেহারায় বিশাল এক বুদ্ধিজীবি ভাব নিয়ে সে বলল, -মানে হচ্ছে, আমি এক পীরের খোজ পাইছি। বিশাল পীর। ‘বিসিএস বাবা’।

এইটা আবার কেমন বাবা? এই টাইপের বাবার নামতো এর আগে শুনিনাই। কাজটাকি ওনার। -এইতো কাজের কথায় আইছস। বিসিএস বাবা শুধু বিসিএস সম্পর্কিত ব্যাপারেই দোয়া দেন। এই বিষয়ে তিনি স্পেশালিস্ট।

খুবই কামেল বাবা বুঝলি। পিএসসি’র যে বর্তমান পরিচালক তিনিও এই বাবার মুরিদ। এখন আমি নিজেও ওনার মুরিদ হইছি। একদিন দেখবি তোদের এই হারুও রাষ্ট্রদূত হয়ে আমেরিকা গেছে। তখন পোলাপাইনের কাছে গল্প করবি, ‘ ঐ হারু আর আমি একসাথে কত আড্ডা দিছি।

’ বুঝলাম। কিন্তু মুরিদ হইলেই চেহারার ডিজাইন পাল্টাইতে হইবো ক্যান? -এইটা বাবার শর্ত। মুরিদ হইলে ঈমানদার মুরিদই হইতে হইবো। নইলে আল্লাহ হাফেজ। অনেক বুজুর্ক লোকতো।

এই ধরনের লোক একটু কড়া হয়। আমার গলায় এই যে তাবিজটা দেখতাসছ, এইটাও বাবার দেয়া। বাবা বলছে, তাবিজসহ এই বেশ ভাইবার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত ছাড়া যাইবো না। তুই বস, তোরে আরো একটা জিনিস দেখাই। এতকিছুর পরও আরো আছে? বাবাতো দেখা যায় দাদার চাইতেও বড়।

-চুপ, বাবার নামে বাজে কথা বলবিনা। উনি নারাজ হন। নারাজ কেমনে হইবো? উনিতো আর আমার কথা শুনতাছেনা। -বাবা সব শুনতে পান। এরজন্যে তার সামনে থাকার প্রয়োজন হয়না।

এই দেখ, বাবার দেয়া কলম। কলম !!! কলমতো কলমই। এরমধ্যে আবার বাবা-চাচার কি আছে? -বাবা-চাচা মানেকি? মানে উনি তোর বাবা হইলে আমার চাচা হন, তাইনা? -ফালতু কথা বাদদে। আমার কথা শোন। এই কলম যেনতেন কলম না।

এই কলমের বৈশিষ্ট হইলো, পরীক্ষার হলে বাবার নাম পইড়া এই কলমে ফু দিয়া ঘুম দিলে কলম একাই লিখতে শুরু করবো। সম্পূর্ণ সয়ংক্রিয় কলম। একাই লিখতে শুরু করবো মানেকি? হাত দিয়া ধরতেও হইবো না? কোন নির্দেশ বা হুকুম দিতে হইবোনা। এ্যাটলিস্ট আলাদিনের চেরাগের মত ঘষা? -না কিচ্ছু লাগবোনা। হুকুম যা দেয়ার বাবা দিয়া দিছে।

সময় হইলেই কলম কাজ করতে শুরু করবো। ৩৪ হাজার ৩৪ টাকার কলম। ওত সস্তা না। এইবার আমি বুঝলাম, বাবার আসল কেরামতি কোন জায়গায়। তবে আমারা বুঝলেতো আর হবেনা, হারুর বুঝতে হবে।

ওও বুঝবে, তবে একটু দেরিতে। বরাবরই যেটা হয়ে আসছে। দেখতে দেখতে বিসিএস রিটেন পরীক্ষার দিন চলে এলো। হারু যথারীতি তার বেশে পরীক্ষার হলে। প্রশ্ন দেয়া হলো।

