আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক সন্ধ্যায় লারার হাসি মুছে গেল

soroishwarja@yahoo.com
সতেরো বছর বয়সে এক সন্ধ্যায় মুখের হাসি মুছে যায় লালা পিপারের। ২০০৮ সালের গ্রীষ্মের ছুটি শেষে ইপ্সউইচ স্কুলের পড়াশোনায় ফেরে লারা। ‘তখনই ধীরে ধীরে হাসি মুছে যেতে থাকে। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেখি কথা জড়িয়ে যাচ্ছে,’ লারা বলে। ‘এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি।

ভাবাভাবি বাদ দেই। পরের মাসে আমার খাওদা-দাওয়া সমস্যা হতে থাকে। এক সন্ধ্যায় খেতে বসে মনে হয়, আমার মুখ আড়ষ্ট হয়ে গেছে, ঠোঁটগুলো ফুলে গেছে। কোনো ব্যাথা-বেদনা নয়, বরং অসাড় হয়ে যায় আমার মুখ। ’ কিছু দিন ধরে এই অবস্থা চলে।

আজ এই রকম হয়, তো কাল ভালো। ‘মাঝে মাঝে আমি হাসতে পারতাম না, কথা বলতে পারতাম না, চোখের পাতা তুলতে পারতাম না। আবার কখনো এমন হতো যে, ঘুমাবো, কিন্তু চোখের পাতা বন্ধ হচ্ছে না। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থা হতো যখন আমার জিহ্বা নড়ত না। এই অবস্থায় ঘণ্টাখানেক বিশ্রামের পর বিস্ময়করভাবে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যেত।

’ মেয়ের এই অবস্থায় উন্মাদ প্রায় মা জো। ৪৫ বছর বয়সী জো শিক্ষিকা। মেয়েকে নিয়ে গেলেন তাদের চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক সহানুভূতি দেখালেও বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারলেন না। লারার মানসিক চাপ কমানোর ওপর জোর দিলেন তিনি।

‘কিন্তু আমি জানতাম, বিষয়টা মোটেও স্বাভাবিক কিছু নয়। পাঁচ মিনিট ফোনে কথা বললেই কেমন অদ্ভুত নেকো নেকো একটা ব্যাপার শুরু হতো। এই ব্যাপারটা কাটানোর একমাত্র উপায় ছিল কিছুক্ষণ একেবারে চুপচাপ বসে থাকা। ’ ‘এই সময়টায় আমাকে অর্থোডন্টিক চিকিৎসা দেওয়া হয় দাঁতের সারি সোজা করার জন্য। অর্থোডেন্টিস্ট পাঠান স্নায়োরোগ বিশেষজ্ঞ স্টিফেন উরুর কাছে।

তিনি কিছু পরীক্ষা চালান। আমার বাহু ওপর-নিচ করেন। চোখের সামনে একটা কাঠি বৃত্তাকারে ঘোরান। এতে কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার মুখের পেশি স্থির হয়ে যায়। ’ রোগটা মায়াসথেনিয়া গ্র্যাভিস।

বিরল এক অটোইমিউন ডিজিজ। যুক্তরাজ্যে হাজারে একজনের এ রোগ দেখা যায়। বিশেষ করে ২০ থেকে ৩৫ বছরের নারীদের। মায়াসথেনিয়া গ্র্যাভিস এমন কিছু এমন কিছু অ্যান্টিবডি তৈরি করে যেগুলোর কারণে কিছু কিছু পেশি অসাড় হয়ে যায়। মুখের পেশিই ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি।

তবে কারো কারো হাত-পা নাড়াতেও সমস্যা হয়। অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে এই রোগের লক্ষণগুলো দেখা দেয়। লারাকে পাইরিডোসস্টিগমাইন ব্রোমাইড ট্যাবলেট দেওয়া হয়। এই ট্যাবলেট স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করে। এরপর স্টেরওয়েড এবং ইমিউন-সাপ্রেসিং ড্রাগ অ্যাজাথিওপ্রিন।

ধ্বংসাত্মক অ্যান্টিবডি ঠেকাতে এসব ওষুধ। লারা জানায়, ‘এবার সমস্যা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, আমার মাথার চুল পড়তে থাকে। স্টেরোয়েডের প্রতিক্রিয়ায় মাথা ব্যথা হয়। ’ লারার বাবা-মা ইন্টারনেটের মাধ্যমে রোগের বিকল্প কোনো চিকিৎসা এবং স্থায়ী সমাধান খুঁজতে থাকেন। এটা গত বছরের ঘটনা।

চিকিৎসার জন্য লারাকে জন রেডক্লিফ হসপিটালের অক্সফোর্ড মায়োসথেনিয়া সেন্টারের ড্যাভিড হিল্টন জোন্সের কাছে পাঠানো হয়। তিনি থাইমেকটমির লক্ষণ পান এবং ব্রেস্ট বোনের নিচ থেকে থাইমাস গ্ল্যান্ড অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করতে বলেন। মার্চে লারার চার ঘণ্টার অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের পর লারার অনুভূতি, ‘কয়েক দিনের মধ্যেই আমি ভালো বোধ করতে থাকি। ’
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।