হারু প্রশ্ন পেয়ে না পড়েই কলমে বাবার নাম পড়ে ফু দিয়ে ঘুম। হারুর ঘুম একটু গভীর হতেই কোথা থেকে যেনা স্বরস্বতি দেবী টাইপের দুই পরী চলে আসলো। এসে হারুর দুই পাশে বসে কলম হাতে নিয়ে লেখা শুরু করলো। একজন বলে আর আরেকজন লেখে। যে বলে তার গলা যেমন কোকিলের কণ্ঠের মত মিষ্টি, যে লেখে তার লেখাও মুক্তার মত চকচকে।

দেখতে দেখতে তারা সব প্রশ্নের উত্তর লিখে শেষ করে ফেললো। লেখা শেষে তারা হারুকে ডাকতে শুরু করলো। এইযে শুনছেন, পরীক্ষা শেষ, পরীক্ষা শেষ। ডাক শুনে হারুও হুট করে জেগে উঠলো। উঠে দেখলো পয়তাল্লিশোর্ধ এক মহিলা তাকে ডাকছে।

ইনিই হারুকে প্রশ্নপত্র দিয়েছিল। হারুর ভ্রু কুচকে গেল। হুরমুরিয়ে সে তাকালো খাতার দিকে। একি পুরো খাতাতো সাদা। কলম যেখানে ছিল সেখানেই পড়ে আছে।

ভদ্রমহিলাটি বললেন, আপনাকে শুরু থেকেই দেখছি ঘুমিয়ে আছেন। প্রিপারেশন না নিয়ে থাকলে পরীক্ষার হলে আসার কি দরকার? বাসায় ঘুমালেইতো পারেন। এই বলে সে খাতাটা নিয়ে চলে গেল। এতক্ষণে হুশ এলো হারুর। সে যা দেখেছে সবই স্বপ্নে দেখেছে।

কোন পরীই আসেনি। বাবার উপর ব্যাপক রাগ হতে লাগলো হারুর। সোজা চলে গেল বাবার আখড়ায়। গিয়ে দেখে সব চম্পট। সব ফাকা, কেউ নেই।

এবার হারুর নিজের বেকুবির কারনে নিজের উপরই রাগ হতে লাগলো। রাগে ও ক্ষোভে সে সিদ্ধান্ত নিলো আত্মহত্যা করবে। প্রিয় পাঠক, আপনাদের অবগতি জন্যে জানিয়ে দিচ্ছি, ছোটবেলা থেকেই হারুর আত্মহত্যা করা ঝোক আছে। খুব সামান্য ব্যাপারেই সে আত্মহত্যা করতে যায়। কিন্তু সেখানেও সে তার ব্যাডলাকের কারনে সফল হতে পারেনা।

একটা ঘটনা বলি। ক্লাস ফোরে হারু একবার ফেল করেছিলো। ফলাফল দেখে তার বাসা থেকে তাকে ব্যাপক বকা দেয়। দেয়াটাই স্বাভাবিক। দুঃখে হারু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবে।

কিন্তু বিষ কোথায় পাবে সে। বুদ্ধি করে সে কি করলো জানেন? একটি টুকরা কাগজে লাল মার্কার দিয়ে ‘বিষ’ লিখে দাদার হোমিওপ্যাথী ঐষুধের(লিকুইট) বোতলের গায়ে লাগিয়ে সেটাকে বিষ বানিয়ে ফেললো। উল্লেখ্য, বাংলা সিনেমায় সে দেখেছে নায়ক-নায়িকারা যখন বিষ খায় তখন এরকম একটা বোতলের গায়ে সাদা কাগজে বিষ লেখা থাকে। সেখান থেকেই মূলত তার এই জ্ঞানের উৎপত্তি। যাইহোক, একটি সুইসাইড নোটে সে ‘ আমার মৃত্যুর জন্যে কেউ দায়ি নয়’ লিখে পুরো বোতল বিষ খেয়ে ফেললো।

খাওয়ার পর থেকেই তার বমিবমি লাগতে শুরু করলো। হারু মনে করলো বিষে কাজ হয়েছে। সে সিনেমায় এরকম দেখেছে। বিষ খাওয়ার পর সবাই বুকে হাত দেয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, দাদার ঔষধটা ছিল কোষ্টকাটিন্যের।

তাই অ্যাকশন না হলেও রিএকশন ঠিকমতোই হয়েছে। সে বমি করতে শুরু করলো। সবাই ছুটে এসে তার কান্ড দেখেতো মেজাজ খারাপ। সুইসাইড নোট পড়েতো হারুর বাবার(অরিজিনাল) চান্দি গরম। ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দিলেন হারুর গালে।

এক চড়ে বমি বন্ধ। এরকম আরো উদাহরন আছে তার অ্যাটেম্পট টু আত্মহত্যার। সেগুলো নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করবো। আজ ফিরে যাই আজকের ঘটনায়। হারু এবার সিদ্ধান্ত নিলো ট্রেনের নিচে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সে চলে গেল রেল লাইনে। এবারে নিজের পাংচুয়ালীটি দেখেতো সে নিজেই অবাক। লাইনে দাড়াতেই সে দেখতে পেল ট্রেন আসছে। রেল লাইনের উপর হাত প্রসারিত করে দাড়িয়ে সে বললো,‘ হে নিষ্ঠুর পৃথিবী, আমাকে বিদায় দাও’। ট্রেন একেবারে হারুর কাছাকাছি চলে আসতেই কোথা থেকে যেন কে এসে ট্রেনের সামনে দাড়িয়ে সুপারম্যানের মতো ট্রেন থামিয়ে দিলো।

আরে, এতো অনন্ত জলিল। -‘ নিস্বার্থ ভালবাসা: যিধঃ রং ষরভব, হোয়াই ইউ গোইং টু ডাইং। ’ আমার এই ব্যর্থ জীবন আমি আর রাখবো না। আপনি কেন আমাকে বাচালেন? হারু ঘটে যাওয়া সব ঘটনা অনন্তকে খুলে বললো। -ব্রাদার, লাইফে অনেক কিছুই লস্ট করতে হয়।

তাই বলে, সিট করে থাকলে চলবে না। আমাকে সি কর, একসময় আমাকে কেউ চিনতো না, কিন্তু এখন হলিউড-বলিউড-ঢালিউডে সবার মাউথে মাউথে আমার নাম। ইউ সুড ডু লাইখ মি। এরকম অনেক আশাবাদী নসিহত করে অনন্ত হারুর আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনলো। হারুও ভাবলো তাকে আবার ফিরে দাড়াতে হবে।

আবার জীবনকে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিলো সে। -বাইদা বাই, হোয়ার ইউ পম?, অনন্ত জিজ্ঞেস করলো। জি ঢাকা। -ওকে, তুমি আমার বাসায় এসো। গসিপ করবো দুজনে মিলে।

আই লাইক ইউ। এখন আমাকে বর্ষার কাছে যেতে হবে। সে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। বাই। বর্ষার কথা শুনতেই হারুর তার সর্বশেষ গার্লফ্রেন্ড বৃষ্টির কথা মনে পরে গেল।

বৃষ্টি তাকে ছেকা দিয়েছিল। বৃষ্টির কথা মনে পড়তেই হারুর আত্মবিশ্বাস আবারো আকাশ থেকে জমিনে নেমে এলো। সে আবারও সিদ্ধান্ত নিলো এ জীবন সে আর রাখবে না। রেল লাইনের উপর বসে পড়লো পরবর্তী ট্রেনের অপেক্ষায়। প্রিয় পাঠক, হারু অপেক্ষা করতে থাক।

পরবর্তী ঘটনা আপনাদের আরেকদিন বলব। আজ এপর্যন্তই থাক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.